সম্পর্ক বিশ্বাস স্বার্থ

সম্পর্ক বিশ্বাস স্বার্থ

আমাদের সম্পর্কগুলো অনেকটা আকাশের মতো। হঠাৎ মান-অভিমানের মেঘ জমে আবার ঝিলিক দেওয়া রোদের হাসিতে স্বাভাবিক হয়ে যায়। যে সম্পর্ক গুলোতে মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস আছে তা আসল সম্পর্ক। যা আজকাল এমন ট দেখা পাওয়া পরশ পাথর খুঁজে পাওয়ার মতো। আমর মতে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে ভালবাসার সম্পর্ক। ভালবাসার কাঁধে ভর করেই দাঁড়িয়ে থাকে একেকটি সম্পর্ক। আর তাতে আস্তর হিসেবে প্রলেপ পরে বিশ্বাস আর অনুভূতির। জীবনে চলার পথে আমাদের অনেকের সাথেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর সৃষ্টি হয় ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আজকাল যে শুধু সম্পর্কের সৃষ্টি হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। অনেক সুন্দর সম্পর্কও নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মানুষ চাইলেই কি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সেই মায়াজাল থেকে বের হতে পারে?

আমাদের পারিপার্শ্বিক জগৎ সম্পর্কে ব্যক্তির স্থায়ী ধারণা, জ্ঞান এবং তার নিশ্চয়তার উপর আস্থা থাকা বা সত্য মনে করলে তাকে বিশ্বাস বলি। মিথ্যা মনে হলে অবিশ্বাস বলি। বিশ্বাস মানুষের জীবনের মূল মন্ত্র হওয়া উচিত। কারো প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া অথবা কারো বিশ্বাস আদায় করা এবং বিশ্বাসের যথাযথ মূল্যায়নই সমগ্র বিশ্বকেই শান্তি দিতে পারে।

আধুনিক সমাজে বিশ্বাসকে কিছুটা তাচ্ছিল্য করা হয়। আসলে বিশ্বাস দুই প্রকার। অন্ধবিশ্বাস ও আলোকিত বিশ্বাস। আধুনিক সমাজে বিশ্বাসের এই দ্বিধাবিভক্তিটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। এ জন্যই বিশ্বাস নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ধর্মের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক আর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশ্বাস ছাড়া ধার্মিক হওয়া যায় না, বিশ্বাস ছাড়া মানুষও হওয়া যায় না। যে মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না এবং যে মানুষ নিজে বিশ্বাসী নয়, সে কোনো মানুষই নয়। তার জ্ঞান, অর্থবিত্ত ও প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও থাকতে পারে, তবুও সে মানুষ নয়।

বিশ্বাস কোন খোলা বাজারের পণ্য নয়, এটা বিক্রয় হয়না বরং অর্জন করতে হয় শেকসপিয়ার বলেছেন, ‘সবাইকে ভালবাসো, বিশ্বাস করো অল্প কয়েকজনকে। কিছু সম্পর্কই তৈরি হয় বিশ্বাস ছাড়া, সেগুলো মেকি থাকে আর থাকে সন্দেহ ও ঘৃণায় ভরপুর। বিশ্বাসের মাধ্যমে তা শক্তিশালী আর মজবুত করতে হয়। চারিদিকে অবিশ্বাসেরই সম্পর্কের হাতছানি। অবিশ্বাসের করাল গ্রাসে সম্পর্কের সুতোগুলো ছিঁড়ে যায় যখন তখন!

পৃথিবীটা অনেকটা স্বার্থপর। সম্পর্ক আর স্বার্থ দুটি খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। দুনিয়ার প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে কিছুনা কিছু স্বার্থ বিদ্যমান। অনেকে বলে থাকেন সৃষ্টিকর্তাই স্বার্থের উর্ধ্বে নয় তবে আমারা কিভাবে স্বার্থ-মুক্ত হবো? বিধাতা এই বিশ্বলোক সৃষ্টি করেছিলেন তার আপন স্বার্থ সামনে রেখে। পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে সৃষ্টিকর্তার স্বার্থ তার প্রতি মর্ত বাসির উপাসনা। আর মর্ত বাসির স্বার্থ সৃষ্টিকর্তার উপাসনার মধ্যমে স্বর্গগমন। আদমের (আঃ) স্বার্থে বিধাতা বিবি হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, আবার হাওয়ার স্বার্থে আদমকে (বিধাতা ইচ্ছা করলে বিকল্প কিছু করতে পারতেন)। স্বার্থ ছাড়া যেমন সম্পর্ক হয় না তেমনি সম্পর্ক না থাকলে স্বার্থও আসে না। এখন ভাববার বিষয় হলো সৃষ্টিকর্তার সাথেই যেখানে আমাদের সম্পর্ক স্বার্থের ডোরে বাধা তবে মর্তলোক কি করে পারস্পরিক স্বার্থ মুক্ত থাকবে? তাই মানুষের চরিত্রে স্বার্থপরতা থাকাটাই স্বাভাবিক।

আমাদের জীবনটা এখন অনেকটাই যান্ত্রিক। সেইসাথে অবিশ্বাসের বিষফোঁড়ায় সম্পর্কগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন আর মানুষের মধ্যে আগের সেই সরলতা মাখা বিশ্বাসী সম্পর্ক নেই। সবসময় মনের মধ্যে একটা দ্বিধা কাজ করে। অবিশ্বাস, স্বার্থপরতা, লোভ আমাদের মানবীর গুনাবলী কে চিড়ে ফেড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। জীবনের জটিল বিষয়গুলি নিয়ে আমরা বেশি ভাবি। তাই ছোটো ছোটো জিনিসের প্রতি নজরই দিতে পারি না। কিন্তু এই ছোটো ছোটো বিষয় গুলিই পারে জীবনটাকে সুখকর করে তুলতে। ছোটো সুখ আমাদের অশান্তি গুলোকে ঢেকে দিতে পারে।

জীবনে সুখী হতে চাইলে সবার আগে নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। এতো স্বার্থপরতা ভীরে প্রতিটি সম্পর্কের আগে বিশ্বাসী মানুষকে জীবনসঙ্গী করুন। নিজের সাথে সকলের বিশ্বাসকে মেলে ধরুন। মোহের ফাদে পড়ে স্বার্থপরতায় বিবেক বিসর্জিত করার দরকার নেই। তবেই দেখবেন জীবন অনেক সুন্দর। মুখোশধারীর মিষ্টি কথার ভন্ড, প্রতারক, বকধার্মিক হতে সাবধান। অবশ্যই কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে সম্পর্ক জড়াবেন না। এতে হিতের-বিপরীত হতে পারে। প্রার্থনা রইলো ভালবাসায় ভরে উঠুক প্রতিটা স্বার্থহীন বিশ্বাসী সম্পর্কের জন্যে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত