কোঁদাল বারবার ফিরে আসছে তবুও একটা কোপ কবরের উপর দেওয়া যাচ্ছে না । কিন্তু কবরটা মাটি দিয়ে বাঁধানো । সূত্র মতে কবরটা মাত্র পনেরো দিন আগের । কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না বসির মিয়া । এতদিন যাবত সে লাশ চুরি করে কঙ্কাল বানিয়ে বিভিন্ন মেডিকেলে এবং ভারতে বিক্রি করে । কিন্তু কখনো এমন হয়নি ।
বসির মিয়ার তার শাগরেদ হান্নান কে ডেকে বলে দেখতো হান্নান কবরটা কি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা নাকি কোঁদাল দিয়া মাটি কাঁটা যায় না কেন ? হান্নান লাইট মেরে কবরটা পরীক্ষা করে । নাতো এতো মাটি দিয়ে বাঁধাই করা । দাঁড়ান ওস্তাদ আমি সাবল দিয়া ট্রাই করে দেখতাছি । হান্নান হাতে সাবল নিয়ে কবরে একটা আঘাত করে হঠাৎ তখনই একটা দমকা বাতাস বয়ে যায় । দ্বিতীয় আঘাত করার সাথে সাথে গাছের পাখি গুলো ঝাঁপটাতে থাকে । কিসের একটা শব্দ হতে লাগলো । বসির এবং হান্নান দুরন্ত সাহসী কিন্তু আজ হঠাৎ করে ভয় পেল । বসির মিয়া, হান্নান কে বলতে লাগলো পরিবেশ ভালো ঠেকতেছে না হান্নান, চল আজকের মতো চলে যাই । দিনের বেলা এসে কবরটা পরীক্ষা করুমনে ।
সেদিন আর তাদের লাশ চুরি করা হয় না । দুদিন পর তারা একই স্থানে দিনের বেলা আবার আসে । জায়গাটা জঙ্গলের মতো সাধারণত কেউ আসে না । তারা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । স্বাভাবিক একটা কবর মাটি দিয়ে বাঁধাই করা । কোঁদাল এবং সাপল এর আঘাত স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কিন্তু মাটিতো তেমন শক্ত না নরম মাটি তবে কেন এমনটি হলো । দুইজন একই কথা চিন্তা করছিল হঠাৎ পেছন থেকে তাদের কেউ ডাক দিলেন, আকর্ষিক ডাকে তার কিছুটা ভয় পেল । বুড়ো মতো একটা লোক, মুখে পুরো চাপ দাড়ি । স্বাভাবিক সুন্দর তবুও যেন অস্বাভাবিকত্ব তার চোখে মুখে ।
— এখানে কি করতেছ তোমরা ?
— না চাচা কিছু না একটা বনাজি ওষুধের গাছ খুঁজতেছিলাম ।
— তোমরা যে গাছ খুঁজতেছ না সেটা আমি ভালো করেই জানি । আরো জানি তোমরা যে মনোবাসনা নিয়ে এখানে এসেছ সেটাও পূরণ হবার নয় । কথাটা শুনে দুইজন কিছুটা অপ্রস্তুত হলো । তাদের মনের কথা সে কিভাবে জানে ।
— ঐ যে জঙ্গলের পাশে যে বাড়িটা দেখতে পাচ্ছ ,,,,,,
তারা দুইজন সেই বাড়িটার দিকে তাকায় । কিন্তু পরের কথাটুকু আর শোনা যাচ্ছে না । আবার তারা পেছন ফিরে তাকায় কিন্তু বুড়োটা কে দেখতে পায় না । তারা খুবই আশ্চর্য হয়ে যায় কি ব্যাপার এক মূহুর্তের ভেতর বুড়োটা গেল কৈ ? মনে হচ্ছে মিলি সেকেন্ডর ভেতর বুড়োটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে । এই ভর দুপুরেও তাদের গা শিরশির করে উঠে। এক মূহুর্ত আর সেখানে থাকেনা তারা । তবে বুড়োর দেখিয়ে দেওয়া বাড়ির দিকে রওনা দেয়, রহস্যটা কি জানতে হবে । বাড়ি বলতে ছোট্ট একটা ঘর তবে বাড়িটা পাতার ছাউনি দিয়ে ঢাকা । হান্নান গলা বাড়িয়ে ডাক দেয় । বাড়িতে কেউ আছেন ? দ্বিতীয় ডাকে একজন লোক বেড়িয়ে আসে হুজুর মতো, মনে হচ্ছে মসজিদের দিকে যাবেন মাথায় টুপি পাঞ্জাবি পড়া ।
— কে আপনারা, কাকে চান ?
— আমরা কিছু চাইনা আমরা খুবই ক্লান্ত তাই পানি খাব একটু ।
— আচ্ছা আপনারা ভেতরে আসেন পানি দিচ্ছি । সে পানি নিয়ে আসলো, সাথে মুড়ি ।
— আচ্ছা হুজুর একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল । বাড়িতে কাউকে দেখছি না, আপনি কি একা থাকেন ?
— হ্যাঁ বর্তমান একাই থাকি সাথে ছোট ছেলে আছে তবে ছেলের মা কিছু দিন আগে মারা গেছেন ।
সে যদি মারা না যেত তবে আপনাদের কে আমি ভেতর বাড়িতে আনতাম না । সে কঠিন পর্দা করতো খুবই আল্লাহ ভক্ত ছিল । আমি আর আমার ছেলে বাদে তার মুখ কেউ কখনো দেখেছে কিনা সন্দেহ । কিন্তু এতো ভালো মানুষটা আমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেল । আমি যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ কে হারিয়ে ফেলেছি । আচ্ছা ভাই সাহেবেরা অনেক কথা বলে ফেললাম আমকে উঠতে হবে নামাজে যাব ।
তারা দুইজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে কারো মুখে কোন কথা নেই । তারা নিজেরা একই চিন্তায় মগ্ন । কেন কোঁদাল দিয়ে কবরের মাটি কাঁটা যাচ্ছিল না, কেন পাখি গুলো ডানা ঝাপটাচ্ছিল, কেন সেই অদ্ভুত ডাক তারপর আজ রহস্যময় বুড়োর আগমন সবই তাদের কাছে পরিষ্কার হতে লাগলো । হান্নান, বসির মিয়া কে ডাক দিয়ে বলে ওস্তাদ আপনি কি কিছু বুঝতে পারছেন ? বসির মিয়া কোন কথা বলে না শুধু মাথা নাড়ায় ।
তারা দুইজন পাশাপাশি হাঁটছে আর চিন্তা করছে, তারা যে কাজে যুক্ত ছিল সে কাজ আর কখনোই করবে না । কারণ পৃথিবীতে হাজার মানুষের ভিড়ে কিছু মানুষ থাকে যারা প্রচণ্ড আল্লাহ ভক্ত হয় এবং আল্লাহ তাদের কিভাবে রক্ষা করেন সেটা এক বড় রহস্য । তাদের পক্ষে রহস্য ভেদ করা কখনোই সম্ভব নয় তবে যেটা সম্ভব সেটা হলো ভালো মানুষের কাতারে ফিরে যাওয়া । আজ থেকে তারা সেই কাজটাই করার চেষ্টা করবে ইন শা আল্লাহ । তাদের পাশ দিয়ে একটা রিকশা চলে গেল রিকশায় বসা জঙ্গলে দেখা সেই বুড়ো মানুষটা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে রহস্যময় হাসি ।