সিনিয়র এক বড় ভাইয়ের সাথে হেব্বি ঝগড়া হইছে। ঝগড়ার একপর্যায়ে বড় ভাই ঠাসস করে আমার নরম তুলতুলে গালে থাপ্পড় মারছে। আমিও ঘুষি মেরে বড় ভাইয়ের নাক ফাটিয়ে দিছি। যার কারণে প্রিন্সিপাল ম্যাম আমার উপর হেব্বি ক্ষেপছে। তার একটাই কথা আমি কেনো জুনিয়র হয়ে সিনিয়র ভাইয়ের নাক ফাটিয়ে দিলাম। এই বিষয়টা ম্যাম কোন ভাবেই মানতে পারছেনা। আমি প্রিন্সিপাল ম্যামের রুমে বসে আছি। ম্যাম আমার দিকে তাকাচ্ছে না। সে একটা কাগজে কি যেন লিখছেন। মনে হয় ট্রান্সফার লেটার। ম্যাম আমাকে বললেন….
–রুবেল তুমিতো অনেক ভালো ছেলে। তাহলে এ কাজ তুমি কেনো করলে? আমাদেরও তো জানাতে পারতে। আমরা একটা ব্যবস্থা নিতাম। তা না করে তুমি তোমার সিনিয়র ভাইয়ের নাক ফাটিয়ে দিলে। এটা কি ঠিক? আমি তামিল স্টাইলিশ স্টার অল্লু অরজুন( Allu Arjun) এর মতো ভাব ধরে বললাম….
-ম্যা গুচ্ছা আগায়া।
–হোয়াট…? (ভ্রু-কুঁচকে)
-রাগ উঠছিলো তাই মারছি।
–কিন্তু সেতো তোমার সিনিয়র।
-সিনিয়র হয়ে যদি জুনিয়রদের থাপড়াতে পারে তাহলে আমরা কেনো জুনিয়র হয়ে সিনিয়রদের নাক ফাঁটাতে পারবনা?
–কারণ সে তোমার বড়। আমি হাসলাম। ম্যাম ভ্রু-কুঁচকে তাকালেন, বললেন….
-আজব আমি হাসির কিছু বলেছি?
–নেহি ম্যাম।
-কি বলছো এসব?
–কুচ নেহি।
-আচ্ছা বুঝতে পারছি তোমার সাথে কথায় পারা যাবেনা।
–জি ম্যাম।
-আর হ্যা..শুনলাম তুমি নাকি রম্য লিখো?
–একটু আধটু আরকি।
-আচ্ছা তাহলে শোন,এখন আমি তোমাকে কিছু যুক্তিহীন প্রশ্ন করব আর তুমি সেগুলোর উত্তর দিবে। যদি সঠিক উত্তর দিতে পারো তাহলে তোমার শাস্তি মাফ।
–ওকে ম্যাম।
-উত্তর গুলো অবশ্যই যুক্তিনির্ভর এবং রম্য স্টাইলে হতে হবে।
–এটা কেমন কথা ম্যাম? প্রশ্ন করবেন যুক্তিহীন, উত্তর দিতে হবে যুক্তিনির্ভর তাও আবার রম্য স্টাইলে!
-হ্যা এটাই তোমার শাস্তি।
–আচ্ছাদ প্রশ্ন করুন। ম্যাম চিন্তা করছে কি প্রশ্ন করা যায়। গভীর ভাবে চিন্তা করছে। কিন্তু কোন প্রশ্ন খুজে পাচ্ছে না। ম্যাম প্রশ্ন করলেন….
–রুবেল মনে করো গভীর রাত। তুমি মোবাইলে হরর মুভি দেখছো হঠাৎ তোমার মোবাইলের ভিতর থেকে ভুত বেরিয়ে আসলো। তখন তুমি কি করবে? আমি চিন্তায় পরে গেলাম। কি উত্তর দেওয়া যায়। কিন্তু যুক্তিনির্ভর কোন উত্তর খুজে পাচ্ছি না। অমনি বললাম….
–ম্যাম যদি ভূত বেরিয়ে আসে তাহলে আমি তাকে দেখে প্রচুর খুশি হবো। তারপর বিছানার উপরেই খুশিতে উড়াধুরা ড্যান্স শুরু করব। আমার দেখাদেখি ভূতেও ড্যান্স শুরু করবে। ড্যান্স দেওয়া শেষ হলে দুজনেই বাইরে গিয়ে হালকা মুতে এসে একটা আকিজ বিড়ি খাবো। তারপর একটা সেলফি উঠে ফেসবুকে পোস্ট করে বলব…”হাই ফ্রান্স, ভূতের সাথে সেলফি উঠলাম কেমন হলো জানাতে ভুলবে না।” তারপর দুজনে গলাগলি ধরে শুয়ে পরব। ম্যাম আমার উত্তর শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। আচমকা ম্যাম খিলখিল করে হেসে দিলেন। মনে মনে বললাম যাক উত্তর মনে হয় হইছে। ম্যাম আবার বললেন….
–আচ্ছা আরেকটি প্রশ্ন… মনে করো তুমি পাশের গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনতে গেছো। ওয়াজ শেষে তুমি যখন বাসায় আসা শুরু করবে। মাঝপথে আসার পর যদি দেখো তোমার সামনে মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত সাদা কাফন পরে ভূত দাঁড়িেয় আছে, তখন তুমি কি করবে? ম্যামের যুক্তিহীন প্রশ্ন শুনে এবার অবাক হলাম। মনে হচ্ছে ম্যাম আজকে ভূতের কাহিনী শোনার জন্য আমাকে ডেকে এনেছেন। আমিও বললাম….
–যদি ম্যাম এরকম আকাশ পাতাল সমান সাদা কাফনের কাপড় পরা কোন ভুত আমার সামনে পরে তাহলে আমি আশেপাশে লাঠি খুজবো। লাঠি পেলে ঠাসসস করে ভূতের পায়ে বারি দিবো। বারি খেয়ে রেগে গিয়ে আমাকে শার্টের কলার ধরে তার মুখের কাছে তুলে নিয়ে ভয়ংকর হাসি দিবে। তখন আমি তার মুখের মধ্যে ঘুষি মেরে দাঁত ফেলে দিবো। তারপর বলবো “কি, আমার মতো সাহসি হতে চাস? বিড়ি খা, ভূত হ” তারপর সেই দাঁত নিয়ে বাসায় এসে আরাম মতো ঘুমিয়ে পরবো। ম্যাম রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনি গিলে খাবে। ম্যাম বললেন….
-তুমি ভূত দেখে ভয় পাবেনা?
–ভয় পাওয়ার কি আছে।
–আচ্ছা এবার বলো…রাতে ঘুমানোর সময় যদি দেখ তোমার বিছানার উপরে কেউ একজন শুয়ে আছে। আর সে দেখতে অবিকল একদম তোমার মতো। তখন তোমার অনুভূতি কেমন হবে?
–এটার উত্তর তো একদম সোজা। মনে করেন যে আমি যখন-ই তাকে দেখবো খুশিতে গুলুগুলু হয়ে তাকে বিছানা থেকে টেনে হিছড়ে নামাবো। নামিয়ে তার সাথে সমানে কোলাকুলি করা শুরু করব। এমনকি তাকে কোলাকুলি করতে করতে মেরে ফেলবো। তারপর রাতেই তাকে গর্তে পুতে ফেলবো। ম্যাম ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। কিছু বললেন না নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বললেন….
–আচ্ছা এবার বলো…মনে করো তুমি চেয়ারে বসে টেবিলে পড়ছো। পড়া শেষ হলে তুমি লিখবে, কিন্তু তোমার কলম নাই। কলম না পেয়ে তুমি টেবিলের ড্রয়ার খুলবে। খোলার সাথে সাথে যদি সাপ বের হয় তখন কি তুমি ভয় পাবেনা? আমি চটাং করে উত্তর দিলাম….
-মোটেও ভয় পাবনা। বরং খুশি হবো। খুশি হয়ে সাপটাকে ধরে নিয়ে বিছানার উপর রাখবো। তারপর দৌড়ে গিয়ে বাজার থেকে দুই বোতল মদ নিয়ে এসে দুজনে আরাম করে খাব। সাপের মদ খেতে সমস্যা হলে নল দিয়ে ডকডক করে মদ খাওয়াবো। মদ খাওয়া শেষ হলে দুজনেই মাতাল হয়ে যাব। তারপর মোবাইলে গান ছেরে দিয়ে দুজনেই মাতাল আইমিন নাগিন ড্যান্স শুরু কবরো। নাচতে নাচতে যখন সাপ ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন তাকে ইঁন্দুর মারা বিষ খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলবো। তারপর সাপরে কাইট্টালামু,লবন মরিচ দিয়ে মাখিয়ে মাটিতে পুইত্তালামু। আমার উত্তর শুনে ম্যাম উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে দিলেন। ম্যাম বললেন….
-সবার কাছে শুনেছি তুমি নাকি অনেক ফাজিল এখনতো দেখছি তুমি ফাজিলের ওস্তাদ। কেমনে পারো তুমি। আচ্ছা লাস্ট প্রশ্ন। এট কিন্তু খুব গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন ভেবে উত্তর দিও ঠিক আছে?
–জি ম্যাম।
-আচ্ছাদ বলো তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?
ম্যামের প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পরলাম। এটা আবার কেমন প্রশ্ন! হায় আল্লাহ! আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। ম্যাম বললেন….
–কি হলো বলো।
-আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে বললাম… আসলে ম্যাম আমার এমন মেয়ে পছন্দ, যে হাসলে গালে নীল রং-এর টোল পরবে। যে রাগলে চোখে কালো রং-এর টোল পরবে। ভ্রু-কুঁচকে তাকলে যার কপালে বেগুনী রং-এর টোল পরবে। অভিমান করলে যার থুতনিতে হলুদ রং-এর টোল পরবে। আর যখন সে রাস্ত দিয়ে চলাচল করবে তার শরীরে পিংক কালারের টোল পরবে। ম্যামের হাসি কোন মতেই কমছেনা। বুঝলাম না এখানে হাসির কি হলো। আজব! ম্যাম আমার হাতে একটা পুরষ্কার দিলেন। আমি বললাম….
–এট কিসের পুরষ্কার ম্যাম।
-এটা তোমার ফাইজলামি ময় উত্তরের পুরষ্কার। (হেসে হেসে)
আমি পুরষ্কার নিয়ে চলে এলাম। কবে মনে হয় বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পাই। দোয়া কইরেন, যাতে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে আইডির উন্নতি করতে পারি।