মেঘদল

মেঘদল

রুমে শুয়ে থেকে মেঘদলের-“এসো আমার শহরে” গানটা শুনছি কানে হেডফোন দিয়ে ৷ হেডফোন ছাড়া আমি গান শুনি না,আমার কাছে হেডফোন ছাড়া গান শুনা মানে মাংস ছাড়া বিরিয়ানী খাওয়ার মতো লাগে ৷ হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,হাতে নিয়ে দেখি মার ফোন ৷ কি কারণে মা ফোন দিয়েছে জানার জন্য ফোন কেটে দিয়ে রুমের দরজা খুলতেই রিনি হড়মড়িয়ে রুমে ঢুকলো ৷ সাথে সাথে তার সাউন্ড বক্স শুরু করে দিলো–তুই রুমে সারাদিন কি করিস? দিন দুপুরে রুমের দরজা বন্ধ রাখিস কেন? ফেবুতে কার সাথে লুচ্চামি করছিস,লুচ্চা একটা ৷ সেই কখন থেকে বাইরে থেকে ডাক দিচ্ছি,দরজাতেও কত বার ধাক্কা দিলাম তাও তোর কানে ঢোকে না? ও হ্যা তা আবার ঢুকবে কেন কানের মধ্যে যে সোনার মেশিন দিয়ে রাখিস ৷ কতবার বলেছি ওটা কানে দিয়ে বেশি সাউন্ডে গান শুনবি না,ঠসা হয়ে যাবি ৷ এখন বুঝবিনা যখন ঠসা হবি তখন ঠিকই মনে হবে আমার বারণ করার কথা ৷ পরে চাচী বলল ফোন করতে,আমি ফোন নিয়ে আসি নি তাই চাচীর টা দিয়েই ফোন দিলাম ৷

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ৷ এরমানে মা কল করেনি ৷ আবার কানে হেডফোন দিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ আমি মাঝে মাঝে ভাবি একটা মানুষ এতো কথা কিভাবে বলে ৷ রিনিকে না দেখলে জানতেই পারতাম না একটা মানুষ এতো কথা বলতে পারে ৷ আমিতো দিনে দশটা কথাও ঠিকমতো বলি না ৷ রিনি আমাদের প্রতিবেশি, আমাদের বাসার পাশেই ওদের বাসা ৷ প্রতিবেশি বলা ভুল হবে,পরিবার বললে বেশি ঠিক হবে ৷ আমার মা আর রিনির আম্মুর মধ্যে সেই রকম মিল ৷ একজন অন্যজনকে ছাড়া কিছু বোঝেই না ৷ একসাথে শপিং,প্রতিদিন একসাথে বসে থেকে গল্প করা এসবের সঙ্গী তারা ৷ রিনির আব্বু আর আমার আব্বু তো সেই ছোট থেকেই ফ্রেন্ড ৷ একসাথে এই এলাকাতেই বড় হয়েছে ৷ আর রিনি হলো আমার বউ মানে শুধু আমি জানি রিনি আমার বউ আর কেউ জানে না ৷বুঝতেই পারছেন কেমন বউ ৷ যদিও রিনিকে অনেকবার বলেছি রিনি আমাকে বিয়ে করবি? ওর একটাই উত্তর তোর মতো হ্যাবলা কে আমি কখনো বিয়ে করবনা ৷ ছোট থাকতে ওর সাথে বর বউ খেলতাম তখন নিজেই বলতো বড় হলে তোকে বর বানাবো ৷ আমি তখন না করতাম আর এখন সে না করে ৷

কয়েকদিন ধরে এই মেয়ে একটু বেশি প্যারা দিচ্ছে ৷ আমার ব্যাচের একটা ছেলেকে ওর ভাল লাগে ৷ আমার বন্ধু হয়,নাম সুমন ৷ যখন রিনি আমাকে সুমনের কথা বললো তখন আমার একটুও খারাপ লাগলো না ৷ হয়তো মন এতোদিনে বুঝে গেছে আমি রিনির জন্য না ৷ রিনি এ বার আমাদের কলেজেই ভর্তি হয়েছে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি ৷ সেদিন ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে বসে আছি,হঠাৎ রিনি এসে বলল নিশো বাসায় কখন যাবি? এখন গেলে চল, আমি বাসায় যাচ্ছি দুইজন একসাথে যাই ৷ বন্ধুদের বিদায় দিয়ে ওর সাথে বাসায় আসলাম ৷ রাস্থায় ওকে বললাম-

–তোকে কতবার বলেছি তুমি করে বলতে ৷ আমার কথা তো শুনিস না,তাই বলে কলেজেও তুই করে বলবি? কলেজে অন্তত তুমি করে বলিস প্লিজ ৷

–রাখ তোর তুমি বলা ৷ ছোট থেকে তুই বলে আসছি আর এখন তুমি করে বলতে বলছিস, আমি পারবনা বলতে ৷ এক বছরের বড় এজন্য তুমি করে বলতে হবে কে বলেছে ৷ আর কথা বেশি করলাম না ৷ ওকে বুঝিয়ে লাভ নাই,ও যেটা বুঝতে চায় না সেটা হাজার বার বলেও লাভ হবে না ৷ রিনি আমার কান থেকে হেডফোন সরিয়ে দিল ৷ আমি চুপ করে থাকলাম,কথা বলতে ইচ্ছে করতিছে না ৷ রিনি বলল-

–তোকে যে বললাম সুমনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ৷ শুধু পরিচয় করিয়ে দে বাকিটা আমি নিজেই এগিয়ে নিয়ে যাব ৷
–আমিও তো তোকে বলেছি জেরিনের সাথে আমার প্রেম করিয়ে দিতে ৷ তুই আমার টা না করে দিলে আমিও তোর টা করে দিতে পারব না ৷ জেরিন রিনির ফ্রেন্ড, মাঝে মাঝেই ওদের বাসায় আসে ৷ মেয়েটা একটু বেশিই সুন্দর, যে দেখবে সেই প্রেমে পরতে চাইবে ৷ জেরিনের সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে তবে কখনো কথা হয়নি ৷ আমার জেরিনের সাথে প্রেম করার কোনো ইচ্ছাই নাই ৷ রিনি যেদিন প্রথম আমাকে সুমনের কথা বললো, সেদিন হঠাৎ আমি জেরিনের কথা বলেছিলাম ৷ যদিও আমার সেরকম কোনো ইচ্ছা নাই ৷ জেরিনের কথা যখন রিনিকে বলেছিলাম তখন রিনি না করে দিয়েছিল ৷

–জেরিন রিলেশনে আছে, ওর কথা আর বলবি না ৷ আচ্ছা শুধু একটা কাজ করে দে আমি সুমন কে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি তুই অ্যাকচেপ্ট করতে বল, আমার ছবি দেওয়া নাই এজন্য ফেক আইডি ভেবে হয়তো ঝুলিয়ে রাখছে ৷ নিজে থেকে বলতেও পারছিনা কিনা কি মনে করে আবার ৷ তুইও যেন সরাসরি বলিস না ,একটু ঘুরিয়ে বলবি৷

–আমি পারব না কিছু করতে ৷ যা করার নিজে কর৷
–বুঝি বুঝি তোর হিংসা হচ্ছে আমার সুমনের মতো ভাল একটা বফ হবে এজন্য ৷ নিজে তো এতোদিনে একটা প্রেম ও করতে পারিস নি ৷
–উফফ যা তো ফালতু পেচাল পারিস না ৷
–ভেবে বলছিস?
–একবার তো বলেছি আর কতবার বলতে হবে ৷
–ঠিক আছে না করে দিলি ৷ আমি চাচীকে তোর ওই কথাটা জানিয়ে দেই ৷ আমারও তো দায়িত্ব আছে একটা ৷ চাচী আমাকে এতো ভালবাসে, আমারও তো উচিত চাচীকে তার ছেলের খোজ খবর দেওয়া ৷

রিনি মাকে কি বলার কথা বলছে তা আমি জানি ৷ মেয়েদের নিয়ে এই এক সমস্যা, কিছু একটা দুর্বলতা পেলেই সেটা নিয়ে ভয় দেখায় ৷ আমাদের বাসার কিছুটা দূরে একটা স্টল আছে ৷ ওখানে আমি মাঝে মাঝেই সিগারেট খাই,বেশি খাই না মাসে তিন চারটা ৷ সেটাই ভাগ্যের দোষে রিনি একদিন দেখেছে ৷ পরে তাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে চুপ করে রেখেছিলাম ৷

–তুই আমাকে বলেছিলি কাউকে কিছু বলবি না ৷
–আমার কাজ না করে দিলে আমি চাচীকে বলে দিব তুই প্রচুর সিগারেট টানিস ৷ জানিসই তো চাচী আমার সব কথা বিশ্বাস করে ৷ আর আমি তো মিথ্যা বলবো না শুধু একটু বাড়িয়ে বলবো ৷ তখন তো বলতেও পারবি না সিগারেট খাসনে ৷
–ঠিক আছে আমি সুমনের সাথে কথা বলবো,তুই এখন যা ৷
–আজ-ই কথা বলবি,তাছাড়া কাল চাচীর কাছে খবর পৌছে যাবে ৷

রিনি চলে গেল ৷ মেয়েটা যেটাই করে আমার ভাল লাগে ৷ সারাদিন কথা বলে,আমি চুপ করে থাকলেও তার কথা থেমে থাকে না ৷ না শোনার ভান করে থাকলেও সে যা যা বলে সব কিছু আমি চুপচাপ শুনে যাই ৷

সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম ৷ রাস্তায় আনমনে হেটে চলেছি আর ভাবছি আমার তো তেমন কোনো দুঃখ নেই তাহলে আমি এমন কেন? আমার জীবনে কিসের অনুপস্থিতি আছে যার কারণে আমি এমন! বন্ধুদের সাথে তেমন সময় কাটায় না,কারো সাথে কথা বলতেও বিরক্তি চলে আসে ৷ এসব ভাবতে ভাবতে আদনান ভাইয়ের বাসায় চলে আসলাম ৷ আদনান ভাইয়ের বাসা আসতে আমাদের বাসা থেকে পনের মিনিটের মতো সময় লাগে ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আমাদের এলাকার ওই স্টলে ৷ সেদিন খেলা ছিল বাংলাদেশের ৷ আমি গিয়েছিলাম সিগারেট খেতে স্টলে ৷ ওখানেই আদনান ভাই খেলা দেখছিল বাংলাদেশের ৷ বাংলাদেশের খেলা এজন্য আমিও খেলা দেখায় যোদ দিলাম ৷ খেলা দেখতে দেখতে ভাইয়ের সাথে অনেক কথা হলো, সাথে নিজের বিষয়েও অনেক কিছু বললো ৷ কিছু কিছু মানুষের সাথে আমাদের কথা বলতে ভাল লাগে ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগে ৷ আদনান ভাই একটা বাসার চিলেকোটায় থাকে ৷

আদনান ভাইয়ের পড়ালেখা শেষ,চাকরি খুজতেছে অনেক দিন থেকে ৷ আপাতত কয়েকটা প্রাইভেট পড়ায়, সেটাতে যা আয় হয় তাতে ভাল মতোই দিন চলে যায় ৷ গ্রামে বাবা-মার কাছেও প্রতি মাসে টাকা পাঠায় ৷ কিন্তু একটা চাকরির খুব দরকার,চাকরি ছাড়া কোনো বাবা তার মেয়েকে একটা ছেলের হাতে তুলে দেবে না ৷ আদনান ভাইয়ের প্রেমিকার নাম তানহা ৷ তানহা আপুদের বাসার চিলেকোঠায় আদনান ভাই ভাড়ায় থাকে ৷ আদনান ভাই একটা মেসে থাকতো ৷ তানহা আপুর ছোট বোনকে প্রাইভেট পড়াতো ৷ একদিন তানহা আপুর আব্বু আদনান ভাইকে চিলেকোঠায় থাকার কথা বলে,পরে আদনান ভাই এখানে চলে আসে ৷ যদিও তখন তানহা আপু তার আব্বুকে মানা করেছিল এটা করতে ৷ রুমের দরজায় টোকা দিলাম,আদনান ভাই দরজা খুলে আমাকে দেখে রুমে ঢুকলো ৷

–বসো,কি ব্যাপার নিশো আজকাল আসা কমে দিয়েছো দেখছি ৷ পড়াশোনার চাপ বেশি নাকি?
–না,এমন কিছু না ৷ কি করছিলেন?
–এইতো লেখালেখি করছি ৷
–এবার একটা বই বের করেন ৷ অনেক আগে থেকেই লেখালেখি করছেন ৷ ফেসবুকে তো অনেক লেখলেন ৷
–দেখা যাক কি হয় ৷
–চাকরির কি হলো,কয় দিন আগে না একটা ইন্টারভিউ দিয়ে আসলেন ৷
–বলেছিল জানাবে,মনে হয় এটা হয়ে যাবে ৷ কেন জানি না মন বলছে এটা হয়ে যাবে ৷
–আপুর আব্বুকে কবে জানাবেন আপনাদের কথা?
–ভয় করছে বলতে,কিভাবে বলবো? যদি কিছু মনে করেন?নিজের ছেলের মতো ভালবাসেন ৷ বলার পর যদি খারাপ মনে করে?
–বলতে তো হবেই ৷ চাচা তো জানেই আপনি কেমন মানুষ, সব বাবাই চায় তার মেয়েকে ভাল কোনো ছেলের হাতে তুলে দিতে ৷ আমার বিশ্বাস উনি না করবেন না ৷

কথা বলতে বলতে এক সময় তানহা আপু আর অদ্রি ছাদে চলে আসল ৷ তানহা আপু ডাক্তারি পড়তেছে ৷ অদ্রি তানহা আপুর ছোট বোন, এবার টেন এ পড়ে ৷ রাতের খাবার নিয়ে আসছে ৷ আদনান ভাই নিজেই রান্না করে,মাঝে মাঝে চাচী পাঠিয়ে দেয় ৷ তানহা আপু আমাকে দেখ বলল–

–কি খবর নিশো কেমন আছো,কখন আসছো?
–এইতো আপু একটু আগে ৷
–দুইজনে কি গল্প করছিলে? সে আমার নামে উলটা পালটা কিছু বলছে নাকি?

হ্যা,নিশোকে বলতেছি তুমি আগে আমাকে দেখতে পারতে না ৷ এখানে তো থাকতেও দিতে চাও নি ৷ জানো নিশো এখানে উঠার পর একদিন ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছি এমন সময় ম্যাডাম এসে বলতেছে,“আপনি এখান থেকে চলে যান আমার বাসায় অপরিচিত কোনো ছেলে থাকুক সেটা আমি চাই না ৷ বাবা যে কেন আপনাকে এতো ভালবাসে আমি বুঝতে পারি না ৷”

এসবের কিছুই আদনান ভাই কখনো আমাকে বলেনি,আপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতিছে ৷ আপু তখন বলল, “এখন আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসি সেটা বলছ না কেন?” এভাবেই দুইজন কথা বলে যাচ্ছে আমি আর অদ্রি শুনছি ৷ অদ্রি অবশ্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা আমি জানি ৷ যখনই এই মেয়েটার সাথে দেখা হয় তখনই তাকিয়ে থাকে ৷ কিছু বলতেও পারি না ৷ মেয়েটা আগে টুকটাক কথা বলতো ৷ একদিন সরাসরি জিঙ্গাসা করল নিশো ভাইয়া আপনি প্রেম করেন? তার কথা শুনে প্রথমে চুপ করে থাকলেও একটু পর বলেছিলাম,হ্যা করি ৷ তারপর থেকে আর কথা বলতে দেখিনি শুধু তাকিয়ে থাকে ৷

বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেল ৷ আব্বু দরজা খুলে বলল, এতো রাত পর্যন্ত বাইরে কি করো? এটা বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে ভিতরে চলে গেল ৷ রাতে মা খেতে বললে মাকে বললাম খেয়ে এসেছি ৷ আদনান ভাই না খেয়ে আসতে দেবে না তাই ওখানেই খেয়েছি ৷ রাতে একটা মুভি দেখে ঘুম আসছিলাম ৷ সকালে রিনির অত্যাচারে ঘুম ভেঙ্গে গেল, এমনিতে অনেক দেরিতে ঘুমাইছি ৷ এই মেয়ের জন্য ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ৷ জানি কেন এসেছে কাল সুমনকে রিনির কথা বলেছিলাম এজন্য ৷ আমি একটু রেগেই বললাম তোর সমস্যা কি,এতো সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে দিলি কেন?

–কাল ওর সাথে কথা বললাম,কি সুন্দর করে কথা বলে ৷ আমিতো কিছু বলতেই পারিনি লজ্জায় ৷
–ভাল করেছিস এখন যা, আমি একটু ঘুম দিব ৷
–কেন তুই কলেজে যাবি না?
–হ্যা,একটু দেরিতে যাব ৷

আদনান ভাইয়ের চাকরি হয়ে গেছে ৷ ফোন করে যেতে বলেছিল, সেখানেই যাচ্ছি ৷ রুমে নক করে ভিতরে ঢুকে দেখি তানহা আপুও বসে আছে ৷ তানহা আপুকে বেশ খুশি খুশি লাগছে,ভাইয়া চাকরি পেয়েছে এজন্য হয়তো ৷ হঠাৎ আপু বললো নিশো বিয়ের দিন ভাইয়ার সাথে সব সময় থাকবে ৷ এই দুইমাস যে কবে শেষ হবে,আমি শুধু এই অপেক্ষায় আছি ৷ ভাই কে বললাম চাকরি পেতেই চাচা কে বলেছেন? “আপু বললো ও কি বলবে যা বলার আমি বলেছি ৷ অনেক হয়েছে লুকিয়ে প্রেম করা ৷ যদিও বলার সময় অনের চিন্তায় ছিলাম তবে বাবা রাজি হয়ে গেছে ৷ বাবা নাকি আগে থেকেই জানতো ৷ পরে বাবা আদনানকে ডেকে বলেছে,নতুন চাকরি নিজেকে গুছিয়ে নাও তারপর তোমাদের এক করে দিব ৷” বিয়ের কথাটা শুনে আমার অনেক ভাল লাগলো ৷ অবশেষে দুইটা মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে ৷

আদনান ভাইয়ের বিয়ে আজ ৷ ভাইয়া আলাদা একটা বাসা নিয়েছে,গ্রাম থেকে চাচা চাচী এসেছে ৷ সকাল থেকে আমি এখানেই আছি ৷ আদনান ভাই আমার বাসায় গিয়ে সবাইকে আসতে বলেছে,রিনি দের কেও ৷ আদনান ভাই জানে তারাও আমাদের পরিবার ৷ বিয়ের সবকিছু ভাল ভাবেই হচ্ছে,পারিবারিক ভাবে ৷ আমি টুকটাক কাজ করছিলাম ৷ একটুপর দেখলাম আমার বাবা, মা সাথে রিনির আম্মু, আব্বু ও রিনি এসেছে ৷ রিনি আজ শাড়ি পরেছে, আগে কখনো রিনিকে শাড়ি পরতে দেখি নি ৷ একটু বড় সাথে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে দেখতে ৷ বিয়ের পর সবাই চলে গেছে, আমি আর রিনি রয়ে গেছি ৷রিনিকে বললাম থেকে যা এক সাথে রাতে যাব ৷

রাত দশটার দিকে আদনান ভাই ও তানহা আপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ৷ আশে পাশে কোনো রিক্সা না থাকায় দুজনে হাটতে শুরু করলাম ৷ সোডিয়ামের আলোতে রিনিকে অপরূপ লাগছে ৷ সুমনের সাথে রিনির সাত দিন কথা হয়েছিল ৷ একদিন ছাদে বসে আছি রিনি এসে আমাকে বকা শুরু করে দিল ৷ আমি কি করেছি এটা ভাবতেছি তখন রিনি বলল,“সব ছেলেরাই এক রকম ৷ ভাল লাগে এজন্য কথা বলি আর সে বলে রুম ডেট করবো নাকি ৷ তোর বন্ধু এমন কেন? ওকে তোর মতো করতে পারিস নি? ব্লক দিয়েছি আর জীবনেও কথা বলবো না ৷ আমি মনে মনে একটু হাসলাম, কোনো কথা বললাম না তার বক বক চলতেই থাকলো আর আমি মন দিয়ে শুনছিলাম ৷ রিনি আজ কোনো কথা বলছে না,সে আমার সাথে কখনো চুপ করে থাকে না ৷ আমি রিনিকে বললাম,“শাড়িতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে ৷”“এতোক্ষণে তোর চোখে পরলো,আমি মনে করলাম তুই খেয়ালই করিস নি আমি শাড়ি পরেছি ৷”

–তুই শাড়ি পরতে শিখলি কোথায় থেকে ৷
— আম্মুকে বললাম শাড়ি পরে দিতে আম্মু বললো পারবে না পরে চাচীর কাছে থেকে পরে নিছি ৷ চাচীকে তো আমি বলেও দিয়েছি বিয়ের পর কিছু না পারলে তুমি আমাকে এভাবে শিখিয়ে দেবে ৷চাচী বলেছিল পাগলী একটা ৷

আমি আর কিছু বললাম না ৷আমি ভাবলাম মেয়েটাকে আর একবার বলতে হবে,জানো মেয়ে তোমাকে নিয়ে আমি অন্যভাবে ভাবি ৷ তুমি কি আমাকে তুমি করে বলার অধিকার নিবে? অনেক বার না করেছে আর একবার না শুনতে ক্ষতি নেই ৷ কিন্তু মন বলছে এবার আর না করবে না ৷ আমি হাতটা আলতো করে ধরলাম,সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে হাতটা অনেক জোরে চেপে ধরলো ৷ আর বললো আমি কিন্তু তুই করেই বলবো,তুমি করে বলতে পারবো না বুঝছো? আমি শুধু মনে মনে হাসলাম ৷

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত