আজ ১০ বছর পর! সামিয়া এসেছে তাদের মেয়েকে দেখতে। আসার আগে অয়নকে ফোন দিয়েছিল। অয়ন প্রথমে ফোন ধরেনি, চার- পাঁচবার ফোন দেয়ার পর ধরেছিল।কথা বলতে পারেনি। কারন তার খুব কাঁন্না আসছিল তবু মনকে শক্ত করে বলেছিল, কেন ফোন করেছ?
সামিয়া- মেয়ের সাথে দেখা করতে চাই।
অয়ন- আচ্ছা! কাল দুপুর ১২ টায় দেখা করতে আসবে, আর বিকাল তিনটার আগে চলে যাবে।
সামিয়া শর্তে রাজি হল। অয়ন সকাল ৯ টায়, সময় মত ডিউটিতে চলে যায়। আর তাদের মেয়ে মৌ কে বলে যায় তোমার মা আসবে, দেখা কর। সে প্রথমে রাজি হয়নি কারন সে সব ইতিহাস জানত না।অবশেষে বাবার কথায় রাজি হল। ১২ টার সময় সামিয়া আসল।
মৌ-কেন এসেছেন বলেন?
সামিয়া- তকে দেখতে মা!
মৌ-কেন? বাবাকে কাঁদিয়ে সুখ পাওনি?
সামিয়া- তোমার বাবা আবার আমার জন্য কাঁদে?
মৌ-কেন কাঁদবে না? যে তোমাকে এত টা ভালবাসে তাকে ছেড়ে তুমি চলে গেছ।
সামিয়া-আমি তোমার বাবাকে ছেড়ে চলে যাইনি।তোমার বাবাই..থাক সে সব কথা।
মৌ-থাক কেন? আজ বলতে হবে কেন চলে গিয়ে ছিলে।
সামিয়া-না থাক! তোমার বাবার কাছে জেনে নিও।
মৌ- বাবা বলতে চায় না, আর কখনো জানতে যেন না চাই তার জন্য রেগে হুমকি দিয়েছে আর বলেছে আমার যদি এটা বলতেই হয় তাহলে তোমার জন্য বিপদ আছে।
সামিয়া- একথা বলেছে?
মৌ-হুমম বলেছে।
সামিয়া-তাহলে কখনো ওনার কাছে জানতে যেও না।
মৌ- যাব না! কিন্তু তোমাকে আজ বলতে হবে।
সামিয়া- আচ্ছা ঠিক আছে..তাহলে শোন আজ থেকে বিশ বছর আগে। তোমার বাবা অয়নের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় আমার।খুব ধুমধুম করে আমাদের বিয়ে হয়েছিল।একটা মেয়ের যেরকম স্বপ্ন থাকে, ঠিক সেই রকম ভাবেই বিয়ে হয়েছিল।কিছু কমতি ছিল না। বিয়ের পর বাসর রাত যেটা প্রত্যেক নারীর জন্য খুবই আকাঙ্খিত রাত। সে বাসর রাত টা ছিল ভিন্ন রকম। তোমার বাবা আমার জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। শর্ত গুলো হল:-
১) আমার অনুমতি ছাড়া কখনো মার্কেট, বাপের বাড়ি যেতে পারবে না।না মানলে চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে।
২)কখনো কোন কারনে আমার বাবা-মাকে, তোমার বাবা-মা বলে সম্বোধন করতে পারবে না। তাহলে তুমি আমার জন্য হারাম হয়ে যাবে।
৩)সন্দেহ আর অবিশ্বাস এই দুইটা আমি খুব ঘৃনা করি।তাই এরকম কিছু করেছ প্রমান পেলে,তোমার কঠিন শাস্তি হতে পারে ।
৪)সব গোপন জানতে চেও না। যদি কখনো আমার গোপনীয়তাকে মানতে না পেরে চলে যাও।তবে হয়ত গোপনীয়তা ফাঁস করব। তবে সেটা হবে তোমার আমার বিচ্ছেদের কারন। আর আমি শর্ত ভঙ্গ করার কারনে আমি আজ তোমাদের সাথে নেই।
মৌ- কোন শর্ত ভাঙ্গছিলে তুমি? সামিয়া-সেটাও জানতে চাও?
মৌ- হুমম..
সামিয়া-শোন তাহলে বিবাহের পর আমাদের সর্ম্পক টা ভাল ছিল।বলতে গেলে খুব ভাল মানুষ ছিল তোমার বাবা।আমার বাবা-মা মানে শ্বশুর-‘শ্বাশুড়ি ও বেশ ভাল ছিল। বিয়ের আমরা কেউ প্রেম করিনি তাই আমাদের মাঝে বেশ প্রেম ও জমে ছিল। বিয়ের আড়াই বছর পর তোমার জন্ম হয়। তোমার বাবা আর আমার দেয়া নামে সম্মিলিত নামকরন করা হয় তোমার “আরিফিন আক্তার মৌ”। মৌ নামটা ছিল আমার দেয়া।যে নামে তোমার বাবা আজও তোমাকে ডাকে। প্রতি সপ্তাহে আমরা কোথাও না কোথাও ঘুরতে যেতাম।এরকম পাওয়াটা আমার চাওয়ার চেয়ে বেশি ছিল।প্রতি সপ্তাহে ঘুরতে গিয়ে কোন না স্মৃতি একে দিয়েছে আমার হৃদয়ে। কখনো আইসক্রিম খাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে মুখে মেখে দেওয়া। বাবা -মাকে লুকিয়ে দুষ্টমি করা।কখনো আমাকে রাগানোর জন্য, অন্য মেয়ের সাথে আমাকে তুলনা করা। এরকম আরও অনেক ধরনের স্মৃতি।
আমার বিরুদ্ধে তার বা তার বিরুদ্ধে আমার, কোন রকম অভিযোগ ছিল না। পরিবারে ছোট খাট সমস্যা প্রায় সব পরিবারেই হয়, তেমনি আমাদের হয়েছে তবে খুবই কম। কোন বিষয়ে জানতে চাইলে কোন রকম গোপন করত না। সমস্যাটা হয় বিয়ের প্রায় ৯ বছর পর।তখন তোমার বয়স মাত্র ৭ বছর। তখন তুমি তোমার ফুফুর বাড়িতে ছিলে। ২০০৬ সালের ১২ জুলাই হঠাৎ রাত ২ টার দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি তোমার বাবা বিছানায় নেই।বিছানা ছেড়ে বারান্দায় দিকে তাকিয়ে দেখি, তোমার বাবা কার সাথে যেন কথা বলছে। শুধু শুনে ছিলাম, “কি প্রেগন্যাট”। এটা সে কন্ঠ ভার করে ভয়ে ভয়ে বলে ছিল।আমি ভয় পেয়ে যাই। তাই ঐদিন আমি কিছু বলিনি। আবার শুয়ে পরেছিলাম।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি, তোমার বাবা নেই। খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম ঐ দিন।কারন আমাকে না বলে গিয়েছিল।সাধারনত সে আমাকে না বলে কোথাও যেত না। সে ফিরে আসে রাত ১২ টায়, তার মাঝে একবার ও আমাকে ফোন দেইনি।তবে আমি একবার দিয়েছিলাম। তবে সে মাত্র বলল, আমার আসতে দেরি হবে। তুমি খেয়ে শুয়ে পর।কোথায় আছ জিঙ্গাসা করলাম। তোমার বাবা বলল, ” বলা যাবে না”। আসার পর আবার জিঙ্গাসা করলাম।” কোথায় গিয়েছি্লে”।আবারও সে বলে,” বলা যাবে না গোপনীয় ব্যাপার”।রাতের ১.৩০ আবার ফোন, তোমার বাবা আবার চলে যায়,আমাকে কিছু না বলে।বাসায় ফিরে সকাল ১০ টায়। আমি খুব রেগে যাই।তার কোন রকম বিক্রিয়া দেখি না। শুধু মনটা বিষন্ন মনে হল। আর বলল, তোমার কি হয়েছে?
সামিয়া-তোমাকে আজ বলতে হবে, কি হয়েছে তোমার? আমার কাছে কি লুকিয়েছ?
অয়ন- “বললাম তো এটা বলা যাবে না”! তোমার বাবার একই কথা।
২ দিন যাবত কিছু কথা বলি না, তোমার বাবার সাথে। পরের দিন শুক্রবার, প্রতি সপ্তাহের মত ঘুরতে যাওয়ার কথা।তোমার বাবা,দাদা,দাদি সবাই প্রস্তুত কিন্তু আমি যেতে চাচ্ছি না। তোমার বাবা আমায় জোর করে নিতে চায়।তাতে আমি আরও রেগে যাই। আর বলি যাও তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে, আমার যেতে হবে না। আর প্রেগন্যাট কে? তুমি আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছ।
তোমার বাবা কিছু বলেনি, শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখ দেখিছিলাম খুব লাল হয়ে আছে। তারপর তোমার দাদা,দাদিকে নিয়ে চলে যায় ঘুরতে। আমি রাগে তোমার নানুর বাড়িতে চলে যাই। তোমার বাবা প্রতিদিন ফোন দিত, আমি ফোন ধরতাম না।মেসেজ দিত, আমি মেসেজের উত্তর দিতাম না। তিন মাস পর আমাকে নিতে আসে, আমি যাই নি। তারপর পাঁচ মাস আমার কোন খবর নেইনি। তারপর একদিন অসময়ে কলিং বেল বেজে উঠে।আমি দরজা খুলে দেখি,কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এসেছে।প্যাকেট খুলে যা পেলাম, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।একটা চিটি! যেখানে লেখা ছিল।
প্রিয়
সামিয়া,
আশা করি খুবই ভাল আছ।আমি কেমন আছি না জানাই ভাল।হয়ত তোমাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবেসে ছিলাম।তাই ডির্ভোস লেটার পাঠাতে অনেক দেরি করছি।ভেবে ছিলাম আমার শর্তের কথা মনে হলে তুমি ফিরে আসবে।কিন্তু তুমি ফিরলে না। তুমি একটা দুইটা নয় পরপর চার শর্ত ভঙ্গ করেছ।তুমি আমাকে সন্দেহ আর অবিশ্বাস করেছ। তুমি মা-বাবা কে
আমার মা-বাবা বলে সম্বোধন করেছ। বিনা অনুমতিতে বাবার বাড়িতে চলে গেছ। আমার গোপনীয়তাকে তুমি সম্মান দাওনি। তাই শেষ পর্যন্ত তোমাকে ডির্ভোস দিতে বাধ্য হলাম। তুমি স্বাক্ষর করে কুরিয়ারে আমার কপি টা পাঠিয়ে দিও।
ইতি
অয়ন
আমি ডির্ভোস পেপার না খুলেই, একটা মেসেজ করি তোমার বাবাকে আর জানতে চাই গোপন ব্যাপার টা।সে তিন ঘন্টা পর রিপ্লে করে, আগে ডির্ভোস পেপারে স্বাক্ষর কর পরেরটা পরে। আমি তখন ডির্ভোস পেপারে স্বাক্ষর করে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেই।ভাল করে ডির্ভোস পেপারটা পড়েও দেখিনি।এমন কি তোমার বাবার স্বাক্ষর টাও খেয়াল করেনি। দুদিন পর আরও কুরিয়ার আসে, তবে তাতে গোপন কথাটা লিখা ছিল না।দেনমোহরের পাঁচ লক্ষ টাকা আর আর একটা চিরকুট তাতে লেখা ছিল সরি! আমি গোপনীয়তা ফাঁস করি না।
তখন আমি আরও রেগে যাই এবং ডির্ভোস পেপারটা হতে নেই ছিড়ে ফেলার জন্য।যা দেখে ছিলাম তা আজও আমার বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়।তাতে তার স্বাক্ষর ছিল তার রক্ত দিয়ে। আমি তখন বুঝতে পারিনি, আমি কি ভুল করেছি।তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম তাকে বিশ্বাস করা যায়। তাই আমি তাকে “সরি” লিখে তাকে মেসেজ করি। সে দুঘন্টা পর সে রিপ্লে করে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি মানতে পারিনি।তাই তার সাথে দেখা করতে চাই কিন্তু আজ পর্যন্ত সরাসরি তার সাথে দেখা করতে পারিনি।কয়েক বার দেনমোহরের টাকা তার কাছে পাঠিয়ে দেই।কিন্তু সে আবার আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়।তাই সে টাকা আজ পর্যন্ত আমি খরচ করিনি। ততখনে বিকাল ৪ টা বেজে গেছে। হঠাৎ মৌয়ের ফোন বেজে উঠে।
মৌ- বাবা ফোন করছে।
সামিয়া- কয়টা বাজে?
মৌ- ৪টা।
সামিয়া- বল মা চলে গেছে! ঠিক আছে বলে বাবার ফোন ধরে মৌ, আর বলে, হ্যালো! বাবা বল।
অয়ন- আমার আসতে ঘন্টা খানেক দেরি হবে, তুমি কোন চিন্তা করো না। আর হ্যাঁ তোমার মা চলে গেছে?
মৌ- জ্বি বাবা।
অয়ন-মিথ্যে বলা শিখে গেছ। এতখন ফোন না দিয়ে তুমি একা বসে থাকতে।
মৌ- সরি বাবা!
অয়ন- আচ্ছা! ঠিক আছে রাখছি। মৌ আবার মায়ের সাথে কথা বলা শুরু করে। হে মা গোপন বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন?
সামিয়া- হে জেনে ছিলাম তবে এক বছর পর।
মৌ- কি ছিল সেটা?
সামিয়া-এক বছর পর রাহিমা আসে আমার বাসায়।রাহিমা আর তোমার বাবা একই ক্লাশে পরত।রাহিমার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিলে। আর তখন ঐ রাতে রাহিমা তোমার বাবাকে ফোন দিয়েছিল। আমি তো জানতাম না ঐটা রাহিমা।রাহিমার বিষয়ে আমি জানতাম আমাদের বাসায় প্রায় আসত। রাহিমা আমাদের ডির্ভোসের খবর শুনে আমার বাসায় আসে। কারন তোমার বাবা তাকে বলছে বলবে না।তাই সে আমার কাছে এসেছে। কারন সে জানে যেটা অয়ন গোপন করে সে আর তার মুখে বেড় করা যায় না। তো রাহিমা আমার কাছে কারনটা শুনে বলেছিল সেদিন তার ফোন দেয়ার কথা। আর আমি জানতে পারি গোপন বিষয়টি। সেটি ছিল রাহিমার মেয়ে নেহার ঘটনা। রাহিমা বলেছিল সে সময়ের ঘটনা, সেদিন রাতে রাহিমা ফোন দিয়ে ছিল।
বলেছিল নেহা প্রেগন্যাট। নেহা খুব শান্ত মেয়ে, তোমার বাবাও ওকে খুব আদর করত। তার জিবনে এমন কিছু ঘটে যাবে তা আমি ও কল্পনা করতে পারি নি। নেহা একটা ছেলেকে ভালবাসত,হয়ত ভালবাসার মানুষ কে খুশি রাখতে গিয়ে সে এই ভুলটা করেছিল।তবে ছেলেটার সাথে রাহিমার দেখা হয়েছে।তাদের বিয়ে হওয়ার ও কথা ছিল,অবশেষে নেহার সমস্যার কারনে সে পিছিয়ে যায়।কারন তখন নেহার ব্লাড ক্যান্সার দেখা দেয়।ডাক্তার তাকে ১ মাসের সময় দেয়।তাছাড়া নেহা তখন ২ মাসের প্রেগন্যাট। সে নেহা কে বিয়ের অমত জানায় আর ১০ দিনের মাথায় সে বিয়ে করে ফেলে। নেহা খুব ভেঙ্গে পরে এবং সে ঘর থেকে বেড় হয়না। সে খুব কেঁদেছিল কারন সে যাকে এত ভালবাসে সে তার বিপদের সময় একটা মাস অপেক্ষা করতে পারল না। একমাস পর নেহা ঠিক আছে। সে আবার ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার দেখে ওকে চিনতে পারছে।ডাক্তার বলল কেমন আছেন?
– জ্বি ভাল! রাহিমা বলল,
দেখেন তো আমার মেয়ের কি অবস্থা। ডাক্তার যা বলেছিল তা শুনে কারো মাথাই ঠিক থাকার কথা না। ডাক্তার বলল ওর তো কিছু হয়নি,শুধু শরির দুর্বল ছিল। কেন ওর স্বামী কিছু বলে নাই। সামিয়া চমকে গেল, আর বলল “মানে ওর স্বামী কে”?
ডাক্তার- ঐযে ছেলেটা এসেছিল। তার সাথে না নেহার বিয়ের কথা ছিল।
সেই তাকে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে ঐ ভুল রিপোর্ট মানিয়ে ছিল। এটা শুনে নেহা কাঁদতে থাকে আর বলে এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আমার জীবনে আর হয়নি।কাঁদতে কাঁদতে নেহা বাড়ি ফিরে আসে। আর ঐ রাতে রাহিমা তোমার বাবাকে ফোন দিয়ে বলে ছিল।নেহাও কথা বলেছিল তোমার বাবার সাথে।তারপর তোমার বাবা ঐদিন অফিসের আগে আর পরে নেহাদের বাড়িতে ছিল, অনেক পরামর্শ দিয়েছিল তাদের। কিন্তু রাতে নেহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।আর একটা চিটি লেখাছিল,” যদি আমি এখানে ও আত্যহত্যা করি তবু সবাই জানবে আমি বিয়ে ছাড়া প্রেগন্যাট।তাই চলে গেলাম নিজেকে গোপন করে শেষ করার জন্য। আর আমার কসম লাগে তোমরা কখনো আমার বিষয়ে কাউকে কিছু বলনা,শুধু বলবে আমার মেয়েকে খুজি পাই না।” তাই আজ পর্যন্ত, অয়ন আমার কাছে এই কথা বলে নাই।রাহিমা ও বলতে চায়নি তবে আমার সংসার বাঁচানোর জন্য এই কথা প্রকাশ করেছে। মৌ কাঁদতেছে কোন কিছুর জন্য নয় নেহার জন্য।একটা ছেলে এই রকম সারপ্রাইজ দিতে পারে তাই! হঠাৎ মৌয়ের ফোন বেজে ওঠে।
মৌ- হ্যালো..কে বলছেন? অপরিচিত লোক- আপনি অয়ন সাহেবের কে হোন?
মৌ- মেয়ে! কেন?
অপরিচিত লোক- ওনি একসিডেন্ট করছেন.. সিটি হাসপাতালে আসুন। সামিয়া আর মৌ দ্রুত হাসপাতালে চলে যায়। অয়ন তখন বেডে শোয়া মাথায় ব্যান্ডেজ। সামিয়া ডাক্তার কে ডাকে।আর জিঙ্গাসা করে, ” কি অবস্থা ওনার”? ডাক্তার বলল তেমন বড় কিছু না, জ্ঞান ফিরলে নিয়ে যেতে পারবেন। দু-ঘন্টা পর চোখ খুলে অয়ন কিন্তু তার ব্যান্ডেজের ফাঁক দিয়ে প্রচুর পরিমানে রক্ত বেড় হচ্ছে। লাল টকটক হয়ে আছে চোখ।
ডাক্তার দ্রুত এসে জানায় তিনি খুব উত্তেজিত হয়ে আছে।এরকম ভাবে চললে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সামিয়া কিছু বলেনি চুপচাপ চলে যায় আর আড়াল করে চোখের পানি মুছে। অয়নকে আবার অজ্ঞান করে রাখা হয়। জ্ঞান ফিরে তিন ঘন্টা পর! বেডের বালিশের এক পাশ রক্তে ভেজা, আর অন্য পাশে পানি। এই পানিটা মৌয়ের খুবই পরিচিত। প্রতিরাতে শেষে বাবার বালিশ এই ভাবে চোখের পানিতে ভেজা থাকে। সে সময় বাবাকে মৌ আর তেমন কিছু বলে নি। দুদিন পর অয়ন যখন কিছুটা সুস্থ, তখন মৌ তার বাবাকে বলে বাবা মাকে ক্ষমা করা যায় না। অয়ন বলে, না! আমি বেঁচে থাকতে তাকে ক্ষমা করব না। আর তুমি যা জাননা, তা বলতে এস না। আমি সবটাই জেনেছি! নেহার বিষয়টা সহ, মৌ বলল।
অয়ন-নেহার বিষয় এটা তোমাকে কে বলল?
মৌ- কেন মা বলেছে?
অয়ন- তাহলে হয়ত রাহিমার কাছে জেনেছ! তাকে ছাড়া এটা আর কেউ জানার কথা না। শেষ পর্যন্ত রাহিমা নিজেই, তার মেয়ের কথা রাখতে পারল না।(অয়ন হতাশ হয়ে বলে)
মৌ- তারপর নেহার কোন খোজ পাওয়া যায়নি বাবা?
অয়ন- না, তারপরে তাকে আর কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি।
কিছুটা মলিন মনে হচ্ছে, অয়ন কে। অনেকটা সময় দুজনে কোন কথা বলছেনা। একবারে নিরব হয়ে আছে দুজনে। কিছুখন পর, মৌ মাথা নিচু করে, আবার ও বলল মাকে ক্ষমা করে দাও বাবা!
অয়ন- না, এই রকম আবদার আর কখনো করবে না।(খুব রাগান্বিত ভাবে)।সে আরো বলতে থাকে,
আমার জিবনে আমি সবচেয়ে বড় শাস্তি পেয়েছি সেদিন, যেদিন তোমার মা আমার গোপনীয়তা জানার জন্য, আমার রক্তে মাখা ডির্ভোস পেপারে স্বাক্ষর করতে সে দ্বিতীয় বার ভাবল না। সেদিন আমি কেঁদে ছিলাম। তারপর তো কান্না ভুলেই গেছি, এখন আমি দেখতে মানুষ কিন্তু পাথর হয়ে গেছি।বাকি শর্তের কথা বাদই দিলাম।
মৌ চুপ হয়ে আছে আর ভাবছে প্রতিদিনেই চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায়।মাঝে মাঝে চেয়ারে বসে নির্ঘুম রাত কাটায়।তবু নাকি কান্না ভুলে গেছে, তাহলে বাবা ঐসময় কতটা কষ্টে কেঁদেছে। সেটা শুধু মৌ কেন, কার ভাবনায় আসতে পারে? এভাবেই পার হতে থাকে অয়নের,সামিয়া আর মৌয়ের জিবন। দু বছর পর মৌয়ের বিয়ে।মৌ আবদার করে বিয়ের দিনটা যেন মা তার কাছে থাকে। আচ্ছা ঠিক আছে, বলে অয়ন সম্মতি দেয়। আর মাকে ফোন দিতে বলে। তবে বিয়ের দিন অয়নকে আর বাসায় পাওয়া যায়নি।সে বর পক্ষকে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিয়ের দিন দুরে থেকে গেল। শেষ পর্যন্ত, বাবা-মাকে এক করার মেয়ের শেষ চেষ্টা ও ব্যর্থ হয়।
সমাপ্ত