বাড়িতে আজ সাজসাজ রব।চারদিকে লাল-নীল আলোর ঝলকানি,বাড়িভর্তি মেহমান।হৈচৈ গরম পরিবেশ;বাচ্চাগুলো দৌঁড়া-দৌড়ি চেঁচামেচি করছে মৌনতার বাবা সবকিছুর তদারকি করছেন।মৌনতার মা মহিলাদের সাথে খোশ-গল্পে ব্যস্ত..
-“এখানে বসে বসে গল্প করলে চলবে? কত কাজ চারদিকে”
-“হ্যাঁ….জানি”
-“মৌনতার কাছে কেউ আছে? ওকে আবার একা রেখে এসেছো না কি?”
-“আরে নাহ্!! প্রিয়তা ওর সাথে আছে,সাজগোজে ব্যস্ত”
-“ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই…কি অঘটন ঘটায় না জানি”
-“তুমি শুধু শুধু সন্দেহ করছো,আমার মেয়ে মোটেও এমন না।একটু আগেও দেখলাম কথা বলছে সবার সাথে…”
-“সব ভালোমত মিটলেই হলো…”
-“বরপক্ষ আসতে কত দেরি?”
-“ফোন দিয়েছি ধরছে না,হয়ত জ্যামে পড়ছে।রাস্তার যে অবস্থা!”
কাকে যেনো ডাক দিয়ে আবার কাজে চলে গেলেন মৌনতার বাবা.. মৌনতা, নামটা মৌনতা হলেও দুষ্টের শিরোমনি সে…ছোট থেকেই দস্যি মেয়ে,স্থির হয়ে এক মুর্হূতও থাকতে পারে না। সারাক্ষন বকবক,টইটই করে বেড়ানো যার স্বভাব।গুন্ডি বললে ভুল হবে না,যত শয়তানি-বান্দরামি বুদ্ধি ওর মাথায়! ৩টা বিয়ে ভেঙ্গেছে!!! মৌনতার বাবা ভেবে পাচ্ছিলেন না বিয়েগুলো কেনো ভেঙ্গে যাচ্ছে।এলাকায় যথেষ্ট সুনাম আছে তার পরিবার সমন্ধে।পাত্রপক্ষ মৌনতাকে দেখে পছন্দ করে,কোনো এক কারণে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। প্রিয়তাকে চাপ দেয়ার পর জানা যায় মৌনতাই এই বিয়েগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই বাবা এবার কড়াকড়ি সব নজর রেখেছেন।মৌনতার সাথে ছেলের দেখা করতে দেননি,কথাও বলতে দেন নি।তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করেছেন…
-“কি রে আর কত পোজ মাইরা পিক তুলবি? চাপা ব্যাথা করে না এত পাউট করতে?”
-“আরে ধুর!! আজকে আমার বিয়ে এত তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হলে চলবে?”
-“তুই তো বিয়েতে রাজি ছিলি না,৩টা বিয়ে ভাঙ্গছিস! বাবার জন্য এবার….”
-“থাক হইছে,তুই মুখ না খুললেই চলত।তোরে আর কি বলব,তুই এমনিতেই ভীতুউউউউউউ….বাবা এক ধমক দিছে আর সব উগরায়ে দিছোস…(হাসতে হাসতে কাত হয়ে যাচ্ছে মৌনতা)”
-“এহ্….বাবাকে ভয় পাই তুই জানস,তাও এগুলা বলতে পারলি?(আবেগে গলা ধরে আসল প্রিয়তার)”
-“আচ্ছা বাদ দেয়…ঐ আমার মেকআপ খারাপ হয়ে যাইতেছে গরমে,বাতাস কর।উফফ…এত গরম।
আমার ১০,০০০ টাকার সিম্পলের মধ্যে হালকা গর্জিয়াস মেকআপ সব গরমে ধুয়ে যাইতেছে,ফেবুতে পিক আপলোড দেই নাই এখনো”
-“আর নাটক করিস না..বিয়ের জন্য তুই কোনোদিন সিরিয়াস ছিলি না,নিশ্চয়ই কোনো গভীর ষড়যন্ত্র করতেছো তুমি ভিতরে ভিতরে…”
-“আমি কোনো বিরোধী দল বা হিন্দি সিরিয়াল না যে ষড়যন্ত্র করব।আহা! বিয়ের সাজে আমাকে পুরাই কিউট লাগতেছে।ইচ্ছামতন পিক তুইলা ফেবুতে ছাড়মু…চিন্তা করিস না তোরেও ট্যাগ দিবোনে”
-“ডালমে জরুর কুচ কালা হে…(বিড়বিড় করে বলে প্রিয়তা)”
-“পুরা ডালই কালা হে(আস্তে করে বলে মৌনতা)”
-“কিছু বললি?”
-“ঐ আয়নাটা দে,লিপস্টিকটা ঠিক করি” একটু পর মৌনতার ফোনে ম্যাসেজ টোন বাজে,ফোনটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসে মৌনতা।
-“হাসিস কেন? পাগল হলি?”
-“নেহি মেরে বেহেন…”
-“ফোনে কি দেখোস? দেখি…”
-“ইয়ে তো ট্রেইলার হে…পিকচার আভি বাকি হে মেরি বেহনা”
কথাটা বলে চোখ মারে মৌনতা প্রিয়তা ভ্যাবাচাকা খেয়েছে পুরো,কিছু বুঝতে পারছে না।
“বর পালিয়েছে…বর পালিয়েছে..” পিচ্চিগুলো স্লোগান দিতে দিতে এদিক-ওদিক দৌঁড়াচ্ছে। মৌনতার বাবার মাথায় হাত,এ কি হলো!! উনি ভয় পেয়েছিলেন মৌনতা কি অঘটন ঘটায়,এখনতো বর পালিয়ে গেছে….কি করবেন উনি!! এটাও কি মৌনতার কাজ না তো?? কাকে মুখ দেখাবেন উনি? মান-সম্মান সব ধুলোয়ে মিশে হাওয়ায় উড়ে যাবে…মৌনতার মা অজ্ঞান হয়ে গেছেন বর পালিয়েছে শুনে,বাড়ির মহিলারা উনার জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত! প্রিয়তা জানালা থেকে সব শুনে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় মৌনতার দিকে…বেচারির কোনো ভাবনাই নাই,আরামসে খচাখচ পিক তুলেই যাচ্ছে মনে হয় আখেরি পিক তুলা তুলতেছে আর জীবনেও মনে হয় পিক তুলতে পারব না…
-“মৌনিপু,সত্যি করে বল তুই এ কাজ করছিস কি না?”
-“তোর কি মনে হয়?”
-“তুই করছিস”
-“গাধী…আমারে দেখসস তুই? একমাস ধরে ঘরবন্দি,ফোন ধরতে দেয় না,ঘুরতে যাইতে দেয় না…এমন কি বরের চেহারাটাও ভালোমতন দেখি নাই।আমি করমু এই কাজ?”
-“(ভেবে-চিন্তে)তাও ঠিক..কিন্তু তুই আমার বইন তুই কি চিজ আমার তা ভালো করেই জানা আছে”
-“কুল বইনা..কুল।অতিরিক্ত উত্তেজনা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক-জনস্বার্থে বিটিভি ”
-“থাম তুই…এমন সিরিয়াস মুর্হূতে…”
-“গ্লিসারলটা দে…”
-“কি করবি?”
-“আরে বইন,,আগে দে তারপর দেখ কি করি” প্রিয়তা গ্লিসারলটা মৌনতার হাতে দেয়।মৌনতা কয়েকফোঁটা গ্লিসারল চোখে ড্রপের মত দেয়,
-“আবার কি শুরু করলি??”
-“গাধী বুঝস না গ্লিসারল কিসের জন্য দেয়? নে,তুইও দেয়…কান্না করতে হেল্প হবে”
-“উফফ…তুই না!!!!!!!!”
-“তাড়াতাড়ি কর…না দিলে,
থাক দরকার নাই।বিয়ে তোর না আমার, আমার ভাঙ্গছে তাই টিপিকাল বাঙালি বধুর মত নাআআআআআ বলে চিৎকার কইরা আকাশ-বাতাস কাঁপাইতে পারবো না।তবে হিন্দি সিরিয়াল/বাংলা ছবি হলে পারতাম!কিন্তু গলা ফাটায়ে বিলাপ করতে দোষ নাই,সঙ্গে ন্যাচরাল লুকের জন্য কান্নাটাও জরুরি!তবে আফসুস এক বালতি,আমার ১০,০০০টাকার সিম্পলের ভিত্রে গর্জিয়াস মেকআপ
-“তুই চুপ কর বইন আমার…বাবা-মার সম্মান নিয়া টানাটানি হইতেছে ওখানে।এও কি সম্ভব!! বিয়ের দিন বর পালাইছে”
-“দুনিয়ামে কুচ ভি না মুনকিন নেহি হে মেরি বেহনা!”
-“রাখ তোর হিন্দি ডায়লগ”
এমন সময় মৌনতা চিৎকার ও মাগো! ও বাবাগো! আল্লাহ্গো! বলে ন্যাকাকান্না জুড়ে দেয়।প্রিয়তা আরো এক গাট্টি ভ্যাবাচাকা খায়….এমন সময় মা ঢুকে মৌনতাকে কাঁদতে দেখে কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে নিজেও কেঁদে দেয়,যদিও কান্নার পানি বোঝা যাচ্ছে না শুকনো কান্না বলা যেতে পারে।মেয়ে জামাই পালিয়েছে সে শোকে কান্নার পানিও বোধহয় অবাক হয়েছ!
-“মা রে কাঁদিস না….তোর কথা শুনলে আজ এমন হত না”
-“আম্মাগো….দাদীগো!!! আমার জামাই পালাইছে…কেউ কোনো জনমে এই কথা শুনছে? আমার এখন কি হবে গো? এতসাজুগুজু করছি জামাইর সাথে কাপল পিক দিবো ফেবুতে…কত শখ ছিল!!অ্যাঁএএএএএ…..”
-“থাক মা আর কাঁদিস না,,তোর আবার বিয়ে দিবো।অনেক ভালো জায়গায়…এবার ছেলে বাইন্দা রাখবো যাতে না পালায়”
-“আর বিয়ে করব না….মেয়েদেরতো একবারই বিয়ে হয় তুমি আর দাদী বলো না?? যে মেয়ের বিয়েরদিন বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাকে আর কেউ বিয়ে করে?”
-“কিছু হবেনা মা…তোর বাবা সব ঠিক করে ফেলবে”
-“কিছু ঠিক হবেনা সব আমার কপাল..কপালে জামাই নাই বলেই সে ভেগেছে…অ্যাঁএএএএএএ(নাক টানে একটু পর পর)” ইশ!!
কি সুন্দর অভিনয় জানে “আমার বইনে…এরে অস্কার দেয়া উচিত,,না না শুধু অস্কার না নোবেল দিলেও কম হয়ে যায়।কি অভিনয় বাবা!! আমিই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি,” বিড়বিড় করে বলে প্রিয়তা। মৌনতার বাবা মৌনতার রুমে এসে দেখে মা-মেয়ে মিলে কাঁদছে গলা ধরে।
-“মৌনতা যদি জানতে পারি তুই এমন কাজ করেছিস তাহলে জেনে রাখ তোর কি অবস্থা করি!”
-“(কান্না বিরতি দিয়ে একবার বাবা আরেকবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার ন্যাকা গলায় বলতে থাকে) আম্মাজান আপনার কি মনে হয় আমি এই বিয়ে ভাঙ্গছি? বন্দি ছিলাম,জামাইয়ের চেহারাখান ভালোমত দেখি নাই বিয়ের দিন দেখব বলে…আর আমি এতই খারাপ! যে নিজের বাপ-মায়ের সম্মানের কথা ভাববো না?”
-“মৌনির আব্বা,শুধু শুধু ওর দোষ দাও কেন? কাল হলুদের সময়ও তো কত আনন্দ-ফূর্তি করল,কি খুশি ছিল…আর তুমি কি না?”
-“আম্মাগো আমার কেউ নাই….সবাই আমারে খারাপ মনে করে।আমারে কে বিয়ে করবে?সারাজীবন আইবুড়ো থাকব আর ফেবুতে বান্ধবীদের কাপল পিকে লাভ রিয়্যাক্ট মেরে যাব? এই জীবন রেখে কি লাভ? মইরা যাবো…থাকবো না আমি” বলে আরো জোরে হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে থাকে…মৌনতার বাবা অবাক হয়ে গেছেন,তিনি কি যেনো ভেবে মৌনতার মাকে নিয়ে বাইরে গেলেন।মৌনতা টিস্যু দিয়ে চোখ-মুখে মুছে নেয়।
-“বইনা তুমিতো পুরা ফাটায়ে দিছো,তোমারে তো জি-বাংলা বা স্টার জলসায় নায়িকার রোল দেয়া উচিত!”
-“গাধী…আমারে বলিউডে/হলিউডে চান্স দেয়া উচিত!”
-“কি যে অভিনয় করলা,আবেগে ইমোশনাল হয়ে গেছি…”
-“হেহে….দেখতে হবে না কে আমি!”
-“তুই যা করলি!!! বিয়ে না হলে মইরা যাবি? হাহাহাহা….”
-“আরে বেশি আবেগ আইসা পড়ছিল মুখ ফসকে বলে দিছি”
-“কিন্তু…”
-“কি কিন্তু? পিকচার খতম পেয়সা হজম…”
-“সবসময় তুই ফানি মুডে থাকস…”
-“আমি যে এমনই”
-“তুই কেমনে ভাঙ্গলি বিয়ে?”
-“আরে আমি ভাঙ্গি নাই”
-“হইসে,ঝেড়ে কাশো…”
-“আমি যক্ষ্মা রোগী না…”
-“উফফ…মৌনিপু”
-“কুল বেবী….কুল”
-“বল”
-“বরের প্রেমিকা আছে।তার সাথেই ভেগেছে,তখন জিজ্ঞেস করলি না ফোনে কি দেখে হাসছি? প্রিয়মের ম্যাসেজ দেখে হাসছি।ওই জানাইছে…সন্ধ্যার দিকে বর পালাইছে”
-“তুই কেমনে এতকিছু করলি?”
-“আরে ভাগ্য বলেও কিছু একটা আছে রে বৎস! বরের প্রেমিকা আছে…ডাইহার্ড প্রেম দুজনের।একটা আরেকটা ফেবিকল আঠা দিয়া চিপকানো।সে সুযোগকে কাজে লাগাইসি…”
-“প্রিয়ম ভাইরে কনভেন্স করলা কেমতে?”
-“হারামি আমারে যে ভয় পায়, আমার মাইরের ভয়ে রাজি হইছে কাজটা করতে…(হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে মৌনতা)”
-“আমারে কিছু জানাইলা না,,সব একলা করে ফেললা?”
-“হুর…ফালতু প্যাঁচাল পারিস না।কি সঙ সেজে বসে আছি,অসহ্য লাগতাছে।কি পরিমাণ ক্ষুধা যে লাগছে!”
-“তোমার না বিয়ে আজকে? কত না কথা বললা”
-“তখন বিয়ে ছিল…এখন নাই।যা আম্মারে গিয়া বল আমার ক্ষুধা লাগসে অনেক,তাড়াতাড়ি যা নাইলে এখন তোরে খাইয়া ফেলব”
-“যাইতাছি…যাইতাছি” প্রিয়তা মাকে খুঁজতে যায়,দেখে মা হাসিমুখে ওরদিকে এগিয়ে আসছে।
-“কি ব্যাপার!!! আম্মা হাসতেছে? মাথা খারাপ হইল না কি”
-“আরে তোর কাছেই যাচ্ছিলাম।যা মৌনিরে ভালোকরে সাজিয়ে দেয়।একটুপর কাজী সাহেব আসলে বিয়ে হবে”
-“বিয়ে!!!!!!!! কেমনে??? বিয়ে না ভেঙ্গে গেলো?”
-“বলছি না তোর বাবা সব ঠিক করে ফেলবে? দেখছিস…কয়েকঘন্টার মধ্যে পাত্র পেয়ে গেছে।আরে ঐযে এমনসময় মায়ের ডাক পড়ে,মা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন সময় রাখি আপু প্রিয়তাকে ডাকে,
-“প্রিয়তা চল তো,,মৌনিকে আনতে হবে।বর এসে পড়েছে”
-“বর মানে? বর কোথথেকে আসবে? কি হচ্ছে এসব?”
-“তোর এতকিছু বুঝতে হবে না।এমন ভাব করছিস যেনো বর চিনিস না! চল তো” এদিকে মৌনতা বিরক্তি ধরে যাচ্ছে! একে তো ক্ষুধা লাগছে,তার ওপর ভারী বস্তা শাড়ি পড়ে আছে।কি একটা অবস্থা!! এমন সময় প্রিয়তা রাখি আপুকে সঙ্গে নিয়ে ঢোকে..
-“আরে কি করছিস! এত অস্থির হলে চলে?”
-“রাখিপু কি যে বল না? অসহ্য লাগতেছে এগুলা পড়ে থাকতে।একটু হেল্প কর…”
-“লাভ নাই অসহ্য লাগলেও একটু পর তোর বিয়ে”
-“প্রিয়ু মাইর খাইস না….”
-“রাখিপু দেখো…”
-“ওর কি দোষ?ওকে বকিস না…ফুপা তোর জন্য বর খুঁজে এনেছে”
-“মানে!!!!!!????!!!!!!”(পাঠকরা চাইলে এখানে ঠাডা পড়ার মিউজিক দিতে পারেন)
-“মানে বর তোর কষ্ট দেখে ফুপা সহ্য করতে পারে নি,তাই বাকি কথা পরে হবে,আয় তোর মেকআপ ঠিক করে দেই।”
মৌনতার চেহারা দেখার মতন।চুপসানো বেলুনের মত হয়েছে।একটা কথাও বলছে না,কল্পনা করেনি এমনটা হবে।হেরে যাওয়াটা মানতে পারছে না বেচারি!!
প্রিয়তার মায়া লাগছে,কিছু করার নেই সবই বোনের ভালোর জন্য করা হচ্ছে। রাখিপু আর প্রিয়তা মৌনতাকে বিয়ের স্টেজের দিকে নিয়ে যায়।বরের পাশে বসিয়ে দেয়। একি!!! বরের মুখ ঢাকা কেন? কি আদিখ্যেতা,বিয়ে করতে এসে লজ্জা পাচ্ছে।তো বিয়ে করতে আসতে বলছে কে? আমার প্ল্যান ভেস্তে দিল…দাঁড়াও বিয়েটা হোক তোমার একদিন কি আমার মনে মনে বলে মৌনতা। কাজী যখন কবুল বলার জন্য মৌনতাকে বলল,মৌনতা একমিনিট দেরি না করে বলে ফেলল;কিন্তু চার বার বলে ফেলছে।কাজীসাহেব অবাক! এরকম কনে আগে দেখে নি।বরতো হেসে দিচ্ছিল প্রায়।মৌনতার বাবা-মায়ের মুখে প্রশান্তির হাসি। অনুষ্ঠান শেষে বর-কনেকে বিদায় দেয়ার সময় মৌনতার মায়ের কি কান্না! বাবাও কাঁদছেন।প্রিয়ু,রাখিপু সবাই কাঁদছে…মৌনতা দেখে বলল,
-“আমি কি মরে গেছি? এমন মরাকান্না করো কেন? এই যে জলজ্যান্ত তোমাদের সামনে দাঁড়ায়ে আছি।কাঁদো কেন? বিয়ের জন্য পাগল ছিলা এখন আবার এমন কাঁদো কেন?”
-“পাগলি মেয়ে…”
সবাই হেসে দেয় ওর কথায়।মৌনতাকে গাড়িতে উঠানোর পর,বর ওর পাশে বসে।এখনো বান্দরের চেহারা দেখা হলো না! মৌনতা মনেমনে বলে।গাড়ি ছেড়ে দেয়ার পর মৌনতা কেঁদে দেয়,চোখের পানি আটকে রাখা মুশকিল!
বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর,মৌনতাকে শাশুড়ি মা তার রুমে নিয়ে যান।কিছু খাইয়ে দেন,রেস্ট নেয়ার জন্য বলেন।এমন শাশুড়ি বাস্তবে হয়??মৌনতা ভাবে।ননদটা পাশে ছিল,কি দুষ্টু! অনেকটা ওর মত। এরপর যখন বরের রুমে ওকে ঘোমটা দিয়ে বসিয়ে রেখে চলে যায় সবাই।বসে বসে মৌনতা ভাবছে, “আসুক আজকে! মৌনতা যে কি হাড়ে হাড়ে টের পাবে” এমন সময় রুমে ঢুকে বর।এখন আর মুখ ঢেকে নেই।মৌনতা উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছে,কিন্তু ঘোমটার জন্য পারছে না।কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছে! কি আর্শ্চয তাই না! মৌনতা আনমনেই হাসে এমনসময় মৌনতার পাশে এসে বসে বর।তারপর মৌনতার ঘোমটা খুলে,মৌনতা বরকে দেখে এক চিৎকার,
-” তুইইইই??????!!!!!!!!!??????”
-“ছিঃ বউ,বরকে কেউ তুই করে বলে(কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল প্রিয়ম)”
-“আরে রাখ তোর বর! শেষে তুই আমার বাবার সাথে হাত মেলালি?দাঁড়া তোর ১২ কি ১৩,১৪,১৫ যা আছে সব বাজাচ্ছি” মৌনতা কোমর বেঁধে বালিশ হাতে নেয় প্রিয়মকে মারার জন্য।
-“বউ আমার আগে পুরো কথা শুনো আমি ইচ্ছে করে করিনি এসব।আর বিয়েরদিন বরকে কেউ মারে? এখনতো বিয়ে হয়েই গেছে,কি করবা”
-“কি করি দেখো”
-“শুনো না”
বালিশ ছুঁড়ে মারল মৌনতা ইশ!! টার্গেট মিস হয়ে গেল।প্রিয়ম ওকে বোঝানোর ট্রাই করছে আসলে মৌনতার বাবা প্রিয়মকে আগে থেকে চিনতেন,আর বর ছিল প্রিয়মের মামাতো ভাই।প্রিয়ম আবার মৌনতার বাবাকে সেই লেভেলের ভয় পায়।প্রিয়ম যদিও মৌনতাকে ভালোবাসে,গুন্ডির মেয়ের মাইরের ভয়ে বলতে পারেনি।মৌনতার বাবা বিয়ে ভাঙ্গার পর আসল ঘটনা জানতে যখন প্রিয়মের বাসায় যায়।প্রিয়ম ভয়ে সব বলে দেয়,মৌনতার বাবা শাস্তিস্বরূপ মৌনতার সাথে বিয়ে দেন।প্রিয়ম তো খুশিতে বাকবাকুম! মৌনতার মাইর থেকে বাঁচতে বর্তমানে বারান্দায় দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ম।কি গুন্ডি রে বাবা! বাকি জীবন কেমনে কাটাবো? ভাবতে ভাবতে দরজার ছিটকিনি লক করার শব্দ পায়। মৌনতা!!!!
-“আয় হায়!!! এটা কি করলা বউ,দরজা খুলো”
-“মাইরের ভয়ে পালাইছো।ওখানেই আটকা থাকো,বিয়ে করার শাস্তি এটা!”
-“মনু বউ আমার দরজা খুলো,মশা কামড়াবে তো রাতে”
-“কামড়াক,,আমার কি?”
-“কি জল্লাদ বউরে…শ্বশুড়ের শাস্তি বউয়ের শাস্তি আমি কই যাই” প্রিয়ম মৌনতার বাবাকে ফোন দেয়,
-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম শ্বশুড়জি”
-“ওলাইকুম আসসালাম।এত রাতে? কি হইছে? সব ঠিকঠাক?”
-“জ্বী না,শ্বশুড়জি কিছু ঠিক নাই।মৌনতা আমাকে বারান্দায় আটকে রাখছে”
-“তোমার বউ,,তুমি সামলাও”
-“শ্বশুড়জি!!!!!”
-“তুমি তো হেল্প করসিলা ওর বিয়ে ভাঙ্গতে,এখন একটু তো শাস্তি পেতেই হবে”
বলে খট করে কেটে দেয় ফোন।প্রিয়ম হতবাক।এদিকে সারারাত মশার গুনগুন গান শুনার মোটেও ইচ্ছা নাই ওর।ঐ দিকে মৌনতা আরামসে শুয়ে আছে।প্রিয়ম মনের দুঃখে গান গায়, “মৌনতা…ও মৌনতা তুই অপরাধী রে, আমার শান্তির জীবন দে ফিরায়ে দে…”