সেই রকম চাপাবাজী

সেই রকম চাপাবাজী

___দেখি এই সাইটে বসো তো, আমি জানালার কাছে বসবো!
___যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন!
___আজব! এতদূর থেকে তোমার সাথে দেখা করতে এলাম, আর তুমি এমন রুঢ় আচরণ করছো?
___আপনি কে? আপনার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে?
___বুঝছি, বাবু তুমি রাগ করছো? দাও তোমার হাতটা দাও, ধরি!
___আপনার লজ্জা নাই, আপমি একটা মেয়ে হয়ে পরপুরুষের হাত ধরবেন তাও বাস ভর্তি লোকের সামনে!
___জান, তোমার কি হয়েছে? এমন করছো কেন? ফেসবুকে আর ফোনে এত কিউট করে কথা বলো আর আজ এখন এভাবে কেন কথা বলছো?

___আশ্চর্য! আমি কখন ফেসবুকে আপনার সাথে কথা বললাম? আমি তো কোনো মেয়ের সাথে কথায় বলিনা ফোনে!,
___এই ড্রাইভার বাস থামান, থামান বলছি! আমরা নেমে যাব!
___আমরা মানে?
___তুমি আর আমি নামব!

বাস থামলো ভার্সিটির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার মোড়ে! মেয়েটি আমাকে জোর করেই গাড়ি থেকে নামাতে বাধ্য করলো, সেও নামলো ৷ তার কথাবার্তা শুনে মনেহচ্ছে আমি তার বয়ফ্রেন্ড! গাড়ি থেকে নামার পর মেয়েটি আমাকে ভার্সিটিতে টেনে নিয়ে গেল! ভার্সিটির উদ্যান সাইটে নিয়ে গিয়ে উচ্চশব্দে বলল,

___নাও, আমাকে জড়িয়ে ধরো ৷ তোমার তো অনেক দিনের স্বপ্ন আমাকে জড়িয়ে ধরার! মেয়েটির কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম ৷ হতবুদ্ধি আমি তার চোখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম ৷ লজ্জার ভাবও হলো! মেয়েটা আমার গাল টিপে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,

___আমাকে এখন এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখতে হবেনা, রেস্টুরেন্টে গিয়ে চোখ জুড়িয়ে দেখতে পারবা ৷ এখন জড়িয়ে ধরতে বলছি, ধরো! আমার তো হ্নদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল মেয়েটার কথা শুনে৷ ভয়ে আর লজ্জায় গাও কাঁপছিল ৷ আমি তাকে জড়িয়েধরছিনা বলে মোয়েটি ধমক দিয়ে উঠলো, এবং ক্ষ্যাপা স্বরে বলল,

___কি মাইর খাবা? যা বলছি তাই করো!

লজ্জায় লড্জাবতীর মত চুপসে গেলাম ৷ শরম লজ্জা লাজ হায়া সব ভুলে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলাম ৷ সেও জড়িয়ে ধরলো খুব শক্ত করে! উফ! এত ভাল লাগছিল যে সুখের সাগরে ডুব দিয়ে সাঁতার কাটছিলাম! শিহরণে ভেতরটা কেমন কেমন করছিল! এরপরই সে আমাকে ছাড়ি়য়ে নিয়ে বলল,

__চলো রেস্টুরেন্টে যাব!

আমার পকেটে মাত্র ২০ টাকা ৷ গাড়ি ভাড়ার টাকাটাই শুধু অবশিষ্ট আছে ৷ যদি রেস্টুরেন্টে যাই পড়তে হবে লজ্জায় ৷ না গেলেও মেয়েটা ছাড়বেনা ৷ ভাবলাম, “যদি বলে দিই আমি তার সেই বয়ফ্রেন্ড না তবে কেমন হবে?” সাহস সঞ্চয় করে তাকে বললাম,

___দেখুন, আমি আপনার সেই বয়ফ্রেন্ড না! ভুল করছেন! বলার সাথে সাথে সে লাগিয়ে দিলো থাপ্পর ৷ গালে ডান হাত লাগিয়ে বুলাচ্ছিলাম! ওদিকে মেয়েটা আমার বাম হাতটা ধরে একটা রিকশার কাছে নিয়ে গেল ৷ রিকশায় উঠলাম! মেয়েটা আমার গা ঘেষে বসেছে ৷ আমার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসছিল ৷ দুজনেই চুপ রইলাম ৷ হঠাৎ সে আমার হাত ধরলো! ছাড়িয়ে নেবার ইচ্ছা হলোনা ৷ ভাবলাম জীবনে কখনো এমন সুযোগ নাও আসতে পারে! তাই ধরে থাকুক সে! বেলা ১২ টার দিকে রেস্টুরেন্টে পৌঁছলাম! খাওয়া দাওয়া করলাম ৷ বিলটা সেই দিলো! আমি তাকে বললাম,

__ফোনটা দাও তো সে বলল,
___যাক তোমার রাগ কমেছে তাহলে ৷ আপনি থেকে তুমি বলছো ৷ আমার ফোন নিয়ে কি করবা? ফোনে কিন্তু চার্জ শেষের দিকে ৷ টিপাটিপি করা যাবেনা, বাসা থেকে বাবা মা ফোন দিতে পারে! আমি তো তোমাকে বলেছিলাম আজকে দেখা করার সময় একবারও ফোন দিবানা ৷ ভাগ্যিস দাওনি, দিলে তোমার খবর করে দিতাম! এদিকে আমার ফোনে কল দিয়েছে আম্মাজান, রিসিভ করার সময় লাউডস্পিকার হয়ে গেল! আম্মা বলছিল,

___কিরে আজ না তোকে পাত্রী দেখতে যেতে হবে, এখনও তুই বাসার বাইরে! কি করছিস বল তো?

___আসছি মা, থাকো তোমার!

ফোনটা কেটে দিলাম ৷ আচমকা মেয়েটা চটাস করে এত জোরেআমাকে থাপ্পর মারল যে আক করে উঠলাম! রেস্টুরেন্টের ভেতরে সমস্ত কাপল আমাদের দিকেতাকিয়ে রইলো ৷ আমার মন চাইছিল মেয়েটাকে উল্টা কষে থাপ্পর মারি, তবে স্বাদ মিটবে! মেয়েটা হিংস্ররুপ নিয়ে আমাকে চেঁচিয়ে বলল,

__বদমাইশ তোকে আজ পাত্রী দেখতে যেতে হবে বলিসনি কেন? আবার দেখি তোর মতামতও আছে ৷ ইতর, বাঁদর তুই না বলিস আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবিনা, তাহলে পাত্রী দেখতে যাবি কেন? আমার আর সহ্য হলোনা ৷ তাকে ধমক মেরে বললাম,

___আরে মেয়ে, কতক্ষণ ধরে বলছি চিনিনা তোমাকে! তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড নও! মেয়েটা রাগে গাল ফুলিয়ে ফেলছে তো আগেই, এখন চেহারা একদম রক্তিম বানিয়েছে! সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

___তুই আমার বয়ফ্রেন্ড না? দাঁড়া দেখাচ্ছি! . মেয়েটা তার ফোন চেপে ফেসবুকে ঢুকে তার ম্যানেঞ্জারের টেক্সটগুলো দেখিয়ে বলল,

___এই যে তোর সাথে চ্যাটিং করেছি ৷ দেখ কত মধুর কথা বিনিময় আমাদের ৷ আর ফটো দেখ, দাঁড়া তোর আইডিতে ঢুকি! সে তার বয়ফ্রেন্ডের আইডিতে ঢুকল, এবং প্রোফাইল পিকচার থেকে ৮-৯ টা পিকচার দেখালো ৷ আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো প্রতিটা ফটো ছিল আমার!, তব্দা খেয়ে গেলাম ৷ তবে আইডিটা আমার না ৷ অন্য কেউ আইডিটা চালায় ৷ হয়তো ঐ আইডির লোকটা আমার আইডি থেকে ফটো কালেক্ট করে তার আইডিতে আপলোড করছে! মেয়েটাকে বললাম

___দেখুন ওটা সত্যি সত্যি আমার আইডি না ৷ ফটোগুলো হয়তো আপনার বয়ফ্রেন্ড ব্যবহার করছে ৷ এক কাজ করুন, তাকে ফোন দেন ৷ সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে! মেয়েটা আমার কথা শুনে দিলো ফোন! রিং বাজলো ৷ রিসিভ করলো ৷ মেয়েটা কান্নামাখা স্বরে বলল,

___তুই এতবড় মিথ্যুক, প্রতারক, বাটপার? আমাকে আর কখনো ফোন দিবিনা, কখনো ফেসবুকে নক করবিনা! বলেই মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল শব্দ করে! এরপর তার ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলল! আমি অপরাধীর দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম! তারপর নরম গলায় বললাম,

___দূঃখিত! আপনাকে শুরুতেই বলার চেষ্টা করেছিলাম পারিনি বলতে! আপনি থাকুন, আমি আসি! পাত্রী দেখতে যেতে হবে! মেয়েটা চোখের পানি মুছে আমাকে বলল,

___জ্বী, তুমি ৷ সরি, আপনি আসুন!

মর্মাহত মন নিয়ে চললাম বাসার দিকে! বাসা থেকে পাত্রীর বাড়িতে গেলাম মা ও মামাকে নিয়ে! বাসায় ঢুকেই শুনি কান্নার রোল! পাত্রীর কাজিন ও আন্টিরা কাঁদছে! ঘটনা কি জানার চেষ্টা করলাম? জানতে পারলাম পাত্রী গাড়ি দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে! সে হাসপাতালে! হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে ছুটলাম! হাসপাতালে পৌঁছে দেখি পাত্রী অন্য কেউ নয় আজকে যে মেয়েটার সাথে অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটলো সেই! খুশিতে মনটা নেচে উঠলো! লাইফে প্রথমবার যার পরশ পেয়েছি সেই আমার বউ হতে যাচ্ছে ভাবতেই ভাললাগছে! কিন্তু দূর্ঘটনায় তার পা ভেঙ্গে গেছে! অপারেশন হবে! অপারেশন হলো! প্রায় ২ মাস পর মেয়েটি পুরোপুরি সুস্থ্য হলো ৷ তবে হাঁটতে একটু সমস্যা, হাঁটার সময় হালকা খুঁড়িয়ে হাঁটে ৷ তাতে কি? সে সারাটা জীবন আমার হাত ধরেই হাঁটবে! শেষপর্যন্ত আমাদের বিয়ে হয়েই গেল!বাসর ঘরে ঢুকেই শুনতে পেলাম বউয়ের কান্না! কেন কাঁদতেছে দেখে জিজ্ঞেসা করলাম, সে প্রশ্নের উত্তর দিল,

__আমার সেই বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে! শুনে প্রচন্ড রাগ হলো! রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললাম,
___তবে তার কাছেই যাও! বউ খিলখিল করে হেসে বলল,
___আরে তোমাকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি জানি ৷ তুমি আমার ভার্সিটির সিনিয়র ভাই ছিলে ৷ তুমি তখন অনার্স ফাইনালে আর আমি মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছি ৷ আমার এক বান্ধবী তোমাকে পছন্দ করতো ৷ তোমাকে প্রোপজও করে কিন্তু তুমি তাকে অপমানিত করেছিলে! কি সত্য কি না?
___সত্য!
___তারপর শোনো! সেদিন থেকে সংকল্প করেছিলাম  যেভাবে হোক তোমার সাথে প্রেম করব ৷

তোমার আইডিটা খুঁজি ৷ পেয়েও যাই ৷ তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই ৷ তুমি এক্সেপ্টও করছিলে ৷ আমি আইডিতে যার ফটো দিয়েছিলাম সেগুলো আমার ছিলনা৷ ফটো দেখে তুমি পাগল হয়ে গেছিলা বোধহয় ৷ যে কারণে হাজারটা ম্যাসেজ পাঠাচ্ছিলে ৷ আমি শুধু সিন করি ৷ এরপরও তুমি প্রতিদিন টেক্সট করতা ৷ আজকেও তো করছো! যাহোক, তোমার আইডির পিকগুলো নিয়ে মেল আইডি খুলি ৷ সেটার সাথে আমার আসল আইডি চ্যাটিং চালাই গেছি! তোমার সাথে মিট করার আগের রাত্রীতে কয়েকটা ম্যাসেজ আদান প্রদান করি যাতে তুমি বিশ্বাস করো যে হ্যাঁ, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, আর সে তোমার মত দেখতে, এবং তুমি তাই বিশ্বাস করেছো! আর তুমি তো বুঝিয়ে দিয়েছিলে আইডিটা তুমি চালাতে না ৷ নাটকটা ভালই করেছিলাম! আর রেস্টুরেন্টে তোমার সামনে যাকে ফোন দিয়েছিলাম সেটা আমার কাজিন ছিল! হা হা হা! আমি কিন্তু জয়ী!, সফল হয়েছি বুঝলে? আমি বউয়ের কথা শুনে ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে গেলাম, তাকে বললাম,

__কেমনে সফল হলে? আমরা তো প্রেমই করিনি!
__প্রেম করিনি ৷ তবে বিয়ে তো হয়েছে! আমার সাথে শ্বাশুরি আম্মার আগে থেকে যোগাযোগ ছিল ৷ উনি আমার আম্মার গান শুনতে প্রায় দিন আমাদের বাসায় আসতেন! ওতেই পরিচয়! আমি তাকে একদিন লজ্জা শরম ভুলে বললাম,

___আন্টি, আপনার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দিন ৷ অন্যথায় উনি উল্টাপাল্টা কাজ করতে পারেন ৷ এইযে দেখেন ফেসবুকে উনি আমার ইনবক্সে ওনার ফটো দিয়ে বলেছে “আমাকে কেমন লাগছে? বিয়ে করবে আমাকে?” এটা দেখে আমার শ্বাশুরি আম্মা বলেছিলেন, “ওর ব্যবস্থা করছি!” পরদিনই তো শ্বাশুরি আম্মা আমার বাবা মায়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়! আর আজ আমরা কি? স্বামী, স্ত্রী! বলো আমার বুদ্ধিটা কেমন?

একটা মেয়ে এতটা চালাক হতে পারে কখনো কল্পনা করতে পারিনি ৷ বউয়ের বুদ্ধির কাহিনী শুনে বেহুশ হয়ে পড়ে রইলাম! যদিও বিয়ের দেড় মাস পর শুনি সে নাকি ওসবই বানিয়ে বলেছিল! সত্যি সত্যি আমার ফটো নিয়ে তার সেই বয়ফ্রেন্ড আইডি খুলেছিল! সত্যটা জানার পর ফের বেহুশ হয়ে গেছিলাম!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত