রুদ্রের আগেকার প্রেমিকাদের চেয়ে এবারের প্রেমিকা বেশ ওয়েস্টার্ন টাইপ। নিজেই রুদ্রকে সিগারেট কিনে দেয় এবং নিজেও খায়। মানে আজকালকার ন্যাকামো মেয়েদের মতো বলে না, “তুমি যদি সিগারেট খাও তাইলে তোমার সাথে রিলেশন রাখবো না”। এটা নিয়ে রুদ্রের ফ্রেন্ডদের মধ্যে বেশ সরগম রটে গিয়েছে। অন্যরা যেখানে সিগারেট খেয়ে কুলি করে সেন্টার ফ্রুট চিবাইতে চিবাইতে প্রেমিকার সামনে মুখ খুলে কথা বলতে পারেনা ভয়ে। সেখানে রুদ্রের কপাল ই বলা যায়।
রুদ্রের প্রথম প্রেমিকা লামিয়া ছিল সেই ন্যাকাম টাইপের। আর্মির মেয়ে, সবকিছুতেই তার ডিসিপ্লিন। রুদ্রের তখন সিগারেট খাওয়া তো দূরের কথা চা খাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। রুদ্র বুঝে গিয়েছিল এই মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকলে ওর জীবন আর্মির সৈনিকদের মতো হয়ে যাবে। সোজা হও, আরামে দাঁড়াও টাইপ।
তারপর যে প্রেমিকা ছিল ওর নাম তানিয়া। সে ছিল বাংলার প্রফেসরের মেয়ে। এই মেয়ে অবশ্য চা খাইতে মানা করেনি তবে সিগারেট খেতে দেয়নি। নাক ও ছিল কুত্তার মতো। দুদিন আগে সিগারেট খাইলে সেটা টের পেয়ে যেতো। তাই রুদ্র তানিয়ার সাথে দেখা করার তিনদিন আগে থেকে সিগারেট খাওয়া বাদ দিতো। সম্পর্ক ছয়মাস ছিল এর মধ্যে রুদ্র বাংলা ব্যকরণের কারক বিভক্তি থেকে শুরু করে সমাস পর্যন্ত শিখে ফেলেছিল।রুদ্রের প্রত্যেকটা কথায় মধ্যে ওর বাক্যগত ভুল ধরা ছিল তানিয়ার রীতিমতো অভ্যাস। বাংলা প্রফেসরের মেয়ে বলে কথা। বাংলায় ভুল একদম সহ্য করতে পারে না। সেই মেয়েটাও চলে গেলো।
এরপর যে মেয়েটার সাথে রুদ্রের প্রেম হলো সে ছিল এক হুজুরের মেয়ে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্দা দিয়ে ঢাকা। তিন মাস প্রেমে রুদ্র একবার হাত ধরার ও সুযোগ পায়নি। মেয়েটার নাম ছিল নাদিয়া। সব কিছুতেই এর ছিল হারাম আর হালাল খুঁজে বের করার অভ্যাস। রুদ্র সিগারেট খায় এটা হারাম,সো এটা করা যাবে না। রুদ্র অন্য মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে এটাও হারাম। সো ওটাও করা যাবে না। ভোর পাঁচটায় রুদ্রকে কল দিয়ে উঠিয়ে দিত ফজরের নামাজ পড়ার জন্য। এখন এই যুগে ছেলেপেলে ফেসবুক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে রাত চারটায়। সেই ছেলে ভোর পাঁচটায় উঠে নামাজ পড়ে কিভাবে? ননসেন্স কাজকারবার। সে সম্পর্কটাও টিকলো না।
তারপর অনেকগুলো সম্পর্ক কেটে যাবার পর এইবার একটা ওয়েস্টার্ন টাইপ প্রেমিকা সে পেয়েছে।যার কাছে সিগারেট খাওয়া, নামাজ না পড়া অন্য মেয়েদের দিকে তাকানো কোনো ফ্যাক্ট না।
সেদিন মেয়েটা রুদ্রকে সিগারেট কিনে দেওয়া সময় পাশে থেকে একটা ছেলে তার প্রেমিকাকে বলেছিল” দেখছ এইটা হচ্ছে প্রেমিকা। যে নিজে তার প্রেমিক কে সিগারেট কিনে দেয়”। এটা শুনে রুদ্রের খুব ভালো লেগেছে। আসলে এতদিন সে মনে মনে যা চেয়েছিল সেটাই পেয়েছে। এই মেয়ের সাথে লাং টাইম রিলেশনে যাওয়া যায়।
আজ চার বছর ধরে মিথিলা নামে ওয়েস্টার্ন মেয়েটার সাথে রুদ্রের প্রেম। কিন্তু কিছুদিন থেকে সম্পর্ক টা খ্রাপ যাচ্ছে।মিথিলার পরিবারে কি যেন একটা সমস্যা চলে। মিথিলা কিছুই বলে না রুদ্রকে শুধু বলে ডিপ্রেশনে আছে। কিন্তু রুদ্র জানে মিথিলা অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে।
কিছুদিন পরের ঘটনা নীলা নামের একটা মেয়ের সাথে রুদ্রের বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হবে। রুদ্রের বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ে। মেয়ে সব দিক থেকেই ভালো কিন্তু রুদ্রের কাছে মনে হয় এই মেয়ের মাঝের মিথিলার মতো ওয়াইল্ড ব্যাপারটা নেই। বিশেষ করে যৌন সঙ্গমের সময়। নীলা নামের এই মেয়েটিকে তার জড়ো পদার্থ বলে মনে হয়। যেভাবেই হোক এই মানুষ নামক জড়ো পদার্থকে বাড়ি থেকে তাড়াতে হবে। মিথিলা আবার ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।
আজ নীলা নামক মেয়েটিকে রুদ্র তালাক দিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে নীলার স্বামী বাড়ির প্রতি উদাসীনতা। বিশেষ করে রুদ্রের প্রতি। মেয়েটি নাকি স্বামী হিসাবে রুদ্রকে যথাযথ মর্যাদা দেয় না। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটির অন্য কোথাও এফেয়ার চলে।
একটা কাঁঠাল গাছের নিচে রুদ্র বিচিত্র এক পোশাক পরে বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে ফেলে আসা তার সব প্রেমিকা ও স্ত্রী কথা। এমন সময় জেলের মাইকে বলে উঠলো, মোঃ রুদ্র আহমেদ, পিতাঃ জায়েদ আহমেদ আপনার সাথে দেখা করার জন্য লোক এসেছে। জেলের ভিজিটর রুমে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
রুদ্র জানে কে তার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। এই মেয়ের জন্য ওর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। সেইসাথে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে রুদ্রকে, যথাযথ প্রমাণ সহ।