ধোকা

ধোকা

মেয়েটির নাম সামিরা।সে সবে মাত্র H.S.C. পাশ করল।এর মধ্যে তার বাবা মা উঠে পরে লেগেছে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য।পাত্র খুঁজতে খুঁজতে একসময় পেয়েও যায়। ছেলের নাম খালেদ মাহমুদ।সে একজন প্রবাসী। এক সপ্তাহ পর তাদের বিয়ে। দেখতে দেখতে তাদের সে কাঙ্কিত দিন এসে গেল। হুম আজকে তাদের বাসর রাত।কেউ কাউকে ভালোমতো চেনার,জানার এবং বুঝার মতো সময় পায়নি। সামিরা খাটের ওপর লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।চিন্তা করছে খালেদ কখন আসবে। হঠ্যাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনে সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল।তারপর খালেদকে সালাম করল। সামিরা ভেবেছিল সালাম করার আগে খালেদ তার হাত ধরে বলবে,তোমার স্থান ওখানে নয় আজ থেকে আমার বুকে।কিন্তু না এটাতো আর সিনেমা বা নাটক নয় যে এমন হবে।সালাম করে সামিরা খাটে গিয়ে বসল।

তারপর খালেদ গিয়ে তার পাশে বসে হাতটি ধরল। তুমি আগে ঘরের মেয়ে ছিলে যা মন চেয়েছে তাই করেছ।কিন্তু আজ থেকে তুমি এই বাড়ীর বউ।এই বাড়ীতে তোমাকে প্রতিটা পদে পদে ভেবে চিন্তে চলতে হবে।তুমি এমন কোনো কাজ করবে না যেন আমার বাবা মা কষ্ট পায়।তুমি আমার বাবা মার মনে কখনো কষ্ট দিবে না।তাদের মুখের উপর কখনো কথা বলবে না।তারা যা যা বলে তা তা মেনে চলবে এবং সেভাবে চলার চেষ্টা করবে।আমি চায় না উনারা কখনো তোমার নামে আমাকে কোনো কমপ্লেন করুক। সামিরা মাথা নেড়ে নেড়ে সাড়া দিচ্ছে।

খালেদ আবার বলতে লাগল আমি আমার সর্বোচ্ছ দিয়ে চেষ্টা করব তোমাকে ভালো রাখতে,সুখে রাখতে।তারপর সামিরার কপালে একটা আদর দিল। পরেরদিন খুব ভোরে সামিরা উঠে নামাজ পড়ে রান্না ঘরে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানাল।সামিরা আগে কখনো এত ভোরে ঘুম থেকে উঠতো না রান্নাতো দূরের কথা। কিন্তু এটা শ্বশুরবাড়ি সামিরা খুব ভালো করে জানে এগুলো তাকে করতে হবে। এ অল্প কয়েকদিনে সামিরা বাড়ির সবার মন জয় করে নিল।সবাই তাকে খুব পছন্দ করে ভালোবাসে।

সামিরার চকলেট,আইসক্রীম ও চিপস অনেক প্রিয় ছিল।তাই খালেদ প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় একটা না একটা কিছু হাতে করে নিয়ে আসতো সামিরার জন্য।এ কয়েকদিনে দু’জন দু’জনকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।খালিদ এ কয় দিনে বুঝে গেছে সামিরা খুব অভিমানী ও একটু পাগলি টাইপের একটা মেয়ে।ও মুখ ফুটে কিছু বলবে না সবকিছু নিজ থেকে বুঝে নিতে হবে।

একদিন সব্বাই মিলে মামার বাসায় বেড়াতে যাবে। সামিরা খালেদকে আগে থকে বলে দিয়েছে সে যাবে না তার ভালো লাগছে না। খালেদ ভেবেছিল দুষ্টামি করেছে।সবাই রেডি হল। খালেদ বাইরে থেকে এসে তার বোনকে জিঙ্গাসা করল তুর ভাবি রেডি হয়ছে? ভাবি যাবে না। আপনি নাকি জানেন,আপনাকে বলেছে। খালেদ রুমে এসে দেখে সামিরা শুয়ে আছে।সামিরা উঠে ঝটপট রেডি হয়ে নাও। আমিতো আপনাকে বলেছি আমি যাবো না। খালেদ প্রচন্ড রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে তোমাকে আমি রেডি হতে বলছি।

সামিরা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।তাই আর কোনো কথা না বলে একটা থ্রিপিস বের করে। খালেদ তা দেখে আলমারি থেকে একটা নীল শাড়ি বের করে আর বলে নীল শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে একবারে নীলপরীর মত।এটা পড়বে আর হালকা সাজ করবে।হালকা সাজে তোমাকে দারুণ লাগে।

সামিরা কিছুটা অভিমান নিয়ে অনিচ্ছা স্বত্তেও শাড়িটা পড়ল আর হালকা সাজও করল।খালিদ এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে।খালেদ কাছে গিয়ে সামিরার কপালে আদর দিয়ে বলে আমার পাগলীটাকে ঠিক নীল পরীর মতো লাগছে। সামিরা অভিমান নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে খালেদ তার হাত ধরে টেনে বুকে নিয়ে আসে।সামিরা মুখটা ভার করে বলে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে চলেন যাই। মামার বাড়ি আসার পর সামিরা খালেদ এর সাথে একটুও কথা বলেনি।খালেদ জানে পাগলিটা রাগ করেছে বাসায় গিয়ে অভিমান ভাঙ্গাতে হবে।

খাওয়া শেষ হল।যে না আসার জন্য সবাই রেডি হচ্ছে এই বাড়ির লোকজন তাদের আর আসতে দিচ্ছে না।এখন সামিরার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে ও কান্না করে দিবে এমন অবস্থা।সব রাগ তার খালেদের উপর।
খালেদ বুঝতে পারছে তার উপর পাগলিটা ক্ষেপে আছে। সে অনেক চেষ্টা করল সব্বাইকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু মামা মামির জোড়াজুড়িতে আর আনতে পারল না। তাকে একাই বাসায় ফিরতে হল।

এদিকে সামিরার কিছু ভালো লাগছে না।দুপুরেও বমি করছে।এখন আবার শুরু হয়েছে।খালিদকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু সামিরা বলতে না করছে। খালিদ সামিরার মোবাইলে একটার পর একটা কল দিয়ে যাচ্ছে সামিরার কল রিসিভ করার নামই নাই। উপায় না পেয়ে বোনকে কল দিয়ে সামিরাকে দিতে বলে।সামিরা বলতে বলে আমি ঘুম। খালিদ জানে সামিরা রাগ করে ওর সাথে কথা বলছে না।পাগলি একবার বাসায় আসুক মজা দেখাবো। সকালে সামিরার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।খালেদকে কল করে জানানো হয়।খালেদ ছুটে এসে সামিরা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।ডাক্তার দেখে বলল সব ঠিক আছে আমি একটা টেস্ট দিচ্ছি এটা করে বাসায় নিয়ে যান।

সামিরা বাসায় ফিরে কাপড় চেন্জ করে সে যে রান্না ঘরে ডুকছে আর রুমে আসার নাম নাই।এদিকে খালেদ তার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে আছে। দুপুরে খেয়ে খালিদ অপেক্ষা করছে কখন সামিরা আসবে কিন্তু সামিরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ননদ এর রুমে বসে বসে গল্প করছে। খালিদ উঁকি দিয়ে দেখল কিন্তু ডাকে নাই কারণ খালিদ ভালো করেই জানে ডাকলেও কাজ হবে না।আর মনে মনে বলে রাতে আসুক পাগলি তারপর বুঝাবো খালিদ কি জিনিস।

খালিদ নাস্তা করে বের হয় সেই রাতে ফিরল।রাতে খাবার খেয়ে সামিরা এক পাশ হয়ে শুয়ে পড়ল।খালিদও শুয়ে পরল কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না। খালিদ সামিরাকে দুই চার বার ডেকে দেখল কোনো সাড়া শব্দ নাই।খালিদ জানে সামিরা জেগে আছে সে সামিরার কাছে এসে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে ঘাড়ে একটা আদর দিল।সাথে সাথে সামিরা বলল প্লীজ আমি ঘুমাবো আমাকে ঘুমাতে দাও।খালিদ এর খুব অভিমান হলো।

সকাল থেকে খালিদ সামিরার সাথে কোনো কথা বলছে না।সামিরাও মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ইগোর জন্য কিছু বলতে পারছে না।সকাল,দুপুর গড়িয়ে বিকাল হচ্ছে এখনোও খালিদ একটা কথাও বলে নাই। সামিরাও বলে দেখি না কতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলে পারে? সন্ধ্যায় খালিদ টেস্ট গুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই।ডাক্তার বলল আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন। সে খুশিতে বাসায় এসে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল আজকে আমি অনেক খুশি।তুমি আজকে আমার কাছে যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিব।বল কি চাও?

সামিরা মিষ্টি হেসে বলে আমার কিছু লাগবে না। শুধু সারা জীবন আমার পাশে থাকবে আর আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসলে হবে। এর মধ্যে আম্মা এসে বলে গেল আমার কিন্তু নাতি চায়। রাতে সামিরা খালেদের বুকে শুয়ে আছে। এই শুনছ! হুম বলো শুনছি। জানো আমার না ভয় করছে খুব। কেন? তখন আম্মা কি বলল শুনলে না।আমাদের যদি মেয়ে হয়? আরে কিছু হবে না।ছেলে হোক মেয়ে হোক একটা হলেই হলো।তুমি এত টেনশন করো নাতো আমাদের সন্তানের সমস্যা হবে।এখন লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমাও।আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।

একদিন খালিদ বাইরে থেকে এসে দেখে সামিরা রান্না ঘরে তখন সে চুপি চুপি রান্না ঘরে গিয়ে সামিরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। এই ছারেন বলছি,কি করছেন? রোমান্স ও তাই। জ্বী তাই সোনা। আমার হাতে এটা কি দেখছেন? হুম,খুন্তি। এটা আমি এখন আপনার হাতে লাগিয়ে দিব আপনার রোমান্স বের করব। এই না, এটা বলে খালিদ ছেড়ে দিল। এভাবে তাদের মান অভিমান ভালোবাসার খুনসুটি নিয়ে দিন গুলো কাটতে লাগল। আজকে সকাল থেকে সামিরার মনটা খুব খারাপ।কারণ খালেদ আজকে বিদেশে পাড়ি জমাবে।

সামিরা কান্না করছে খালেদ বলল আরে পাগলি কান্নার কি আছে মাত্র দুই বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে।তারপর কপালে একটা আদর দিল। এভাবে অনেক দিন কেটে গেল।সামিরার একটা মেয়ে হল।খালেদ খুশি হলেও তার মা খুশি হয়নি। এখন খালেদের মা কারণে অকারণে সামিরাকে বকা ঝকা করতে লাগল।সামিরা সব মুখ বুঝে সহ্য করে নিচ্ছে। একটা সময় গায়ে হাত পর্যন্ত তুলা শুরু করল। একদিন প্রচুর ঝগড়া লাগে সামিরা আর চুপ করে থাকল না।সে ও তর্ক করতে লাগল।

খালেদের মা খালেদকে আগেও অনেক কিছু বলত সামিরার নামে ইনিয়ে বিনিয়ে। আজকের ঘটনাটা এমন ভাবে বলল খালেদ কি করবে না করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। সামিরা বাবার বাড়ি চলে যায়।খালেদ সামিরাকে বলে আমি না আসা পযর্ন্ত তুমি তোমার বাবার বাড়িতে থাক।আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব। খালেদ প্রতিদিন সামিরার সাথে কথা বলছে।খরচের টাকা দিচ্ছে।মেয়েটাও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখন মেয়েটাও একটু একটু কথা বলতে পারে। এভাবে অনেকদিন কেটে গেল।আজকে খালেদ দেশে আসছে। দেশে আসার দুই দিন পর সে সামিরার সাথে দেখা করতে যায়।সামিরাতো মহা খুশি।

খাওয়া শেষে বলল।আমি আজকে সাথে করে মেয়েটাকে নিয়ে যায়।দেখবে ওকে দেখলে মা আর রাগ করে থাকতে পারবে না কাল এসে আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাব। সামিরা অপেক্ষা করছে খালেদ কখন আসবে।মেয়েটার জন্য তার মনটা কেমন জানি করছে।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো খালেদের আসার নাম নেই।সামিরা অনবরত কল করতে লাগল কিন্তু সুইস অফ। পরদিন সকালে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসল।

সামিরা রিসিভ করতেই আপনি কোথায়,আমার মেয়ে কোথায়? আমি বিদেশে চলে আসছি মেয়ে আমার কাছে আছে ও ভালো আছে।আর আমি বিয়ে করেছি। তোমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো তুমি সাইন করে দিও। সামিরা অঝরে কাঁদতে লাগল।আর বলল খালেদ তুমি পারলে আমাকে ধোঁকা দিতে। কেন আমাকে ধোঁকা দিলে কেন? কেন? কেন?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত