আমার জানালা

আমার জানালা

আমি বসে বসে দেখছি আমার জানালায় ঝুলতে থাকা মাকড়সার জালগুলোকে।মাত্র একমাস হাতেগুনে হয়তো তার দু’একদিন কম হবে বৈকি বেশি নয় এর মধ্যেই আমার জানালাটা পুরোপুরিভাবে নিজদের দখলে নিয়ে নিয়েছে ওরা।

কি সুন্দর করে জাল বুনছে, কেউ কেউ তো আবার দোলনায় দুলছে মনে হচ্ছে। কেউবা ঘুমিয়ে আছে মনে হচ্ছে। বাচ্চা মাকড়সাটা বড় মাকড়সাটার কানে কানে কি যেন বলছে বোধহয়। হয়তো আমি যে গত ১২ মিনিট যাবত ওদের পর্যবেক্ষণ করছি সেটাই। কিন্তু লাভটা কি হচ্ছে তাতে অবশ্য কোন ক্ষতিও তো হচ্ছেনা ইয়ে মানে এখন অবধি হয়নি।আমি আরো ১৫ মিনিট বসে বসেই গবেষণা চালিয়ে যাবো বাছারা।

সুতরাং কানাকানি, নাকানাকি,গলাগলি যা করার করে নেও।কারণ পরে হয়তো সময় আর সুযোগ কোনটাই থাকবেনা তোমাদের।কিংবা যদি এমন বলি যে,সময় আর সুযোগ কোনটাই দেয়া হবে না তোমাদের।জারি হবে এক কঠিন রুল এবং সাথে সাথেই হারিয়ে যাবে সব ঝুল। মাকড়সা থেকে নজর এবার গেলো গ্রিলে জমতে জমতে মরুভূমি বালির পাহাড় হয়ে উঠা ধুলোর স্তূপের উপর।ইসরে কি একটা অবস্থা ধুলোয় ধুলোঘর,ধুলোরণ্য চারিদিক।এমতাবস্থায় আমার হাঁচি হাঁচি আসছে।ব্যাপারটা এমন যে,হাঁচি হবো হবো করছে কিন্তু হচ্ছেনা।নাকে এসে আটকে যাচ্ছে আরকি।এই অবস্থাটা ভীষণ বিরক্তিকর।

এখন এই মুহূর্তে যদি বাইচান্স আমি ভুলেও একটা হাঁচি দিয়ে বসি তার ফলশ্রুতিতে নাকের মধ্যকার প্রবাহিত বায়ু বা বাতাস যেটাই বলি সোজাসুজি গিয়ে আঘাত হানবে ধুলোর পাহাড়ে আর পাহাড় ধ্বসে পড়বে আর ফলশ্রুতিতে এলার্জি মহাশয় নিজের খুশিমত জেঁকে বসবে আমাতে।একটা করে হাঁচি দিচ্ছি আর একটু একটু করে ধুলোর স্তূপের বারোটা থুক্কু চৌদ্দটা বাজছে।হাহাহা কি যে সব অদ্ভুত ভাবনা আমার নিজেরই হাসি পায়।

এমা ধুলোর পাহাড়ে দেখি পিঁপড়াও আছে।দু’টি পিঁপড়া হেঁটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।একটা অনেকটা এগিয়ে গেছে আরেকটা বেশ পিছনে পড়ে আছে।কি জানি ওদের ভিতর কি দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে কিনা।কে জিতবে এখনো বলা যাচ্ছেনা কারণ খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প হচ্ছে তার সবচে দারুণ উদাহরণ।আসলে এরা কি লাল পিঁপড়া নাকি কালো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা। ধুর ছাই চশমাটা আবার হারালো কোথায়।

যাই হোক চারিদিকে আরেকটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে খুজে পেলাম টিকটিকির আন্ডা ওরফে ডিম।ইয়াক টিকটিকি দেখি বড় কাজও সেরে ফেলেছে।অবশ্য একমাস তো আর কম সময় না তাইনা!পরিপাক ক্রিয়া তো চলবেইই বেঁচে থাকলে।বেচারারই বা কি দোষ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এরা বড্ড লজ্জাহীন টাইপ।আরেহ বাবা অন্য জায়গা কি পেলিনা।হিন্দি ভাষায় যাকে বলে খুল্লাম খুল্লা তেই করতে হলো তোদের।তবে বিষয়টা পেয়ার না মলত্যাগ এদের বেলায়।

এখন ইচ্ছে করছে এই আন্ডাটা ফাটাই তোদের মাথায়।অবশ্য খানিকটা বোধহয় ফাটানোই দেখছি। ফাটিয়ে বলি ভেজে ব্রেকফাস্ট সেরে নে তোরা।তোদের আন্ডাতে ঠিক কি পরিমাণ প্রোটিন বিদ্যমান খেয়ে বল শুমারি হবে।উহু যেহেতু তোরা ট্যাকলা খালি টিকটিক করিস তোদের তো আর আদমশুমারি হবেনা, হবে টিকটিক শুমারি। বাহ!বেশ দিয়েছি তো নামটা।আর আমি হবো টুকটুকি।টুকটুকি করবে টিকটিক শুমারি।

ওহহ টিকটিকি থেকেই মনে পড়লো একমাস আগে আমি এক বেচারার লেজ কেটে লেজকাটা বানিয়ে দিয়েছিলাম।কই সে দেখছিনা ক্যান!সেকি ভয় পেয়েছে নাকি।আরে বাপু সেদিন মাথা ধরেছিলো আর বিরক্তি করছিলি তাই রেগে গিয়ে দিলাম লেজটা কেটে।তাই বলে কি রোজ রোজ লেজ কাটবো নাকি।অবশ্য আগে শুনতাম ১০০ টিকটিকির লেজের অফার এখন আর শোনা যায়না সেসব।সো নো চিন্তা এন্ড ডু ফূর্তি। খালা হুড়মুড় করে রুমে এসেই বললো, সরতো মা,জলদি করে তোর রুম সাফাই করে মুছে দেই।তোর তো আবার জানালাটা পরিষ্কার চাইইই চাই। আমার আবার আজ ৩ বাসায় কাজ আছে।এক বাসায় আবার কাপড়ও ধুতে হবে।আমি আর কথা বাড়াই না।

খালা ঝুল ঝাড়ছে খুব তাড়াতাড়ি। মাকড়সাগুলোর টনক নড়েছে এবার।ঘুম ভেঙ্গেছে মনে হচ্ছে। পিঁপড়াগুলো এবার ছুঁটছে প্রাণপণে।খালার জন্য দেখতে পাচ্ছিনা কে জিতলো দৌড়ে।টিকটিকির আন্ডাটা খালা আর ওদের ফ্রাই করতে দিবেনা মনে হচ্ছে। ধুলোর পাহাড় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।আমি খালাকে বললাম তার পুরানো অভ্যাস মত গান গাইতে।এখন মনটা আমার বেজায় ভালো।খালা মুচকি হেসে গানের তালে তালে কাজ করে যাচ্ছে।

বাহ!এবার মনে হচ্ছে এটা আমার চিরচেনা জানালা।খালা একদম ঝকঝকে, তকতকে করে দিয়েছে। দুঃখিত মাকড়সা,পিঁপড়া আর টিকটিকি।তোদের জাগয়া দিতে পারবোনা এ জানালায়।এ জানালাটা একান্ত আমার।আমার ভোর হয়,দুপুর আসে,বিকেল বয়,সন্ধ্যা নামে,রাত কাটে এ জানালায়।একান্ত আপন এ জানালাটা আমার।

টেবিলে রাখা ডায়েরীটা বের করে লিখতে হবে এখনি, চশমাটা চোখে দিতে হবে নাহলে মাথার যন্ত্রণাটা বেড়ে যাবে আর ফোনটা কই!ওইতো ইয়ারফোনটা কানে গুঁজে প্লে লিস্টের প্রিয় গানগুলো শুনতে শুনতে আমি জানালায় বসে বসে লিখে চলেছি ডায়েরীটা প্রায় এক মাস পর খুব যত্নে একান্তে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত