আমি আত্মহত্যা করবো না

আমি আত্মহত্যা করবো না

‘ ও, আপনিও এখানে আত্মহত্যা করতে এসেছেন বুঝি।’ এইটুকু বলে আকাশ থামলো। মেয়েটি তার হাতে থাকা বিষের বোতলটা আকাশের সামনে ধরে বলল, ‘ আপনার কী মনে হয়, লোকালয় ছেড়ে এই জনশূন্যে এসেছি ভূতের কাছে বিষের বিজ্ঞাপন দিতে? যত্তসব।’ আকাশ পুনরায় বলল, ‘ তা ঠিক, তবে আপনার উদ্দেশ্য কি সেটা জানতে পারলে উপকৃত হতাম এই আরকি।’ মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ হ্যাঁ, আমি আত্মহত্যা করতে এসেছি, এবার বলেন আপনি কিভাবে উপকৃত হলেন।’ আকাশের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তাই দেখে মেয়েটি রেগেমেগে বলল, ‘ কি আজব মানুষ আপনি, আমার মৃত্যুর কথা শুনে আপনি দাঁত বের করে হাসছেন!’ আকাশ হেসে হেসে বলল, ‘ সঙ্গী পেলাম তো, তাই খুশিতে হাসছি।’ মানে ? মানে আমিও এখানে আত্মহত্যা করতে এসেছি, একা একা ভয় লাগছিল তাই বেশীদূর এগোতে পারিনি, এবার আপনাকে পেলাম, ভয়টা অনেক কমে যাবে। এতই যখন ভয়, তখন আত্মহত্যা করতে আসার কি দরকার? আছে আছে, দরকার আছে। তাইলে করেন আত্মহত্যা?

আসলে এই প্রথমবার আত্মহত্যা করতে এলাম তো, তাই ভয় একটু লাগছে। আগে যদি দুই একবার করতাম, তাহলে অবশ্য এই ভয় থাকতো না। আকাশের কথায় মেয়েটি না হেসে পারলো না। কতদিন পর হেসেছে, সে হিসাব মেয়েটির’ও মনে নেই। ভেতরটা অনেকটাই হালকা হয়ে গেছে। হেসে হেসেই মেয়েটা আকাশকে বলল, ‘ আত্মহত্যা তো মানুষ একবার’ই করে, বারবার কেউ করতে পারে?’ আকাশ একটু কি যেন ভাবলো, তারপর বলল, ‘ ঐ যে বললাম প্রথমবার, তাই এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই, সরি।’ মেয়েটি হেসে বলল, ‘ আপনার আত্মহত্যা করার কোনো দরকার নেই। আপনি খুবই সহজ–সরল, আপনার মতো মানুষ পৃথিবীতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা দরকার।

এখন আপনি এখান থেকে যান, আমাকে আত্মহত্যা করতে দেন।’ আকাশ আবারও কথা বাড়ানোর চেষ্টা করতেই মেয়েটি বলল, ‘ দেখেন, আপনি এখান থেকে চলে যান দয়াকরে, আপনি বেশীক্ষণ আমার আসেপাশে থাকলে, আমার আত্মহত্যা করার ইচ্ছেটা নিজেই আত্মহত্যা করবে।’ আকাশ কাচুমাচু করে বলল, ‘ ঠিক আছে, আপনি আত্মহত্যা করেন। কিন্তু মরার আগে অন্তত আমার একটা উপকার করে যান, দেখবেন মরেও শান্তি পাবেন।’আচ্ছা, কী উপকার করতে হবে বলেন। আচ্ছা আপু, এখন তো সব কিছুতেই ভেজাল তাই না? হুম তাই, কিন্তু আমার উপকারে ভেজাল হবেনা। আরে না, আমি আমার বিষের কথা বলছি। আপনি খেয়ে যদি একটু পরিক্ষা করে দেখতেন, আমার ভীষন উপকার হতো।মেয়েটি আবারও খিলখিল করে হেসে বলল, ‘ আপনি তো আজব মানুষ, নিজে খেয়ে’ই পরিক্ষা করে দেখেন না কেন?’ সমস্যা আছে। কী সমস্যা?

ধরেন বিষ খেয়ে যদি না মরি, তখন হাসপাতালে নিবে, লোকে জিজ্ঞেস করবে কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। এক প্রকার কলঙ্ক রটে যাবে তাই। ঠিক আছে আপনার বিষের বোতলটা আমার কাছে দেন। আকাশ প্যান্টের পকেট থেকে একটি প্যাকেট বের করে মেয়েটার হাতে দিলো। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মেয়েটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। এটা তো ইঁদুর মারার বিষের প্যাকেট। হাসি নিয়ন্ত্রন করে মেয়েটি বলল, ‘ আপনি কি ইঁদুর?’ কেন? ইঁদুর মারার বিষ নিয়ে এসেছেন আত্মহত্যা করতে!

আকাশ থতমত খেয়ে মেয়েটার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে জলদি আবার পকেটে ঢুকালো। মেয়েটি এখনো হেসে অস্থির।আকাশ চলে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই মেয়েটি বলল, ‘ কোথায় যাচ্ছেন, আত্মহত্যা করবেন না?’
আকাশ পেছন ফিরে বলল, ‘ কার জন্য আত্মহত্যা করবো, আমার ভালোবাসার বিনিময়ে যে শুধু ছলনা দিয়ে গেছে তার জন্য? সে আমার কথা হয়ত একবারও ভাবেনা। কিন্তু বাসা থেকে বেরিয়ে ফিরতে দেরী হলে আম্মু প্রচন্ড চিন্তা করে, আব্বু খোঁজ নিতে শুরু করে কোথায় আছি।

এটাই হলো নির্ভেজাল ভালোবাসা। আর ভালোবাসার নামে যে ছলনা করে গেছে, তার জন্য আত্মহত্যা করে মা– বাবাকে চোখের জলে ভাসায় একমাত্র নির্বোধ’রা। আমি আমার মা, বাবার চোখের জলের সেই কারণ হতে চাই না, তাদের বুক খালি করতে চাই না। আমি গেলাম।’ কথা শেষে আকাশ হন-হন করে হেটে চললো। মেয়েটার যা বোঝার বুঝে গেছে। আকাশের আসল উদ্দেশ্যে কি ছিলো সেটাও বুঝতে পেরেছে। আকাশ অনেক দূরে চলে গিয়েছে, মেয়েটি চিৎকার করে বলল, ‘ এই যে মিস্টার সহজ–সরল, আমিও আত্মহত্যা করবো না, আমিও বাসায় গেলাম।’ আকাশ পেছনে ফিরে একটু মুচকি হাসি দিয়ে, আবার এগিয়ে চললো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত