সম্পর্ক

সম্পর্ক

– আমি কিছুদিন ধরে একজনের সাথে সম্পর্কে আছি।
– আচ্ছা এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখনকার যুগে প্রায় সবারই কারো না কারো সাথে সম্পর্ক চলছে। তনু ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল

– এক গ্লাস পানি দেওয়া যায়।
– হ্যাঁ অবশ্যই। একজনকে ডেকে পানি আনানো হলো। তনু গ্লাসের পানিতে চুমুক দিতে দিতে বলল

– আমার স্বামী এই ব্যাপারে কিছু জানে না। ডাক্তার তার চশমা খুলে ডেস্কে রেখে বললেন

– আই মিন ইউ আর ইন এ এক্সট্রা মেরিটাল রিলেশনশিপ ?
– হুম। এবং এই ঘটনা বেশিদিনের না।

কিছুদিন আগেই এটা শুরু হয়েছে কিন্তু আমার সন্তানের দিকে যখন তাকাই আমার খুব অসহ্য লাগে। আমার স্বামীর ঘুমন্ত চেহারাটা যখন দেখি তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। খুব ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছি। তাই আজ এক বান্ধবীর সাজেশন নিয়ে আপনার মত নামকরা মনোবিজ্ঞানীর কাছে এসেছি। আপনিই আমাকে ভালো কাউন্সিলিং করতে পারেন।

ডাক্তার সায়মা মনোবিজ্ঞানী ডাক্তারদের মধ্যে নামকরা একজন। তার কাছে অনেক রোগী এসে তাদের আত্মহত্যা করার রোগ সেরেছে। তিনি ডিপ্রেশন দূর করার জন্য ভালো কাউন্সিলিং করেন। তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে আজ অনেকে সুস্থ। তনুর সমস্যা এখনো সে সম্পূর্ণ জানে না। আজই তার সাথে প্রথম কাউন্সিলিং। রোগি দেখার সময় তার রুমের দরজা বন্ধ রাখে। প্রতি রোগী দেখতে তিনি প্রায় ১ ঘন্টা সময় নেন।

– তো কিভাবে সম্পর্ক হলো?
– সম্পর্কটা শুরু হয়েছে মাস খানেক আগে। আমার মেয়ের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া আসার মধ্যে তার সাথে আমার পরিচয়। এরপর প্রায় তার সাথে আমার বাহিরে খাওয়া দাওয়া হতো। এরপর কিছুদিন আগে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আমি তার সাথে তার বাসায় যাই। সেদিন থেকে আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়।

– আপনার স্বামী কি আপনাকে ভালোবাসে না?
– বাসে হয়ত ।। হয়ত বা না। বিয়ের ৭ বছর চলছে। সারাদিন অফিস শেষে আমার সাথে দুইটা ভালো কথা বলারও তার সময় হয় না। অফিসের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত সে। আর এর মধ্যে আরেকটা মানুষের যত্ন আমাকে তার প্রতি দুর্বল করেছে।

– আপনি ডিপ্রেস কারণ আপনার মনে হচ্ছে আপনি আপনার স্বামীকে ঠাকাচ্ছেন। তাই তো?
– বিষয়টা ঠিক এমন না। আবার এমন ও। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে যতটা চিন্তিত পাশাপাশি ফয়েজের স্ত্রীকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাদেরও তো ঘরে একটা সন্তান আছে। আমাদের সাময়িক সুখের জন্য হয়ত কারো সাজানো সংসার ভেঙ্গে যাবে। ডাক্তার সায়মা একটু চমকে গিয়ে বলল

– ফয়েজ কে?
– ওহ ফয়েজ। তার সাথেই আমার সম্পর্ক। সে ও অর্থপেডিকের ডাক্তার। তার বাসা শান্তিনগর। ডাক্তার টেবিলের পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সম্পূর্ণ গ্লাস পানি খেলেন।

– সম্পর্কটা কতদিনের বলসিলেন?
– ৩ মাস প্রায়।
– আপনার স্বামীর কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে?
– আমার জানা মতে নাই। তাকে খুব বিশ্বাস করি। কিন্তু বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে খুব কষ্ট পাবো।
– তনু আপনার সাথে আমি আরেকদিন কাউন্সিলিং এ বসবো। আজ আমার একটু তাড়া আছে। আপনি আবার সোমবারে আসবেন এখানে। তনু উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। চলে যাওয়ার সময় ঘুরে দাঁড়িয়ে গেলো। আচমকা বলে উঠলো

– আচ্ছা ম্যাডাম। আমার মত মেয়েগুলো চাইলেই কিন্তু নিজের এবং পরের সংসার বাঁচাতে পারে তাই না? যদি সবার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করতো তাহলে সম্পর্ক গুলো নষ্ট হতো না।তনু বের হয়ে গেলো। ডাক্তার সায়মা তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে। ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইল বেজে চলছে। মোবাইল বের করে নামটা দেখে ফোন কেটে দিয়ে ফোন করলো অন্য আরেকটি নাম্বারে।

– হ্যালো ফয়েজ।

ওপাশ থেকে ফয়েজ নামক সে কথা বলছে তিনি সায়মার স্বামী। তিনিই তনুর প্রেমিক। তনু সেই মহিলা যার স্বামীর সাথে ডাক্তার সায়মার প্রায় ২ বছর যাবৎ পরকীয়া চলছে। যে কিছুক্ষন আগে ফোন করেছিল এবং সায়মা ফোন কেটে দিয়েছিলো। আজ সায়মা বুঝতে পারছে স্বামীর অন্য কারো সাথে অবাধ সম্পর্ক অনেক পীরাদায়ক। হয়ত স্ত্রীর অবাধ সম্পর্কেও স্বামীর কলিজা পোড়ে।

আজ সায়মা অনুশোচনা বোধ করছে। আজ সায়মা নিজেই নিজের কাছে রোগী। যে কিনা তার স্বামীকে অনেক বিশ্বাস করতো এবং আজকের পর হয়ত কখনো বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু সে তাকে কিছুই বলতে পারবে না কারণ সে নিজেই বিশ্বাসযোগ্য না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত