বড় ভায়ের ছেলে রুহান কে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বিছানায় শুয়ে পড়ল তিথি।দুই হাত দিয়ে উপরে তুলে দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে ছড়া বলছে আর হা হা করে হাসছে।এমনি এক হা হা মূহুর্তে রুহান মুতু করে দিল।প্যান্ট না পড়ার কারণে মুতু সরাসরি চলে গেল তিথির হা হা করা মুখের ভেতর।তিথি তড়িঘড়ি করে ওকে বিছানায় রেখেই দিল বাথরুমে দৌড়। বাথরুমে গিয়ে ওয়াক ওয়াক করতে লাগল জোরে জোরে।
:কি রে ছোট আপু কি হইছে?
:পরে কথা বলবো নিশাত,ওয়াক ওয়াক।
:আম্মা..ভাবি…ছোট আপু ওয়াক ওয়াক করতেছে দেখে যাও (হন্তদন্ত হয়ে তিথির মা রেহানা বেগম এবং ভাবি রেনুর প্রবেশ)
মা:কি হয়েছে তিথি?
তিথি:মা মা ওয়াক ওয়াক মা রুহান ফাজিলটা আমার ওয়াক.. ওয়াক.. মুখে শিশ করে দিয়েছে ও…য়া..ক থু।
রেনু:(রুহান কে কোলে নিয়ে)হা হা হা।দাদু ভাই শিশ দিছ ফুপ্পির মুখে?ওলে ওলে দাদা আমার ভাল করছো।হা হা হা
নিশাত:কি রে আপু মুতুর টেস্ট কেমন রে?হো হো হো
:ভাগ শয়তান।আবার বললে তোরে কিন্তু টেস্ট করতে দিব।
:হি হি হি।আমিও একবার টেস্ট করেছি।নুনতা নুনতা লাগে তাইনা আপু?হো হো হো
:মা..এই খাচ্চরটারে মানা কর কিন্তু
মা:এই নিশাত চুপ কর হা হা হা।
রাতে বড় ভাই নিলয় আসার সাথে সাথে সবার আরেক চোট হাসা হাসি হয়ে গেল এই ঘটনা নিয়ে।অনেক দিন পর নিলয় হাসলো।যৌথ পরিবারের সুখগুলো যেমন অনেক বেশি সুখের হয় তেমনি কষ্টগুলোও বড় বেশি যন্ত্রনাদায়ক হয়।এমনি এক যন্ত্রনায় গত এক সপ্তাহ ধরে ভুগছে নিলয়।মা আর রেনুর মাঝে সব সময় খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মন কষাকষি হতেই থাকে।মায়ের বয়স ষাট পেরিয়েছে।মা এখন অনেক বায়না করে ছোটদের মত।একটুতেই রেগে যায় আবার একটুতেই হেসে ফেলে।রেগে গেলে অনেক কটু কথাও বলে যা সহ্য করা কঠিন।অন্যদিকে রেনু কে কিছু বললেই সে ফুসফুস করতে থাকে ফণা তোলা সাপের মত।বাসায় আসার সাথে সাথে একগাদা নালিশ করবে মায়ের বিরুদ্ধে।মায়ের জন্য কিছু আনলেই ওর কাছে সেটা টাকার অপচয়।তিথি বা নিশাতের জন্যও কিছু কেনা যায় না।সেটা দেখলে রেনু সারাদিন জ্বলতে থাকবে আর বলবে এ সংসারে তার কথা কেই ভাবে না,তার সন্তানের ভবিষ্যতের কথাও ভাবে না।মায়ের ছোট ছোট ভুলগুলো রেনু বিশাল করে তুলে ধরে নিলয়ের কাছে।
প্রতিদিন একটা না একটা ঝামেলা হবেই।নিলয় ফ্রেডআপ হয়ে গেছে এগুলো দেখতে দেখতে।আর ভাল লাগে না তার এসব।মাঝেমাঝে রেনুর স্বার্থপরতা দেখে ওর সাথে খুব রাগ করতে ইচ্ছে করে,ইচ্ছে করে ওর কাছ থেকে পালাতে কিন্তু পারেনা নিলয়।কারণ খুব ভালবেসে তাকে বিয়ে করে ঘরে এনেছিল নিলয়।বাবা মা,ভাই বোন দুটো সবাই তার সিন্ধান্তকে আনন্দের সাথে মেনে নিয়েছিল।রেনু কথা দিয়েছিল এদের আপন করে নেবে নিজের পরিবারের মত।কিন্তু কথা শুধু কথাতেই আটকে রইল তা বাস্তবতার স্পর্শ পেল না।আবার মা কে কিছু বলতে পারে না নিলয়।কারণ সে দেখেছে তাদের বড় করতে মা কত কষ্ট করেছে।মায়ের ভুলগুলো তার কাছে পবিত্র।সে পবিত্রতার সাথে কোন কিছুর আপোস করা চলে না।মা কে এ জীবন গেলেও নিলয় কষ্ট পেতে দিতে চায় না।শত ভুল করলেও সে যে মা।তাঁর স্থান কেউ নিতে পারে না।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নিলয় তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে নিজেই মরে যাবে আজ তবু কাউকে রাগ করতে পারবে না।বাসায় ঢুকে এই হাসাহাসির পর সে তাড়াতাড়ি করে নিশাত আর তিথিকে নিয়ে ছাদে গেল।সেখানে তাদের সাথে কিছু কথা বলে নিচে এসে নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল।রেনু আর রুহান ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে ছিল আর মা ছিল রান্নাঘরে খাবার সাজানোর কাজে।নিলয় ভেবে নিল তার কি করতে হবে।তাই পকেট থেকে বোতলটা বের করেই পুরোটা খেয়ে নিল একবারে।রেনু কে অনেক বার বুঝিয়েছিল সে ভালবাসা দিয়ে মায়ের সাথে ভালমত থাকতে।মা রাগ করলে তার সাথে তর্ক না করতে,মা কে নিজের মায়ের মত ভালবাসতে।সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।এ সব ভাবতে ভাবতে তার চোখে জল নেমে এল।সে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করল কিছুক্ষন পর বড় ভায়ের দরজায় জোরে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করতে লাগল নিশাত আর তিথি।ওদের ডাকাডাকি শুনে মা আর রেনু দৌড়ে আসল।
:কি হয়েছে?ও নিলয় দরজা খোল বাবা। কি জন্য দরজা লাগাইছিস।ও নিলয় বাপ আমার দরজাটা খোল।
:এই রুহানের বাবা দরজা খোল।রুহানের বাবা….
:ওই তোদের ছাদে নিয়া নিলয় কি কইছে?
:মা,ভাইয়া আমাদের ধরে কাঁদল আর আদর করল।তারপর এসে দরজা লাগাল।
(মা চিৎকার করতে করতে নিলয় নিলয় করতে লাগল) আর রেনু বলতে লাগল, “নিলয় তুমি দরজা খোল আমি তোমার সব কথা শুনবো।প্লিজ দরজা খোল।”
এমন সময় নিশাত দরজা কিভাবে যেন খুলে ফেলল।সবাই একসাথে ঘরে প্রবেশ করে হা করে রইল।নিলয়ের মা দেখল নিলয়ের হাতে বিষ লেখা একটা শিশি।নিলয় চোখ বন্ধ করে আছে।সে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পরে জ্ঞান হারালো।রেনুও চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।আর নিশাত বললো, “তোমরা কেঁদ না আমার কাছে বিষ নিষ্ক্রিয় করার ইনজেকসান আছে।এই বলে সে পকেট থেকে একটা ইনজেকসানের সিরিচ বের করে তা তার ভায়ের হাতে পুশ করলো।নিশাল মেডিকেলের স্টুডেন্ট বলে কেউ এ ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না।
আধা ঘন্টা পর নিলয় চোখ খুলল।নিলয়ের মায়ে জ্ঞান ফিরেছে।সে ছেলে কে জড়িয়ে ধরে থরথর করে কাঁপছেন আর বলছেন,”কেন বাবা কেন?” রেনু চোখের জলে একাকার হয়ে বারবার কথা দিচ্ছে সে আর কখনো নিলয়ের মনে কষ্ট দেবে না।নিলয়ের সব কথা শুনবে সে।সবাই কে নিজের পরিবারের মত ভালবাসবে।নিলয়, তিথি,নিশাত অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
কয়েকদিন পর নিলয় দেখলো মা রেনু কে বকা দিচ্ছেন।কিন্তু রেনু মা কে জড়িয়ে ধরে বলছে, সরি মা ভুল করেছি,আর এমন হবে না মা।”মা ও রেনু কে বকছেন আবার জড়িয়ে ধরে আদরো করছেন।রেনুর এখন আর মায়ের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।সে বুঝতে পেরেছে যে বয়স্ক মানুষের স্বভাব বাচ্চাদের মতই হয়ে যায় তাই মা কে সে বাচ্চাদের মতই এখন ট্রিট করে।নিলয়ের মনটা শান্তিতে ভরে গেল।সে নিশাত,তিথি আর রুহান কে নিয়ে ছাদে গেল।
তিথি:ভাইয়া তোমার প্লান তো সুপারহিট!!!
নিলয়:কিন্তু নিশাতটারে বলছিলাম জামার উপর দিয়ে সুই ঢুকাতে।বদটা আমার চামড়ায় সুইয়ের গুতা লাগায় দিছে।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি।তুই দেখে নিস তিথি ও একটা গরুর ডাক্তার হবে।
তিথি:হা হা হা।ঠিক বলছো ভাইয়া।হাতুরি মার্কা ডাক্তার..হো হো হো
নিশাত:তোমরা আমারো পঁচাইতেছ এত সুন্দর অভিনয় করার পরেও?যাও কথা নাই।
নিলয়:আরে যাহ্!ফাজলামি করতেছিলাম।এই নে তোদের চমৎকার অভিনয়ের জন্য পুরষ্কার। তিথি ৫০০ আর তুই ১০০০। কারণ তুই একটিং বেশি করেছিস। তিথি আর নিশাত খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরল আর ঝট করে তার হাতে একটা নতুন ঘড়ি পড়িয়ে দিল।তারা দুজন মিলে আজ এটা কিনেছে।নিলয় অবাক হয়ে বলল,
:এটা কেন রে?ওরা দুজন এক সাথে বলে উঠল, “ভাইয়া তুমি সবচেয়ে সেরা অভিনয় করেছো যে”