খুঁজে পাওয়া ডায়েরী

খুঁজে পাওয়া ডায়েরী

—-আজকে কি বাসায় না গেলে হতো না(তৌফিক)
—-কেন আজকে কি হয়েছে?প্রতিদিন বাসায় না যাওয়ার একটা করে বাহানা খুজো।(বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো নিহা)
—-আজ খুব শীত তাই এতো সকালে যেতে ইচ্ছে করছে না তাই বলছিলাম আর কি?(তৌফিক)
—-ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর নিজের শশুড়-শাশুড়ি কি নিয়ে এক সঙ্গে থাকবো,সেইটা আর হলো কই?(নিহা)
—-আচ্ছা হয়েছে এখন চলো।(তৌফিক)

তৌফিক আর নিহা গাড়ি নিয়ে তার তৌফিকের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।তৌফিক পড়াশুনা শেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি করছে।চাকরির কারনে তৌফিক অন্যশহরে নিহাকে নিয়ে থাকে।দুপুর বারটা নাগাদ তৌফিক ওর বাসায় পৌছে গেলো।বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতে তৌফিকের মা দরজা খুলল:

—-এতোদিন পর তোর মা-বাবার কথা মনে পড়লো(মা)
—-এইতো মা অফিসে কাজের চাপ তাই আসতে পারি না(তৌফিক)
—-মা আপনার ছেলেকে অনেকবার আসার কথা বলি কিন্তু নানারকম বাহানায় আসে না(নিহা)
—-জানি মা আমার ছেলে কিরকম,তোমরা ভিতরে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও অনেক দুর থেকে এসেছো তাই শরির ক্লান্ত হয়তো(মা)

বিকেল বেলা তৌফিক বাইরে গেলো।আর নিহা জামা-কাপড় গুছিয়ে আলমারিতে রাখছিলো।কাপড় গুছানোর সময় ও একটা ডায়েরি পেলো।ডায়েরি টা খুলে দেখো প্রথম কয়েকটা পৃষ্ঠায় কিছু লেখা নাই।তারপরের পৃষ্ঠার লেখা গুলো নিহা পড়তে লাগলো:

“তারিখ:৬,ডিসেম্বর,২০১১ প্রথম যেদিন ভোরের কুয়াশা ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটতে দেখেছিলাম সেদিন এক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।আমার এই তাকিয়ে থাকাটা প্রথম লক্ষ্য করতে না।যেদিন ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন সেদিন আমায় অনেক বকেছিলে।এরপর থেকে প্রতিদিন আমি তোমার পিছে কুকুরে মতো ঘুরতাম কিন্তু তুমি আমায় পাত্তা দিতে না অধরা।
একদিন তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম সেদিন তুমি আমি খুব জোরে একটা থাপ্পড় মেরেছিলে।তারপর থেকে কয়েকদিন তোমার পিছে ঘুরতাম না ঠিকই,কিন্তু আড়াল থেকে তোমায় দেখতাম তুমি সবসময় পিছন দিকে তাকিয়ে দেখতে আমি আছি কি না? কিন্তু হঠাৎ করে তোমার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়।আমি তোমাকে না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম তখন আমায় পিছন থেকে ডেকে বলেছিলে:

—-এই ছেলে শোন?(অধরা)
—-হুম বলুন(তৌফিক)
—-এই কয়দিন কইছিলে, জানো তোমায় না দেখে আমি তোমাকে কতটা মিস করছিলাম(অধরা)
—-আমায় মিস করার আপনি কে?(তৌফিক)
—-আমি কে?আমিই তোমার সব।সত্যি বলছি খুব ভালোবাসি তোমায়
(অধরা)

তারপর আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলে।সেদিন নিজেকে সবথেকে পৃথিবীর সুখী মানুষ মনে হয়েছিলো।প্রতিদিন আমরা নদীর তীরে বসে থেকে সুখ দুঃখের কথা বলতাম।একদিন রিকশার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমার পা মচকে গিয়ে ছিলো।সেদিন তুমি আমায় খুব বকেছিলে তারপর আবার জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছিলে।তোমার কান্না দেখে নিজের চোখের পানিও ধরে রাখতে পারি নি। একদিন বিকেলবেলা আমি তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম আর তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলে,সেসময় তোমায় বলেছিলাম:

—-জানো অধরা আমার না খুব ভয় হয়(তৌফিক)
—-কিসের ভয়?(অধরা)
—-যদি কখনো তুমি আমার থেকে হারিয়ে যাও সে ভয়(তৌফিক)
—-আমার এই পাগলকে ছেড়ে কোথায় যাবো?(অধরা)
—-খুব ভালোবাসি তো তাই তোমাকে হারানোর ভয়টা খুব বেশি(তৌফিক)
—-তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো আমি কোথাও যাবো না তোমায় ছেড়ে।(অধরা)
—-আমাদের বিয়ের পর যখন একটা ফুটফুটে রাজকুমারী আসবে তখন সবসময় তার সাথে খেলা করবো।(তৌফিক)

—-রাজকুমারী না রাজকুমার আসবে দেখবে (অধরা)
—-না রাজকুমারী।(অধরা)
—-আমার মনে আমাদের টুইন বেবি হবে রাজকুমার আর রাজকুমারী দুইজনই।(তৌফিক)
—-আল্লাহ যেইটা প্রথম দিবে সেইটায় হবে(অধরা)

কিছুদিন পর থেকে তুমি বদলে যেতে শুরু করলে আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলতে না।তারপর আমায় এসে বললে:

—-তৌফিক আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে(অধরা)
—-এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মানে কি?
আমার তো এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি?(তৌফিক)
—-তোমার পড়ালেখা শেষ হতে এখনো অনেক সময় আর এতোদিন আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।(অধরা)
—-তাহলে আমাদের ভালোবাসার কি হবে,আমরা যে স্বপ্ন দেখেছি এসব কিছু কি নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে?(তৌফিক)

—-এতোদিন যা হয়েছে সব ভুলে যাও আমি তো তোমার সাথে টাইমপাস করেছি,ব্যস এটুকুই।(অধরা)
—-তুমি এটা করতে পারলে আমার সাথে, খুব ভালোবেসে ছিলাম তোমায়।(তৌফিক)
—-এসব ডায়লগ বন্ধ করো আর তোমার মনে তুমি চলতে থাকো,জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না।(অধরা)
—-যাও ভালো থেকো (তৌফিক)

যখন তোমার সাথে শেষ কথা বলে এসেছিলাম সেদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।যা কাউকে বুঝতে দিই নি।ঠিকই বলেছিলে অধরা সময় কারও জন্য থেমে থাকে না আমার পড়ালেখা শেষ করেছি। এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটা ভালো পদে চাকরিও পেয়েছি।আমার বিয়েও হয়ে গেছে।আর যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেই মেয়েটা খুব ভালো জানো।ও হয়তো আমার সাথে সারাজীবন কাটাবে ঠিকই কিন্তু আমি তোমার মতো ওই মেয়েটাকে ভালোবাসতে পারবো না কখনো।

এখন আমার মন খারাপের সময় গুলো নদীর তীরে বসে কাটায়। হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে এসেছিলে আমার জীবনে,জীবনটাকে কষ্টের মাঝে ফেলে দিয়ে চলে গেলে বহুদুরে। ডায়েরিটা পড়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নিহা।মনে মনে ভাবছে এজন্যই হয়তো ও আমাকে খুব একটা ভালোবাসে না।তখন নিহার তৌফিকের কথা মনে হলো।ভাবলো হয়তো নদীর তীরে বসে আছে, সঙ্গে সঙ্গে নিহা নদীর তীড়ে গেলো।গিয়ে দেখলো ওখানে তৌফিক বসে আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে।নিহা গিয়ে তৌফিকের পাশে বসল।তৌফিক নিহাকে খেয়াল করে নি,তাই নিহা বলল:

—-অধরার কথা ভাবছো?(নিহা)
—-(কিছুটা চমকে উঠে)নিহা তুমি অধরার কথা জানলে কি ভাবে?(তৌফিক)
—-আলমারি থেকে পেয়েছি তোমার ডায়েরিটা,আর সেখান থেকেই জানলাম(নিহা)
—-খুব ভালোবাসতাম জানো কিন্তু অধরা আমায় ফেলে চলে গেলো।(তৌফিক)
—-জানি খুব ভালোবাসতে,যে চলে গেছে তাকে যেতে দাও।ওর কথা ভেবে তুমি কেন কষ্ট পাবে?একজনের কারনে আমরা দুটি মানুষ কষ্ট পাচ্ছি।(নিহা)

—-তুমি কষ্ট পাচ্ছো মানে?(তৌফিক)
—-তোমায় খুব ভালোবাসি তৌফিক,কিন্তু তুমি তো আমায় ভালোবাসো না,এটা কি কষ্ট নয়?(নিহা)
—-কখনো আমায় ফেলে চলে যাবে না তো?(তৌফিক)
—-যাবো কিভাবে আমরা তো একি বন্ধনে বাধা পড়ে গেছি তাই না আর এই বন্ধন ছিড়ে একে অপরকে ছাড়া থাকবো কি করে? তৌফিক নিহাকে জড়িয়ে ধরলো।নিহা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
—-অনেক রাত হয়ে গেলো চলো বাসায় যাই মা আবার চিন্তা করবে।(নিহা)
—-হুম চলো।(তৌফিক)

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত