ভেতর বুদ্ধি

ভেতর বুদ্ধি

আজ টিউশনিতে যাইনি ৷ সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত টিউশনি করিয়ে যাই অফিসে ৷ আঙ্কেলের বাসা থেকে একটু দূরেই অফিস! আজ অফিসেও যাইনি ৷ সন্ধ্যা বেলা ছাত্রীর বাবা আমাদের বাসায় এসে হাজির! এসে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ৷ আমি আঙ্কেলের সামনে দাঁড়ালে উনি কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন? বুঝলাম না ব্যাপারটা! হঠাৎ গম্ভির গলায় বলে উঠলেন, “আমার ভাতিজি সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে, এখনো ফেরেনি, সে কখনো বাড়ি থেকে বের হলে এতক্ষণ বাইরে থাকেনা ৷ বাপ মরা মেয়ে! ভাবলাম তোমার বাসায় এলো কি না? কিন্তু এখানে এসে দেখি সে নেই!

আমি বুঝতে পারলাম উনি আমাকে সন্দেহ করেছেন ৷ হয়তো ভেবেছিলেন আমিই ওনার ভাতিজিকে নিয়ে পালিয়েছি! কিন্তু আমি তো এমন না! আঙ্কেলকে অাপ্যায়ন করতে চাইলাম উনি না খেয়ে সোফা থেকে উঠলেন ৷ ওনাকে দেখে মনে হলে কি যেন বলবেন? শেষপর্যন্ত আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন, “যদি সত্যিই ভাতিজিকে বাসা থেকে ভাগিয়ে এনে থাকো তো বলো, আমরা কিন্তু রাজি আছি তোমার হাতে ভাতিজিকে তুলে দিতে!” আমি তোড়জোর করে বললাম “আঙ্কেল আপনি এটা বলতে পারলেন? কষ্ট পেলাম খুব! আমাকে কি ওরকম চরিত্রের লোক মনে হয়?” উনি কোনো জবাব দিলেন না আর, বাসা থেকে চলে গেলেন! এদিকে আমার আম্মাও সন্দেহ করছে আমি নাকি কাউকে বাসা থেকে ভাগিয়ে আনছি ৷ ফোনে অফিসের কাজের জন্য আর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলি দেখে আম্মার সেই রকমের সন্দেহ! ভাবে তার ব্যাটার বউয়ের সাথে কথা বলছি! পরেরদিন টিউশনিতে গেলাম ৷ ছাত্রীকে বললাম, “তোমার বোনের কি খবর? আসছে সে?”

সে মুখ বাকা করে চেঁচানো স্বরে জবাব দিল, “সেটা জেনে আপনি কি করবেন? তার প্রতি এত দরদ কেন? দরদ থাকলে আপনি ভাগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না? কোথাকার কোন খাটাশের হাতে যে পড়ছে সে, কে জানে?”
ছাত্রীকে জবাব দিলাম, “চ্যাতো কেন? তোমার বোন বলে জিজ্ঞেসা করছি মাত্র! ছাত্রী আমার হাতটা খপ করে ধরে বলল, “সত্যি করে বলুন তো আমাকে আপনার ভাললাগে কিনা?” ছাত্রীর কথা শুনে বেষম খেলাম ৷ খায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল! ছাত্রী পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল “খান” পানি খেয়ে গলা ঝেড়ে বললাম, “তুমি কি ভুলে গেছো আমি তোমার শিক্ষক? তুমি ছাত্রী?” ছাত্রীর জবাব, “বাদ দেন তো এসব ডং, যা বলছি সেটাই বলেন?” উত্তর দিলাম, “নাহ, পছন্দ হয়না! বই বের করো!”

তখন আন্টি রুম এলো পায়েস আর রসগোল্লা নিয়ে ৷ সেগুলো খেয়ে নিলাম ৷ আঙ্কেল রুমে এসে বলল, “শোনো বাবা, আজকে আমি তোমার নিকট একটা প্রস্তাব দিব, ভুলেও ফিরাতে পারবেনা! তুমি ভাল জব করো, সূতরাং আমাদের কোনো আপত্তি নেই!” বুঝলাম না ওনার কথা ৷ কিসের আপত্তি নেই? একটু পর দেখি আমার আম্মা রুমে প্রবেশ করলো! রুমে প্রবেশ করে আমাকে বলল, “বাবা, রাজি হয়ে যা; তোর আঙ্কেল অনেকবার প্রস্তাবটা দিয়েছিল আমি শুরুতে রাজি ছিলাম না ৷ এবার রাজি হয়েছি!” আম্মাকে কৌতূহলচিত্রে জবাব দিলাম, “কিসের প্রস্তাব মা?” আঙ্কেল জবাব দিলেন, “আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব!” কথাটি শুনে আকাশ থেকে পড়লাম ৷ বুকে হাতুড়ির পিটুনি খেলাম ৷ মনে হচ্ছিল অজ্ঞান হয়ে যাব ৷ উনি কি বললেন এসব? পেট মোচড় মেরে উঠলো কথাটি শুনে ৷ আঙ্কেলকে বললাম, “ইয়ে করতে ওয়াশরুমে যাব‌!”

ওয়াশরুমে সরি বাথরুমে ঢুকে মনে পড়লো ফোনের কথা ৷ মাথায় বাড়ি পড়লো ৷ এখন ফোনে কল এলে জেলে পুড়তে হবে ৷ কাজ সেড়ে যেই রুমে ঢুকলাম ৷ ওমনি ফোনটা বেজে উঠলো ৷ ছাত্রী ফোনটা রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিয়ে বলল, “হ্যাঁলো কে?” ওপাশ থেকে উত্তর এলো, “তন্নি তোর দুলাভাইকে ফেনটা দে তো!”

তন্নি রং নম্বর বলে ফোনটা দিলো কেটে! চৌদ্ধটা বাজার হাত থেকে রক্ষা পেলাম এবারের মত ৷ তন্নি ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রুপ নিয়ে কালনাগিনীর মত ফোঁসফোঁস করার ভাব ধরে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে রইলো! একটি পর কাজী এসে পড়লো! পড়লাম গ্যারাকলে ৷ এ দেখি আজই বিয়ে পড়িয়ে দেয়! আঙ্কেল বলল, “ভাতিজি পালিয়ে যাবার পর মেয়ের উপর থেকেও ভরসা উঠে গেছে ৷ তাই মেয়ের পড়াশোনা বাদ, সোজা বিয়ে দেবার চিন্তা করলাম ৷ অনুষ্ঠান করবো না ৷ যদি কালই ভেগে যায় ঘটবে অঘটন! তাই আজই বিয়ে! নেন কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান!”

আমি নিরিহ প্রাণীর মত দাঁড়িয়ে আছি ৷ চোখ দুটো ছলছল করছিল ৷ খুব জোরে চেঁচিয়ে কান্না করতে মন চাচ্ছিল কিন্তু কাঁদার পথ নাই! চোখের জল ফেলতে লাগলাম ৷ ওদিকে কাজী সাহেব বললেন,“মা, বলো কবুল?” তন্নি তিন তিনবার কবুল বলে ফেলল ৷ এবার আমার পালা ৷ কাজী বলতে লাগল বিয়ের বুলি, এরপর বলল, “বাবা, বলো কবুল?” আমার মুখ বন্ধ ৷ হ্নদস্পন্দন বন্ধ ৷ চোখ বন্ধ করে সজোরে বলে দিলাম আমি কবুল বলবনা, বিয়ে করেছি আমি! আম্মা আমার কানের নিচে কষে থাপ্পর মেরে দাঁত কটমটিয়ে বলল, “কাকে?” মুখ ফসকে বলে দিলাম, “তন্নির বোন নীলাকে!”

আঙ্কেল কষে থাপ্পর মেরে বলল, “যাক শেষ পর্যন্ত এই নাটকে কাজ হলো! এবার তোরে চৌদ্ধ শিকে ঢুকাব!” তন্নি বলে উঠল, “আব্বু, আমার আইফোনের টাকাটা দাও, বলেছিলে নাটকটা করলে আইফোন কেনার টাকা দিবা!”
আঙ্কেল জবাব দিল, “চুপ থাক!” আম্মা বলে উঠল, “আমার ছেলে জেলে ঢুকবে মানে? আপনার মেয়েকে বউ করে নিতে আসছি ৷ বিয়ের কাজটা শেষ করুন!” আমি বলে উঠলাম, “আম্মা, কয়বার বিয়ে করব?” আম্মা বলল, “আগের বিয়ে মানিনা,তন্নি হবে তোর বউ!” তন্নি বলে উঠল, “আন্টি, আমিও বিবাহিতা, গোপনে আপনার ছোট ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছি!” আম্মা, আঙ্কেল, আমি আর তন্নির মা বেহুশ! আর কে বাকি?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত