ভাইয়ের বিয়ে

ভাইয়ের বিয়ে

আজ শুক্রবার ভাইয়ার অফ ডে৷ তাই দুই ভাই বিছানায় শুয়ে আছি, দুজনেই অবশ্য ইউটিউব দেখায় ব্যস্ত৷ হঠাৎ করেই ভাইয়ার মোবাইলের রিংটোন বাজছে সেই আওয়াজ পেলাম৷ কিন্তু ভাইয়া ফোনটা রিসিভ করতেছেনা৷ তখন ভাইয়াকে বললাম,

ঃফোন ধরছো না ক্যান?? ভাইয়া আমার হাতে তৎক্ষনাত ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,

ভাইয়াঃ নে কথা বল৷

আমিঃ আমি কেনো তোমার ফোন ধরবো? কে ফোন দিয়েছে??

ভাইয়াঃ দ্যাখ কে দিছে৷ স্ক্রিনের দিক তাকাতেই দেখলাম “জন্মদাতা আজরাইল” নামে একটা নাম্বার থেকে কল আসছে৷ তখন ভাইয়াকে বললাম,

আমিঃ “জন্মদাতা আজরাইল” এটা আবার কেমন নাম৷ কে এটা৷

ঃ জন্মদাতা মানে তো বুঝিস নাকি??
ঃ হুম বুঝছি তো, তোমার বাপে ফোন দিসে৷ ভাইয়া চোখদুটো বড় বড় করে আমার দিক তাকিয়ে আছে, তখন বললাম,
ঃ আচ্ছা তোমার একার না আমারো বাপ৷ কিন্তু আব্বাজান আই মিন মাই ড্যাডি তোমাকে কল দিছে তো তুমি কথা বলছো না ক্যান??

ঃ তোকে যা বললাম সেটা কর৷ ফোনটা রিসিভ কর আগে দ্যাখ কী বলে?? ৷ আমি ফোনটা রিসিভ করেই সালাম দিয়ে বললাম,
ঃ বাবা কেমন আছেন??
ঃহুমম ভালো আছি, ফোন তুমি ফোন ধরছো ক্যান?? (আমি আমতা আমতা করে বললাম),
ঃভাইয়া বাথরুমে গেছে, ( ভাইয়ার ইশারায় মিথ্যাটা বললাম)
ঃ আমি ফোন দিলেই কি গাধাটার বাথরুম পায় নাকি?
ঃ বাথরুমের চাপ তো আর বলে কয়ে আসে না বাবা৷

এটা আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট এক বিশেষ নিয়ম৷ বাথরুমছাড়া মানুষ বাঁচতে পারেনা৷ তবে ভাইয়ার বাথরুম যাওয়ার পিছনের রহস্যটা আমি যতটুকু জানি ভাইয়া জ্যোত্বিষ বিদ্যার একটা বই কিনেছে, সেখান থেকে মনে হয় জ্যোত্বিষগীরি শিখেছে৷ তাই আপনার ফোন আসার আগেই ও বাথরুম যায়৷ (ভাইয়া রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)

ঃ তুমি কি মানুষ হবে না৷ দিনদিন বড় হচ্ছো আর বেয়াদবি দিন দিন বাড়তেছে৷ বেয়াদব কোথাকার৷ তোমার পরাশুনা ক্যানসেল৷ বাড়ি এসে জমি চাষ করবা৷

ঃ বাবা আমি মানুষ নাহ??
ঃচুপ কর বেয়াদব৷ যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোন ওর বাথরুম শেষে যখন আসবে ওকে স্পষ্ট বলে দিবা দুই দিনের মধ্যে যেনো ওকে আমার বাড়িতে পাই, নাহলে ওর খবর আছে, অনেক ফাঁকি দিয়েছে, এবার কিন্তু একদম সহ্য করবোনা৷

ঃ ওক্কে ড্যাডি, ওহ থুক্কু ঠিক আছে বাবা৷
ঃ বেহায়া ফোন রাখ৷

ফোনটা ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম তোমার ডাক পরেছে, দুই দিনের মধ্যেই আব্বাজান তোমায় বাড়িতে দেখতে চায়৷ সো কথা না বলে লক্ষীবাবুর মত করে বাড়িতে যাও৷ আমার কথাশুনে ভাইয়া বললো,

ঃ কেনো যেতে বললো শুনলি না??
ঃ এতকিছু জিগ্গেস করলে কোরবানি দিবে আমায়৷ শুনলা না, প্রতিটি কথায় কি রকম বাঁশ দিলো আমায়, আমার মত অনার্স প্রথম বর্ষ শেষ করা স্টুডেন্টের সাথে কি কেউ এরকম আচরন করে?? আমার তো একটা প্যাসটিজ আছে নাকি??

ঃ তুই বক বক কমাবি, আমি আছি চিন্তায় যে এবার মনে হয় আর রক্ষে নাই, যেতে হবেই৷ ওয় তোর না এক্সাম শেষ চল দুই ভাইয়ে গিয়ে ঘুরে আসি৷
ঃ পাগল নাকি, আমার পরিক্ষা শেষ এখন আমার টুনটুনি পাখিটাকে নিয়ে একটু ঘোরাঘুরি না করে তোমার সাথে যাই আজরাইলের কাছে হুহ৷

ঃ থাপ্রায়া দাঁত ফালায়া দিবো৷ কিসের টুনটুনি, গ্রামে অনেক বাবুই, চড়ুই, ময়না আছে সেগুলো নিস৷
ঃ ভাইয়া কাকও কিন্তু আছে?
ঃ তোর কি চোখ নাই, এখন যা বলছি সেটা চালু চালু কর, রেডি হ, কাপর চোপর সব লাগেজে ভর৷
ঃ হুম যামু তবে শর্ত আছে৷
ঃ কী শর্ত বল??
ঃ জানালার পাশের সিটটা আমার চাই, আর হোটেল বিরতির সময় ভিআইপিতে ফ্রি খাওয়াবা৷ এন্ড স্পেশাল পকেট মানি৷

ঃ ফ্রি খাওয়াবো মানে, সব সময় তো আমারটাই খাস, এখন আবার ভাব নিচ্ছিস৷
ঃ ধুরু যাবোই নাহ,,,
ঃ আচ্ছা সব রাজি৷ যাহ এখন কাপর চোপর সব গোছা আমি অনলাইনে টিকেট বুকিং করতেছি৷

সব কিছু কমপ্লিট করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে সন্ধাবেলা রওনা হলাম দুই ভাই৷ ওহ হ্যা আমি সাঈদী, এবার অনার্স প্রথম বর্ষ ফাইনাল এক্সাম দিলাম৷ আর ভাইয়া একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে, দু ভাই ঢাকাতে এক সাথেই থাকি৷ পরেরদিন ভোরবেলা বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলাম৷ সকালের নাস্তা সেরে রেস্ট নিতে ঘুম দিলাম৷ ধাক্কা ধাক্কির জন্যে যতক্ষনে ঘুম ভেংগেছে ততক্ষনে দুপুর পার হয়েছে, দেখি ভাইয়া পাশে বসে আছে আর আমায় ডাকছে৷ আমি বললাম,

ঃ কি হয়েছে?? একটু ঘুমোতে তো দাও??
ঃ অনেক ঘুম হয়েছে এখন ওঠ, আমার তো ঘুম হারাম হয়েছে, টেনশনে ঘুমোতেও পারলামনা
ঃ কি হয়েছে, কিসের আবার টেনশন??
ঃ গোপন সুত্রে শুনলাম আমার নাকি বিয়ে, কাল সকালে মেয়ে দেখতে যেতে হবে, টেনশনে আছি, এত তারাতারি বিয়ে করবো কেনো৷

ঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এত্তদিনে আমাকে ভাবি বলে ডাকার জন্য একটা সুযোগ করে দিলো৷ উফ আমার যা খুশি লাগতেছে নাহ ভাইয়া৷ কত স্বপ্ন তোমার বিয়ে নিয়ে, তোমার শালিকে নিয়ে কত্ত মজা করবো, আচ্ছা ভাইয়া শালি নেই তোমার৷

ঃ থাপ্পর খাবি? আমি সিরিয়াস কিন্তু
ঃ হুম ভাইয়া আমিও সিরিয়াস,,,,,,
ঃ ধুর মেজাজটাই খারাপ করে দিলি৷

ভাইয়া রেগে আগুন হয়ে ফোস ফোস করতে করতে চলে গেলো, যাই হোক সেদিনটা ভাইয়ার ট্যানশন আর আমার খুশিতে চলে গেলো৷ পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ভাইয়া রেডি হচ্ছে কেননা তার জন্য পাত্রি দেখতে যেতে হবে৷ পাশে তাকিয়ে দেখি আমার শার্ট-প্যান্ট পাশে রাখা৷ তাতে বুঝলাম আমাকেও যেতে হবে, মোবাইলের ডাটাটা অন করলাম দেখি আমার টুনটুনি কোনো ম্যাসেজ করছে কিনা, ডাটা অন করতেই টং করে ম্যাসেজ এলো দেখি ভাইয়া ম্যাসেজ করছে আর লিখছে, আমি একা যেতে পারবোনা তোকেও আমার সাথে যেতে হবে, দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হ৷ কি আর করার উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম৷ পরে আসলাম বাহিরে দেখি আব্বাজান আই মিন আমাদের দুই ভাইয়ের আজরাইল চেয়ারে বসে আছেন৷ আমাকে শার্ট প্যান্ট পরা দেখেই বললো,

ঃ তুমি কোথায় যাচ্ছো বাবা মানিকচান৷ তোমার কোত্থাও যেতে হবে না৷ তোমার মত অপদার্থের কোথায় যাওয়ার দরকার নেই৷ তুমি গেলে নিশ্চিত কোনো অকাম করবা ৷ বাবার কথা শুনে মা চোখ গরম করে বললেন,

ঃদ্যাখো সবসময় ছেলেটাকে এরকম ভাবে বকা দিবা না৷ তাছাড়া তোমার বড় ছেলেই তো ওকে নিয়ে যেতে চায় তাই ও যাচ্ছে৷ তখন বাবা বললেন,
ঃ হারামজাদাটাকে নিয়ে যাচ্ছো যাও কিন্তু কোনো কুকর্ম করে আসলে জিন্দা কবর দিয়ে দিবো৷

যাই হোক যে আমাকে যাই বলুক সেদিকে আমার কর্নপাত নেই, এতুটুকুও অপমান বোধ করিনা৷ শুধু একটা কথা সব সময় ভাবি যে, “যার কোনো মান ই নাই তার আবার অপমান কিসের”৷ ঘটক সাহেব সহ যাচ্ছি মেয়ের বাড়ি, বাইকে করে যাচ্ছি, তবে এ ঘটক কে দেখলে মনে হয় ইনি ঘটক নন, ইনিই সয়ং বর৷ কি স্টাইল, আবার নিজের বাইকে চড়ে ঘটকালি করে৷ আগে টিভিতে দেখতাম ঘটক হবে চিকনা চাকনা, মাথায় থাকবে টুপি, আর লুজ পান্জাবী পরবে, হাতে একটা ছাতা থাকবে, আর পান চাবাতে চিবাতে ঠোল লাল করে হেটে হেটে যাবে ঘটকালি করতে ৷ কিন্তু আমাদের ঘটক সাহেবের দেখলাম ডিস্কাভার 150সিসি এর বাইক৷ সে বাইকে আমাদের সাথে আসছে৷ আর আমরা দু ভাই আমাদের বাইকে৷ ডিজিটাল ঘটককে দেখে মাথায় কিছু প্রশ্ন জাগলো তাই ঘটক কে বললাম,

ঃ কি হে ঘটক সাহেব, আপনার ঔসুধে রেজাল্ট কেমন? ঠিকঠাক কাজ করে তো৷
ঃ কি যে কওনা বাপু, যদি কাজ নাই করতো তাইলে নিজের গাড়ি কইরা কি আর পাত্রি দেখতে যাইতাম৷
ঃ সেটা অবশ্য ঠিকি কইছেন৷ তো আমাগো পাত্রির বেলায়ও সুফল মিলবো তো৷
ঃ মিলবো না মানে,

এক মিলনে বাসরঘরে নিয়া যামু হুমমম, নাম আমার টেক্কা মিয়া৷ আমার উপরে টেক্কা দিবো এমন ঘটক এলাকায় নাই৷ বুঝলাম যে ঘটক সাহেব একদম ঘটকের মতই কথা বলতে যানে৷ গাড়িতে করে অনেকদিন ঘুড়িনা তাই আজকে বাইকে চড়ে বেড়াতে ভালোই লাগছে৷ একটু যেতেই দেখি রাস্তায় একটা মেয়ে সাইকেলে চড়ে যাচ্ছে রাস্তার মাঝখান দিয়ে, পিছনে গিয়ে হর্ন দিচ্ছি কিন্তু সাইড দিচ্ছেনা কিছুতেই, তখন একটু চিৎকার করে বললাম,

ঃ এই এটা কোন ঢেরস মার্কা মেয়েরে, তখন থেকে হর্ন দিচ্ছি শুনতে পাচ্ছেন না৷ মেয়েটা পিছনে ফিরে তাকালো আর বললো,

ঃ ক্যান পাশে কি রাস্তার অভাব পরেছে নাকি, ঘাসের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারেন না৷ মেয়েটাও মনে হচ্ছে একটু রাগি কোয়ালিটির, কিন্তু আমিও তো কম জানিনা, মেয়েটার পাশ কেটে যেতে যেতে এমন জোড়ে হর্ন বাজাতে লাগলাম যে মেয়েটা রেগে পুরো আগুননন৷ এবং যাওয়ার সময় বলে দিলাম,

ঃ আপনার কপাল ভালো যে আজ আমার ভাইয়ের জন্য পাত্রি দেখতে যাচ্ছি জন্য আপনায় কিছু বললাম না৷ নাহলে সামনে যে পুকুরটা দেখতে পাচ্ছেন সেখানে চুবাইতাম৷ ডাইনি মার্কা মেয়ে জানি কোথাকার৷
মেয়েটা যেই কিছু বলতে যাবে তখনই গাড়ির পিকআপ টেনে লম্বা টান দিয়ে চলে আসলাম মেয়ের বাড়ি, মানে আমার হবু ভাবি, আর ভাইয়ার হবু শশুড় বাড়ি৷ বাহ বাড়িটা তো ভালোই বড়, ভাইয়াকে বললাম,

ঃতোমার কপাল ভালো ভাইয়া, এত্তবড় শশুড় বাড়ি পাইছো৷ ভাইয়া কিছু না বলে শুধু রাগি চোখে তাকালো ৷ আর একটা কথাই বললো,

ঃ মেয়েটার সাথে এরকমটা না করলেও পারতি,৷ যাই হোক “কারো জ্ঞান মুলক কথা শোনার মত সময় থাকলেও সেটা যে মানার মত সময় আমার নেই” সেটা বুঝতে পেরে ভাইয়া ফিস ফিস করে বলতে লাগলো, জঙ্গলটাকে না নিয়ে আসলেই ভালো হতো, বাবা ঠিকি বলেছিলো, তোকে নিয়ে আসলে কিছু একটা অঘটন ঘটাবি, তবে শোন যাই করিস বাড়ির ভিতরে কোনো অঘটন ঘটাস না৷

ভিতরে গিয়ে দেখলাম মোটামুটি ভালো পরিবেশ তাদের বাড়ির৷ আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বসার ঘরে৷ যথা সম্ভব মেয়ের দাদা হবে যিনি আসলেন গল্প করতে আমাদের সাথে, তাকে দেখেই ভাইয়া উঠে সালাম দিলো, আর আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, (সালার বুড়ো দাড়িচুল পেকে সাদা বানায়ছো, মাগার মরো না ক্যান, এমনি যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার অবস্থা দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলছে, সালার তুই বুড়ো মরলে তো একজন হলেও জনসংখ্যা কমতো) ওনারা গল্প করছেন আর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি, কোনো পাখি দেখা যায় কিনা৷ ( কী ভাবছেন আমি কোন পাখির কথা বলছি জানেন, হুম এইতো এখন যে পাখির কথা ভাবছেন সেই পাখি আই মিন মেয়ে খুঁজছি৷ খুঁজতে খুঁজতে ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে বললাম,

ঃভাইয়া কপালে মনে হয় দুঃখ আছে,
ঃ কেনো??
ঃ কতক্ষন থেকে পাখি খুজছি, মানে তোমার হবু শালিগুলোকে খুজছি কিন্তু একটাও তো খুজে পেলাম না৷
ঃ আবার শুরু করেছিস ফাজলামু৷
ঃওরে বাবা, এখনি হিংসে হচ্ছে নাকি তোমার ভাইয়া৷
ঃ চুপ থাক ( রেগে লাল হয়ে আমার দিক তাকিয়ে বললো) তবে আমি তো চুপ থাকার পাত্র নই, বুড়োটার দিক মুখ ফিরিয়ে বললাম,

ঃ এই যে ওল্ড ম্যান, ওহ সরি এই যে স্যার আপনি মেয়ের সম্পর্কে কি হন??
ঃ ইটস ওকে ইয়াং বয়, সি ইজ মাই গ্রান্ড ডটার সো আ’ম হার গ্রান্ড ফাদার৷
ঃ (ইরে বাবা, বুইড়া আবার ইংলিশ ও মারে দেখি, নাহ বুড়া তো চ্যাতা মাল দেখছি, এখন সন্মান গিয়ে কথা বলতে হবে নাহলে বিপদ আছে) তো আপনি যেহেতু মেয়ের দাদা, সেহেতু আমার বড় ভাইয়ের মানে আপনাদের বরের ও দাদা লাগেন, আর আপনাদের বর, মানে আমার ভাইয়ের দাদা মানে আমার দাদা৷ ঠিকতো??

ঃ প্যাচায়ে গোছায়ে একদম ঠিক টাই বলছো নাতি৷
ঃতো আপনাদের মেয়ে আসতেছেনা কেনো এখনো, ময়দা মাখছে বুঝি৷?? (ভাইয়া এবার আমার দিকে আবারো রাগের দৃষ্টিতে তাকালো)
ঃ আরে দাদা আসবে আসবে, একটু ধৈর্য ধরো৷

ঐতো এসে গেছে আমার নাতনী৷ দেখলাম দরজা দিয়ে হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে আসলো একটা মেয়ে, ঘোমটা দেয়া, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো না চেহারাটা, তখন আবার বুইড়া স্যার আই মিন দাদু কে বললাম,

ঃ স্যার এটাই কি আপনার নাতনী মানে যাকে দেখতে এসেছি,
ঃ জ্বী হ্যা এটাই আমার বড় নাতনী৷
ঃ বড় নাতনী মানে, তাহলে কি ছোট নাতনীও আছে৷
ঃ হ্যা আছে তো৷
ঃ তাহলে তাকে দেখছি না যে??
ঃ ও বাইরে গেছে, চলে আসবে এখনি৷

এখন বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিহে সুন্দরী ললনা, ঘোমটা টা একটু খোলনা, দেখবে আপনায়, অপেক্ষায় আছে আমার ভাই, দেখার পর্ব শেষ করে, বাড়ি ফিরে যাই৷ আমার ভাংগাচুরা কবিতা শুনে ভাইয়া বললো তুই কি একটু চুপ থাকবি৷ আর ভাইয়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো মেয়েটা৷ পরে ঘোমটা সরিয়ে চেহারাটা দেখালো, আহা কী রূপ মেয়েটার, এ তো মেয়ে নয় যেনো নিশ্চিত পরী৷ আমি তো পুরো ক্রাশ খেয়ে ডাবল টাসকি খেয়ে রইলাম৷

ভাইয়ার দিক তাকিয়ে দেখি ও দেখছে তো দেখছেই, চোখ সরাচ্ছে না, আমার ভাই আবার কম কিসে, যেকোনো মেয়ে ভাইয়াকে দেখলে ফিদা হয়ে যাবে, যার বিকল্প এখানেও হচ্ছে না, হবু বর বউ কি সুন্দর একে অন্যর দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই৷ আমি একবার ভাইয়ার দিকে আর একবার হবু ভাবির দিকে তাকাচ্ছি৷ পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে জোরে কাশি দিলাম, তখন দুজনে চোখ সরিয়ে নিলো৷ আর একটু লজ্জা পেয়েছে মনে হলো৷ তখন বুইড়া দাদুকে বললাম,

ঃআমি কি মেয়েকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?? আমার কথা শেষ না হতেই ভাইয়া বললো তোর আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছিনা দয়া করে চুপ থাক৷ কিন্তু আমি তো নাছড়বান্দা৷ মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

ঃ ভাবির নাম জানতে পারি??
ঃ আমার নাম হচ্ছে মোছাঃ জরিনা খাতুন ৷ অনেক সুন্দর নাম তাইনা, এই নামটা আমার দাদু রেখেছে৷

নামশুনে ভাইয়া ফিক করে হেসে দিলো৷ আমি যেমনটা ভাবলাম এতক্ষন ধরে যে, যে সুন্দর মেয়ে নামটাও নিশ্চই অনেক সুন্দর হবে, কিন্তু এ কি নামের সাথে তো রুপের কোনো মিল খুজে পাচ্ছিনা৷ এই বুইড়া সব কিছুর জন্য দায়ী৷ ওরে খাইছি আমি৷ কিন্তু এত্তসুন্দর মেয়েটাকে তো আর নামের জন্য রিজেক্ট করতে পারিনা, তাই ভাবলাম নাম পরে চেন্জ করে দেবো সমস্যা নেই৷ ভাবাভাবি শেষ করে বললাম,

ঃ নামটা সুন্দর কিন্তু চেহারার সাথে একদম ম্যাচ করে না, তবে সমস্যা নাই, সেটা ভালো হলে ঠিক হবে৷ এখন বলেন আমার ভাইয়াকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে??

ঃ তার আগে বলেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা৷
ঃ আরে আমার পছন্দে কি আসে যায়, বিয়ে তো আর আমি করছি না, আমার ভাইয়া করবে, তাই ভাইয়ার পছন্দেই তো সব তাইনা৷
ঃ তারমানে আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?
ঃ ছি ছি কি বলেন, আপনার মত মেয়েকে কে অপছন্দ করবে৷

কপালটা খারাপ যে বিয়েটা আমার বদলে ভাই করছে, এ্যা বিগ চান্স মিসসস৷ (ভাইয়াকে সবার সামনে বলে দিলাম মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে, আমি কবুল কবুল কবুল)৷ আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ তখন পরিস্থিত বুঝতে পেরে বললাম,

ঃ আরে আমি কবুল বললাম এ কারনে যে ভাইয়ার মেয়ে পছন্দ হয়েছে৷ ভাইয়া রাজি৷

সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে, সেখান থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালাম ঠিক সেই সময় বাইরে থেকে কে যেনো ম্যা ম্যা বলে ভেড়ার মত করে চেচাচ্ছে৷ সে যাই হোক৷ মেয়ে দেখার পর্ব শেষ করে যেই না ঘর থেকে বের হয়েছি, দেখি সেই দাজ্জাল মেয়ে চেয়ারে বসে আছে৷ মানে যে মেয়েটাকে রাস্তায় পুকুরে চুবানি দিতে চাইছিলাম সেই মেয়ে৷ আমি দেখেইতো ভাইয়ার পিছনে মুখ লুকালাম৷ তখন পিছন থেকে বুইড়া দাদু বললো, ঃএইযে ইয়াং ম্যান এটা হলো আমার ছোট নাতনি৷ এই কথা শুনে তো আমি আকাশ থেকে মাটিতে পরলাম, আর আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম৷ রাস্তায় মেয়েটাকে যে বকা দিসি এটা তো তারই বাড়ি কি না কি যেনো বলে দেয়, শেষ মেষ বিয়েটা ক্যানসেল হবে নাতো৷ মেয়েটা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর ফোস ফোস করতেছে, মনে হচ্ছে যে আমায় ফাঁকা পেলে কাঁচা চিবিয়ে খাবে৷ কিন্তু আমিতো ভীতু নই, পরিস্থিতি সামাল দিতে তার সামনে গিয়ে সাধু বান্দা সেজে বললাম,

ঃএইযে আপু আপনার নাম কি??
ঃ (মেয়েটা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই৷) আবার বললাম,
ঃ নাম কী আপু তোমার?? মেয়েটা রাগি লুক নিয়ে বললো,
ঃ আপনি এখানে ক্যান?? মেয়েটার এ প্রশ্নশুনে বুইড়া দাদু বললো,
ঃ তোর আপুকে দেখতে এসেছে, এটা ছেলের ছোট ভাই৷ বুইড়ার কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাচলাম, মনে মনে বুইড়াকে ধন্যবাদ দিয়ে, আবারো বললাম,

ঃ নাম কি??
ঃ নামটা জানা কি খুবি জরুরি?? মেয়ে দেখতে এসেছেন, মেয়ে দেখেছেন, এখন গো ফুট৷
ঃ ওক্কে ধন্যবাদ৷
ঃহুমম৷ আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছে মেয়েটা সেটা তো সহ্য করবো না৷ তাই আবারো মুখ ফসকে বলে ফেললাম,

ঃ এখন তো গো ফুট হবোই, কিন্তু দুদিন পর যে জামাই আদর পাচ্ছি সেটা আজকের ডায়রিতে লিখে রাখেন৷
ঃ সখ কত জামাই আদর,,,,৷ আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে কখনোই হবেনা৷
ঃ আরে আপনার বোনের বিয়া আমার ভাইয়ের সাথেই হবে, বলে দিলাম, এটাও ডায়রিতে লিখে রখেন৷, আপনার বোনের জন্য আমার ভাই সিলেক্টেড ওক্কে এন্ড কামিং আপ নেক্সট ইউ বিকাম মাই ভাইয়ার শালি, ওহ সরি একটু ভদ্র ভাবে বলি ভাইয়ার শ্যালিকা৷

ঃ আঙ্গুল চুষেন গিয়ে, এ বিয়ে হচ্ছেনা৷
ঃ আঙ্গুল নয় কয়দিন পর জামাই আদরের জন্য এ বাড়িতে এসে রোস্ট চিবাবো৷ আমার কথায় এবার বিরক্ত হয়ে মেয়েটা উঠে চলে গেলো৷ পিছন থেকে বুড়ো দাদু বলে উঠলেন,
ঃ এবার মনে হয় পিচ্ছিডারে সায়েস্তা করার মত একজন পাইছি৷ আমি বুড়োর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম, আর বললাম,
ঃ ইয়ে তো মেরা বাঁ হাত কা খেল হ্যায়৷ বিদায় জনাব, বিদায় বিদায় নিয়ে চলে এলাম, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে, এতকিছু বলার পরো ভাইয়া আমাকে কিছুই বললোনা৷ পরে আমি ভাইয়াকে বললাম,

ঃ ভাইয়া মেয়ে টা কিন্তু ঝাক্কাস৷ অস্তির চেহারা৷ রুপের আগুনে আমি জ্বলে ছাড়খার হচ্ছি৷ প্রেমে পরে গেছি৷
ঃ কথা বার্তা সাবধানে বলবি ওক্কে৷ ও তোর ভাবি৷ তোর লজ্জা করেনা হবু ভাবির প্রেমে পরতে??
ঃ আরে আমি কি ভাবির কথা বলছি নাকি, আমি তো তোমার শ্যালিকার কথা বললাম৷
ঃ হারামজাদা দাঁড়া তোর আজ খবর আছে, বলেই আমার পিছনে দৌড়৷

ছেলে মেয়ে দুজনে রাজি, ফ্যামিলি রাজি৷ তাই বিয়ের ডেট ঠিক করা হলো৷ বিয়ের দিন যখন আমরা বৌ আনতে যাবো, সেদিন বেগুনি কালারের একটা পান্জাবী পরেছিলাম৷ মা বলতো আমায় নাকি পান্জাবীটা খুব মানায়৷ তাই ভাইয়ার বিয়েতে সেই মায়ের পছন্দের পান্জাবীটাই পরলাম৷ পরা শেষে যখনি বাইরে এসেছি, তখনি মা আমায় দেখে বললো,

ঃ কিরে, তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়েটা তোর ই৷
ঃ হুম মা মনে করো আমারই, কারন ভাইয়ার বিয়ে দেখে বিয়ের প্রাকটিস আর এক্সপেরিয়েন্স দুটোই করতে যাচ্ছি৷ পরের সিরিয়ালটা কিন্তু আমার৷
ঃ চুপ কর বেহায়া৷ আর শোন তোর নজর কিন্তু মাশা আল্লাহ৷ মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলার চেষ্টা করবিনা৷ সব সময় মেয়েদের থেকে দশ হাত দুরে দুরে থাকবি৷
ঃ জ্বী আচ্ছা মা গেলাম,,, ভাইয়া চলো, আর কে কে যাবা সবাই চলো৷

বলেই বেরিয়ে পরলাম বউ আনতে৷ হবু ভাবির বাড়ি যেতে না যেতেই আমাদের বাহিরে গেটের সামনে আটকে দেয়া হলো, পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম গেটে টাকা দিতে হবে নইলে ভিতরে যেতে দিবে না৷ আমি ঘটনা বুঝতে পেরে, সবাই কে বললাম,

ঃ ওহে শ্যালক ও শ্যালিকারা আপনারা যত টাকা চান পাবেন কিন্তু একটা শর্ত আছে, সামনে থেকে সেই রাগি মেয়ে মানে বিয়ান সাহেবা এসে বললেন,
ঃ হুম বলেন,
ঃ সাবই মিলে জামাই কে এক মিনিট নিরবতার সহিত দেখবেন এবং জামাইয়ের চেহারার মধ্যে থেকে একটা প্রশ্ন করা হবে, উত্তর দিতে পারলে তবেই, টাকা৷
ঃ ওক্কে রাজি৷

তখনই পেলাম চান্স সবাই যখন নিরব হয়ে জামাইকে দেখতে ব্যস্ত ঠিক তখনই, চুপ করে পকেট থেকে চকলেট বোম্ব বের করে সুতোয় আগুন লাগালাম৷ আর যারা গেটে টাকার জন্য দর কষাকষি করতেছিলো , তাদের হেড ছিলো এই রাগি বিয়ান৷ তো দেরি না করে চকলেট বোম্বটা তার পায়ের গোড়ায় ছেড়ে দিয়ে কানে হাত দিয়ে দাঁড়ায়ে রইলাম৷ আর তখনি বুম করে বোম্ব ফুটার আওয়াজ হলো, আর তখনি কিসের গেট আটকিয়ে টাকা নেয়া আর কিসের নিরবতা৷ সবাই চিল্লানি দিয়ে ভো দৌড়৷ কে কোনদিকে দৌঁড়াবে হুস নেই৷ দেখলাম কয়েকটা মেয়ে দৌড়াতে গিয়ে পরেও গিয়েছে৷ সবাই ভয়ে আর আতঙ্কে অস্থির৷ তখন খুজতে লাগলাম শ্যালিকাকে৷ খুজতে খুজতে দেখি যে কানে হাত দিয়ে বাচ্চাদের মত একমুখ হতাশা নিয়ে বসে আছে৷ মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছে৷ সে যাই হোক আমরা যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকবো তখন শ্যালিকাকে বললাম,

ঃ কেমন দিলাম বলুন তো৷

( মেয়েটা শুধু আমার দিকে তখন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়েই রইলো) আর আমি পৈচাশিক হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম৷ বিয়ের সকল কার্যক্রম শেষে আমাদের খেতে দেয়া হলো, খাবার সময় দেখছি শ্যালিকা আমার পাশে দাঁড়ানো৷ আমাকে নিজ থেকেই বার বার জিগ্গেস করতেছে, কিছু লাগবে কিনা৷ আমি তখন নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করলাম৷ এই মেয়ের হঠাৎ এত্ত পরিবর্তন৷ এতটা বকা দিয়েছি, আবার আজকে বোকা বানিয়ে ভয় দেখালাম, কিন্তু তবুও আমার পাশে কেনো৷ লক্ষ করলাম মেয়েটা আমার পিছনের দিকে এসে নিজ হাতে সব কিছু জোর করে বেড়ে দিচ্ছে৷ আর বলছে আরে বেশি বেশি খান, তাহলে সাস্থ ভালো থাকে৷ তারপর আমার মাথার দিক তাকিয়ে বললো,

ঃ বাহ আপনার হেয়ার স্টাইল তো অনেক সুন্দর৷
ঃ হুম বুঝতে হবে, এটা আমি৷ আমার কোথাও কমতি নেই৷
ঃ হুমম সেটা দেখলেই বুঝা যায়৷

( বলেই আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো৷ একটা মেয়ে মানুষের হঠাৎ এরকম ছোঁয়া যতটাই না অনুভুতি আর শিহরনের সৃষ্টি করে তার চেয়ে বেশি অবাক করে৷ আমার বেলাতেও কমতি নেই৷ ঠিক ততটাই অবাক হলাম যতটা হওয়ার ছিলো৷ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিক করে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো, বুঝলাম না, হাসিটা ভালো লাগার নাকি পৈচাশিক৷ কিন্তু সেই হাসির প্রমান পেলাম পরেরদিন যতক্ষনে বউ নিয়ে বাড়ি এসেছি৷ আর হাসির প্রমানে পাওয়া গেলো সেটা ভালোলাগা বা ভালোবাসার হাসি ছিলোনা, সেটা ছিলো মৃদু ভালোলাগার অসীম পৈচাশিক হাসি৷ একটা রাগি মেয়ে যে এতটা শয়তান, হারামী, বান্দন্নী হতে পারে, পরেরদিন গোসল না করলে সেটা বুঝতাম না৷

আসলে মেয়েটা আমার মাথায় হাত দিয়েছে তার পিছনের রহস্য হলো হাতে ছিলো শুকনো রং, যা পানির ছোঁয়া পেলেই গলে যায়৷ যেমনটা আমার গোসলের সময় হলো৷ মাথায় পানি ঢালছি আর দেখি মাথা বেয়ে পানির পরিবর্তে লাল রংয়ের পানি শরির বেয়ে পরছে৷ দেখে একটু ঘাবরে গেছিলাম পরে বুঝতে পারলাম এটা ছিলো রং৷ চুপচাপ বিয়ে বাড়ির অপমান বাথরুমে সহ্য করে গেলাম৷ বাথরুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গেলাম গিয়ে আমার আলনা থেকে জামাকাপর নিয়ে পরলাম৷ পরে পিছনে ফিরে দেখি একজন আমার বিছানায় বসে খিলখিল করে কী হাসিটাই না হাসতেছে, আমি তাকে দেখে ফেলায় হাসির আওয়াজ বাড়িয়ে দিলো, তাকে দেখে যদিও প্রথমে শক খাইছি তবুও তার হাসির সৌন্দর্যে শক থেকে বের হয়ে একটু রক হলাম৷ কিন্তু এই মেয়ে এখানে কি করছে,

ঃএই মেয়ে এই তুমি আমার রুমে কেনো৷ বিনা অনুমতিতে রুমে আসছো কেনো?
ঃ বিনা অনুমতিতে আসিনি আপু আর দুলাভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এসেছি৷ আগে বলেন গোছলটা কেমন ছিলো?

ঃ তুমি যে এত্ত আদরে আদরে বাদরের মত কাজ করবে সেটা কে জানতো৷
ঃ তবে আমার প্রতিশোধ নেয়া শেষ৷ নাউ ফ্রেন্ডস, ফ্রেন্ডস না হলেও সমস্যা নেই কারন বিয়াই তো হয়ে গেছেন৷
ঃ সে সব কিছুই তো বুঝলাম, কিন্তু তোমার মত রাগি একটা মেয়ে এত্ত শয়তান আর এত্ত সুইটভাবে আমার সাথে কথা বলছে কিভাবে?? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা ৷

ঃ আসলে আমার রাগ বলতে তেমন কিছু নেই, কিন্তু সেদিন স্কুল থেকে আসতে কিছু ছেলে ডিস্টার্ব করছিলো তাই রাগটা বেশি ছিলো৷ সেদিনের ব্যবহারের জন্য সরি৷ আর এ কয়দিনে আপুর মুখে আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি তাই আগে ভাগেই আপনার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে আসলাম৷

ঃ কিন্তু তোমাদের তো রাতে আসার কথা কিন্তু তুমি একা সকাল সকাল যে চলে আসলে??
ঃ কে বলেছে আমি সকাল সকাল আসছি, আমিতো আপুর সাথে কাল রাতেই আসছিলাম, আর এই ঘটনা আপুকে আর দুলাভাই সবাইকে জানাইছি৷
ঃ এই মেয়ে বলে কি, কাল রাতেই এসেছে আর আমি জানিনা৷ আর জানবোই বা কেমন করে, আমি অবশ্য আগে ভাগেই চলে এসে লম্বা ঘুম দিছিলাম৷
ঃসে যাই হোক আপু আপনায় ডাকতেছে আসেন?
ঃ যাচ্ছি কিন্তু তোমার নাম কি সেটা তো বললা না??
ঃ সেটা না জানলেও চলবে,,,,

বলেই ফিক করে হাসি দিয়ে চলে গেলো৷ উফ মেয়েটার হাসিতে মায়া আছে বটেই, কি সুন্দর করে হাসে, এমনিতেই সুন্দর তাতে যদি আবার এত্ত সুন্দর করে হাসে তাহলে আরো কতটা সুন্দর লাগবে সেটা বাস্তবে না দেখলে কল্পনায় কখনোই আসবেনা৷ আমি যাচ্ছি ভাইয়ার রুমে দেখি ভাবি কেনো ডাকছে, নতুন বউ আমায় ডাকছে সেজন্য একটু বার্তি এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে,

ঃ কি খবর ভাবি, সকাল হতে না হতেই ভাইয়ের খোলস ছেড়ে এসেই দেবরের খোঁজ, মতলব কি হুহহ??
ঃ তোমার ভাইয়ের খোলসে তো সেই কবেই জড়িয়েছি, তাই ভাবছি তোমার খোঁজ নেয়ার তো কেউ নেই, তাই এখন থেকে আমাকেই তো নিতে হবে৷

ঃ সে নাহয় বুঝলাম, কিন্তু আমার ভাইয়ের খোলসে আগেই জড়িয়েছিলে মানে??
ঃ এটা সিক্রেট কাউকে বলবা নাতো??
ঃ উহুম একদম না! কাউকে বলবো না৷
ঃ তোমার ভাইয়ের সাথে আমার পঁাচ বছরের রিলেশন ছিলো, সব প্লান ঠিকঠাক মত কাজ করছে জন্য আজ তোমার ভাবি হতে পেরেছি৷ একথা শুনে যেনো আসমান থেকে পড়লাম, ভাইয়ার দিকে তাকাতেই লাজুক ছেলের মত চোখটা সরিয়ে নিলো৷ তখন ভাইয়াক বললাম,

ঃ এই ছিলো তোমার মনে, যা আমি জানিনা৷
ঃ তোকে জানালে, আজ আর এই দিন দেখতে হতোনা৷ আজরাইল কে বলে কবেই আমার জান কবজ করাতিস সেটা আল্লাহ মালুম৷

ঃ হয়েছে হয়েছে, আমি এখনি বলে দিচ্ছি দাঁড়াও৷
ঃ দেবরররররর জ্বী,,,,,,,,,,,, ( শয়তানি কন্ঠে ভাবির ডাক)
ঃ অনুরোধ করে লাভ নেই, আমি বলে দিচ্ছি এখনি,,,,,
ঃ (ভাইয়া বললো) না বলতে কত নিবি বল?
ঃ এইতো লাইনে আসছো ভাইয়া,
ঃ (ভাবি বললো) এক টাকাও নিবে না, ও যদি আমাদেরটা ফাঁস করে তাহলে ওর টুনটুনির কথাও ফাঁসসস৷
ঃ এ নাহ, নাহ ভাবি, এ কেমন কথা বলছো? তুমি কত লক্ষি ভাবি আমার, তুমি এটা বলতেই পারোনা৷
ঃ তাহলে প্রমিস করো কাউকে বলবা না৷
ঃ ওক্কে প্রমিস, তবে তোমার বোনের নামটা বললেই চলবে৷ সেকি তুমি ওর নামটাও জানো না৷ ওর নাম তাবু
ঃ তাবু এটা কেমন নাম? আজব মাইরি তোমাদের দু বোনের রূপ আছে গুন ও আছে, শুধু নামটাই বেমানান৷ নিশ্চই এটাও ঐ বুইড়ার কাজ?

ঃ আরে না আমি ওকে আমি তাবু বলেই ডাকি, ওর আসল নাম তাবাচ্ছুম৷ আর আমার নাম হচ্ছে রেনু, হৃিতিকা আক্তার রেনু, সেদিন তোমায় ঢপ দিছিলাম৷
ঃ ওহ আল্লাহ বাঁচালো,৷ এখন তো কত সুন্দর মিলে গেলো৷ যেমন রূপ, তেমন গুন, এবং রূপে গুনে ম্যাচিং নাম৷ অসাধারন নাম, আর তাবাচ্ছুম তো আমার সব থেকে ফেভরাইট নাম৷

ঃ তাই নাকি,
ঃ হুম একদম, তাবু ম্যাম রেগে আছেন মনে হচ্ছে??
ঃ ( আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভাবির দিকে তাকিয়ে রেগে ফোস ফোস করতে করতে বললো)
ঃআপু এটা ঠিক করলি না কিন্তু আমাকে এখানে তাবু বলার কি দরকার ছিলো? আমরা সবাই তাবুর রাগ দেখে মোটামুটি একটু হাসলাম, পরে ভাবি বললো,
ঃ তাবুর সাথে তোমার ঝগরা মিটেছে?
ঃ হ্যা ভাবি মিটেছে, তাবু অনেক ভালো একটা মেয়ে আর অনেক মিশুক৷
ঃ ওর সাথে বন্ধুত্ব করো ভালো লাগবে৷
ঃ সে তো অবশ্যই৷

তো যাই হোক, এভাবেই আমার আর তাবুর সম্পর্কটা বাড়তে থাকলো৷ ওর ফোন নাম্বারটাও নেয়া হয়ে গেছে৷ দিনে কয়েকবার ফোনে কথাও হয়৷ দেখা করতাম স্কুলের সামনে৷ বিয়ের কয়েকদিন ভালোই কাটছিলো, কিন্তু যখন ভার্সিটি ওপেন হলো তখন সেই সব ছেড়ে, বাবা মা কে ছেড়ে, মিস্টি একটা ভাবি ছেড়ে, মিস্টির চেয়ে মিস্টি একটা ভাবির বোন আই মিন আমার বিয়ান কে ছেড়ে চলে আসতে হলো ঢাকায় পরাশুনার টানে৷ যে টান হয়তো আমাকে একদিন ভাইয়ার যায়গায় পৌছিয়ে দিবে৷ যেমনটা এখন ভাইয়া আর ভাবির মাঝে বিরাজমান৷৷৷৷৷৷ তাবু আর আমার সম্পর্কটাও ততদিনে মজবুত হোক, সে ঘটনা পরে কোনো একদিন শেয়ার করবো৷

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত