সকালে খেতে বসছি, দেখি অমলেট নাই। রাগে কান দিয়ে ধোঁয়া উড়তাছে। কিছু কইতেও পারছিনা সইতেও পারছিনা। রাগে মুখ লাল হয়ে যখন পু পু সিগনাল মারতে শুরু করছে, চিৎকার জুড়ে নিলাম..
-আম্মা, আম্মা, আমার অমলেট কই?
–ডিম নেই, শেষ হয়ে গেছে।
-আগে বলতে পারো নাই? আমি একটা ডিম পেড়ে দিতাম।
–অতো রাগ দেখাচ্ছিস কেন? যা দিছি চুপচাপ খেয়ে নে।
-পারবোনা, তুমি খাও তোমার ভাত।
সকাল সকালই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। এদিকে পেটের মধ্যে ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ফোনে রিংটন বেজে উঠলো (টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং।)
-হ্যালো আম্মা, আমি বাড়ি আসতেছি ক্ষুদা লাগছে, ভাত রেডি রাখো।
–অই কারে মা কও হ্যাঁ? নিজের জিএফ এর নম্বর ও চিনতে পারোনা?
-ওরে তুমি আবার এখন ফোন দিলা ক্যান। এমনিতেই ক্ষুদার জ্বালায় মরতেছি, মাথা ঠিক নাই।
–আমি ফোন দিলাম ক্যান মানে? আমি ডিস্টার্ব করছি তোমাকে? তোমাকে জ্বালাই আমি?
-না মানে, বলছি যে…
–হইছে থাক,আর কথা ঘুরানো লাগবেনা আমি যে আপনাকে ডিস্টার্ব করি তা বুঝতে বাকি নেই। আমি যদি আর কখনো ফোন দি তোমাকে তাহলে আমার নাম অর্শা নয়।
-হ্যালো, হ্যালো অর্শা..?
অর্শা, আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র গার্লফ্রেন্ড। অনেক কষ্ট করে যোগাড় করছি উনারে। কিন্তু তিনি আমাকে সবসময় এমন চাপের মধ্যে রাখেন যে তার প্রেসারে আমার সিদ্ধ হয়ে যেতে হয়। একটা মাত্র জিএফ অনেক কষ্ট করে পাইছি তাই কিছু বলতেও পারিনা। ইতিমধ্যে আমার পেটের মধ্যে ছুঁচো ঢু মারছে। রাগ-ক্ষোভ ত্যাগ করে ভদ্র ছেলের মতো বাড়ি গেলাম।
-আম্মা ভাত দাও।
–ভাত নাই।
-মানে কি? ভাত নাই তো খাবো কি?
–(মুড়ির বক্সটা এগিয়ে) ধর মুড়ি গেল।
কি আর করার, অগত্যা মুড়ি খেয়েই ক্ষুদা দূর করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবারো (টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং।)
-হ্যালো কে?
–কে মানে? আমাকেও চিনতে পারছো না?
-তুমি তো বললা আমায় যদি আর ফোন দাও তাহলে তোমার নাম আর অর্শা না। তাই ভাবলাম নতুন কোনো নাম টাম রাখলা নাকি।
–ইয়ার্কি মারা হচ্ছে? কথা না বলতে পেরে ভালো লাগছিলো না তাই ফোন দিলাম। বাট আর দেবোনা। বাই।
একটু পর আবার… টিং ট্যা ট্যা ট্যাও….
-হ্যালো।
–কি করছো।
-মুড়ি খাচ্ছি।
–ও রাগ হচ্ছে আমার কথা শুনে, ঠিক আছে ভালো থেকো।
আজিব, আমিতো মুড়িই খাচ্ছিলাম তো কি বলবো? ধুর এই প্রেশার কুকার আমায় প্রেশার করতে করতে পুরা পাটিসাপটা বানাই দিবে। দুপুরে অতি কষ্টে কচু শাক দিয়ে ভাত গেলার পর একটু শুয়ে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম, তখনই টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং…
-হ্যালো, অর্শা বাবু যে আবারো ফোন করলো?
–ভালোবাসি বলেই বারবার ফোন করছি। যাক গে, খাওয়াদাওয়া হলো দুপুরে?
-হুম হলো।
–তো কি খেলে?
-কচু।
–আজিব, তুমি এমন বিহ্যাভ করছো কেন আমার সাথে? ওল্ড হয়ে গেছি আমি? নতুন জিএফ লাগবে? তো থাকো তুমি, কথা বলবা না আর আমার সাথে।
রাগ করলো ক্যান বুঝলাম না। আমি তো কচু দিয়েই ভাত খাইছি। নাকি কচু দিয়ে খেয়ে বলবো মাটন বিরিয়ানি, কাচ্চিবিরিয়ানি খাইছি। ধুর এসব নিয়ে ভাবার টাইম নাই, বিকালে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের খেলা। আড্ডা মারতে যাবো দোস্তদের সাথে। রাতভর খেলা দেখার পর দেখি প্রায় রাত ২ টার দিকে আমার প্রেশারকুকার কল দিচ্ছে। বাংলাদেশ জেতার পর দোস্তরা মিলে কোবরা ডান্স দিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে টিং ট্যা ট্যা ট্যাও টুইং টুইং…
-হ্যালো?
–কি করো?
-ডান্স করছি, করবা?
–আবারো এমন করছো কেন তুমি? আমি কি সত্যিই ওল্ড হয়ে গেছি? ঠিক আছে আর কোনোদিন ফোন দেবোনা আমি। ভালো থাকবা, বাই।
ধুর, হুদাই রাগ দেখায় সবসময়,আমিতো ডান্সই করছলাম। ডান্সের মুড টাই নষ্ট করে দিলো। ফোন না দিলেই ভালো। এতো প্রেশার আর ভালো লাগেনা। দিন চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। অর্শা সত্যিই ফোন দিচ্ছেনা আর। ভালোই হলো, আর প্রেশারকুকারে ভাজি হতে হবেনা। ইতিমধ্যে বাবা নাকি বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। আর দুদিন পরই বিয়ে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিনও চলে আসলো। ভাইয়া রেডি হচ্ছে, আমি তার পাশেই।
-উফফ ভাইয়া তোর তো বিয়ে হয়েই গেলো, আমার যে কবে হবে। ভাইয়া কিছু বলেনা শুধু হাসছে মিটমিট করে। কিছুক্ষণ পর বলে..
–নে, এই ড্রেসটা পরে নে।
-এতো বিয়ের পাঞ্জাবি, আমি কেন পরবো?
–আরে পরে নে, দুই ভাই এক সাজে গেলে ভালো লাগবে।
-উক্কে ব্রো। লেটস এনজয়। রেডি হয়ে রওনা হলাম কন্যাপক্ষের উদ্দেশ্যে।
-দেখি ভাইয়া মুকুটটা দে তো একটু পরে দেখি আমায় কেমন লাগে?
–আচ্ছা নে।
মুকুট আমিই পরে আছি। কন্যাগৃহে পৌছানোর পর আমি বসে আছি ভাইয়ার কাছে। এদিকে কাজি সাহেব হাজির। কাবিননামা পড়ছেন, আমি শুনছিলাম মহা আনন্দে, আমার যে কবে এমন সময় আসবে। কিন্তু কাবিননামা যখন আমাদের দিকে এগিয়ে দিলেন আমার মাথা তো ৩৬০° এঙ্গেলে ঘুরপাক খেতে লাগলো।
কন্যা আফসানা আহমেদ অর্শা, আর পাত্র আর কেউ না স্বয়ং আমিই। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। বড়সড় একটা খামচি মারলাম নিজের শরীরে। উরে মা, জ্বলে গেলো উফফ। মুখ চেপেই চিৎকার মারলাম। না বাস্তবেই আছি। ভাইয়ার কানে কানে জিজ্ঞাসা করলাম কাহিনী কি?বললো, অর্শা নাকি আমার উপর সেদিন রাগ করে হাত পা ঠ্যাঙ কাটছে ইচ্ছামত। তারপর মেয়েকে বাঁচাতে তার বাপ আমার বাপের লগে প্লান করছে ভাইয়ের নামে আমায় বিয়া দিবে। এতক্ষণে কাহিনী বুঝলাম, ভাই আমার এতো মিটমিট করে হাসছিলো কেন। আমি এই প্রেশারকুকারের প্রেশার সারাজীবন নেওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত না। হাত পা উঠাইয়া দৌড় দিতে যাবো তখনই ভাইয়া টেনে ধরে বলে এক পা ও নড়বিনা। জোরে চেপে ধরে রাখছে আমার পা। এদিকে কাজি সাহেব বলছেন..
— বাবা বলো কবুল।
-আমি পারবোনা,আমি বিয়া করমু না, আমি বাড়ি যাবো।
–যাবি ভাই আগে বিয়েটা কর,বউ নিয়ে বাড়ি যাস।(ভাইয়া)
-এ তুমি এইরাম জল্লাদের মতো কথা কও ক্যা? আব্বা আমি এই বিয়া করতাম না।
–(কানের উপর হেইসা জোরে এক থাপ্পড় দিয়ে) হতচ্ছাড়া, বিয়ে না করে এখান থেকে একচুল ও নড়তে পারবি না।
কি আর করার, কবুল বলাই লাগলো। ভাইয়ের আগে কাম সাইরা ফেলসি। কিন্তু সামনে যে আবার প্রেশারকুকারের প্রেশার সহ্য করতে হবে।