অপারেশন নাম্বার সিক্সটিন

অপারেশন নাম্বার সিক্সটিন

রাত ২টা ১৫। হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে লিফট চাইছে তিশা। কিন্তুু একটা গাড়িও থামছে না। একটু দূরেই নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে তিশার স্কুটি টা ।

ধ্যাত স্কুটি নষ্ট হওয়ার আর সময় পেল না। বাসায় মাকে বলে এসেছে তাড়াতাড়ি ফিরবে। অথচো এখনো হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে আছি। বিড়বিড় করলো তিশা.. অনেক রাত হয়ে গেছে। তিশা উপায় না দেখে, গায়ের ওড়না এক হাতে ধরে অন্য হাতে গলায় ঝুলে থাকা বড় করে প্রেস লিখা কার্ডটি উঁচিয়ে ধরে লিফট চাইছে। বিধি বাম,একটা গাড়িও থামছে না।

তিশা বিরক্ত হয়ে বললো,,ধ্যাত আজকাল মানুষ আইডি কার্ডকেও বিশ্বাস করে না। আর আমার প্রাক্তন এসে বলে আরেকটা সুযোগ দেও আর ভুল হবে না। শালা আবার ভোগ করতে চায়। আমি বুজি না এগুলো?? মাকে একা বাসায় রেখে এসেছি এজন্য বেশি টেনশন হচ্ছে। তিথি টাও আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আত্মহত্যা ছাড়া কিই বা করার ছিলো ওর জোছনার আলোতে জানোয়ারগুলো ওর মাংসপিণ্ড ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো তিশা। অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।

মধ্যরাতে রাস্তায় গাড়ি কম থাকে এজন্য আসিফের গাড়িটাও ফুল স্পিডে চলছে। হঠাৎ আসিফ তার বন্ধুকে বললো, এই গাড়ি থামা,গাড়ি থামা,পিছেনে একটা মাল দাঁড়িয়ে আছে পিছনে নে তাড়াতাড়ি একজন বললো সত্যি!! আসিফ জবাব দিলো হুম আমি তো তাই দেখলাম। তাড়াতাড়ি গাড়ি পিছনে নে আজকে খেলা হব্বে হঠাৎ করেই তিশার পাশে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো।

– কি চাই?
– স্যার আমার নাম তিশা পেশায় সাংবাদিক। আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, মোবাইলটাও অফ চার্জ শেষ। আমাকে একটু সামনে নামিয়ে দিবেন প্লিজ?
– আসিফ তিশার গলার কার্ড দেখে বললো,আপনি সাংবাদিক?
– জি এই দেখুন আমার কার্ড।
– এত রাতে এখানে কি করছেন? সাথে কেউ নেই।?
– আসলে একটা গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে এত রাতে বের হওয়া। ক্যামেরাম্যান সাথে ছিলো। কাজ শেষ হওয়ার পর সে বাসায় চলে গিয়েছে।

– ও আচ্ছা তাহলে উঠুন।
– আমি কি সামনের সিটে বসতে পারি?
– সরি আমার বন্ধুটি বমি করে এজন্য সামনের সিটে বসতে পারবেন না। আপনি আমার পাশেই আসুন।
– তিশা নিরুপায় অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। এটা ভেবে ওঠে গেল।

গাড়িতে উঠার সাথে সাথে একটা বিশ্রী গন্ধ নাকে আসলো। পিছনে মদের বোতল দেখে তিশা নিশ্চিত হলো এরা সবাই নেশায় মত্ত। তিশা ভীষণ গামছে, ভয়ে হাত পা কাঁপছে ওর।

একটু রাস্তা যাওয়ার পরই আসিফের বন্ধু গাড়ির দরজা লক করে দিলো। হাই ভলিউমো মিউজিক ছাড়লো। সাথে সাথেই আসিফ তিশার গায়ে হাত দিয়ে বললো, বেবি তুমি তো সাংবাদিক আজকে আমাদের ইন্টারভিউ টাও নেও প্লিজ। আমরাও ভালো মাসাজ করতে পারি, বলেই তিশার শরীরে তিজনই হাত দিয়ে স্পর্শ করতে লাগলো।তিশা চিৎকার করে বললো, ছেড়ে দেও আমায় প্লিজ।

গাড়ি চলছেই তিশা ভাবছে আজকেই হয়তো শেষ রাত হবে। খুব কান্না পাচ্ছিলো তার। উপায় না দেখে বললো, আচ্ছা তোমরা তো আমায় ভোগ করতে চাও তাহলে চলো ওই যে সামনের দোকানটার পিছনের খালি জায়গায় তারপর যা ইচ্ছে করো আমার সাথে। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্লিজ। আসিফ বললো, আরে মাল’টা তো হেব্বি এক্সপার্ট। এই চল সবাই…..

– কি রে তিশা তুই এত ঘামছিস কেনো? ভয় পেয়েছিস নাকি?
– হুম আজকে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। প্রথমবার চারটা জানোয়ারের সাথে আসলাম তো। কেনো জানি একটু বেশি ভয় করছিলো। ঠিক সময়ে গোদামের পাশেই আসতে পেরেছি এতেই শান্তি লাগছে।

– দিপা বললো, আমাদের আর কিইবা বাকী আছে? শরীর মন সবকিছুই তো বিশ্বাঘাতকরা ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন আর ভয় পেয়েই বা কি হবে? মনকে শক্ত কর তিশা। আমাদের এই মিশনে জন্য নিজেকে সাহসী করে তুলতে হবে। নে পানি খা আর বাসায় চলে যা রাতুল তোকে পৌঁছে দিবে।

আসিফ চিৎকার করে বলছে,আমাদের কেনো ধরে এনেছো? কি চাই তোমাদের? কত টাকা লাগবে? প্লিজ ছেড়ে দাও আসিফের এক বন্ধু চিৎকার করে বললো, তোমরা জানো না কাকে ধরে এনেছো। আমি কমিশনারের ছেলে। তোমাদের আমি উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।

তিশা বললো পানি খাবো পরে আগে ছুড়িটা দে। দিপা ছুড়িটা এগিয়ে দিলো তিশার হাতে। ছুড়িটা নিয়ে আসিফের কাছে গিয়েই হাতের আঙ্গুলগুলো কেটে দিলো তিশা। অসহ্য যন্ত্রনায় বিকট চিৎকার শুরু করলো আসিফ। একে একে চারজনের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেললো চারজনই বিকট চিৎকার করছে। রাতুল সবার মুখে কাপড় গুঁজে দিল। তিশা সামনে গিয়ে বললো, নে শালা এখন হাত দে শরীরে। বললি না মাসাজ করে দিবি। দে না এই নে আমার হাত মাসাজ করে দে। বলেই চড় থাপ্পড়, লাথি দেওয়া শুরু করলো।

সাগর বললো, তিশা অনেক হয়েছে, তুই বাড়ি যা তুই আমরা দেখছি এদের। ওদের আজ এমন শিক্ষা দিবো পরজন্মেও কোন মেয়ের গায়ে হাত তো দূর চোখ তুলে থাকাতে সাহস পাবে না। আজকের ব্রেকিং নিউজ,,,এই নিয়ে ষোলতম বার লাশ পাওয়া গেল এনএস গ্রুপের পিছনের নর্দমায়। পুলিশের তথ্যমতে,আজকে একসাথে চারটি লাশ পাওয়া গিয়েছে। চারজনকেই নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুখে এসিড দেওয়ার কারণে উদ্ভট চেহারা হয়েছে যার ফলে কার লাশ তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাছাড়া চারটি লাশেরই গোপন অঙ্গ ও হাতের আঙ্গুলগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। আজকেও লাশের পাশে একটি বড় কাগজ পাওয়া গিয়েছে যেখানে বড় বড় করে লিখা আছে, “হে ধর্ষক সমাজ এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও। নাহলে পরের টার্গেট তুমিই হবে। অপারেশন নাম্বার সিক্সটিন।”

বরাবরের মতই এবারও পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহজনক দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে অতি দ্রুতই আসল খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে গোপন তথ্যসুত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রী হাবিব খানের ছেলে আসিফ খান ও তার তিন বন্ধু কাল রাত থেকে নিখোঁজ। পুলিশ জানিয়েছে মামলাটি সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করা হবে। এদিকে ৫ম বারের মত “বিজয় সংঘের” উদ্দ্যেগে গরীবদের মাঝে বিপুল পরিমাণ শীতবস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য ও নগদ টাকা দান করেন সংঘের সদস্যবৃন্দ। এতে করে সাধারণ মানুষের মুখে ফুটছে বিজয়ের হাসি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত