মাঝেমাঝে মিতুর অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা দেখলে আমার প্রচণ্ড রাগ উঠে।আমি কিছু বলতে পারিনা।বড় করে কথা বলতে পারিনা।খুব চুপচাপ স্বভাবের মানুষ আমি।ছোট থেকেই।আমার রাগ আছে।আমি সেটাতে দেখাতে পারিনা কিংবা উগরে দিতে পারিনা।সম্ভবত মিতু তাই এমনটা করে।আমার রাগ দেখার লোভে।রাত দশটা।এখন ঘুমোনোর সময়।আর মিতু এই সময় খাটে বসে পা দুলাতে দুলাতে আয়েশ করে আইসক্রিম খাচ্ছে। আমার রাগ হচ্ছে মিতুর উপর।
প্রচণ্ড রাগ।মেয়েটা ঠাণ্ডা কোনকিছু সহ্য করতে পারেনা।সাথে সাথেই সর্দি লেগে যায়।মাঝেমাঝে হালকা জ্বরও আসে।আমি ওর জন্য কখনওই আইসক্রিম আনিনা।হয়ত পাড়ার দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।আমার রাগ উপভোগ করবে বলে।খেয়াল করলাম,আমি প্রচণ্ড ঘামছি গরমে।’কিন্তু ফ্যান টা চালাচ্ছি না।অতিরিক্ত গরম লাগলে আমি ঠাণ্ডা হওয়ার কিছুই করিনা।উল্টো ফ্যান অফ করে দিয়ে গরমে গরম কাটার অপেক্ষা করি।শীতকালে তার উল্টো। প্রচণ্ড শীত পড়লে আমি ফ্যানের শাঁ শাঁ শব্দ শুনতে শুনতে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।ভালো লাগে।এই অভ্যাস টা পেয়েছি আমার বাবা থেকে।মা বলেছেন।বাবা সম্ভবত দাদা থেকেই পেয়েছেন।সিওর না।
সকাল হয়েছে।আজ মিতুর আগেই ঘুমটা ভেঙে গেল।ও ঘুমোচ্ছে এখনও। ঘুমোলে মিতু বেশ নিষ্পাপ লাগে।আমার রাতের রাগ টা এখন আর নেই।আমি আলতো করে মিতুর কপাল ছুঁয়ে দিলাম।জ্বর এসেছে কিনা দেখার জন্য।কপাল ঠাণ্ডা। মানে জ্বর আসেনি।’আচ্ছা ওর কি রাতের ঠাণ্ডা আইসক্রিম খেয়ে গলা ব্যাথা করছেনা তো?জ্বর উঠলে শরীর ছুঁয়ে বুঝে নেওয়া যায়।’কিন্তু গলা ব্যাথা বাহির থেকে বুঝা যায়না।
‘মিস্টার বিন, আমার জ্বর কিংবা গলা ব্যাথা কোনটাই হয়নি।কারণ আমি প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়েছি।’মিতু আমাকে মিস্টার বিন ডাকে।যদিও আমি মিস্টার বিনের মত কখনওই রসিকতা করিনা।কেন ডাকে জানিনা।অবশ্য জানতে আগ্রহও জন্মেনা।ওর যেটা খুশি ডাকুক। এই মুহূর্তে আমার প্রচণ্ড লজ্জা লাগছে।মিতুর কপালে ছুঁয়ে দিলাম।অথচ বুঝতে পারলাম না সে জেগে আছে।নিজেকে বোকা ভেবে খুব লজ্জা পাচ্ছি। সকালের নাস্তা শেষে তৈরি হলাম অফিসের জন্য।মিতু আমার পিছু পিছু বারান্দায় আসছে এগিয়ে দিতে।দুজনেই চুপচাপ। ‘মিস্টান বিন আকাশের অবস্থা দেখেছো?’
‘হু।’
‘কেমন?’
‘তুমি যেমন দেখছো। ‘
‘মনে হয় এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে।’
‘হু।’
‘বলছিলাম আজ অফিস যেওনা। দুজন মিলে বৃষ্টি বিলাস করলে কেমন হয়?’ ‘খুব খারাপ হয়।’ আমি অফিস কামাই করতে পারবনা আসি। ‘ছাতা টা নিয়ে যাও।’ ‘লাগবেনা।বৃষ্টি আসার আগে আমি পৌছে যাব।’ ‘হুমম।ভালো থেক।’ অফিস না আমি বাড়ির গেইটে পা রাখার আগে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি চলে এসেছে।পিছনে ফিরে দেখি মিতু ছাতা মাথায় ধরে ছুটে আসছে আমার দিকে।
আমার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিলো।আমি মিতু কে দেখছি।কি নিষ্পাপ চেহেরা।এই মেয়েটার অনেক ইচ্ছে আমার সাথে একটা দিন বৃষ্টি বিলাস করবে।একদিন বৃষ্টি বিলাস করলে খারাপ কিছু হবে বলে মনে হচ্ছেনা। হালকা সর্দি জ্বর হতে পারে।যদি তাই হয় ‘তাহলে আমি আর মিতু একে অপরকে সেবা করবো।মিতু চলে যাচ্ছে।আমি ছাতাটা ছুড়ে ফেলে দিলাম।পিছন থেকে মিতুর হাতটা ধরে টান দিলাম।মিতু আমার বুকের খুব কাছাকাছি।ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ‘মিস্টার বিন, বৃষ্টিতে ভিজলে যে অসুখ হবে।’ ‘প্যারাসিটামল খেয়ে নিব।’
মিতু ফিক করে হেসে দিল।আমি দেখছি। বৃষ্টিতে ভেজা মিতুর মুখ ‘ভীষণ মায়াবী লাগছে।গাছের ঢালে একজোড়া কবুতর বসে আছে তারাও বৃষ্টিতে ভিজছে। হয়তো মিতুর মতো অনেকদিন ধরে তারাও পরিকল্পনা করে রেখেছে একদিন বৃষ্টি বিলাস করবে।-‘আচ্ছা তাদের কি সর্দি জ্বর হবে !নাকি আমাদের মতো প্যারাসিটামল খেয়ে নিবে!….