ফান্দে পড়িয়া বগা কাঁন্দেরে

ফান্দে পড়িয়া বগা কাঁন্দেরে

গত পরশু দিন ও সাতষট্টি টা মেয়ের আইডি ঘেটে দেখলাম সব In a Relationship দেওয়া। কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নতুন করে একটা মেয়ে Relationship দিছে। তার মানে ২ দিন আগেও মেয়েটা Single ছিল। আর সেটা আমার চোখে পড়েনি। নাহ্ এই জীবন আর রাখব না। আজকেই সমাপ্ত করব। সমাপ্ত যখন করব তখন মৃত্যুর আগে ঐ মেয়ের সাথে বুঝাপড়া টা শেষ করি। ম্যাসেঞ্জারে হাই” হ্যালো না লিখে সরাসরি রাগি ইমুজি দিলাম।

–কি ব্যাপার আপনি রাগি ইমুজি দিলেন কেন?
— রাগি ইমুজি দেব নাতো দেব নাকি?
–এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? কী করছি আমি?
–কি করতে বাকি রাখছেন বলেন তো। সেই কত দিন ধরে মনের খাঁচায় পুঁষতেছি।আর আজ বলা নেই কওয়া নেই ঠাস করে Relationship স্ট্যাটাস দিয়ে দিলেন?

— আমি Relationship দিয়েছি তা আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ?
— সমস্যা কি মানে সমস্যা তো অনেক কিছু। আপনি আমার সাথে অবিচার করেছেন !!
–কি অবিচার করছি হুম?
–অনেক দিন ধরে প্রেমহীন জীবন নিয়ে পোস্ট করেই যাচ্ছি। কখনো আপনি সাড়া দেন নি। এটা কী অবিচার নয়?
— শুনেন আমি কোন বিচারক নই যে আপনার সাথে অবিচার করবো।
— বিচারক না হয়েও তো বিচারকের মত কাজ করলেন.! একটা ছেলের ক্ষতি করলেন আজ।
–আচ্ছা মুসকিল তো আপনি এক কাজ করেন। আমার এক বান্ধবী এখনো Single আছে। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারন।

— আচ্ছা দেন আফা। অনেক বড় একটা উপকার করলেন আজ। আমি তো জীবন শেষ করতে গিয়েই ছিলাম প্রায়।
— আরে প্রেমের জন্য জীবন শেষ করবেন কেন? আমার যে বান্ধবীর কথা বলছি তার সাথে জমিয়ে প্রেম করতে পারবেন। আপনি শুধু একবার কথা বলেই দেখেন।

এই মেয়ে কাছ থেকে আমার হবু প্রেমিকার আইডি লিঙ্কটা নিয়ে রাতে খাবার খাওয়া শেষে চাঁদের আলোয় বেলকুনিতে বসে লিঙ্কটা অপেন করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ দিলাম প্লিজ একসেপ্ট মি।

১০ মিনিট পর রিপ্লাই আসলো ওকে বাট কে আপনি? আগে তো একসেপ্ট করো তারপর পরিচিত হই আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কনফার্ম এর পর দুজন বেশ কিছুসময় চ্যাটিং করলাম। মেয়টার নাম রুকু আহ্ কি সফট্ কিউট নাম অবিচারীনি মেয়েটা ঠিকি বলেছিলো সত্যি ওনার বান্ধুবী দারুণ মিষ্টি কথা বলে। তবে আমি কম না আধুনিক যুগের স্মার্ট ছেলে আমি কথার স্টাইল সব ডিজিটাল নিশ্চয় রুকাইয়া ম্যাডামের ও ভাল লেগেছে তাইতো প্রথম পরিচয়েই এত কথা হলো।

এখন জাস্ট একটু পামপট্টি মেরে লাইনে আনতে হবে তাহলেই আমার প্রেমহীন স্ট্যাটাসের সমাপ্তি হবে। এখন থেকে রুকু কে নিয়ে রোমান্টিক প্রেমের স্ট্যাটাস দিমু আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। আর মেয়েটার বাড়ি যে গ্রামের কথা বললো ওই গ্রাম তো আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ৪/৫ কিলো হবে একবার জাস্ট একবার লাইনে আসলেই হলো বিয়ে করে আনতে বেশি কষ্ট হইবো না। আল্লাহ তোমার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া ফেইসবুকেও যে নিজের এলাকার কাছাকাছি বাড়ি এমন মাইয়ার সন্ধান দিবা ভাবি নাই।সত্যি আমার ফাঁটা কপাল মানতে হবে কিন্তু সবার।

এভাবে চার পাঁচদিন আলু পাম ওয়ালা চ্যাটিং করছি যাতে আমার প্রেমহীন জীবনটা শেষ করতে পারি কত কষ্ট কইয়া পটাইয়া প্রেমের দরজায় পদার্পণ করাতে চেষ্টা করছি কিন্তু কি ড্যাঞ্জার মেয়েরে বাবা প্রেমের শুরুতেই সারাজীবন এর রুটিন হাতে ধরাই দিলো। আমি একবুক দুঃখ নিয়া সম্মতি দিলাম সব কিছুতেই আমি রাজি,আর এটা কেন বলছি জানেন এত কষ্ট কইরা এখন যদি না করি তাহলে সারাজীবন চিরকুমার হয়ে থাকতে হবে। এমনিতেই আমাদের গ্রুপে সবাই আমারে চির কুমার বলে।

রুকু লাস্ট বললো ঠিক আছে তবে পরে আবার যেন কথার নড়চড় না হয়,আর হলেই বা কি বাবু তুমি তো আর অন্য গ্রহে থাকো না আমরা একি থানায় বসবাস করি। কোনোরকম ধোঁকা দেওয়ায় চেষ্টা করেছ না তাহলে দেখবে কি হাল হয় তোমার আমার বড় মামাতো ভাই কে দিয়ে তোমায় তন্ন তন্ন করে খুঁইজ্জা তুলে এনে বিয়ে করমু। আর ঘর জামাইয়ের তালিকায় তোমার নামটা আমি নিজে হাতে লিখে দিবো বুঝলে। আমি নরম কণ্ঠে বললাম ধুর পাগলী আমি তোমাকে ধোঁকা কেন দিতে যাবো এসব চিন্তা একদম মাথায় আনবানা এক্ষুণি এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো লক্ষি বাবুনি।

–ওকে ঠিক আছে লাভ ইউ জান
–আই লাভ ইউ টু আচ্ছা রুকু এখনো কিন্তু তোমার পিক দেখিনি আর তুমিও আমার পিক দেখনি অথচ আমরা একে অপরকে ভালোবাসি
–তাতে কি হয়েছে আমরা একদম সাক্ষাৎ এ দেখে নিবো।

–ওকে তাহলে এখন একটু ম্যাসেঞ্জার কল দিবো ভয়েস কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
–এটাও হবেনা আমরা সামনাসামনি কথা বলবো দেখা করার দিন।
–ওহ্ তাহলে কবে দেখা করবো প্লিজ চলো তাড়াতাড়ি দেখা করি।
–ওকে তাহলে সামনে সোমবার এ দেখা করবো

–অবশেষে সেজে গুজে প্রেমিকার দর্শনে বাহির হলাম। আর মনে মনে ভাবছি আহ্ কি শান্তি আমার প্রেমহীন জীবন এর সমাপ্তি হয়ছে। সামনে তাকাতেই এক পিচ্চির হাতে অনেকগুলো লাল গোলাপ ফুল দেখলাম ডেকে বললাম সব গুলো কত দিবোরে পুঁচকি? সে আস্তে করে বললো ১০০ টাকা দাও কাকু,আমি চকচকা একটা নোট দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে নিলাম খুশি হয়ে ডান গালে একটা উম্মাহ দিলো। মনে মনে বলছি ধুর পঁচা ছেলে গালটা এঁঠো করে দিলি একটু পরে প্রেমিকা উম্মাহ দিবে ওখানে।

যাই হোক টিস্যু দিয়ে গাল মুঁছতে মুঁছতে চলে গেলাম সেই নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে রুকুর থাকার কথা কিন্তু একি ওমা গো এই ডায়নির ঘরের ডায়নি এখানে বসে আছে কেন? দেখতেও রুকুর মতই রুকু যে কালার ড্রেস যেভাবে সাজবে তানিয়া ও সেই একি ভাবে সাজছে মাথা ঘুরছে রুকু কই? আমার রুকাইয়া আমাকে দেখে তানিয়াও চমকে গেলো (এই তানিয়া হচ্ছে আমার ছোট ফুফির দজ্জাল মাইয়া যার কপালে জুটবে সে শেষ তবে দেখতে হেব্বি কিউট)তানিয়া উঠে দাঁড়ালো আমিও ফুল গুলো পেছনে লুকিয়ে বললাম কি রে তুই এখানে? তানিয়া বলল আগে বল ভাইয়া তুই এখানে কেন?

–না মানে আমি আসলে রুকু নামে একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।
–মানে কি বলছিস ভাইয়া?
–কেন কি হইছে?
–আগে বল তোর নাম ফেইসবুকে অর্নব?
–হ্যাঁ কেন?
–সর্বনাশ হয় গেলো রে তুই তুহিন থেকে অর্নব সেজে আমাকে চিট্ করলি আমি রুকু😰
–কি বলছিস তুই রুকু মানে তুই তো তানিয়া।
–আরে তুই বুঝছিস না আমার পুরো নাম তানিয়া ইসলাম রুকু সবাই সাবাই রুকু বলে ডাকে।
–এবার কি হবে?
–কি হবে আমি মামা মামি কে সব বলে দিবো।

–বলে দিবি মানে তুই কি বলছিস প্লিজ বোন তোর পায়ে পরি আমার এত বড় সর্বনাশ করিস না।
— –কিসের বোন হু কিসের বোন আমি তোর বউ।
–এই রে পাগলী তোতাপাখি ময়নাপাখি আমার লক্ষী বোন আবল তাবল বলে না আমরা তো ভাই বোন হই তাই না।
–না আগে হইতাম এখন হইনা তুই আমায় বিয়ে করবি নাকি আমি তোদের বাড়ি চলে যাবো। আর মামা মামি কে সব বলে দিবো তুই আমার সাথে,,,,।
–না না এমন করিস না আমি তোর পায়ে পরছি আমায় পাফ করে দে চল আমরা ভাই বোন হয়ে যাই আমার বিয়ে তুই খাবি আর তোর বিয়ে আমি।
–খারা খাওয়াচ্ছি বিয়ে পায়ের জুতা খুলে দিলো ঢিল আমি ফুলগুলো ছিটকে ফেলে রোবট এর মত দিলাম দৌড়।

এখন আমি বাসর ঘরে ভয়ে হাঁপাচ্ছি।ভেবেছিলাম ফইন্নি কিছু বলার সাহসই পাবে না। কিন্তু একবারে সাজিয়ে গুছিয়ে বলে আমার রুমটাই দখল নিছে। হাই রে প্রেমহীন জীবন আমার প্যারাময় জীবনে পরিনত হইলো। না জানি এই হতভাগার অবস্থা এখন কি করে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত