রেল স্টেশনে পৌছাতেই বুঝতে পারলো এখানে আসতে দেড়ি হয়েছে তাদের,মাত্র ট্রেন ছাড়তে আরম্ভ করেছে দৌড়ে এখনো ট্রেনে ওঠা সম্ভব,ট্রেনের পিছে ছুটতে শুরু করলো তারা,তার হাত ধরে দৌড়াচ্ছে মুনিয়া,ট্রেনের কাছাকাছি এসে মুনিয়া উঠে পড়লে ও হাপিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে,,,,,,হঠাৎ করেই ঘুম ভেজ্ঞে গেলো মুন্নার,সে বুঝতে পারলো এতোক্ষন তার সাথে যা ঘটছিলো তা ছিলো ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন,ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সকাল ৮.৫০ বেজে গেছে,তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিলো মুন্না,মোবাইল হাতে নিয়ে সে দেখলো মুনিয়ার নাম্বার থেকে ৪৬টা কল আর ৭ টা ম্যাসেজ,, মুনিয়া হচ্ছে মুন্নার প্রেমিকা,৩বছরের কিছুটা বেশি সময় হয়েছে তাদের রিলেশনের বয়স,মুনিয়ার আজ এতোবার মুন্নাকে কল দেয়ার পেছনে রয়েছে একটা কারণ,,কি কারণ?
আজ মুন্না আর মুনিয়ার পালাবার কথা ছিলো,ঠিক করেছিলো তারা দুজন পালিয়ে এমন কোথাও চলে যাবে যেখানে দুজনে থাকবে মুক্ত হয়ে,মুন্না পড়ালেখা শেষ করে হন্য হয়ে একটা চাকুরী খুঁজলে ও কিছুতেই মেলাতে পারছে না চাকুরী নামের সোনার হরিণটা,আবার ওদিকে মুনিয়াকে বিয়ে দেবার জন্য তার বাসা থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আর সে জন্যই তারা দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো পালিয়ে যাবার কিন্তু খালি পালালেই তো হবে না তার পর থাকা খাওয়া সংসার এসবের খরচ জোগাড় করবে কিভাবে,? এসব ভাবতেই আর সকালে পালাবার জন্য ঘুম থেকে ওঠা হয়ে ওঠেনি মুন্নার,,এসব ভাবতে ভাবতেই মুনিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো,,
~ মুন্না- কল রিসিভ করে কথা না বলে চুপ করে রয়েছে,
~ মুনিয়া- রাগি কন্ঠে, “ওই কথা বলো না কেনো,,? কাজটা তুমি ঠিক করলা”?
~ খুব ভয়ে ভয়ে মুন্না, “না আসলে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি”
~ মুন্নার মুখ থেকে কথা শোনার সাথে সাথে মুনিয়ার রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গিয়ে, “এই খবরদার একদম মিথ্যা বলবে না,তুমি জানো আমি কতোক্ষন রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম”
~ মুনিয়ার কাছে মিথ্যা বলে লাভ নাই ভেবে মুন্না মুনিয়াকে, “দেখো খালি পালালেই তো হবে না,থাকা খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কতো খরচ”
~ কিছু শান্ত ভাবে মুন্নাকে মুনিয়া, “তোমাকে তো আমার ব্যাপারটা ও বুঝতে হবে,দিন দিন আমার প্রতি বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ বাড়ছে”
~ কিছুক্ষন চুপ থেকে মুনিয়াকে মুন্না, “আর একটু কষ্ট করতেই হবে”
~ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মুনিয়া, “তোমার জন্য আমি যতো রকমের কষ্ট আছে তার সব করতে পারবো কিন্তু আমার বাসাকে ঠেকাবো কিভাবে,?তারা তো আমার বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে”
~ ঠান্ডা মাথায় মুনিয়ার সব কথা শুনে মুন্না, “ঠিক এরকম একটা অবস্থায় আমি বাসা থেকে তোমাকে নিয়ে পালাতে বা তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না,জানোই তো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি তার উপর আবার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি,তাদের উপর ও তো আমার দায়িত্ব আছে”
~ মুন্নার কাছ থেকে এরকম কথা শুনে কিছু বলার ইচ্ছা না থাকলে ও পরিস্থিতি এমন যে এখন চুপ করে থাকা যাবে না,মুন্নাকে মুনিয়া, “দেখো আমি কিছু জানি না,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না,প্লিজ মুন্না তুমি কিছু একটা করো”
কথা গুলি বলেই কাঁদতে কাঁদতে ফোনের লাইনটা কেটে দিলো মুনিয়া,মোবাইল হাতে নিয়ে বসে বসে ভাবছে মুন্না “কি করা যায়” সে নিজে ও মুনিয়াকে ভালোবাসে অনেক আর মুনিয়াকে ছাড়া থাকা মুন্নার কাছে অসম্ভব,আবার নিজেই ভাবছে “কি করারই বা আছে চেষ্টার তো আর কমতি রাখছে না” পরের দিন সকালে মুনিয়ার কাছ থেকে আবার কল আসে মুন্নার কাছে,,
~ মুন্না- কল রিসিভ করে “হ্যা বলো”
~ মুনিয়া- কাপা কন্ঠে মুনিয়া, “আচ্ছা আজ বিকালে একবার দেখা করতে পারবা? খুব দরকার”
~ মুনিয়ার কথা কিছুটা ভয় পেলো মুন্না,মুনিয়া কি বলতে চাই তা শোনার আগ্রহ হলো তার, “আচ্ছা ঠিক আছে” মুন্না আর মুনিয়া ঠিক সময় মতো তারা যেখানে দেখা করে সেখানে হাজির,মুন্নার দিকে বেশ কয়েকবার তাকালে ও চুপ ছিলো মুনিয়া,মুন্না মুনিয়াকে দেখেই বুঝছে মেয়েটা বেশ চিন্তিত,হাতে হাত রেখে মুনিয়াকে,,,,
~ মুন্না- খুব আস্তে করে, “কি হয়েছে”
~ মুনিয়া- কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুন্নার দিকে তাকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছে মেয়েটা,
~ মুনিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে মুন্না, “কি হয়েছে আমাকে বলো”
~ কান্না কিছুটা থামিয়ে মুন্নাকে মুনিয়া, “সেদিন আমাকে যারা দেখতে এসেছিলো তাদের আমাকে পছন্দ হয়েছে,আজ বিকালে আমার আব্বু আর চাচ্চুরা ছেলে পক্ষের বাড়িতে যাবে সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে হয়তো এখানেই আমাকে বিয়ে করতে হবে” কথা গুলি বললেই আবার মুন্নাকে জরিয়ে কান্না শুরু করে মুনিয়া,
~ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না মুন্না,মুনিয়ার মতো তার ও কষ্ট হচ্ছে সমান, “ঠিক আছে তুমি আরেকটু অপেক্ষা করো আমি কিছু একটা করছি”
~ মুন্নার দিকে অদ্ভুত এক চাহনীতে তাকিয়ে মুনিয়া, “প্লিজ তুমি যা করার তাড়াতাড়ি করো,আমার বাসা থেকে যদি বিয়ের আয়োজন করেই ফেলে তাহলে আমি কিন্তু বিয়ের আসর থেকে পালাতে পারবো না”
~ মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে তার হাতটি খুব শক্ত করে ধরে কিছুই বলতে পারলো না মুন্না,কিছু বলার মতো অবস্তাতে ও ছিলো না ছেলেটা,সেদিনের মতো সেখানেই বিদায় নিলো তারা দুজন,,
কয়েকদিন পর, সকাল থেকে অনেকবার কল দিয়ে ও বার বার মুন্নার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছে মুনিয়া,মুন্নাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে তার ওদিকে মুনিয়া একটা খুশির খবর দিবে মুন্নাকে তাই এখন মুন্নাকে তার খুব দরকার,সেদিন সারাদিনের চেষ্টাতে ও মুন্নার মোবাইল খোলা পেলো না মুনিয়া,, পরের দিন সকালে খুব বড় রকমের একটা চমক দিতে মুনিয়াকে কল দিয়েছে মুন্না,মনে মনে মুন্না ভাবছে খবরটা শুনে কতোই না খুশি হবে মুনিয়া,তাদের সব স্বপ্ন এবার পূরণ হতে চলেছে,,,,মুনিয়ার নাম্বারে কল দিলো মুন্না,মুন্নার নাম্বার থেকে মুনিয়ার কাছে কল আসতেই সাথে সাথে রিসিভ করে,,
~ মুনিয়া- কিছুক্ষন চুপ থেকে মুন্নাকে, “কাল সারাদিন তোমাকে কল দিয়েছি কোথায় ছিলো তুমি,? জানো কি হয়েছে”
~ মুন্না- মুনিয়াকে জানাতে চাওয়া খুশির খবরটা নিজের কাছে চাপিয়ে রেখে মুন্না, “কি হয়েছে”
~ খুশির কথা বলার আগে মুন্নার সাথে একটু মজা করা যাক ভেবে মুনিয়া, “সেদিন যে ছেলেটার কথা বলেছিলাম কাল তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে,বিয়ের আগে তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম কিছু একটা করা যাক কিনা ভেবে কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো”
~ মুনিয়ার কাছ থেকে কথা গুলি শুনে কান্নার পানিতে ভিজে গেছে মুন্নার চোঁখ,অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা হলে ও ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হবার কষ্টে হয়তো সে সব ভুলে গেছে সে, “তুমি বিয়ে করে নিলে”?
~ ফোনের এপাশ থেকে হাঁসতে হাঁসতে মুনিয়া, “হ্যা, কি আর করবো তুমি তো পারলে না”
~ কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে মুন্নার, “আচ্ছা ভালো থাকো তাহলে,আমার ভালো লাগছে না ফোনটা রাখি” হয়তো নিজেকে আর সামলাতে পারছে না মুন্না,ফোন রেখে কেঁদে নিজের কষ্ট হালকা করতে চাচ্ছে সে,
~ অনেক মজা করেছি আর দরকার নেই ভেবে মুন্নাকে মুনিয়া, “এই তুমি সত্যি সত্যি সব বিশ্বাস করে ফেলছো নাকি”?
~ কিছুটা অবাক হয়ে মুন্না, “বিশ্বাস করবো না তো কি অন্যের বউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো”
~ হা,হা,হা,,অনেক্ষন হেঁসে মুনিয়া, “শোনো আমার চরিত্র তোমার মতো না,আর হ্যা,সত্যিই কাল ওই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ের তারিক ফাইনাল করে ফেলছিলো সবাই,ঠিক তখম আমি আব্বু আম্মুকে বলি যে “আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি আর বিয়ে যদি করতে হয় তাকেই করব,আব্বু আম্মু আরর না করতে পারলো না, আমাকে বললো “ঠিক আছে সেই ছেলেটার বাবা মাকে বাসায় আসতে বলো”
~ মুনিয়ার মুখ থেকে কথাটা শুনে আবার নিজের ভিতর প্রাণ ফিরে পেলো মুন্না,সব কষ্ট এক নিমিষেই হারিয়ে পালালো তার কাছ থেকে,খুব খুশি হয়ে সে মুনিয়াকে, “আচ্ছা তোমার আব্বু আম্মু জানতে চাইনি তোমার পছন্দের সেই ছেলেটা কি করে”?
~ খুব আস্তে করে মুন্নাকে মুনিয়া, “হ্যা, আমি বলেছি ও একটা চাকুরী খুঁজছে, খুব দ্রুত পেয়ে যাবে”
~ খুশির খবরটা মুনিয়াকে দেয়ার এটাই সময়, “আমি একটা ব্যাংকে চাকুরীর জন্য অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছিলাম আর কাল সেই চাকুরীটা আমি পেয়ে গেছি,আমি আর বেকার নেই”
~ মুন্নার মুখ থেকে খবরটা শোনার সাথে সাথে খুশিতে লাফালাফি করা অবস্থা মুনিয়ার, “সত্যি সত্যি আজ আমি অনেক খুশি, এতো সুন্দর ভাবে আমাদের স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগছে” মুনিয়ার খুশিতে মুন্না নিজে ও খুব খুশি,অনেক কষ্টের পর তাদের স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে,তারা দুজন হচ্ছে দুজনার,জয় হচ্ছে তাদের সত্যিকারের ভালোবাসার,,।