আক্কাস মিয়া তার দলবল সহ চন্দ্রীমা উদ্যানে প্রবেশ করলেন।আজ যে করেই হোক টার্গেট একটা কে পেতেই হবে।গতকালকে ভোটানিকাল গার্ডেনে এক জোড়া কে হাতে নাতে ধরে তাদের মিশন সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন আক্কাস মিয়ার দল।প্রতিদিন একটা করে মিশন শেষ করতে না পারলে তাদের সেইদিন কষ্টে না খেয়ে না ঘুমিয়ে কাটাতে হয় তাদের।চন্দ্রীমা উদ্যানে ঢোকার পর অল্প কিছু দূরে তিনি তার টার্গেট দেখতে পেলেন।কলেজ পালানো এক যুগল খুব কাছাকাছি,খুব পাশাপাশি গায়ে গা লাগিয়ে হাত ধরে বসে বসে কুটুস কুটুস আলাপ করছে।তাদের এই দৃশ্য দেখে আক্কাসের একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল “খুব কাছাকাছি তুমি আমি আছি নিঃশ্বাসে খুঁজে পাই বিশ্বাসের ছোঁয়া” যুগলের আলাপচারিতা…
মনু:আহা!এভাবে যদি সারা জীবন তোমারে নিয়া বইসা থাকতে পারতাম…
রুনু:মানা করলো ক্যাডা?
:ভয় হয় বুঝছো পার্কে টার্কে আসতে।
:কেন? এখানে তো কেউ আমাদের চিনে না তো ভয়ের কি?
:আরেহ্ তুমি খপ কপ সংস্থার নাম শুননাই?
:এটা আবার কি?
:এদের কে-ই ভয় লাগে।কবে আইসা খপ কইরা ধইরা কপ কইরা….
:জবাই দিব?
:না তয়…আচ্ছা বাদ দাও ওদের কথা, আমরা আমাদের ভালুবাসার কথা বলি।জানো রুনু তোমারে যদি আমি একদিন ক্লাসে এসে না দেখি তাইলে ক্লাসের পর বাসায় গিয়া তিন দিন ঘুমাইতে পারি না।তোমারে একবার যদি দেখি তাইলে তিন দিন একটানা ঘুমাই।তুমি আমার ঘুমের কার্যকরি ঔষধ।
:ইশ্!সত্যি?
:চাইর সত্যি।
:আমিও তো তোমারে না দেখে থাকতে পারি না।তুমি যেই তিন দিন ঘুমের কারনে ক্লাসে আসো না সেই তিন দিন বক্করের সাথে কথা বইল্লা মনের দুঃখ হালকা করি।সারাক্ষণ বক্কররে খালি তোমার কথাই বলি।
:বক্করের সাথে বেশি কথা বলার দরকার নাই,বক্কর শূন্যস্থান পূরনে খুব পাকা।
:আমাদের কবে যে বিয়া হইবো?
:এই আর মাত্র দশ বছর পরে চাকরী পাওয়া মাত্র বিয়া।ততদিন অবশ্যই খপ কপের হাত থেকে বেঁচে থাকতে হইবো।
:এত দিন আলাদা থাকতে হইবো?
:না না,তা কেন?আমরা দু একদিন পর পর এমনে দেখা করমু আর এমন কাছাকাছি হাত ধইরা মিষ্টি কইরা একটা…
এই সময় সেখানে আক্কাসের আগমন।আক্কাস অট্ট হাসি হেসে দিয়ে বললো,
:হু হা হা হা,পাজি পোলাপাইন আইজা তোগো বাজে কামের শেষ দিন। ওই মাইনকা ওগোরে ধর…
মনু:ওরে বাবা রে!আক্কাস আইয়া পরছে..ওই রুনু, বইন আমার হাত ছাড়।হাত ধরছোস ক্যা রে?
রুনু:এগুলা তুমি কি বলতেছ মনু?আমি তোমার বোন হলাম কবে থেকে?
:মুসলমান মুসলমান ভাই বোইন।চুপ থাক এখন, আমি তোরে চিনি না।
আক্কাস:মানিক পোলাডারে চেনা চেনা লাগে না?
:হ ভাই,আমগো এলাকার মুন্সির পোলা।
মনু:ভাই,এই মাইয়া আমার বইন লাগে।আমগো ছাইড়া দেন ভাই।আমগো বিয়ার বয়স হয় নাই।তাছাড়া এই মাইয়া রে আমি বিয়া করমু না।আমার আরেকটা জিএফ আছে নাম সনিয়া।
রুনু:এইডা তুমি কি কইলা মনু?আল্লাহ্ আমারে উডাইয়া লও।ফাজিল পোলা!
আক্কাস:হায় হায় কি কয়!ওই পোলা,বিয়ার বয়স না হইলে কি কেউ প্রেমিকা লইয়া এইখানে আসে।মাইনকা,ওরে মিথ্যা বলার জন্য কসাইয়া একটা থাপ্পর লাগা।কাজী সাহেব,কাজ শুরু করেন।
মনু:ভাই,আমার তিন দিন পর পেটে ভীষন চাপ দিতাছে।একটু পায়খানায় যাওয়ার অনুমতি দেন।
আক্কাস:মাইনকা,ওর লগে যা।ও যাতে পালাইতে না পারে।ওর কাম শেষ হইলে ওরে অযু করাইয়া তারপর আনবি।কাজী সাহেব,এর মধ্যে লেখালেখির কাজ সম্পন্ন কইরা ফালান।ওই মাইয়া তুমি তোমার বাপের,মায়ের নাম কও আর সাথে বাসার ঠিকানা।
:কেন বলমু?আপনারা কারা?কি করতে চাইতেছেন?
:আমরা খপ কইরা ধইরা কপ কইরা বিয়া পড়ায় দেবার সংস্থা।আমরা পার্কে পার্কে ঘুইরা ঘুইরা জিএফ বিএফ গুলারে স্বামী-স্ত্রী বানাইয়া দেই।তারপর ছেলের পরিবারে কাছে মেয়েকে তুইল্লা দিয়া আসি।
:যদি আমি রাজি না হই?যদি ওদের পরিবার মেনে না নেয়?যদি আমার পরিবার মেনে না নেয়?
:এইসব সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান আমাদের সংস্থা দিয়া থাকে।যেই সব মেয়ে বা ছেলেরা বিয়াতে রাজি হয় না তাগোরে আমাদের সংস্থার কারাগারে পাঠানো হয়।মেয়েদের পাঠানো হয় আমাদের স্ত্রীদের কাছে। ছেলেদের রাখা হয় একটা গোপন কক্ষে।মেয়ের পরিবাররে তাদের মেয়ের প্রেম করার ভিডিও ফুটেজ পাঠাও হয়,রাজি না হইলে ওই ভিডিও মেয়ের পরিবারের যে সব আত্মীয় এসব জানলে মান সম্মানের বস্তাটা পানিতে ফালায় দেয়ার জন্য রেডি থাকে তাদের কাছে ভাইরাল করার হুমকি দেয়া হয়।এই ঔষধে কাজ হয়। তারা বিবাহ মেনে নেন।আর ছেলের পরিবাররেও একটি কাজ করে বশে আনি।তারপর প্রত্যেক পারিবারকে “প্রেম হইতে বিবাহ উত্তম” এই বিষয়ে জ্ঞান বিতরন করা হয়।বোঝানো হয়, পোলায় সাবালক হইলেই বিয়া দেন এতে সকলের মঙ্গল হবে।একটা মাইয়া খাওয়াইতে পোলার ইনকাম করার দরকার কি?মাইয়া কি হাতি নি যে বেবাক খাইবো?আপনারা একটা মাইয়া খাওয়াইতে পড়াইতে পারবেন না? মাইনকা ওরফে মানিকের আগমন..
:ওস্তাদ ওস্তাদ মনু পাজিলটা পলাইতে নিছিল।খপ কইরা ধইরা ফেলছি প্যান্টের বেল্টে।তারপর পাজিলটা প্যান্ট খুইলাই দৌড় দিতে নিছিল কিন্তু পারে নাই।ইচ্ছা করতেছিল কইসা দুইটা চড় লাগাই।
:মাইনকা ইচ্ছা দমন কইরা রাখতে নাই।পরে ডাইজেস্টে সমস্যা হইবার পারে।লাগায় দে।ফাজিল পোলায় এক লগে দুইডা প্রেম করে!
:ওস্তাদ ওরে দুইডার লগেই বিবাহ করায় দেন।ব্যাটা বুজুক কত ধানে কত মুড়ি।
:না।আমরা একটা বিয়া পড়াই,দুইটা না।কাজী সাহেব লেখা শেষ করছেন?
:হ গো আক্কাস মিয়া শেষ করছি।
:বিয়া পড়ানো শুরু করেন…
:জনাব মুন্সি মিয়ার তিন নাম্বার ছাগল মার্কা পোলা মনুর সাথে পাঁচ লক্ষ এক হাজার একশত এক টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া বিবাহের প্রস্তাব দেয়া হইল,রুনু মা বলেন কবুল…
:যদি না কই?
আক্কাস তাদের খুব ‘কাছাকাছি তুমি আমি আছি’ এই ভিডিওটা উভয় কে দেখাও এবং বুঝিয়ে দেও তার পরবর্তি স্টেপ সম্পর্কে।দুজনের চুপচাপ তার কথা মেনে নেয় শেষে।
খপ কপ গ্রুপের মেয়ের স্বাক্ষি,ছেলের স্বাক্ষি,কাজী,পালোয়ান সবাই বিবাহ শেষে মিষ্টি বিতরন করে তাদের ছেড়ে দিয়ে নতুন জুড়ি খোঁজার জন্য রওনা হল।বর্তমানের ছেলেমেয়েরা তাদের দেখলেই ভো-দৌড় লাগায়।কারন….তারা কেবল প্রেম করতে চায় বিবাহ না।তবে ইতিমধ্যে এই গ্রুপ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে ফলে দিন দিন তাদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।সুবিধা ভোগীদের মুখে ঐ শোনা যায়..”জয় হোক খপ কপের”।