আস্থাহীন কুঁড়েঘর

আস্থাহীন কুঁড়েঘর

মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, দরদর করে ঘাম ঝরছে ৷ আরো বেশ কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে ৷ হিম পারেও বটে, ঠিক ওর মনের মতো করে ঘরটা বানিয়েছে ৷ আমার ইচ্ছাতেই ঘরের নকশা করেছে ৷ কত স্বপ্ন নিয়ে এই ঘরটা বানিয়েছে তা ও আর আমি জানি ৷ আমাদের বেডরুম হবে দক্ষিণ দিকে ৷ এটা ছিলো আমাদের দুজনের ইচ্ছা ৷ এখনো মনে আছে সবুজ ঘাসে বসে ছিলাম, হিম কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলেছিলো ৷ আমি যে ঘরটা বানাবো ঠিক তোমার মনের মতো করে, তবে বেডরুম হবে আমার ইচ্ছামতো ৷ দক্ষিণ দিকে থাকবে আমাদের রুম ৷ সেখানে একটা বারেন্দা থাকবে ৷ তুমি যখন রাগ করে বারেন্দায় দাড়িয়ে থাকবে ৷ আমি পিছন থেকে গিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরবো ৷ মৃদু বাতাসে তোমার চুল এসে পড়বে আমার মুখে ৷ ভেবে দেখেছো নিঝু? কত রোমান্টিক একটা মুহূর্ত?

সেই কথা গুলো মনে পড়তেই অজান্তে হাসি চলে আসছে ৷ এই হাসিটা আমার মৃদুলার জন্য খুব দরকার ৷ বলতে বলতে পেটে হাত বুলাতে লাগলাম ৷ মেয়েটার বড্ড কষ্ট হচ্ছে ৷ সেটা ও ছোট ছোট লাথি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে ৷ কষ্ট হবেই না কেনো, বেশ কয়েকঘন্টার জার্নিতে কষ্ট না হয়ে পারে ৷ পা আর এগোচ্ছে না, আস্তে করে বসে পরলাম সিঁড়িতে ৷ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে ৷ আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে আবার উপরে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনি শাশুড়ী মায়ের ডাক,

— বউমা এক গ্লাস জল দিয়ে যাও, যা গরম পরছে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে ৷ মিষ্টি কন্ঠে আরেকজন বলে উঠলো,

— টেবিলেই জল রেখে আসছি, একটু তাঁকালেই হয় বাপু ৷ আমি আর কতদিক সামলাবো ৷

শরীরের সব শক্তি দিয়ে উঠে দাড়ালাম ৷ নাহ এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে আমার মৃদুলার কি হবে ৷ দরজার সামনে এসে দাড়ালাম, বুকের মধ্যে ধুক ধুক শব্দটা মনে হচ্ছে নিজের কানে শুনছি ৷ বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে দরজা খুললো ৷ মেয়েটা কতক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— কে আপনি? ঠিক তখনি পেটে আরেকটা লাথি অনূভব করলাম ৷ মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন লাথি মারে দম বন্ধ হয়ে আসে ৷ পেটে হাত দিয়ে আস্তে করে বললাম

— জল, একটু জল খাবো ৷

মেয়েটি দৌঁড়ে জল আনতে চলে গেলো ৷ বসে পরলাম সেখানে ৷ ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো হইছে ৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ গোছানো সংসার ৷ ওমনি মেয়েটি বলল,

— আরে আপনি ফ্লোরে কেনো, আসেন খাটে বসেন ৷

খাটে বসে আছি, মাথাটা কিরকম ঘুরছে মনে হচ্ছে ৷ আমার সামনে বসে আছে ৷ মেয়েটি আর হিমের মা ৷ আগে ছবিতে দেখেছিলাম তাই চিনতে কষ্ট হয় নি হিমের মাকে ৷ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নিচ্ছে আমাকে ৷ ওদের কথার ধরনে বুঝে নিলাম, ওই মেয়েটা হিমের বউ ৷ মাথার মধ্যে মনে হচ্ছে ভো ভে করছে ৷ সব কথা শোনার পর কতক্ষণ গম্ভীর থেকে হিমের বউকে উদ্দেশ্য করে বলছে হিমের মা,

— বেলা তুমি হিমাদ্রিকে ফোন দাও যে, ওর খুব কাছের বান্ধবী নির্ঝরা আসছে ৷ আর আসার সময় সাথে কিছু ফলটল নিয়ে আসে যেনো ৷

আর শোন মা আগে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে বিশ্রাম নিবা, পরে তোমার সব কথা শুনবো ৷ বলেই সে চলে গেলো ৷ বেলা হিমের সাথে কথা বলছে, তবে আমার নামটা হিমকে বলল না ৷ শুধু বলল, ঘরে অতিথি আসছে ৷ জলদি বাসায় আসবা সাথে কিছু ফল ৷ আমি শুধু মেয়েটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছি ৷ জোড়া ভ্রুঁ, ঠোটের কাছে একটা তিল, কথা বললে দুই গালে জোড়া টোল পরে ৷ হিমের কল্পনার রাজকন্যাকে খুজে পেলো তাহলে ৷ বেলাকে দেখার পর থেকে হিংসে হচ্ছে খুব ৷ আমার কাছে বসতে বসতেই বলল,

— আপু আমি তোমার কথা বলি নি ৷ সারপ্রাইজ হবে ৷ মুচকি হেসে বললাম,
— হুম ভালো করছো ৷

হিমের পরিবারটা আসলেই অনেক ভালো ৷ শুধু বলেছি, স্বামী একা রেখে চলে গেছে ৷ ওমনি তারাও বিশ্বাস করে নিলো ৷ এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই চলেছে এই জীবন সংসার ৷ বিকেলের গৌধুলী লগণে, দক্ষিণ দিকের বারেন্দায় গিয়ে দাড়ালাম ৷ দক্ষিণা মৃদু বাতাস বইছে ৷ বেলা আর কাকিমা এসে বসলো ৷ কাকিমা বসতে বসতেই বলল,

— এখন শরীরটা কেমন লাগছে মা?
— ভালো (মুচকি হেসে) বেলা কিছু ফলকেটে নিয়ে আসলো,
— শোনো আপু তোমার ওই বদজাত স্বামীর জন্য একদম মন খারাপ করবা না ৷ তোমাকে এখন হাসি খুশি থাকতে হবে, তোমার জন্য না, তোমার পুচকুটার জন্য ৷ কাকিমা বলে উঠলো,

— তোমার বাবা মা কোথায় থাকে?

দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম, গ্রামের বাড়িতে থাকে কিন্তু তাদের কাছে যাবার মুখ নেই ৷ খুব আদরের মেয়ে ছিলাম ৷ বিশ্বাস করতো খুব তবে আমি তাদের বিশ্বাস রাখতে পারি নি ৷ হাত ধরে পালিয়ে আসি ৷ তিন মাস ছিলো আমার বিশ্বাসের ভিত্তি ৷ ও ছোট খাটো একটা চাকরি করতো, আমি টিউশনি করাতাম সংসারটা খুব ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিলো ৷ বিপত্তি শুরু হয় যখন ও গর্ভে আসে ৷ ঠিক তখনি মৃদুলা ছোট করে আরেকটি লাথি দিলো, খুব দুষ্টু হয়েছে ৷ যেইনা ওর দোষ দিলাম ওমনি ছোট একটা লাথি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো ওর কোনো দোষ নেই ৷ বেলা হো হো করে হেসে উঠলো,

— পুচকুটা কিন্তু ঠিক কাজ করেছে, ওরতো কোনো দোষ নাই ৷ কি তাই না বাবু সোনা? বলেই পেটে হাত রাখলো, ওমনি আরেকটি লাথি ৷ বেলা সেকি খুশি, কাকিমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— মা, পুচকুটা আমার কথায় সায় দিছে ৷ বেলার মধ্যে আসলেই বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে ৷ তা না হলে একদিনে কেউ এতো আপন করে নিতে পারে? তারপর কি হলো মা? বলে উঠলো কাকিমা ৷

— যখন বুঝলাম আমার মাঝে আরেকটি জীবন বড় হচ্ছে ৷ মানে আমার সোনামনির আগমন বুঝতে পারলাম ৷ সেদিন ও জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল ৷ তারপর থেকে ওর মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখা দিলো, কথা বলতো কম চুপ করে থাকতো বেশিরভাগ সময় ৷ জানতে চাইলে বলতো, কিছু হয় নাই বুড়ি ৷ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি ৷ বাবা মাকে ম্যানেজ করে করে তোমায় নিয়ে যাবো ৷

— যদি রাজি না হয়?
— রাজি করতে হবে, আমাদের সোনামনির জন্য সব করতে পারবো ৷ ওমনি কলিংবেল বেজে উঠলো, বেলা উঠে দাড়াল, দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো ৷ কিন্তু হিমকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না৷
— কই আমার চকলেট কই?
— আমার পাগলিটার জন্য চকলেট না এনে পারি (হিম)
— আগে দাও তারপর ভিতরে আসবা ৷

বেলার উপর খুব হিংসে হচ্ছে ৷ কিছু সুখ দেখলে সত্যি হিংসে হয় ৷ যা আমার পাবার কথা ছিলো তা বেলা পাচ্ছে ৷
বাসায় কে আসছে বলতে বলতে ভিতরে চলে আসলো হিম ৷ ওরে দেখা মাত্রই উঠে দাঁড়ালাম, ভূত দেখার মত তাঁকিয়ে আছে হিম ৷

— নি নি নিইইঝু তুতত
— হ্যা আমি, মনে আছে? আমি তো ভাবলাম চিনতেই পারবি না?
— যা ফ্রেশ হয়ে আয় তোর সাথে জরুরি কথা আছে ৷
— হুম বলেই চলে গেলো হিম, রাতে খাবার শেষে সোফায় গিয়ে বসলাম, সাথে কাকিমা, বেলা আর হিম সবাই চুপ করে বসে আছে ৷ সবার নিরবতা ভেঙে বেলা বলল,

— তারপর কি হলো আপু, তোমার শশুড়বাড়ির সবাইকে কি রাজি করতে পেরেছিলো তোমার শয়তান বদজাত স্বামী? হিম কিছুটা নড়েচড়ে বসলো,

— না, সেই যে গেলো আর আসলো না ৷ ফোন দিলাম বন্ধ, ওর সব বন্ধুদের কাছ থেকে খবর নিলাম ৷ সবাই বলল, ওর গ্রামের বাড়ি গেছে ৷ চার মাস ওর খোজ করছি ৷ বাসায় থেকে, টিউশনি করে চলেছিলাম কিন্তু শরীরের অবস্থা দিন দিন ভারি হয়ে যাচ্ছিলো ৷ একা আর পেরে উঠি নি ৷ চলে গেলাম ওর গ্রামের বাড়িতে ৷ সেখানে গিয়ে ওদের পেলাম না ৷ ওর চাকরির সুবাধে ঢাকায় থাকে ফ্যামিলি নিয়ে ৷ আমিও ঢাকা আসি ৷ কোন উপায় না পেয়ে বাবা মায়ের কাছে ফোন দেই ৷ বাবা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিছে ৷ পেটে ওইটাকে ফেলে যদি আসতে পারি তো বাড়ি যেতে পারবো ৷ ওমনি কাকিমা বলে উঠলো,

— এমন নিচু মন কারো হয়?
— জল খাবো একটু, পেটে হালকা হালকা ব্যথা অনূভব করছি ৷ হয়তো এই ব্যথা আমার ছোট মেয়েটার আগমনের বার্তা ৷ বেলা জল দিতে দিতে বলল,
— আর খোজ পাও নি তোমার স্বামীর? একদমে এক গ্লাস জল খেয়ে নিলাম ৷
— না, আর খোজ পাই নি ৷

পরে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছিলো ৷ ডাক্তার দেখিয়ে জানতে পারলাম , আমার মেয়ে হবে ৷ তবে সাবধান থাকতে হবে ৷ কিন্তু আমি একা আর পেড়ে উঠি নি ৷ কি করবো বুঝতে পারি নি ৷ তারপর মনে পরলো হিমাদ্রির কথা ৷ বলেই হিমের দিকে তাঁকালাম ৷ হিমাদ্রি ছিলো আমার কলেজ আর ভার্সিটির বেষ্ট ফ্রেন্ড ৷ ও ছিলো আমার হাসি কান্না, সুখ দুঃখের সাথি ৷ পছন্দও করতি তাই না হিম? বলেই মুচকি হাসি দিলাম, বলেছিলি একদিন, তুই যদি কখনো বিপদে পরিস আমারে স্বরন করবি ৷ যতটা পারবো তোরে সাহায্য করবো ৷ আজ তোর কাছে আসলাম ৷ খুব বিপদে পরছিরে হিম ৷ করবি তো আমায় সাহায্য?

— ইয়েয়েয়েম মাআআআনে ওমনি বেলা বলে উঠলো,
— মানে মানে করছো কেনো? আপুর যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে কি বলেন মা?
— হ্যা মা, তোমার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবা জোৎস্না রাত, বারেন্দায় বসে আছি ৷ মনে হচ্ছে কেউ পিছনে দাড়িয়ে আছে ৷
— কিছু বলবা? (আমি)
— কেমন আছো? (হিম)
— যেমন থাকার কথা তেমনি আছি?
— হুম

— তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
— না কিসের?
— যদি আবার দুর্বল হয়ে যাও ৷
— না,
— মনে পরে ভার্সিটির কথা? মাঠের প্রতিটি ঘাসের সাথে মিশে আছে তোমার স্বপ্ন ৷
— এসব কথা বলে কি হবে
— কিছুই কি হবার না? বলেই ঘুরে তাঁকালাম ৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও খুব ঘাবরে আছে ৷
— ভয় নেই আমি বেশি দিন থাকবো না ৷

জানো হিম সবার কপালে সুখ সয় না ৷ আমার বরটা আমার সাথে কেনো এমন করলো? ভালবাসছিলাম জানো? সবটা জুড়েই ৷ ভার্সিটিতে থাকা সেই দুষ্টু মেয়েটা যে কাউকে এতটা ভালবাসতে পারবে সত্যি বুঝতে পারি নি ৷ কিন্তু দেখো আমার কপালে সেই সুখ নেই ৷ জানো বেলাকে দেখে খুব রাগ হয় মাঝে মাঝে, ইচ্ছে করে তোমাদের সংসারটা ভেঙে দেই কিন্ত ভিতরে যে ভালো সত্তাটা আছে সে আবার থামিয়ে দেয় ৷ মানুষ ভালবাসার বড় কাঙ্গাল ৷ তবে তোমার কপালটা অনেক ভালো, তোমার মনের মতো বউ পেয়েছো ৷ বলতে গেলে তোমার স্বপ্নের রাজকন্যা ৷

— হুম
— আচ্ছা বিয়ে করার সময় কি আমার কথা মনে পরছিলো? ওমনি বেলা এসে বলল,
— আমাদের বিয়ের কথা আর বইলো না ৷

শাশুড়ীমার মনে হলো বিয়েটা করা দরকার কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো ৷ বলেই হিমের বাম হাত জড়িয়ে কাধে মাথা এলিয়ে দিলো বেলা ৷ আমি উঠে চলে আসলাম, ওদের এই ভালবাসা একদম সহ্য হয় না ৷ ইচ্ছে করে হিমকে নিজের করে পেতে কিন্তু বেলার কথা ভাবলে ভিতরের ভালো সত্তাটা থামিয়ে দেয় ৷ কেটে গেলো সাত দিন, এই সাত দিন পেটের ব্যথাটা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে ৷ বেলা সময় পেলে আমার কাছে আসে ৷ ভাবনার জগতে গিয়ে পুচকুটার সাথে কথা বলে ৷ তবে এই সাত দিনে একবার হিমের খুব কাছে গিয়েছিলাম ৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম ৷ উত্তরে বলেছিলো

— নিঝু একটু কাঁন্না করো মন হালকা হবে ৷

আমার উত্তর ছিলো একটা, ফিরে আসো বাবু , তুমি চাইলে সব পারো ৷ আমি পারছি না এভাবে ৷ কতক্ষণ জড়িয়ে ছিলাম মনে নেই ৷ বেলার কথার আওয়াজে ছাড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে ৷

— নিঝু?
— সরি

বলেই ওর সামনে থেকে সরে আসি ৷ সেদিনের পর হিমের সামনে যাই নি ৷ সন্ধ্যায় ব্যথাটা খুব বাড়ছে ৷ আস্তে আস্তে কাকিমার রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি কাকিমা ছোট ছোট কাপর কেটে আলাদা করছে ৷  আমি রুমে যেতেই আমাকে ধরে খাটে বসালো ৷ জানতে চাওয়ার আগেই কাকিমা বলল,

— কাপর কেটে আলাদা করে রাখছি ৷ আজ রাতের মধ্যে কিছু একটা হবে তোমার ৷ তাই সবকিছু জোগাড় করে রাখলাম ৷ আজ শুয়ে থাকবা না, শরীরে যতক্ষণ শক্তি আছে ততক্ষণ দাড়িয়ে থাকবা ৷ মায়ের কথা মনে পরছে খুব ৷ এই কাজ গুলো মায়ের করার কথা ৷ তাও শেষ সময়ে মায়ের আদর পেলাম ৷ যতক্ষণ পারছি তাঁকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলাম ৷ তবে শেষে আর পারি নি ৷ বেলার কথা শুনতে পাচ্ছি ৷ এই দেখো আমাদের দুষ্টু পরি আমার কোলে ৷ তোমার আগে আমি কোলে নিছি ৷ ওর খুশি যেন ধরে রাখতে পারছে না ৷ কাকিমা হাত ধরে রাখছে ৷ সকালে রং চা নিয়ে আসছে হিম ৷ পাশে বসতে বসতে বলল,

— নার্স আপা বলল, তোমাকে রং চা খেতে ৷
— মেয়েটাকে দেখেছো? ঠিক তোমার মতোই হয়েছে ৷ নাক আর ঠোট কিন্তু তোমার মতো ৷
— বাবার মতো হবে না তো কার মতে হবে ৷ বলেই চুপ হয়ে গেলো ৷
— কেনো এমন করলে বাবু? কি দোষ ছিলো আমার? তোমাকে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম ৷ তার মূল্য কি দিলে? বিশ্বাস করো তোমাদের মাঝখানে আসতাম না ৷ শুধু আমাদের! না আমার মৃদুলার কথা ভেবে তোমার কাছে এসেছি ৷ মৃদুলার মায়ের পাশাপাশি বাবাকেও খুব দরকার ৷

— কি হলো কিছু বলছো না যে ৷
— নিঝু আমি সেদিন
— নাহ আর বোঝাতে হবে না, আমি জানি বেলার কাছ থেকে শুনেছি ৷ তোমার মায়ের কথার অমান্য তুমি করো নি ৷ সেদিন বাসায় এসে দেখলে তোমাদের বাসায় বিয়ের আয়োজন ৷ তাই আর বলতে পারো নি আমার কথা তাই তো?
— বলেছি
— বলেছো, তবে বিয়ে করেছো, আমি প্রেগনেন্ট সেটা বলো নি ৷ সেটা বললে আজ এই জায়গায় আমরা থাকতাম না ৷ একটুও ভাবলে না আমি একা কি করে থাকবো? ভেবেছিলে মায়ের কাছে চলে যাবো ৷ বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবো তাই না ?

— নিঝু?
— বাবু ইচ্ছে গুলো যখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় তখন উপরে উঠতে সিঁড়ি লাগে না দড়ি যথেষ্ট ৷ আমি পেরেছি, খুজে বের করেছি তোমায় ৷ তবে তুমি বিয়ে করে নিবে এটা ভাবি নি ৷ অন্ধ বিশ্বাস করেছি তোমায় ৷ মাত্র ছয় মাসে তুমি বেলাকে কতটা আপন করে নিছো ৷ এইজন্যই গুনিজনরা বলে গেছেন, বিশ্বাস করো তবে অন্ধ বিশ্বাস না ৷
ওমনি বেলা রুমে ঢুকলো,

— কই আমার দুষ্টু পরি, কোলে নিতে নিতে বলল,
— আপু ওর নাম কি রাখবা ভাবছো?
— আমি আর আমার বর মিলে ঠিক করেছিলাম মৃদুলা রাখবো ৷
— রাখো তোমার বর, ওর নাম গোধূলি রাখবো ৷ আমার নামের সাথে মিলিয়ে, “গোধুলি বেলা” কি ঠিক আছে না?
— আচ্ছা,

বেলা গোধুলিকে আদরের পর আদর দিয়েই যাচ্ছে ৷ গোধুলি কি পাবে মায়ের আদর বেলার কাছ থেকে? হয়তো পাবে ৷ আমার চলে যাবার সময় এসেছে আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই ৷ বেলাকে বললাম,

— আমার গোধূলিকে মায়ের আদর দিতে পারবি?

উত্তরে বলল, তোমার মেয়ে কে বলল, গোধুলিতো আমার মেয়ে ৷ আমার দুষ্টু পরি ৷ আমি জানি পারবি, সে বিশ্বাস তোর উপর আছে ৷ বিশ্বাস আর বাস্তবতার কাছে ছেড়ে দিলাম গোধুলিকে ৷ একবার বিশ্বাস করে ঠকে তবুও আবার বিশ্বাস করে ৷ এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে চলে জগৎ সংসার ৷ কেউবা বিশ্বাসের কাছে জিতে যায় ৷ কেউবা আস্থাহীন কুঁড়েঘরের মতো দুমড়ে মুচড়ে পরে ৷

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত