শাড়ী

শাড়ী

ছোটবেলা থেকেই শাড়ীর প্রতি আমার অজানা একটা টান আছে। শাড়ী দেখলেই পড়তে মন চায়। কিন্তু পুরুষ হবার কারণে কোনদিন পড়তে পারি নাই। বিয়ে করেছি সাত মাস হয়েছে। ইচ্ছা ছিলো বউ’র শাড়ী একদিন না একদিন ঘরের দরজা লাগিয়ে পড়বো। কিন্তু সেই সাহস হচ্ছে না। কারণ বউ আমার খুব দাজ্জাল। আমি যদি ভুল করে কিছু করি, তাহলে সেইদিন ঘরে কেয়ামত ঘটিয়ে ফেলবে।

একদিন তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে ভুলে তার টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজেছি। দাঁত মাজতে মাজতে পিছনে ঘুরে তাঁকিয়ে দেখি দাজ্জাল! মানে আমার বউ দাড়িয়ে আছে হাতে ঝাড়ু নিয়ে। আমার কাছে এসেই ঝাড়ু দিয়ে একটু আদর করে দিলো। আমি তার ঝাড়ুর আদর পেয়ে লজ্জায় কাতুকুতু হয়ে গেলাম। অবশ্য এমন আদর আমি দৈনিক কোনোনা কোনো কারণে পেয়ে থাকি। বাসে করে অফিসে যাবার সময় আমার পাশে এক রমণী বসেছিল। তার পড়নে নীল রঙের একটা শাড়ী। নীল রঙ আমার খুব প্রিয়। অনেক মেয়েদের যেমন সব কিছুতে গোলাপি রঙ পছন্দ এমনকি টয়লেট এর বদনা কিনতে গেলে গোলাপি রঙের খোঁজে, আমিও তার কোনো অংশে কম না।

আমি মেয়েটার পড়নে শাড়ী দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারলাম না। শাড়ীর আঁচল টেনে নিয়ে যেই নিজের হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে নিলাম, ঠিক তখনই মেয়েটা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে একটানে নিয়ে নিলো। আমি তো ভয়ে এত বড় একটা মানব থেকে চড়ুইপাখি হয়ে গেলাম । মেয়েটা আমাকে তেমন কিছু বলেনি। শুধু সবার সামনে পায়ের জুতা দেখিয়ে বললো, “ওই হারামজাদা তোর ঘরে কি মা-খালা নাই।” আমি বললাম,, “আফা, আমার ঘরে একটা দাজ্জাল ছাড়া আর কেউ নাই।” এই কথা শেষ করার আগেই আমার গালে একটু আদর করে দিলো তার কম দমী চশমা (জুতা) জোরা দিয়ে। আমি তেমন কিছু মনে করিনি। শুধু একটা কারণে লজ্জা লাগলো, আদর করবে যখন সবার সামনে তাহলে একটু দামীতা দিয়ে করতে পারলো না। সব আমার কপাল। অবশেষে বাস থেকে গণ ধোলাই থেকে রক্ষা পেলাম। হেঁটেই বাসায় আসলাম।

এই মেয়েটা কেন আমাকে কম দামি জুতা দিয়ে আদর করলো এই রাগে সিন্ধান্ত নিলাম, আজ যে করেই হোক শাড়ী আমি পড়বোই। বাসায় এসে দেখি দাজ্জাল সিরিয়াল দেখছে। আমি এই সুযোগে চুপিচুপি রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা লাগিয়ে বউর শাড়ী বের করলাম। নিজের সব কাপড় খুলে বউর লাল রঙের শাড়ীটা পড়লাম। আহ সে যে কী শান্তি বলে প্রকাশ করার মতো না। কেন যে আমি মেয়ে হলাম না। মেয়ে হলে সারাজীন এমন শান্তির জিনিস থেকে কেউ আমাকে আলাদা করতে পারতো না।

শাড়ী পরে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে গিয়ে পোজ দিচ্ছি আর সেলফি তুলছি। যখন শাড়ী পড়তে খুব মন চাইবে তখন সেলফি গুলো দেখে মনকে শান্তনা দিতে পারবো। পোজ দিতে দিতে ব্লাউজটা ছিড়েই গেলো। তারপরেও আমি থেমে নেই আজ শখ মিটিয়ে নিবো। হঠাৎ কে যেনো দরজা নক করলো। আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। আমার দাজ্জাল বউ যদি এমন অবস্থা দেখে তাহলে আমাকে বাড়ি ছাড়া করবে এতে কোনো সন্দেহ নাই। এত লম্বা শাড়ী খুলে নিজের পোশাক পড়তে কমপক্ষে বিশ মিনিট সময় লাগবে।

আমি বুকে একটু সাহস নিয়ে দরজা খুলেই ফেললাম। দরজা খুলে আমার জ্ঞান হারাবার মতো অবস্থা হয়ে গেল ভয়ে। আমার শশুড়-শাশুড়ি, শালা-শালি দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। তাদের পিছনে আমার দাজ্জাল বউ। আমাকে দেখে মনে হচ্ছে তারা এলিয়েন দেখছে। আমার শশুর হাত থেকে তো মিষ্টির প্যাকেট গুলো ছেড়েই দিয়েছে। মিষ্টির প্যাকেট গুলো এতিমের মতো পায়ের কাছে পড়ে আছে।

রাত বারোটা, এখন আমি বাসার বাহিরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর মশা খালুরা আমকে মন ভরে আদর করছে। কী এমন অপরাধ করলাম আমি। ছেলেদের কি মন বলে কিছু নেই? তাদেরও তো শখ থাকতে পারে। মেয়েরা যদি ছেলেদের পোশাক পড়তে পারে, তাহলে ছেলেরা কী দোষ করলো। আমি একদিন শাড়ী পড়েছি দেখে এখন বাসা থেকে বের করে দিলো। আমার দাজ্জাল বউ তো নিজেই জন্মের পর থেকে শাড়ীই পরে, তাহলে তার কী হওয়া উচিৎ ছিলো। সব আমার পোঁড়া কপাল। আজ রাত রাস্তার ক্ষুদার্ত কুকুর গুলোর সাথেই থাকতে হবে।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত