ভালোবাসার অন্য একটা অধ্যায়

ভালোবাসার অন্য একটা অধ্যায়

মানুষ কেন বদলায় এ টাইপের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কারোর বিশ বছর লেগে গেছে। সন্ধ্যা ফুরিয়ে রাতের আগমন দেখে আমরা রাতকে নিয়ে কবিতা আবৃতি করে থাকি। অথচ সন্ধ্যার কথা? গতকাল যে আমিটা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম, আজ আমার সামনে কোরমা পোলাও পেশ করাতে গতকালকের কথা ভুলে গিয়ে দিব্বি চেটে চুটে খেতে বসে গেলাম। অথচ গতকালকের ক্ষুধাটা? ভোগ বিলাশের জীবনে আমরা যখন এসির নিচে বসে কম্পিউটারে হিসাব নিকাশ করি, তখন খাতা আর কলমের কথা দিব্বি ভুলে যাই। অথচ এই খাতা আর কলমের মাধ্যমে আমরা আমাদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পেয়েছি। তাইলে কম্পিউটারে হিসাব করি কেন? হাহাহাহা। বিদঘুটে ব্যাপার স্যাপার তাইনা?

বিশ বছর আগের তোমার আমার সম্পর্কটা বিয়ের বিশ বছর পর ঠিক আগের মত কখনোই রাখা যায়না। এর কারণ কী? বিশ বছর আগে যে মেয়েটা স্বামীর কাছে জ্যোৎস্না দেখার বায়না ধরতো, বিশ বছর পর এখন তার জ্যোৎস্না দেখার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তার মানে বিশ বছর আগের মানুষটা বদলে গেছে? একজন তুমি কারোর বাবা। আবার এই তুমিটাই অন্য কারোর ভাই। কারোর কাছে তুমি ফুফা তো কারোর চাচা। কারোর নাতি তো কারোর দাদা। কারোর মামা তো কারোর নানা। অথচ এই তুমি তো একজনই। তাহলে প্রত্যেকজন তোমাকে এক নামে না ডেকে একেকজন একেকনামে ডাকে কেন? তার মানে হলো তুমি প্রত্যেকজনের কাছে এক হলেও তোমার রিলেশন একেকজনের কাছে একেক রকম।

মানুষ বদলায় না। কক্ষনোই না। মানুষের চাহিদা বদলায়। ব্যবহার বদলায়। রিলেশন বদলায়। এটার মধ্যে তোমার আমার কোনো হস্তক্ষেপ নেই। দূর থেকে আমি যাকে ফিল করি কাছে আসলে তার প্রতি ফিলিংসটা একটু হলেও কমে যায়। অথচ মানুষ তো একজনই। তাহলে ব্যবধানটা আসে কেন? আজ তোমাকে ভালোবাসি বলে কাছে পেতে চাই। তবে তোমাকে কাছে পেয়ে গেলে আমার ভালোবাসা যে ঠিক আগের মত থাকবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে? একদমই না। হতে পারে ভালোবাসা বড়বে, অথবা কমবে। মানুষ বদলায় না কখনো। মানুষ যদি বদলে যেতে পারতো তাহলে কালো মানুষটা সাদা হয়ে যেত, সাদাটা পিংক কালারের হত। মানুষ সেই আগের মানুষই থাকে। শুধু তার মনুষত্ব্যটা বদলে যায়।

সাত বছর আগে যে তুমিকে আমি ভালোবাসতাম, সাতবছর পর ঠিক ততটুকু ভালোবাসিনা। হয়ত ভালোবাসার ওজন কমেছে অথবা বেড়েছে। তিন বছরের বন্ধুটা একটা সময় আমাদের শক্র হয়ে যায়। কাছের মানুষ দূরের হয়ে যায়। তার মানে তারা বদলে যায়নি। বরং সময় বদলেছে। চাহিদা বছলেছে। খাতা কলমের হিসাবটা এখন কম্পিউটার করে। তার মানে সময় বদলেছে। আর সময় যখন বদলায় তখন অতীতের কথা একটু একটু করে আমার স্মৃতিপট থেকে মুছে যাওয়া শুরু করে। শিশুকালে আমাদের প্রত্যেকের একটা অতীত থাকে যা ব্রেইনের চাপায় পৃষ্ট হয়। দু একটা ছাড়া বাকি কিছুই তেমন একটা স্মরণ নেই। রাত আসলে সন্ধ্যার কথা ভুলে যাই। সন্ধ্যা আসলে দিনের কথা ভুলে যাই। রাস্তায় সুন্দরি মেয়ে দেখলে সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের প্রেমিকার কথা ভুলে যাই। এটা এক প্রকার নিয়ম।

বন্ধুত্ব আর ভালোবাসাটা রাস্তায় দেখা সুন্দরি মেয়ের মত সাময়িক। যা আমাদের একটা অধ্যায় থেকে বিমুখ করে রাখে। তবুও এসব আমাদের চাই। এসব ছাড়া আমাদের চলেনা। ভালোবাসা আর দুশমনির মধ্যবর্তী একটা জায়গা আছে। আমি তাকে তেমন একটা ভালোবাসিনা। আবার তাকে ছেড়ে দিতেও পারিনা। প্রত্যেকটা রিলেশন দাঁত কামড়ে ধরে ঠিক এই কথার মাধ্যমে বেঁচে থাকে। ভালোবাসা কোনো কালেই প্রথমের মত থাকেনা। একটা অধ্যায় এমন আসে তখন তা অনিচ্ছাকৃত চালিয়ে নিতে হয়। ভালোবাসিনা তার পরও ভালোবাসি বলে চালিয়ে নিতে হয় যেভাবে কষ্টে থাকার পরও ভালো আছি বলা।

একটা সময় মানুষ মুক্তি চায়। ফ্রিডম চায়। এটাই ভালোবাসার অন্য একটা অধ্যায়। যা রচনা করলে মানুষ স্বার্থপর ধোঁকাবাজ বিশ্বাসঘাতক বলে থাকে। প্রত্যেকটা মানুষ ভালোবাসাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখতে চায়। কেউ ভালোবাসাকে উন্মুক্ত ভাবে উড়তে দেয়না। খাঁচায় কিছুদিন রাখার পর তাকে উড়তে দিন। অন্যথায় একদিন সে মুক্তি পেয়ে সব সময়ের জন্য উড়ে যাবে। আর আপনি ভাববেন সে বদলে গেছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত