প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

শশুর আব্বার ডায়াবেটিকস ধরা পড়েছে,আর এই খবর শোনা মাত্রই তিনি ছোটখাটো হার্ট এট্যাক করেছেন!একটা মানুষের হার্ট কতটা দুর্বল হলে এমন সাধারণ খবরেও কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে চায়, সেটা আর নাই বললাম!তবে হার্টের এ অবস্থার জন্য ক্রেডিট টা আমার শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি আম্মাজানকেই দিতে হচ্ছে!ওনার সুমধুর কন্ঠস্বরের কাছে ছোটখাটো হ্যান্ডমাইক ফেইল!এমন কন্ঠ দিয়ে যখনতখন শশুরাব্বাকে ধমক মারেন আর সাথে সাথে শশুর আব্বার হার্ট “নো ডিস্ক””দেখায়!তবে এবারের খবরটা শশুর আব্বাকে একটু বেশিই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল মনে হয়!

আমার একমাত্র স্ত্রী নিশিতা বেগমকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারলাম না !”” কোম্পানি টা আমার বাবার নামে দলিল করা না যে, সে যখনই ফোন করবে আমি তার সামনে হাজির হতে পারবো !প্রথম বার ফোন করেই কান্নাকাটি করতে করতে বলল “”শুনছো,আব্বার ডায়াবেটিকস হয়েছে,আর এই কথা শোনার পর হার্ট এট্যাকও করেছে,আমি হাসপাতালে যাচ্ছি!তুমিও তারাতারি চলে এসে প্লিজ””!আমি খানিকটা ভড়কে গিয়ে বললাম, “আচ্ছা তুমি যাও,আমি দেখি ছুটির ব্যবস্থা করা যায় কি না…?খাটাশ বসকে বলার পর তিনি মুখটাকে ৩৬০° বাকিয়ে বললেন”কালকের ফাইলটা রেডি করেছেন..?আমি একটু কাছুমাছু করে বললাম”” জ্বী স্যার, মানে স্যার আর ঘণ্টা খানেকের মত লাগবে..!”””তো দাড়িয়ে না থেকে যান ওইটা শেষ করেন,পরে আসবেন””!ইচ্ছা করছিল ঠাসস করে দুই গালে গুনে গুনে দুইটা লাগিয়ে দেই!কিন্তু দিলাম না,চাকরি হারানোর সুপ্ত ভয়টা হঠাৎ জাগ্রত হয়েছিল বলে!আর এদিকে নিশিতা বেগম বাসা থেকে হাসপাতালে পৌছার আগেই আরো পনের খানা কল প্রদান করলো!সবশেষ ফোন সাইলেন্ট করে কোনো রকমে রক্ষা!

ঘন্টাখানেক পরে কি মনে করে ফোনের দিকে সুনজর দিলাম!সাথে সাথে হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো,একশত তেত্রিশ টা কলের সাথে বেশ কয়েকটা হুমকি-ধামকির মেসেজও আছে!চাকরির মায়া ত্যাগ করে অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম!ঘর ঠিক তো সব ঠিক!একমাত্র শশুরকে হাসপাতালে দেখতে যাবো আর খালি হাতে গেলে কেমন দেখায় না..?তাই কিছু ফলমূল নিতে ফলের দোকানে ঢুকে চকচকে আপেল কমলা গুলো উলটপালট করছি হঠাৎ মাথায় প্রতিশোধ নেওয়ার ভুত চেপে গেল!নিশিতাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার পনের দিন পর আমার শাশুড়ি আম্মা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের মেনে নিলেও এই খাটাশ হারামি শশুর টা মেনে নিচ্ছিল না!শাশুড়ির সামনে হৈ হৈ করলেও আড়ালে যখনই আমাকে একা পেতো নাক ছিটকাতো!যেন আমি রাস্তার ফকির হয়ে তার কাছে দুইটাকা ভিক্ষা চাইছি আর সে নিজেকে লাখপতি মনে করে অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে!সে যাইহোক, তবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এর চেয়ে মুক্ষম সুযোগ আর নেই!

ফলের দোকান থেকে বের হয়ে সোজা মিস্টির দোকানে প্রবেশ করলাম!বেশ কয়েকজাতের মিস্টি নিয়ে হেলেদুলে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম!ভয়ে ভয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করলাম,আমাকে দেখে নিশিতা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসছিল!প্রথমে ভাবলাম মারতে আসছে না তো..?ঊল্টো দিকে দৌড় দিতে চেয়েও কি মনে করে দিলাম না!কাছে এসে হাতের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল,চোখদুটি ছানাবড়া হয়ে আছে!মুহুর্তে শান্তির দেবী অগ্নিদেবীতে রুপ নিল!হুংকার দিয়ে ওঠলো””এগুলো কি?আমি বত্রিশ পাটি মেলে দিয়ে বললাম,”কেন দেখছো না??এগুলো যে মিস্টি..!চোখদুটি আগুনের গোলার মত লাল করে বললো “মিস্টি দিয়ে কি হবে..?তুমি শোন নাই আব্বার ডায়াবেটিকস ?আমি হাবলার মত আরেকটা হাসি দিয়ে বললাম””এগুলো টাকার কিনা মিস্টি,এগুলো খেলে কিছুই হবে না!!সে রাগের মাত্রা দিগুন করে বললো “”তোমার কি মনে হয় তুমি ছাড়া সবাই ভিখারি! ভিক্ষা করে মিস্টি খায়!এজন্য আমাদের মিস্টি খেলে সমস্যা হবে আর তোমার টা খেলে কিছুই হবে না..?আমি কিছু না বলেই নিশিতাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলাম!

শশুর মশাই কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন!আমি চুপচাপ তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম!শাশুড়ি আম্মার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না!রাগে অগ্নিমুর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে!না পারছেন কিছু বলতে না পারছেন দাড়িয়ে থাকতে, মনে হচ্ছে “জামাই হলো চৌদ্দ গুষ্ঠির ঠাকুর “এ কথাটি ঠিক ভাবেই মনে রেখেছেন! শশুর আব্বা বার বার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর ঠোট কামড়াচ্ছে!মিস্টি দেখলে ডায়াবেটিকস রোগিরা বাচ্চা পোলাপান হয়ে যায়,এতো দিন শুধু শুনে এসেছি!আজ নিজ চোখে দেখলাম!শশুর আব্বা আস্তে করে ডাকলেন,কানাকানি করে কিছু একটা বলবেন বলে!আমি কান বাড়িয়ে দিয়ে বললাম বলুন,তিনি আস্তে করে বললেন ” চুপি চুপি একটা মিস্টি এই হাতে দাও,যেন তোমার শাশুড়ি না দেখে!আমি কান সরিয়ে বললাম””কিহহ!কি এমন কথা যে শাশুড়ি আম্মা থাকলে আপনি বলতে পারবেন না!যা বলার আম্মার সামনেই বলুন,আমি আম্মাকে বাইরে যেতে বলতে পারবো না””!আমার কথা শুনে শশুর আব্বার মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল!আর আম্মাজান হন হন করে বেড়িয়ে গেল!

এটা কি করলে জামাই? আরে ধ্যাত,মিস্টি তো আপনার জন্যই এনেছি,তো লুকিয়ে লুকিয়ে খাবেন কেন..?তাই বুদ্ধি করে ওনাকে বাইরে পাঠালাম! আমার কথা শুনে শশুর আব্বা খুশিতে গদগদ হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন,আর আমি প্যাকেট থেকে একটা মিস্টি বের করে ওনার হাতে দেয়া মাত্রই নিশিতা হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো!এসেই জিজ্ঞেস করলো” কি হয়েছে এখানে? ক ক কই? আম্মা রাগ করে বাসায় চলে গেলেন কেন?

এই কথা শোনার পর শশুর আব্বার হাতে লুকানো মিস্টি খানা টপ করে ফ্লোরে পড়ে গেল!আর সেটা দেখে নিশিতা রাগ করে হাতের ভ্যানিটিব্যাগ টা আমার দিকে ছুড়ে মেরে সেও চলে গেল!ঝামেলা ভালো মতই বেধেছে দেখে আমিও কেটে পড়ার ধান্দায় ধীরে ধীরে পা বাড়ালাম!পিছন থেকে করুন সুরে আব্বাজান ডাক দিলেন””বাবা, আমার সাথে এমন টা করলা ক্যন? কি করলাম..?আব্বাজান! আমি একটা বুড়া মানুষ আমারে সবার শত্রু বানাইয়া দিলা?

সত্যিই একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে মনে হয়!বাড়ি ফিরার পর ওই দজ্জাল শাশুড়ি শশুড় আব্বাকে নিশ্চয় আলুভর্তা বানিয়ে ফেলবে!তাই আমাকেই কিছু একটা করতে হবে! কিন্তু হাসপাতাল বিল কে দিবে? কিপ্টা আব্বাজান তাহার মানিব্যাগ বের করে দিলেন,”এখানে যা আছে হয়ে যাবে হয়তো “”!আমি খুশি মনে যাবতীয় খরচ দিয়ে দিলাম!শেষ মুহুর্তে একজন নার্স প্রেসার টেসার চেক করতে আসলো!নার্সের চেহারাটা সেই ছিল!

দশ মিনিট ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি!কেউ দরজা খুলছে না!প্রথমবার বেল বাজানোর পর শাশুড়ি আম্মা এসে দরজা খুললেন!দরজা খুলেই শশুর আব্বার নাদুসনুদুস চেহারাখানা দেখে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিল!লজ্জায় ঢুলতে থাকা শশুর আব্বা টেনে হিচড়ে আমাকে সামনে পাঠিয়ে তিনি আমার পিছনে জায়গা করে নিলেন!তারপর আমাকে বেল বাজাতে বললেন!প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভালোভাবেই ফেসে গেছি!এখন তো এ টুকু করতেই হবে!পরবর্তী আরো পাচ মিনিট বেল বাজানোর পর নিশিতা এসে দরজা খুললো! এবার আমার প্রাণহীন মুখখানা তার পছন্দ হয় নি!মুখের উপর ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিল!

আমিও লজ্জায় মাথা নিচু করে শশুরের পিছনে যেতে চাইলাম!হারামিটা আমাকে সামনে আটকে রেখেই এক সাথে অনেকগুলা চাপ দিতে গিয়ে কলিংবেলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন!সুইচ ভেঙে ভিতরে আটকে গেছে,আর ভিতরে শব্দের সুনামি শুরু হয়ে গেছে!ঠাস করে দরজা খুলে গেল আমি উরাধুরা দৌড় দিতে প্রস্তুত কিন্তু শশুর আব্বা আমাকে ঝাপটে ধরে আছে!মনে মনে হাজার খানেক গালি দিলাম,তবুও ছাড়ছে না!এদিকে দরজা খুলে শাশুড়ি আম্মা আমাকে দেখে কিছু না বলে ভিতরে আসতে বললেন!পিছন থেকে শশুর আব্বা ঝাপটে ধরে আছে!এসব দেখে শাশুড়ি আম্মা আমার কলার ধরে জোরে টান দিলেন আর তাল হারিয়ে জামাই শশুর হুরমুড়িয়ে ঘরে ঢুকে গেলাম!যাক বাবা এ যাত্রায় ঘরে ঢুকে গেছি,যা হওয়ার হোক পরের টা পরে দেখা যাবে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত