আনফ্রেন্ড বিড়ম্বনা

আনফ্রেন্ড বিড়ম্বনা

এই আসো তো। মানহার কথায় আমি ল্যাপটপের দিকে শেষ বারের মত তাকালাম।ঝিনুকের আইডিটা এখনও পিপল ইউ মে নো তে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।আমি আইড়িটাতে ক্লিক করতে গিয়েও করলাম না।মেয়েটাতো আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে ছিল তাহলে এখন আবার এরকম দেখাচ্ছে কেন।আনফ্রেন্ড করে দিল নাকি! ঝিনুকের সাথে আমার পরিচয় বছর দুয়েক হবে।আমাদের উপরের তলায় থাকতো।মেয়েটা আমার ছোট হলেও আমাকে তুমি করেই ডাকতো।একদিন প্রশ্ন করেছিলাম,আচ্ছা তুমি আমাকে তুমি করে ডাকো কেন? আমার কথায় মেয়েটা মুচকি হেসে বলেছিল,

-কাছের মানুষদের তুমি ডাকতে হয়।এতে করে খুব অল্প সময়েই আরও কাছে যাওয়া যায়।

ঝিনুকের কথায় সেদিন আমি আর কিছু বলতে পারিনি।মেয়েটা যে আমাকে পছন্দ করে সেটা বেশ আগেই বুঝেছিলাম কিন্তু ও যে আমাকে ভালবাসে সেটা সেদিনের পর থেকে আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম। “এই তুমি আসবা? মানহার ভারী গলার রাগী কণ্ঠে আমার ধ্যান ভাঙলো।মেয়েটা বেশ রেগে গেছে।খাবার টেবিলে এতক্ষন না খেয়ে একা একা বসে থাকা যায় নাকি।আমি আর দেড়ি করলাম না।বেশ ক্ষুধাও লেগেছে। ল্যাপটপটা বন্ধ করে খাবার টেবিলের দিকে গেলাম। সকাল দশটা।অফিসে এসে বসতেই আরিফ সাহেবের আগমন।আরিফ সাহেব,আমার কলিগ।হাসি খুশি একজন মানুষ।তবে আজ তার মুখে হাসি নেই।লোকটা গোমড়া মুখে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,

-জানেন ভাই,কি হইছে?

আরিফ সাহেবের এই অন্ধকার মুখ দেখে আমার জানার আগ্রহটা আরও একটু বেড়ে গেলো।কি এমন হলো যে হুট করেই হাসিখুশি লোকটা এরকম গম্ভীর হয়ে গেলো।আমি মাথাটা একটু এগিয়ে দিয়ে বেশ ভারি গলায় বললাম,

-কি হইছে, বলেন তো। লোকটা আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-ইথিকা আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিছে।

আরিফ সাহেবের কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।এই লোকটা এর জন্যে মন খারাপ করে বসে আছে।অবশ্য মন খারাপের কারনও আছে।এই ইথিকা মেয়েটা আরিফ সাহেবের ক্রাশ ছিল।অবশ্য বলতে পারে নাই এখনও।তবে চেষ্টায় আছে। আমি আরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-না না,এই কাজটা তো ঠিক হয়নি।এতো দেখছি চরম ফাজিল মেয়ে একটা।
-কি বললেন?
-না মানে,ফাজিল না।ওই আর কি,ভুলে হয়তো আনফ্রেন্ড হয়ে গেছেন।

আমার কথায় আরিফ সাহেব কিছু বললেন না।রেগে গেছে মনে হচ্ছে।লোকটা কিছু না বলেই চলে গেলেন।আজকাল দেখছি ফাজিলকে ফাজিল বলাও অপরাধ। নতুন ফাইলটা হাতে নিতেই আবারও আরিফ সাহেবের আগমন।তবে লোকটার মুখ এবার আরও একটু বেশিই অন্ধকার মনে হচ্ছে।আরিফ সাহেবকে এবারও আমার বসতে বলতে হলো না।উনি নিজেই চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,

-ভাই আপনিই ঠিক বলছেন।একদম ফাজিল একটা মেয়ে।কম ফাজিল না বহুত ফাজিল। হুট করে আরিফ সাহেবের এরকম চেঞ্জ আমি কখনই আশা করিনি।লোকটা এবার ওনার ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

-দেখেন ভাই,ফাজিল মেয়েটা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিছে।আমার মনে হয় ওর ডাবল ফাজিল বয়ফ্রেন্ডটাই আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিছে।
-ধুর মিয়া,এরকম হয় নাকি?
-হয় না মানে,প্রচুর হয়।গার্লফ্রেন্ডের আইডির ছেলেগুলাকে বয়ফ্রেন্ড আনফ্রেন্ড করে দেয় আবার বফের আইডির মেয়েদের তাদের গার্লফ্রেণ্ডলাও আনফ্রেন্ড করে দেয়।দেখেছেন ভাই কি সন্দেহ।এরকম সন্দেহে রিলেশন টেকে,আপনিই বলুন ভাই।টেকে? আরিফ সাহেবের কথায় আমি জোর গলায় বললাম,

-না,সম্ভব ই না।দুই দিনও টিকবে না। আপনি ধৈর্য ধরুন।ওদের ব্রেকআপ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমার কথায় আরিফ সাহেব এবারও কিছু বললেন না।সেই আগের মতই কিছু না বলে চলে গেলেন।আরে ভাই এবার আবার কি ভুল বললাম।যাই হোক আমার বউটা তবুও এরকম হয় নাই। কাজ শেষে একটু ফেসবুকে লগইন করলাম।আজকাল যে সব হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ফেসবুক চালানোটাই বন্ধ করে দিতে হবে।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠলো।মিথিলা। আমি ফোন ধরতেই মেয়েটা বললো,

-এই,তুই আমাকে আনফ্রেন্ড করলি কেন?হ্যা,আনফ্রেন্ড করলি কেন?এখন আর ভাল্লাগে না আমাকে না।বিয়ে করেছিস,বউ আছে আমাকে তো এখন আনফ্রেন্ড করবিই।ফালতু ছেলে একটা। কথাগুলা একনাগারে বলেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দিল।আর আমি হাবার মত থম মেরে বসে রইলাম।আসলে হলো টা কি! মিথিলা আমার এক্স গফ ছিল।অবশ্য ব্রেকআপের পরও আমাদের মাঝে মাঝে কথা হতো।কিন্তু আনফ্রেন্ড তো করিনি।আমি মিথিলার আইডি সার্চ দিতেই চোখ কপালে উঠে গেলো।কিভাবে হলো এটা!আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।আরিফ সাহেবের কথাটা এখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।আমি অপেক্ষায় আছি ঝিনুকের ফোনের।এই মেয়েটা কখন ফোন দেবে আর কখন আমাকে এভাবে ঝাড়বে।কখন, কখন?

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই আইসক্রিমের দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।প্রতিদিন মানহার জন্যে আইসক্রিম নিতেই হবে।নইলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে।আমি আইসক্রিম নিয়ে বের হতেই ঝিনুকের সাথে দেখা।প্রথম দিকে আমি এড়িয়ে যেতে চাইলেও এই মেয়েটার চোখ আমার দিক থেকে এড়ালো না।ঠিক ধরে ফেললো।এখন যদি এর রাস্তার মাঝে এই মেয়েটাও মিথিলার মত ঝাড়তে থাকে তাহলে মানসন্মান আইসক্রিমের সাথে গলে একদম পানি হয়ে যাবে। আমি মুখে যথেষ্ট হাসি ভাব রেখেই মেয়েটার সাথে কথা বললাম।কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।ঝিনুক কিছুক্ষন চুপ থেকে কেমন যেন মুখটা মলিন করে বললো,

-সরি। ঝিনুকের সরিতে আমি আস্তে করে বললাম,
-কেন? মেয়েটা এবার মাথা নিচু করে বললো,
-আসলে আপনাকে না আমি আনফ্রেন্ড করিনি।আমার উনি করেছে।উনি আসলে চান না আমার আইডিতে কোন ছেলে থাকুক।এর জন্যে সরি। ঝিনুকের কথায় আমি মুখে হাসি ফুটে উঠলো।যাক বাবা বাচা গেলো।মেয়েটা একটু চুপ থেকে বললো,

-তবে একটা নতুন আইডি খুলেছি।ও জানে না।আপনি দেখেন আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছি। ঝিনুকের কথায় আমি আইডিতে ঢুকে মেয়েটা নতুন আইডি ফ্রেন্ডলিস্টে ঢুকিয়ে নিলাম।আরও বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর মেয়েটা যখন আমাকে ছাড়লো ততক্ষনে আইসক্রিম গলে একদম পানি হয়ে গেছে।তবে এর মাঝেও একটা ভালি খবর আছে।মানসন্মান আমার ঠিকই বরফের মত জমাট বেধে আছে।গলার চান্স ছিল,তবে গলেনি।

রাত প্রায় দুইটা।আমার ঘুমটা হুট করেই ভেঙে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই দেখি মানহা এখনও জেগে।খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।আমার ঘুম ভাঙাটা মেয়েটাকে বুঝতে না দিয়ে একটু ওর দিকে ঘেসে গেলাম।মেয়েটা এত রাতে আমার ফোনে কি করে!

আমি একটু মানহার দিকে এগিয়ে যেতেই শুনতে পারলাম, নুসরাত ফারিয়া ৪১,ইসরাত জাহান ৪২,ইথিকা রহমান ৪৩ মানহার এরকম নাম বলে কাউন্ট করাটা আমি দেড়িতে হলেও বুঝেছিলাম।এই মেয়েটা আমার আইডি থেকে মেয়েগুলাকে একদম সিরিয়াল অনুযায়ী আনফ্রেন্ড করে দিচ্ছে।এতক্ষন অন্যের গফকে গালি দিলাম এখন নিজেকেই নিজের গালি দিতে ইচ্ছে করছে।মানহা এবারেরটা একটু জোরেই বললো, এই ঝিনুক রহমান ৭৯ ঝিনুক রহমান।মেয়েটা সন্ধার দিকেই লিষ্টে ঢুকেছিল।কপাল বলতেও একটা কথা আছে।আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না।মাথাটা বেশ ধরেছে।ভাবছি পরবর্তীতে ঝিনুকের সাথে দেখা হলে আমিও নতুন আইডি দিয়ে রিকুয়েস্ট দিয়ে বলবো, আগের আইডি তোমার ভাবির দখলে।আপাতত দেশটা একনায়কতন্ত্র ভাবেই চলবে।হ্যা এভাবেই চলবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত