মধ্যবিত্ত

মধ্যবিত্ত

একটু মনে করার চেষ্টা করুন তো যখন স্কুল স্টুডেন্ট ছিলেন টিফিনে সবাই এটা ওটা কিনে খেতে ব্যাস্ত থাকতো আর আপনার কাছে টাকা নেই বলে প্রায় দিনই ক্লাসে বসে থাকতেন আর কেউ যদি একটু দয়া দেখিয়েও খাওয়ার কথা বলতো আপনি,খেতে ভালোলাগছে না বলে কাটিয়ে দিতেন অন্যের কাছে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়ে বা স্যারের কিনতে বলা বই সবাই কিনলেও আপনি সঠিক সময়ে বইটি কিনে ক্লাসে আনতে ব্যর্থ হতেন এবং বারংবার স্যার কে বলতেন বই আনতে ভুলে গিয়েছি এরকম কয়েকদিন যাওয়ার পরে লজ্জার কারনে বই কেনার আগ পর্যন্ত অসুস্থতা বা অন্য কারন দেখিয়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকতেন না তবুও কেউকে বুঝতে দিতেন না যে পরিবারে এখন অভাবের ঋতু চলছে।
এরকম ঘটনা মনে পড়ছে না?

এ বাবা তাহলে আপনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নন। কারন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে – মেয়েদের অন্যের কাছে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়টা অনেক বেশি থাকে। তারা ফ্যানের নিচে শুয়ে ফ্যানের বাতাস ঠান্ডা হচ্ছে না গরম সেটা না ভেবে ফ্যান টা বন্ধ করে দেয় কারেন্ট বিল বেশি আসার ভয়ে। তাদের শিখতে হয় ফেক সোসাইটির সাথে তাল মিলিয়ে চলা যে সোসাইটিতে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে করে ভালো একটা চাকরি ছাড়া অন্য নিচু শ্রেণীর চাকরি বা কাজ করে তারা পেট চালাতে পারে না দরকার হলে না খেয়েই থাকতে হয় তবুও নিম্ন শ্রেণীর কিছু তারা করতে পারে না। কেউ যদিও বা সাহসসীকতার জোরে করেও থাকে তবে তাকে সমাজের লোক পরিহাস করে এজন্য অধিকাংশই ভালো চাকরি না পেয়ে বেকার থেকে যায়। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার কথা না হয় পরেই বলা যাবে আগে স্কুল কলেজ লাইফ টাই দেখি।

একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কে লেখাপড়া করানোর পেছনে তার বাবা মায়ের মূল উদ্দেশ্য থাকে যেন সে ভালো কোনে কিছু করতে পারে মানে তার করতেই হবে কিছু একটা।বলা যেতে পারে সে একটা ব্যবসার প্রজেক্ট তার পেছনে টাকা ইনভেস্ট করছে অনেক কষ্ট করে সে ভালো কিছু না করতে পারলে সব শেষ এমন একটা অবস্থা।
ছোট থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বিশেষ করে ছেলেরা তাদের কাঁধে অনেক বোঝা নিতে শিখে যায় বোঝা নিতে তারা বাধ্য থাকে।

ঈদে একটা পান্জাবি কিনে সেই পান্জাবি মনে মনে নতুন ভেবে আরো দুইটা ঈদ সাছ্যন্দে কাটিয়ে দেওয়াটা মধ্যবিত্ত সন্তানদের মুখস্ত ব্যপার। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে কখনো খাবার পায় কিংবা পায় না সেটা কোনো ব্যাপার না তবে দুপুরে কি খাবে সেই চিন্তাটা হেটে হেটে যেতে যেতেই চিন্তা করতে হয়। স্কুল,কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কোথায় ঘুরতে যাওয়া বা কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া যায় সেই আলোচনা তারা করেনা তাদের মাথায় অনবরত ঘুরতে থাকে মাস শেষের পথে স্কুল-কলেজের বেতন,টিউশন ফি গুলো জমা দিতে হবে।

বন্ধুদের কে দামি সেলুনের ঠিকানা দিয়ে নিজে সস্তা সেলুনে চুল কাটা বা বন্ধুদের ভালো ভালো কাপড়ের দোকান চিনিয়ে দিয়ে নিজে ফুটপাত থেকে কম দামি স্টান্ডার্ড কাপড়টা বেছে নিতে তারা ভালো করেই জানে। কেউ বাইরে যাবার সময় পরিবারের ছোট সদস্যগনের নানা ধরনের বায়না থাকে কেউ চকলেট খেতে চায় বা কেউ চিপস,কেউ চায় হরেক রকম খেলনা তারা জানে বাসায় আসার সময় হাতে করে কিছু আনতেই হবে যতই কষ্ট হোক তাদের ছোট্ট ছোট্ট আহ্লাদ গুলো ভেঙ্গে ফেলা যাবেনা তখন রিকশা ভাড়া ১৫/২০ টাকা তাদের আহ্লাদের জন্য বাঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চাপিয়ে পায়ে হেটে রাস্তাটা পার করে ফেলে।

কোথাও জন্মদিন,বিয়ে বা এরকম ফাংশনের ইনভাইট আসলে তাদের মাথায় ভন ভন করে ঘুরতে থাকে গিফটের টাকাটার কথা পরবর্তি সাত দিনের বাজারের টাকা দিয়ে ভালো একটা গিফট কিনে তাদের যেতে হয় কারন ওই যে স্টাটাস আছে।ইনভাইটে তো প্রেজেন্ট থাকতেই হবে আর যেতে গেলে গিফট ছাড়াও যাওয়ায় যাবে না। ছোট বেলা থেকে পুশে রাখা নানা শখ,ইচ্ছা বা স্বপ্ন গুলোকে এক নিমিষেই কবর দিয়ে দেওয়াটা বা আবদার গুলোকে শুধু নিজের মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখাটা তাদের নিয়ম। আর বাবা – মায়েদের কথা কি ই বা বলবো? তারা তো বেঁচে থাকে কিন্তু মরে যাওয়ার মতো করেই। তারা ছোট থেকে সন্তানদের শিখিয়ে আসে মিথ্যা বলা মহাপাপ অথচ তারাই সন্তানদের কাছে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলে যায়।

শত অসুস্থ থাকলেও টাকার অভাবে কখনো বলে না চিকিৎসা দরকার বা কিছু খাওয়া প্রয়োজন ঠিকই মিথ্যা হাসিটা তারা হেসে যায়।নিজের জন্য রাখা খাবার টুকুও সন্তানদের জন্য বাঁচিয়ে রাখে। একটি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে চিন্তা করে আমার সন্তান সুখে থাকলেই হলো। আর মেহমান আসলে ভালো খাবার তারপরে আপ্যায়নের সকল কিছুই পালন করতে হয় টাকার অভাব না বুঝিয়েই কারন মধ্যবিত্তের স্টাটাস টা মেনটেইন করতেই হবে রক্ত বিক্রি করে হলেও।নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত একই রকম শুধু পার্থক্যটা হলো নিম্নবিত্তরা যেকোনো কাজ করে যেভাবে সেভাবে তারা তাদের পেট চালাতে পারে স্টাটাস বা লোকে কি বলবে সে চিন্তা করা লাগে না আর মধ্যবিত্তদের সমাজে স্টাটাসটা মেইনটেইন করতে হয় আগে যার কারনে তাদের হাত পা বাঁধা থাকে।

আসলে এই টাকার ছড়াছড়ির যুগে মধ্যবিত্তদের জীবনযাপন করাটাই দায় হয়ে পড়েছে। তবে সব কিছুর শেষেও একটা সাফল্যের চূড়ান্ত থাকে আর সেরকমই একটা জরিপে দেখা গিয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ বিখ্যাত লোকগুলো এই মধ্যবিত্ত পরিবারেই সন্তান ছিলেন। এর কারন হতে পারে পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা বেশি আর না হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের বাস্তবতা আর পরিবারের সন্তানদের মনের মাঝে সেই বাস্তবতাটিকেই শক্তি হিসেবে গ্রহন করা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত