বইপোকা

বইপোকা

মেয়েটা বড্ড বইপোকা।বইয়ের পাগল যাকে বলে।যখনই ভার্সিটি গিয়ে ওর খোঁজ নিতাম, তখনই দেখতাম লাইব্রেরি না হয় ক্যাম্পসেরই কোনো এক কোণায়,কোনো এক গাছের নিচে বসে বই পড়ছে।এমন মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি। সাধারণত যারা বই পছন্দ করে তারা খুব কমই কথা বলে,চুপচাপ হয়।ওর ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়।চোখে চশমা একটা বাধিয়ে বই পড়তেই থাকে।ক্লাসের বই এতো পড়লে হয়তো ফার্স্ট হয়ে যেতো।কিন্তু সেইদিকে ম্যাডামের আগ্রহের মাত্রাটা খুবই নগন্য।ওর যত আগ্রহ বই পড়ে, সেই বইয়ের গল্প আমাকে শোনানো।আমিও শুনি। কিন্তু মনে থাকে না।

একদিন কথায় কথায় বললাম,”কি এতো পড় শুনি?আমি মানুষটা যে কতক্ষণ ধরে পাশে বসে আছি সেদিকে তো কোনো খেয়ালই নেই দেখছি!” এ কথায়ও ম্যাডামের পড়ায় ছেদ পড়লো না।ওর নাম ইরা।ও কে ম্যাডাম বলে ডাকি।আর ও ক্ষেপে যায়।ওকে রাগাতে যে কি ভালো লাগে আমার!! কতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে পাশ থেকে উঠে যেতে চাইলাম।তখনই ও আমার হাতটা ধরে ফেললো।এই প্রথম ও আমার হাতটা ধরলো।হয়তো বন্ধু ভেবে ধরেছিলো।কিন্তু আমি হয়তো ওকে বন্ধুর থেকে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি।তাই কেমন যেনো লাগলো।খুব সংকচ হচ্ছিলো।

“এই সাব্বির!!!কই যাচ্ছো তুমি?” “চলে যাচ্ছি।তুমি থাকো বই নিয়ে।আমি এখানে আসলাম একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য।আর তুমি কিনা বই নিয়েই পড়ে আছো!”

“আচ্ছা, কি হয়েছে বলো।আর মাত্র চারটে পাতা বাকি।এটুকু পড়তে দিলে কি হতো?তুমি জানো?এই বইটা শেষ করলে আমার পুরো ৫৫০ টা বই পড়া হয়ে যাবে।আমার যে কি আনন্দ লাগছে” ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আমি মাত্র ৫ খানা বই পড়েছি কিনা সন্দেহ। আমার গোমড়া মুখ দেখে ও চুপ হয়ে গেলো।ভেবেছে আমি হয়তো রাগ করেছি।তাই রাগ ভাঙ্গানোর সুরে বলতে লাগলো,

–“এই..তুৃমি আমার বেস্টু না??তাহলে আমার উপর রাগ করে আছো কেন?আচ্ছা আমি আর বইয়ের কথা বলছি না।তুমি বলো কি বলবে।”
–“ধ্যাত্।তুমি মুডটাই নষ্ট করে দিলে।বলবো না যাও” (সাব্বির)
–“স্যরি বলছি তো!!তুমি বল না।প্লিজ”।
–“আচ্ছা বলছি শোনো।কালকে আমরা সব বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাবো বলে প্লান করেছি।তুৃমি কিন্তু না বলবে না।”
–“কিন্তু কাল তো হবে না।কাল আমি বাসা থেকে বেরোতে পারব না।”
–“আমি আগেই বলেছি যে না বলবে না।এমনি তুমি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছো।এবার কিন্তু আরও রাগ হচ্ছে।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে।যাবো।তবে বেশি সময় না।সময় হলে বাসা থেকে আমায় নিয়ে যেও এসে।”

সাব্বির মনে মনে অনেক খুশি হলো।এতো দিনের ইচ্ছা পূরণ হবে ভেবে। ইরার মনটা খুব খারাপ।আজ ওর জন্মদিন।বাবা মারা যাওয়ার পর আর কেউ পালন করেনি জন্মদিন। বাবা একবার জন্মদিন এ ওকে একটা নীল রং এর শাড়ি দিয়েছিলো।আজ বাবার দেওয়া শাড়িটা পরেছে ও।মা দেখে অবাক।ময়ের সাথে কথা বলতে বলতেই সাব্বির চলে আসলো।দরজা খুলতেই সাব্বির ইরাকে দেখে অবাক।কি চমৎকার লাগছে ইরাকে।হুমায়ূন আহমেদের ‘রুপার’ মতো দেখাচ্ছে।মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।ইরার কথাতে তার ছেদ ঘটলো।

“কী হলো? হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
“না।কিছুনা।চল তাড়াতাড়ি।দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।উত্তরার কাছাকাছি একটা সুন্দর জায়গা আছে।একেবারে সবুজে ভরা।জায়গাটা ইরার অনেক পছন্দের। বাবার সাথে আগে অনেকবার এসেছে।শেষবার বাবার সাথেই এসেছিলো।আজ আবার আসলো। গাড়ি থেকে নেমে ওরা গিয়ে দাড়ালো সেখানে।

“আর সবাই কই?”
“আর কেউ আসে নি।”
“মানে!তুমি না বললে সবাই আসবে?”
“হুম…..কিন্তু কেউ আসেনি। ”

সাব্বির হঠাৎ দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে একটা ব্যাগ নিয়ে আসলো।ব্যাগের ভেতর অনেক গুলো চকলেট আর ফুলের বুকে।এগিয়ে দিয়ে বলল….”Happy Birthday Era” তোমায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আজ তোমায় রুপার মতো লাগছে।তোমার প্রিয় চরিত্র রুপা।

“ধন্যবাদ।অনেক ধন্যবাদ।”
“দাড়ান ম্যাডাম।এখনও বাকি।চোখটা কি বন্ধ করবেন?”
“কেন?”
“আহা!!বন্ধ করোই না”
“আচ্ছা।”

খানিক বাদে….”এবার চোখ খোলো।” ইরা দেখে হুমায়ূন আহমেদ এর ‘শুভ্র সমগ্র’। যেটা একবার বইমেলায় কিনে সেখানেই ফিরে এসেছিলো ইরা।ওকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক খুশি হয়েছে।
ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও কাঁদছে।বই পাওয়ার খুশিতে।একেবারে ছোটদের মতো।আমার হাসি পাচ্ছিলো দেখে।

“আরে ম্যাডাম….কাঁদছো কেন?”
“কিছুনা।আমি অনেক খুশি হয়েছি।অনেক ধন্যবাদ।”
“আমি না তোমার বেস্টু??ধন্যবাদ দিতে হবে না।তোমার মতো মেয়ে আমি দেখিনি।”
“কেন?আমি কি করলাম?”
“তুমি একটা পোকা”
“আমি পোকা???”
“হুম।বই পোকা। হা হা হা।”

এরকম বই পোকারা থাকুক আজীবন।ভালো থাকুক বই পোকারা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত