আমি রাফি।পেশায় একজন মলমপার্টী ।গুরুজনরা বলেন, কোনো কাজই ছোট না।তাই আমি আমার পেশাটাকে যথেষ্ট সম্মান করি।শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সবাই আমার নাম জানে।কিন্ত কেউ আজ পর্যন্ত আমাকে ধরতে পারেনি।কারন কেউ আমার চেহারা চেনেনা, শুধু নামই জানে।তবে আমার কাজের আবার কিছু বৈশিষ্ট আছে।যেমন আমি বড় লোকদেরই শুধু মলম মারি।কারন গরিবকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।তবে এই কাজে আমার মতো দক্ষ নাকি আরেকটা মেয়ে আছে।মেয়েটার নাম জবা।
সবাই মলম জবা নামে ওকে চেনে।এই শহরের আরেকজন বড় মলম পার্টি। তবে ওকেও আমার মত আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। শুধু নামই জানে।এ রকমই একদিন কোনো মক্কেল পাচ্ছিলাম না।সাথেও বেশি টাকা নেই। ভাবলাম, আজ বাসে মলম পার্টি করা যাক।উঠলাম বাসে।বাসে উঠে মক্কেল খুজতে খুঁজতে একটা মেয়ের দিকে চোখ পরল।দেখে মনে হচ্ছে বড়লোক।ব্যাগেও ভালো টাকা আছে মনে হচ্ছে। ওর পাশের সিটটাতে গিয়ে বসলাম। মেয়েটা ঘুরে আমার দিকে তাকালো।আমি তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। ভাবলাম মেয়েটাকে একটু বাজিয়ে দেখি কেমন বাজে।
– কোথায় যাবেন?(আমি)
– ধানমন্ডি (মেয়ে)
– আপনার বাসা?
– জী।
– এখানে কোথায় এসেছিলেন?
– খালার বাসায়।আপনি কোথায় যাবেন?
– আমার বন্ধুর বাসায়।ধানমন্ডিতেই।
– ও আচ্ছা ভালোই হল।একসাথে যাওয়া যাবে।
– হ্যা ভালোই হল।মনে মনে বললাম,পাইছি, একে দিয়েই কাজ হবে।শুধু একটু সুযোগের অপেক্ষা।
-আপনি একটু বসেন আমি একটু দোকানে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে।
দোকানে গিয়ে দুটো দই কিনলাম। একটাতে পকেট থেকে ঘুমের ঔষধটা বের করে খানিকটা মিশিয়ে দিলাম। বাসে উঠে ঘুমের ঔষধ মেশানো দইটা মেয়েটার দিকে দিলাম।
– এই নিন! (আমি)
– না না আমি খাবোনা আপনি খান।(মেয়ে)
– আরে খাননা, লজ্জা পাচ্ছেন কেন? খান।
– আচ্ছা। থ্যাংকস।
– এইযে, এইসব থ্যাংকস ট্যানস আমাকে দিয়েন না।থ্যাংকস ঔ উপর ওয়ালারে দেন।
মেয়েটা একগাল হেসে দইটা খেতে লাগলো।আমিও খাচ্ছি।বাস চলছে।খাওয়া শেষে মেয়েটা ব্যাগ থেকে দুটো বাটি বের করে একটা আমার দিকে দিলো।
– নিন।(মেয়ে)
– কি?(আমি)
– নুডলস
– না না এখন এইগুলা কেন না না আপনি খান।
– খান খান আপনেরটা আমি খাইছিনা?এখন আমারটা আপনে খান।
– আচ্ছা খাই।খাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,এখনো ঔষধটা কাজ করছেনা কেন?এতক্ষনে ত কাজ করার কথা।
খাওয়া শেষে বাটিটা আবার ব্যাগে রেখে দিলো মেয়েটা।
– খুব ঘুম ঘুম লাগছে।(মেয়ে)
– আচ্ছা আচ্ছা ঘুমান। বুঝতে পারলাম ঔষধ কাজ করছে।
– এত ঘুম কেন লাগছে?(মেয়ে)
– এই যে শুনছেন? ও হ্যালো!
নিশ্চিত হলাম মেয়েটা ঘুমিয়েছে।এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলাম।কিন্ত এদিকে আমারো খুব ঘুম পাচ্ছে।কি হল আজকে বুঝলাম না।কিছুতেই চোখ খোলা রাখতে পারছিনা।
মুখে কেউ পানি মারলো মনে হলো।
– ও ভাইজান আরে ও ভাই ও আপু ওঠছেন?আর কত ঘুমাইবেন? (হেল্পার)
– কি ব্যাপার পানি মারেন ক্যান? বাস কি চইলা আসছে? (আমি)
– দুই ঘন্টা আগে বাস আসছে। কি ডাকাডাকিটাই না করছি।ভাবছি মনে হয় মারা গেছেন। নইলে এইরকম কেউ ঘুমায়?
– আচ্ছা যান, যাচ্ছি। (মেয়ে)
– যান যান তারাতারি যান। ( হেল্পার) মেয়েটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলল,
– কোন দলের? কবে আইসো? (মেয়ে)
– কি কন? (আমি)
– বুঝতাছনা? দইয়ে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া লুট করো!
– তুমিওতো করছ ,করনায়? নুডলসে ঘুমের ঔষধ দেওনায়, দেছত!
মেয়েটা কিছুক্ষণ কি জানি চিন্তা করে -আচ্ছা যাই হোক,কথা বাড়াইয়া লাভ নাই। আমরা একই কাজ করি।যার যার মত চলে যাই এইটাই ভালো।দুজনেরি মঙ্গল।
– হুম ঠিক কইছ।
– সর্বনাশ! মলম জবারেও কেউ আইজ মলম মারলো? কি আজব সময় আসলো। ক্যামনে সম্ভব?
– তুমি মলম জবা। এইডা কি শুনাইলা।
-হ্যা।আমিই মলম জবা।কিন্তু তুমি?
– আমি মলম রাফি।
– কিহ, তুমি মলম রা-ফি?
– আরে হ্যা!
– আচ্ছা, এই ব্যাপার।তোমারে আইজ পাইছি। কিছু কাজ আমি করি না,তাও পাবলিক আমার দোষ দেয়ে।অইটা তুমি কর।আর দোষ পরে গিয়া আমার ঘারে?খাইছি আইজ তোমারে!
-কি করবা? মারবা নাহি?
-আরে কই যাও! কই যাও! দাড়াও। ভয় নাই মারমুনা!তোমারে মাইরা আর কি হইবো।আমরাতো একই জাত।রক্তে মাংসে মলম,হা হা, মজা করলাম!
-হুম।তয় তোমারে আমার কেনোজানি খুব ভালোলাগছে।কিছু মনে না করো আমারে বিয়া করবা? আসলে এই জগতে মলমপার্টিরাই আমার সব।এরা ছাড়া আর কেউ নাই আমার। কেউ না।
– আরে কান্দ ক্যা। আরে আমিতো আছি, আছিনা?আমারও কেউ নাই পৃথিবীতে।চলো বিয়া করি।
– চলো।
বাস থেকে বেরিয়ে হেটে চললাম কাজি অফিসের দিকে।বিয়া করলাম দুজনে। শহরের আনাচে কানাচে সব মলম পার্টিদের বিয়ার দাওয়াত দিলাম।সবাই খুব মজা করলো।খুব ধুম ধাম করে দুজন বিশিষ্ট মলম পার্টির বিয়ে হলো।