– পৃথিবীর কোথায় ৫ থেকে ১ কাটলে ৬ হয় ?
গণিত স্যারের এই প্রশ্নে সব শিক্ষার্থীরাই বেশ অবাক । ৫ থেকে ১ কাটলে আবার ৬ হয় কিভাবে ? সবাই বেশ চিন্তিতও বটে । শুধু একজন ছাড়া । কক্ষের শেষ বেঞ্চটাতে একজন বসা । স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে হয় শেষ বেঞ্চটা ওর জন্যই বানিয়েছে । ওর নাম সজল । দু’বছর ধরেই ক্লাস টেনের ঘানি টানছে । কলেজের মুখ আর দেখা হচ্ছে না । হয়তো ক্লাস টেনের বইগুলো ওর বেশ পছন্দ হয়েছে তাই বারবার পড়ছে । ওর সবচেয়ে অপছন্দকর বিষয়ই হল গণিত আর ইংরেজি । এই দুই ক্লাসচলাকালীন ও শুধু ঘড়ির দিকেই তাকিয়ে থাকে । কখন সময় পার হবে আর কখনই বা করিম চাচা ঘন্টা বাজাবেন । ক্লাসে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে নিয়ে ওর খেয়াল নেই । বিশেষ করে গনিত আর ইংরেজি ক্লাসে । গণিত স্যারের প্রশ্নে একদিকে সবাই চিন্তিত অন্যদিকে সজল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে । স্যার আবার জিজ্ঞেস করলেন,
– ক্লাসে এমন কি কেউ নেই যে এর উত্তর পারবে ? এক জন অন্যজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । পিছন থেকে সজল উঠে দাঁড়িয়েই বলল,
– স্যার ঘড়ি ।
সবাই হেসে উঠল । প্রায়ই ক্লাসে সময় শেষ হয়ে গেলেও শিক্ষকরা পড়াতে ব্যস্ত থাকেন । তখনই সজল উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘স্যার সময় শেষ’ । অথবা বলে, ‘স্যার ঘড়ি দেখেন’ । তাই স্যার ওকে বললেন,
– সময় তো শেষ হয়নি এখনও ।
– স্যার আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি । আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন পৃথিবীর কোথায় পাঁচ থেকে এক কাটলে ছয় হয় ?
স্যার পৃথিবীর সব ঘড়িতে পাঁচটা বেজে আরও এক ঘন্টা কেটে গেলে ছয়টা বাজে । সবাই অবাক হয়ে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে । স্যারও কিছুটা অবাক । যে ছেলেটা সাধারণ যোগ বিয়োগেও ক্যালকুলেটরের সাহায্য নেয়, সে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সবার চোখের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিলো । কিন্তু কিভাবে যে ও উত্তর টা দিলো কেউই ভেবে পাচ্ছেনা । স্যার ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার পড়ানো শুরু করলো । সবাই মনযোগ দিয়ে ক্লাস করছে আর সজল মনযোগ দিয়ে বাহিয়ে তাকিয়ে আছে ।
সজল উদাসীন প্রকৃতির ছেলে । পরিবার পরিজন বলতে বাবা আর এক সৎ মা আছে । ওর মায়ের মৃত্যু হয় তখন ও নবম শ্রেণিতে । ওর মায়ের মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পরেই ওর বাবা আরেকটি বিয়ে করলেন । তবে সৎ মা হলেও সে সজলকে খুব যত্ন করেন, খেয়াল করেন । ক্লাস শেষে দুপুর দু’টোর সময় সজল বাড়ি ফেরে । ব্যাগটাকে বিছানায় ছুড়ে গোসলের জন্য যায় । খাবার টেবিলে ওর মা অপেক্ষা করছে । প্রতিদিনই দুপুরে সে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে ছেলের সাথে খাবে বলে । সজলের বাবা দুপুরে বাসায় আসে না । এজন্য ওদের দু’জনকে একসাথেই খেতে হয় ।
– পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার ?
– চলছে..
– তোমার পছন্দের খাবার রান্না করেছি । ভাল হয়েছে ?
– হ্যাঁ ।
– একটু কষ্ট করে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো ।
তোমার সাথের বন্ধুরা তো কলেজে উঠে গেল । একটু চেষ্টা করো, দেখবে এবার ঠিক ভাল রেজাল্ট হবে । সজল কিছু বলছে না । খুব প্রয়োজন ছাড়া ওর সৎ মায়ের সাথে ও কথা বলেনা । সজল খুব জোর চেষ্টা করছে । এবার ওকে টেন টপকাতে হবেই । ছোটদের সাথে বছর বছর নিজেকে মানিয়ে নেয়া বেশ লজ্জাজনক আবার অস্বস্তিকরও বটে । কিন্তু গণিত আর ইংরেজি নিয়েই তো সমস্যা । সবই তো মাথার উপর দিয়ে যায় । অনেকদিন বাদে সজল আজ সন্ধ্যায় ইংরেজি বই খুলেছে । বইয়ের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মনে হয় ওর হাসি পাচ্ছে, কি লেখা এসব ! ও কিছু পড়ছে না, শুধু তাকিয়ে আছে আর একটু পর পর পাতা উল্টাচ্ছে । ওর মা দরজার কাছ থেকে কিছুটা লক্ষ্য করে ভিতরে আসলেন ।
– বাবা তুমি যদি পড়া না বুঝো, তুমি কোনো শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারও, তাদের কাছে প্রাইভেট পড়লে হয়তো কিছুটা সংশোধন হবে । সজল চুপ করে আছে, কিছু বলছে না । ওর মা চলে যাচ্ছে এমন সময় বলল,
– আচ্ছা যাবো ।
তিনি মুখে একটু হাসি নিয়ে বের হয়ে গেলেন । পরবর্তী মাসের শুরুতেই সজল বাহিরের একটা কোচিং এ ভর্তি হয়ে গেল । প্রথমদিন স্যার এসে সজলকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– নাম কি তোমার ?
– জ্বি সজল, সজল মাহমুদ ।
– ইংরেজি কেমন জানো ?
– জানি স্যার ।
– কেমন ভাল নাকি খারাপ ? সজল মনে মনে ভাবছে, কার কাছে আসছি । এটুকও বুঝে না, ভাল হলে কি আসতাম নাকি ।
– জ্বি একটু খারাপ ।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি । ” লোকটি বিষপান করলো ।” এর ইংলিশ ট্রান্সলেশন কি হবে ? কিছুক্ষণ মাথা চুলকে সজল উত্তর দিলো,
– স্যার, He is dead.
তার উত্তরে সবাই হেসে উঠলো । সজল মনে মনে ভাবছে, বিষ খেলে তো মানুষ মরবেই । আমি তো এটাই বললাম । এতে হাসার কি ! যথারীতি সেখানে ক্লাস করতে শুরু করলো । প্রথম ক’দিন বেশ অস্বস্তিকর লাগলেও আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে । পাশাপাশি গণিতও প্রাইভেট পড়া শুরু করেছে । এখন ব্যস্ততার কারনে উদাসীন ভাবটা কমে আসছে ।
এখন শুধু একটাই সমস্যা । হিসাববিজ্ঞান । হিসাব নিকাশে ও ভালই কিন্তু মাঝে মাঝে প্রশ্নের সাথে বিতর্কে গিয়ে পরিক্ষার নম্বর হারায় । স্কুলে মডেল টেস্টে প্রশ্ন এসেছিল, ” সব লেনদেনই একটা ঘটনা কিন্তু সব ঘটনা লেনদেন নয়, বুঝিয়ে লেখও ।” প্রশ্নের উত্তরে ও লিখেছিল, স্যার হয়তো প্রশ্নে ভুল আছে । সব লেনদেনই একটা ঘটনা আর সব দুর্ঘটনাই একটা লেনদেন । দুর্ঘটনা হলে তো ডাক্তার ফার্মেসি এদের কাছ থেকে লেনদেনের কিছু ব্যাপার আছে । আবার লেনদেনের ক্ষেত্রে যার লোকসান হয় তার জন্য এই লেনদেন একটা দুর্ঘটনা ।’
অর্থাৎ ওর মনে যা আসে তাই ও লিখেছে । চার মার্কের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষক মহাশয় সুন্দর করে দুইটা শূন্য এঁকে দিয়েছেন । প্রায়ই ওর বাবাকে স্কুলে ডেকে এনে সন্তানের অবনতির কথা জানানো হয় । ওর বাবা তেমন কিছু না বললেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলে । মা হারা ছেলেটা মায়ের শোকে সত্যিই বেশ এলোমেলো হয়ে গিয়েছে । বিকেলে খেলতে গিয়ে হাতের বৃদ্ধ আঙুলে ব্যথা পেয়েছে । ফুলে উঠেছে কিছুটা । রাতে খেতে বসে দেখলো ঠিকমতো হাত দিয়ে খাবার তুলতে পারছে না । ওর বাবা বলল,
– এখনও বাচ্চাদের মত খেলতে যাওয়া লাগে ।
– আহা থাক না, কিছু হবে না । আঙুল ঠিক হয়ে যাবে । এদিকে আয় বাবা আমি খাইয়ে দিচ্ছি । (সজলের মা)
সজল কিছু না বলেই প্লেট টা ওর মায়ের দিকে এগিয়ে দিলো । এই প্রথম ওর নতুন মায়ের হাতে কিচ্ছু খাচ্ছে । জলে ওর চোখ ছলছল করছে । ওর নিজের মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে । ইচ্ছের বিরুদ্ধেই চোখ থেকে জল পড়ে গেল । ততক্ষণে ওর বাবা খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠেছে । ওর মা চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
– আমি জানি বাবা তোমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে । তোমার বাবা তো বেশিক্ষণ তোমাকে সময় দিতে পারেনা । তুমি চাইলে আমাকে তোমার ভাল বন্ধু ভাবতে পারো । তোমার সব সমস্যার কথা শেয়ার করতে পারো । দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে । সব একদিন আগের মত হয়ে যাবে । তুমি একটু চেষ্টা করে দেখো, তুমিও পারবে । সজল নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে আর খাচ্ছে । সামনেই টেস্ট পরীক্ষা এবার একটু ভাল করতেই হবে । একটু না অনেক ভাল করতে হবে ।
রাত প্রায় ১২টা বেজে গেছে । সজলের রুমের বাতি এখনও জ্বলছে । দরজার কাছে থেকে ওর বাবা উকি দিয়ে দেখলো টেবিলের সামনে বসে সজল লিখছে । সাধারণত ও কখনো এত রাত অবধি বইয়ের সামনে থাকে না । ওকে আর বিরক্ত না করে ওর বাবা চলে আসলেন । ছেলেটা চেষ্টা করছে এটা ভেবেই ওর বাবা সন্তুষ্ট ।
টেস্ট পরিক্ষাও শেষ হলো, দুই বিষয়ে রেজাল্ট খারাপ । গণিত আর হিসাববিজ্ঞান । ওর বাবা প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছে । স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ওকে দিয়ে আর হবে না । ওর পরিক্ষা না দেওয়াই ভাল । এরকম আরও নানান রকমের কথা শুনতে হলো ওর বাবাকে । তবুও একবার শেষ চেষ্টা করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হলো । অনেক অনুনয়ের পরে শিক্ষক মহোদয় সজলকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলল ।
সজল খুব জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । ওর নতুন মা ও ওকে বেশ সহযোগিতা করছে । রাতে সজলের বাবা বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে বারোটা । বাসায় ঢুকেই দেখে সজলের রুমে এখনো বাতি জ্বালানো ।
– সজল এখনও ঘুমায়নি ?
– না, পড়ছে ।
– রাত তো অনেক হয়েছে । যাই ওর সাথে একটু কথা বলে আসি । সজলের রুমে ঢুকেই ওর বাবা বলল,
– কিরে এখনও পড়ছিস ?
– হ্যাঁ বাবা ।
– খেয়েছিস তোরা রাতে ?
– আমি খেয়েছি । উনি খায়নি ।
– উনি মানে ?
– সে খায়নি ।
– দেখ বাবা উনি যদিও তোর জন্মদাত্রী মা না । তবুও…
তোর জন্য কত ভাবে ? তুই বাসায় না আসলে সেও খায় না । তোকে সবসময় সাপোর্ট করে । তুই অন্তত মায়ের মর্যাদা টা তো দিতে পারিস । অন্তত মা বলে ডাকলে ক্ষতি কি হবে ! সজল কিছু বলছে না । ওর নতুন মা এসেছে প্রায় বছরখানেক পেরিয়ে গেল । আজ পর্যন্ত একবারও তাকে মা বলে ডাকেনি । তবুও ক্রমাগত দিন যাচ্ছে । দিনে দিনে ও হচ্ছে বড় আর ওর মা টা হচ্ছে ছোট ।
পরীক্ষার সময়ও এসে গেল । প্রস্তুতি বেশ ভাল, দিন রাত এক করে পড়াশোনা করলো, পরীক্ষাও দিলো । প্রত্যেক পরীক্ষার দিনই ওর মা ওর সাথে গিয়েছে । পরীক্ষাও বেশ ভালোয় শেষ হলো । এবার শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা । এখনো ও আনমনে বসে থাকে বাসার ছাদের এক কোণে । আকাশ দেখে, পাখি দেখে, মানুষ দেখে । সব কিছুই চলমান, মনে হচ্ছে যেন শুধু ওর নিজের জীবনই থমকে আছে । জীবন থেকে মা হারালো, দু-তিনটে বছর হারালো, আর এসব কিছু হারিয়ে ও নিজেও যেন হারিয়ে গেছে দূরে কোথাও ।
আজ বেলা ১২টায় রেজাল্ট দিবে । ১১টার আগেই স্কুলে এসে বসে আছে । সঙ্গে ওর মা ও এসেছে । দুজন বসে আছে সেই শেষ বেঞ্চটাতে । আজও উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে জানালার বাহিরে । সবাই একে অন্যের সাথে কথা বলছে, কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত আর ও চুপটি করে আছে । ওর মা জিজ্ঞেস করলো,
– চিন্তা হচ্ছে ?
– না ।
– যা হবার তা হবেই, তুমি চিন্তা করোনা । একটু বাদেই পিয়নকে দেখে ক্লাস ক্যাপ্টেন জিজ্ঞেস করলো,
– রেজাল্ট কখন দিবে ? ১২টা তো পেরোলো । সে জানালো রেজাল্ট দিতে আরও ঘন্টাখানেক দেরি হবে । সজলের মা ওকে বলল,
– রেজাল্ট দিতে যখন আরও ঘন্টাখানেক লাগবে আমি বরং গিয়ে রান্না করে ফেলি । নাকি থাকবো ?
– না, থাকা লাগবে না ।
– তুমি ভয় পেও না, সব ভালই হবে ।
– আচ্ছা ।
সজলের মা চলে যাচ্ছে, আর ও এখনো উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে জানালার বাহিরে । মাঝে মাঝে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । ঘড়ির কাটা যেন থমকে আছে, সামনে যেতে চাচ্ছে না । প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পরে পিয়ন এসে নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট শিট টানিয়ে দিলো । সবাই হুরহুর করে দৌড়ে গেল, ভীড় জমে গেছে । কেউ মুখে হাসি নিয়ে ফিরছে সেখান থেকে, আর কেউ বিষন্ন মনে ফিরছে । সজল এখনো শেষ বেঞ্চটাতেই বসে আছে । দু’একজন ক্লাসে এসে আলাপ করছে সেখান থেকেই শুনতে পেল । ৭৩ জন ছাত্রের ১৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে । আর ২ জনের রেজাল্ট খারাপ । ফেইল করেছে । সজল ভাবছে এই দু’জনের মধ্যেই হয়তো ওর নামটা আছে । নোটিশ বোর্ডের কাছ থেকে ভীড় কমলে সজল সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় ।
খুজতে খুজতে শেষ লাইনের মধ্যেই ওর রোল নাম্বারটা দেখতে পেল । পাশেই জিপিএ দেয়া ৩.০৯ । নিজের অজান্তেই চোখে জল এসে গেল । কেউ ভাল রেজাল্ট করেও কাঁদছে আরেকটু ভালর জন্য । আর কেউ মোটামুটি রেজাল্ট করেও কাঁদছে । এটা হয়তো আনন্দঅশ্রু । হ্যাঁ আনন্দঅস্রুই । সেখানে আর এক মুহুর্তও নয়, দৌড়ে বাসায় চলে আসে ও । ওর আম্মু গোসলে গেছে হয়তো । অনেকবার কলিং বেল বাজানোর পরেও দরজা খুলছে না । ওর যেন আর তর সইছে না । ইচ্ছে হচ্ছে দরজাটা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে । দরজা খুলতেই ও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে । অতি উল্লাসে বলছে,
– মা, আমি পাশ করেছি । আমি উত্তীর্ণ হয়েছি ।
ওর মা কিছুই বলছে না । মুখে হাসি আর চোখ দিয়ে অঝোরে জল বেরোচ্ছে । ছেলে পাশ করেছে এজন্য খুশিতে মুখে হাসি ফুটেছে আর এই প্রথমবারের মত তাকে মা বলে ডেকেছে তাই হয়ত কাঁদছে । ছোট্ট সন্তানের মুখে যখন বুলি ফুটে, দু’একটা কথা আধো আধো বলতে শিখে তখন সে মা বলে ডাকলে মায়ের যেমন অনুভূতি হয়, সজলের মায়েরও তেমনই অনুভূতি হচ্ছে । আর তাই হয়তো সে কাঁদছে । হয়তো এটাই আনন্দঅশ্রু । হ্যাঁ আনন্দঅশ্রুই ।