চিরকুটের কবিতা

চিরকুটের কবিতা

চোখগুলো লেগে আসতেই পানি ঢেলে ঘুম ভাঙালো মিতু৷ আমি টুপ করে উঠে বসে কঠিন একটা চাহনি দিলাম৷ মিতুর মুচকি হাসিতে কঠিন চাহনীটা মূহূর্তেই কমল হয়ে গেল৷ নরম গলায় বললাম,

-এটা কি করলে?” মিতু কথার সাথে একটু ন্যাকামো মিশিয়ে বলল,
-তুমি প্রমিস ভাঙছো কেন?
-কিসের প্রমিস?
-ঐ যে চিরকুটে কবিতা লিখেছিলে!”

আমি মাথা ঝাড়া দিলাম৷ ঘুমের রেশটা কেটেছে একটু৷ আমি সন্ধ্যা বেলার কবিতার কথা মনে পড়লো৷ “সেদিন এলাচি ভর্তা আর করলার জুস খাওয়ার পর আমি যে অভিনয়টা করেছিলাম৷ তারপর থেকে চিরকুট খেলার সমাপ্তি ঘটলো৷ দু’চারদিন জামাই আদর ভোগ করে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরেছিলাম মিতুকে নিয়ে৷ অবশ্য আমার প্রতিশোধ নেয়া উচিত ছিল৷ তবুও বৌ মানুষ৷ তাই আর প্রতিশোধ নেয়া হয়ে উঠেনি৷ মায়ামায়া চেহারাটার দিকে তাকালে প্রতিশোধ শব্দটা অনর্থক মনে হয় আমার৷

সকাল বেলা শুনলাম আজ মিতুর ভাই বেড়াতে আসছে৷ শালাবাবুর চেহারাটা ভাবতেই আমার প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে উঠলো৷ করিম ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, আজ আমি যাচ্ছিনা অফিসে৷” মিতু একটু খুশি হলো বটে৷ দুপুরে নাকি জম্পেশ একটা রান্না হবে৷ খানিকবাদে বাজারে যাওয়ার তাড়া দিল৷ আমি সরাসরি না করে দিলাম৷ এবার মিতুর মন খারাপ হল৷ আমি মানিব্যাগ থেকে বেতনের টাকা হাতে দিলাম৷ আরেকটু খুশি করার জন্য বললাম, পাশের বাসার ভাবীকে নিয়ে যাও৷ পারলে শপিং করে এসো৷” মিতু খুশিতে গদগদ করছে৷ খুশিতে সম্ভবত মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার৷ সময়মতো বেরিয়ে পড়লো মিতু৷ আমি টিভি অন করে খানিকক্ষণ গোপাল ভাঁড় দেখে নিলাম৷ এসব দেখে দেখে আজকাল বুদ্ধির উন্নতি হয়েছে আমার৷”

কলিং বেলটা বেজে উঠলো৷ শালাবাবু এসে পড়েছে৷ দরজা খুলে দাঁতের পাটি দেখিয়ে একটা হাসি দিলাম৷ এই হাসিতে আমাকে খুব বিশ্রি দেখায়৷ তাই যত্রতত্র হাসি না আমি৷ আমার হাসির সামনে শালাবাবুকে একটু নার্ভাস দেখালো৷ ঘরে ঢুকে যখন শুনলো, তার আপা বাসায় নেই৷ তখন বেচারির পালানোর উপক্রম হয়েছে৷” আমি শান্তনা দিলাম তাকে৷ পাশে বসে গোপাল ভাঁড় দেখাচ্ছি শালাকে৷ আমার বুদ্ধির উন্নতি হওয়ার গল্প শোনালাম কিছুক্ষণ৷ তবুও বেটা নিশফিশ করে চলেছে৷ এবার আমি সিগারেটের প্যাকেটটা বের করলাম৷ শালাবাবুর দিকে তাকালাম একবার৷ চোখগুলো আনন্দে তার চিকচিক করছে৷ গোপনসূত্রে খবর পেয়েছি, টাকার অভাবে সে এখন সিগারেট ফেলে বিড়ি টানা শুরু করেছে!” তাই আজ বহুদিন পর সিগারেট দেখে চোখগুলো ড্যাব ড্যাব হয়ে আছে৷” আমি আর বেশিক্ষণ কষ্ট দিলাম না তাকে৷ সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে দিতেই ফুরফুর করে টানা শুরু করলো৷ ধোঁয়ায় চারিদিকে একাকার৷ সে রাজার হালে টানছে৷ খানিক বাদে বাদে বলছে,

-দুলাভাই তুমিই সেরা৷” আমিও উৎসাহ দিলাম৷ সেও টানছে৷” রুম থেকে বেরিয়েই আমি নিধিকে ফোন দিলাম৷ নিধি শালাবাবুর প্রেমিকা৷ আমি মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে বলি,

-তুমি খুব দূভার্গ্য নিয়ে জন্মেছো মেয়ে৷” তবুও বলিনা৷ এক কান দুই কান করে আমার কথাটা নিধির কানের পৌঁছে যাবে৷ তখন আবার রান্না অনশন শুরু হয়ে যেতে পারে৷” রিং বাজতেই রিসিভ হলো ফোন৷ আমি বললাম,

-আচ্ছা তোমার একা একা লাগছে?” নিধি বলল,
-আরেহ দুলাভাই! আপনি কিভাবে জানলেন?” আমি বললাম,
-ওরেহ! আমিও তো একজন প্রেমিক৷ প্রেমিকার মনে ভাষা আমি বুঝি৷ তবে তুমি চাইলেই, এই একা একা ভাবটা কাটাতে পারো৷”
-কিভাবে?
-এই যে, তোমার প্রেমিককে পাশে বসিয়ে রিক্সায় চড়ে হারিয়ে যাও৷”
-ভালো বুদ্ধি দুলাভাই৷ আমি ফোন দিচ্ছি৷” আমি থামালাম মেয়েটাকে৷ তারপর বললাম,
-শুনো, প্রেমিক প্রথমে আপত্তি করবে৷ কিন্তু তুমি তাকে জোর করবেই৷ আজ রাখি৷ কাজ হলে ধন্যবাদ দিও৷”

ফোনটা টুপ করে কেটে দিলাম৷” রুমের দিকে উকি দিলাম একবার৷ সিগারেট টানা শেষ ততক্ষণে৷  আমি জামাল গোটের শরবতটা বের করলাম৷ দারোয়ান চাচার বৌকে দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিলাম৷ যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে ভেবে৷ আজ সময়মতো কাজে লেগে যাচ্ছে৷” শরবতের গ্লাসটা শালাবাবুর সামনে রাখলাম৷ শালাবাবু সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-এটা কী?
-শরবত!”
শুনেই সে আপত্তি করে বসলো৷ আমি বললাম,
-এটা খেলে মুখ দিয়ে সিগারেটের গন্ধ বেরোইনা৷

আমি যখন তোর আপার কাছ থেকে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম৷ তখন আমিও গিলতাম এসব!” আমার বানানো ইতিহাস শুনে শালাবাবুর চোখে ভালোবাসা ফুটে উঠলো৷ ঢকঢক করে গিলে ফেললো৷ গেলা শেষ হতেই ফোনটা বাজলো তার৷

আমি নিজেকে বাহবা দিলাম! জায়গামতো গিট্টুটা লাগিয়ে ফেলেছি বলে!” মিনিট দুয়েক বাদে শালাবাবু বেরিয়ে পড়লো৷ আমাকে একবার ছোট্ট করে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালো৷ শালাবাবু বেরোনোর খানিক বাদে মিতুর আগমন৷ বাজার আর শপিং করে মেয়েটার খুশি কে দেখে!” অন্যদিকে আদরের ছোটভাই না বলে গিয়েছে তাই মন খারাপ হয়েছে একটু৷ আমি ভালোবাসা দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিয়েছি৷” সন্ধ্যা হতেই ফোনের উপর তুফান বয়ে গেছে ছোটখাটো৷ নিধি মেয়েটা ফোন দিয়ে, কয়েকটা উন্নতমানের গালি দিলো শালাবাবুকে নিয়ে৷ আমি পুলকিত হলাম৷ মিতুর শুধু আমার সামনে এসে বলেছিল, “তুমি একটা ছোটলোক!” এই এক বাক্য বলেই ধপাস করে ধরজাটা বাঁধলো৷ সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের শুরু৷ তবুও দরজা খুলছেনা৷

আমি নিজহাতে মিতুর প্রিয় খাবার রান্না করলাম৷ আলুভর্তা, ডাল আর আর গরম ভাত! এটাই মিতুর ফেভারিট খাবার৷ তাই শিখে নিয়েছিলাম আমি৷” রাত হতেই রুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করলিম৷ মেয়ে কিছুতেই দরজা খুলছেনা৷ শেষমেষ চিরকুট লিখলাম একটা৷ চিরকুটে ছিল ছোট্ট একটি কবিতা৷ মিতুর প্রিয় খাবারের একটি কবিতা৷ “আলু গরম, ডাল গরম! সঙ্গে গরম ভাত! তোমার সাথে কইবো কথা আমি সারারাত!” কবিতা পড়ে মিতু বেরিয়ে আসলো৷ সব রাগ পানি হয়ে গিয়েছে তার৷ মুখে লজ্জামাখানো হাসি৷ নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম মেয়েটা৷ ফাঁকে ফাঁকে কবিতাটা পড়ে শুনিয়েছিলাম৷” রাত বাড়ছে৷ মিতুর চোখে ঘুম এসেছে৷ মায়াবী চেহারাটায় আমি হাতের পরশ বুলিয়ে দিতেই চোখ দু’টো মেলে যায়৷ টুপ করে উঠে বসে বলল,

-তুমি কবিতা পড়ো৷ আমি ঘুমাবো৷ আমার ঘুমন্ত চেহারা দেখে আরো কয়েকটা কবিতা লিখো৷ নয়তো খবর আছে!”
মিতু ঘুমুচ্ছে৷ আমি তার চেহারার দিকে তাকিয়ে কবিতা লিখছি৷ কবিতা শুনে মিতু বলবে, বাহ! দারুণ লিখো তুমি!” অথচ কাঠখোট্টা টাইপের চেহারাওয়ালা কাউকে আমার কবিতাগুলো শুনালে সে হাসতে হাসতে রাস্তায় গড়াগড়ি খাবে৷ সেটা আমি খুব জানি৷”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত