মা দিবস

মা দিবস

ছোটবেলায় কত্ত সহজে মাকে জড়িয়ে ধরে “ভালোবাসি” বলতে পারতাম..আর এখন মায়ের পাশে বসে একটু মিষ্টি কথা বলতেই কেমন জানি লজ্জা লাগে! প্রতিবছর মা দিবসে চিন্তা করি মা-কে সবচেয়ে বেস্ট একটা গিফট দিবো..কিন্তু প্রত্যেকবারই আমি কোনো না কোনো গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলি এইতো গতবছর মা দিবসে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছিলাম..মাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে মা কাজ করছিলেন, এমন সময় টানতে টানতে নিয়ে এলাম..বললাম তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি.. এখানে দাঁড়াও আমি নিয়ে আসি রুম থেকে.. সেই যে নিজের রুমে গেলাম শাড়ি আনতে, আর আসলাম না.. খুঁজছি আর খুঁজছি। শাড়িটা পাচ্ছি না..ওদিকে মাও ডাকছিলেন,”ইশা আর কতক্ষণ? তুই কি আমায় এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবি? আমার আরো কাজ আছে তো নাকি!” দৌঁড়ে এসে বললাম,”মা,আমার রুমে একটা শাড়ির প্যাকেট ছিল, সাথে একটা চিঠি..দেখছো?”

মা এবার একটু ভেংচিয়ে বললেন,”ইইহহ আপনার রুমে ছিল না? তুই এই শাড়িটা পাশের বাসার সুমিরে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলি..আর ওখানেই রেখে এসেছিস..পরে সুমি এসে দিয়ে গেছে..এরপর আমি আবার আলমারিতে তুলে রেখেছি প্যাকেটটা,..যা আলমারি থেকে নিয়ে এনে আমায় মা দিবসের শুভেচ্ছা জানা..তাড়াতাড়ি কর..কাজ আছে আমার ব্যাস! যেখানে আমি কিনা মা-কে সারপ্রাইজ দিবো ভাবলাম, উল্টো আমিই বড় একটা সারপ্রাইজ পেয়ে গেলাম!! শাড়িটা এনে মাকে দিলাম, উইশ করলাম.. মাও অনেক খুশি হয়েছিলেন, তবে আমার মনটা আকুপাকু করছিল! গন্ডগোলটা হওয়ার কারণে..

এরপর থেকে শুধু একটা চিন্তাই ঘুরতো..মা-কে নেক্সট মা দিবসে কি গিফট দেওয়া যায়! অনেক চিন্তাভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম এবার মা দিবসে সারাদিন মা-কে কোনো কাজ করতে দিবো না..সব কাজ আমি করবো..আর সেদিন সব ভালো ভালো রান্না করে মা-কে চমকে দিবো আজকে সেইদিনটা চলে আসলো..সকালবেলা মা ঘুম থেকে উঠার পর আমি মা-কে চা দিলাম, সকালের নাস্তা দিলাম..মা অবাক হয়ে বললেন,”কিরে?আজ হঠাৎ তুই এসব করছিস?” আমি বললাম,”বা-রে! করতে পারি না আমি? আজকে আমি সব রান্না করবো..তোমায় কিচ্ছু করতে দিবো না..”

কথামতো সব রান্না করলাম..ঘর গুছালাম বেশ সুন্দর করে…মা অনেকবার বলেছিলেন,”ইশা তুই এতো রান্না একা পারবি না মা..আমিও একটু হাতেহাতে সাহায্য করি তোকে..” কিন্তু আমিই দিইনি..যেহেতু আমি নিজে রান্না করবো বলেছি, সেহেতু আমিই করবো..কারো সাহায্য লাগবে না..মা-কে টিভির সামনে বসিয়ে দিয়ে আমি গুনগুনিয়ে রান্না করছি..উফফফ এতো ভালো লাগছে!!

রান্না করতে করতে প্রায় ২:৩০ টা বেজে গেলো.. তাড়াতাড়ি করে টেবিলে সবকিছু সাজিয়ে মায়ের চোখ বন্ধ করে নিয়ে আসলাম ঘরে..চোখ খুলার পরপরই বললাম, “টান টানা!!! দেখো কত্ত রান্না করছি তোমার জন্য.. তোমার পছন্দের ইলিশ মাছ ভাজা, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডাল, কুরমা, পায়েস!! তোমার শুটকিভর্তা পছন্দ না অনেক? দেখো শুটকি ভর্তাও বানিয়েছি.. তাড়াতাড়ি খেতে বসো..আর খেয়ে বলো তোমার মেয়ের রান্না কেমন হলো?” মা এবার একটা চাপা হাসি দিয়ে বললেন,”হুম অনেক কিছুই তো রান্না করলি..এবার বল এতো খাবার কি দিয়ে খাবো?” আমি হো হো হো করে হেসে বললাম,”কি দিয়ে খাবে মানে? হাত দিয়ে খাবে প্লেট দিয়ে খাবে মা এবার আরো জোরে হেসে বললেন,”বোকা মেয়ে.. ভাত কই?”

আমি বললাম,”ওহহ ভাত? আজকের দিনে কি তোমাকে ভাত খেতে দিবো নাকি? আজকে তুমি পোলাও খাবে.. আর রাতের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবো.. তুমি বসো, আমি পোলাও নিয়ে আসি সেই যে পোলাও আনতে কিচেনে গেলাম..আমি আর আসলাম না..আগেই বলেছিলাম,আমি সবসময় কোনো না কোনো একটা গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলি..এবারও রাইস কুকারে পোলাও দিয়েছিলাম ঠিকই.. কিন্তু সুইচটা আর অন করিনি.. ব্যাস! সব চাল-ই থেকে গেলো..অনেক বেশি লজ্জা লাগছিল, আর খারাপও লাগছিল এমনিতেই এতো দেরি হয়ে গেলো..তার উপর এখন আবার ভাত নেই..আমি ওখানে বসেই কাঁদতে লাগলাম.. মা এবার কাছে আসলেন..আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন,”এই তুই কাঁদছিস কেন?”

আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,”ভাত রান্না হয়নি..আমি রাইসকুকারের সুইচ অন করতে ভুলে গিয়েছিলাম..”
মা যেন খুব আনন্দ পেলেন কথাটা শুনে..হাসতে হাসতে বললেন,”ধুর বোকা মেয়ে..এটার জন্য কাঁদতে হয়? আমি এমনিতেও পোলাও খুব একটা পছন্দ করি না..আমি পোলাও খাবো না আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,”কিন্তু ভাতও তো নেই কি দিয়ে খাবে?” মা বললেন,”ফ্রিজে গতকালের ঠান্ডা ভাত আছে..ভাতে পানি দিয়ে পান্তাভাত খাবো..ইলিশ মাছ ভাজা আর শুটকি ভর্তা তো আছেই..পান্তাভাতের সাথে শুটকিভর্তা আর ইলিশ মাছ ভাজা একসাথে সেই হবে খেতে..আয় তাড়াতাড়ি ওঠ..একসাথে খাবো”

আমি ছোটবেলার মতো মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,”আচ্ছা মা, সব মায়েরা এতো সেরা হয় কেন? সবকিছু নিমিষেই ম্যানেজ করে কিভাবে গো?” মা এবার মুচকি হেসে বললেন,”যেদিন মা হবি.. সেদিনই বুঝবি নে এবার আমায় মা দিবসের শুভেচ্ছা জানা প্রতিবছর তোকে বলে বলে মা দিবসের শুভেচ্ছা নিতে হয় আমি আবার কান্না শুরু করে দিলাম মা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,”এই দেখো মেয়ের কান্ড! এভাবে কথায় কথায় কাঁদলে তো তোকে বিয়ে দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে আমার!! এক কাজ কর, তুই এখানে বসে বসে কাঁদতে থাক আমি গেলাম খেতে..বড্ড ক্ষিধে পেয়েছে!” আমিও কান্নাকাটি মুছে হাসতে হাসতে মায়ের পিছন পিছন গেলাম গিয়ে দেখি মাও চোখের জল আড়াল করে হাসছেন আমি সেই চোখের জলটা ভালোভাবেই চিনি এটা কষ্টের নয় এটা স্বস্তির চোখের জল, এটা শান্তির চোখের জল…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত