জীবনে যতগুলো ছাত্র-ছাত্রীকে টিউশনি করিয়েছি তারমধ্যে তিতলির মতো ছাত্রী আমি কম-ই দেখেছি। তিতলিকে তিতলি বললে ভুল হবে তাকে পেটুক বলাই চলে। কারণ তিতলি সবসময় শুধু খায়, যে জিনিসটা আমার একদম পছন্দ না। তিতলিকে সেদিন বলেই ফেললাম…
–আচ্ছা তিতলি তুমি সারাদিন কি কি খাও একটু বলবা।
-কেনো স্যার?
–হুমম বলো দেখি শুনি। তারপর তিতলি হাতের আঙ্গুল গুনে গুনে বলল…
-সকালে ঘুম থেকে দাঁত ব্রাশ করে কেক খাই, সকাল বেলা পড়ার সময় চিপস্ খাই, চিপস্ খাওয়া শেষ হলে চানাচুর খাই, ভাত খাওয়ার আগে হালকা দুই গ্লাস দুধ খাই, দুই প্লেট ভাত খাই তারপর স্কুলে যাওয়ার সময় জুস খেতে খেতে যাই, স্কুলে গিয়ে রহিম আঙ্কেলের দোকান থেকে দুই প্যাকেট পটেটো খাই, খাওয়া শেষ হলে কয়েকটি ললিপপ নিয়ে ক্লাসে এসে ক্লাস করি আর খাই, টিফিনের সময় ১০ টাকার ঝালমুড়ি, দুই প্লেট ফুচকা খাই, স্কুল ছুটি হলে বাজার থেকে জিলেপি কিনে খেতে খেতে বাসায় আসি। বাসায় এসে আবার ফ্রিজ থেকে ২ টা আপেল, এক বোতল জুস খাই, তারপর দুই প্লেট ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে হালকা আবার চিপস্ খাই। সন্ধায় আব্বু আমার জন্য বাজার থেকে মোগলাই নিয়ে আসে, সেগুলো খাই। রাতে একটু কম করে তিন প্লেট ভাত খাই, ঘুমানোর আগে দুই গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমাই। তিতলির বলা শেষ হলো। আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম…
–হেই এত্ত কম মাইনষে খায়।
-এইটাই আম্মু বোঝেনা স্যার। সবসময় বলে আমি নাকি বেশি বেশি খাই।
প্রতিদিনের নিয়মানুযায়ী আজও তিতলিকে পড়াতে এসেছি। তবে আজকে তিতলিকে কিছু খেতে দেখছিনা। নাকি আজকে খাবেনা? নাহহ এটা হবে না। তিতলি কিছু একটাতো খাবেই। কিছুক্ষণ পর তিতলি এক হাতে বই আরেক হাতে প্লেট নিয়ে পড়তে আসলো। হাতে প্লেটে কি বুঝতে পারলাম না। যখন তিতলি চেয়ারে বসলো তখন বুঝতে পারলাম প্লেটে তেতুল। তেতুল দেখেই জিহ্বায় পানি চলে আসলো। তিতলিকে পড়াচ্ছি আর মাঝে মাঝে আড়চোখে প্লেটে থাকা তেতুলের দিকে তাকাচ্ছি। তিতলি পড়ছে আর তেতুল খাচ্ছে। কিন্তু আমার একদম সহ্য হচ্ছেনা। আমারও প্রচণ্ড তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিভাবে তেতুল নিব বুঝতে পারছিনা। আমি সাহস করে একটু তেতুল নিলাম। মুখে দিতেই তিতলি বলল….
-স্যার আপনের সরম নাই? এভাবে তেতুল নিলেন কেনো? তিতলি কথা শুনে আকাশ থেকে পরলাম। মেয়ে বলে কি। আমি বললাম….
–কি কি ভাবে নিলাম? আর এখানে সরমের কি আছে?
-এই যে আমাকে না বলে নিলেন। আপনিতো অনেক ছেচরা। অন্যের জিনিস না বলে নেন। দেন আমার তেতুল দেন।
কি আর করার! তেতুল আর মুখে দিতে পারলামনা। তিতলিকে দিয়ে দিলাম। আহারে আফছুচ মুখে থেকে তেতুল নিয়ে গেলো। এদিকে জিহ্বায় শুধু পানি আসছে। তেতুল খাওয়ার লোভ কেনো জানি সামলাতে পারছিনা। কি যে করি? তিতলিকে পটানোর জন্য বকলামম….
–জানো তিতলি আমি না ছোট বেলায় তেতুল খুব পছন্দ করতাম।
-আমারও খুব পছন্দ।
–আমি সবসময় তেতুল খেতাম। আজকে তোমাকে তেতুল খেতে দেখে খুব তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে।
-ও আচ্ছা, স্যার পড়ান এখন, পরে গল্প কইরেন। উরিশশালা জীবনে পড়ার নাম মুখে নেয়না। আর আজকে এত্ত পড়ায় মনোযোগ। আমি আবার বললাম….
–জানো তিতলি, তেতুল খেলে মুখ পরিষ্কার হয়।
-জি স্যার জানি।
–না মানে বলছিলাম কি, তুমি যদি আমায় একটু তেতুল দিতে।
-আপনাকে কেনো তেতুল দিবো। আপনি কি আপনার প্রাইভেট পড়ানোর টাকা আমায় দেন। তিতলির লজিক মার্কা কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এইটুকু পিচ্চি মেয়ের এত্ত বুদ্ধি।
–আচ্ছা তিতলি একটু তেতুল দাও, আমি না তোমার স্যার।
-স্যার হইছেন তাই কি…? তেতুল কিনে কিনে খাইয়েন। বুঝলাম তিতলির কাছ থেকে তেতুল নিয়ে খাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না। তিতলিকে বললাম….
–যাওতো আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।
-আচ্ছা, আপনি বসুন আমি আনছি।
তিতলি পানির জন্য গেলো। এই সুযোগে গপাগপ আমি তেতুল মুখে পুরে নিলাম। তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করলাম। আহ! তেতুলরে। তিতলি পানি নিয়ে এসেই চিৎকার দিলো…..
–মা মা মা, স্যার আমার তেতুল চুরি করছে। তেতুল চোর, চোর…
এই বলে তিতলি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করলো। তিতলির কান্না শুনে আন্টি চলে আসলেন। আমি ভয়ে ভয়ে তেতুলের বিচি সহ তেতুল গিলে খেলাম। আন্টি বলল…
-কি হয়েছে রুবেল ও কাঁদছো কেনো?
–না মানে আন্টি আসলে হয়েছে কি…..
-আম্মু স্যার আমার তেতুল চুরি করে খেয়েছে, আমি মানবনা, হুহুহু (কেঁদ ে কেঁদে)
–রুবেল তুমি তেতুল খাবা আমাকে বলতা, তিতলির তেতুল নিতে গেলে কেনো?
-না মানে আন্টি….
–আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।
-চোর চোর, তেতুল চোর, তেতুল চোর। (তিতলি)
–তিতলি বেয়াদবি হচ্ছে কিন্তু। (আন্টি)
তারপর আন্টি তিতলিকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমি আহাম্মকে হয়ে গেলাম। সামান্য তেতুল খাওয়া নিয়ে এত্ত কিছু? আন্টি আমার কাছে আসলেন, বললেন….
-কিছু মনে করোনা রুবেল। আসলে তিতলি একটু এইরকমি।
–না না কিছু মনে করিনি।
-বলছিলাম কি। আজকে তুমি চলে যাও। কালকে এসো।
–আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।
-তিতলির কথায় কিছু মনে করোনা বাবা ঠিক আছে?
–ওকে, বলছিলাম কি আন্টি। তিতলি তো এখন নেই, এখনকি একটু তেতুল নিতে পারি। আন্টি মুচকি হেসে আমার হাতে ২০ টাকার নোট গুজে দিয়ে বললেন….
-তুমি বাজারে গিয়ে কিনে খেয়ো বাবা। বোঝই তো তিতলি কেমন।
তারপর আন্টি হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি করবো। লজ্জায় মাথা নিচু করে তিতলিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম। হাতে থাকা বিশ টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে আছি। সম্বল বলতে এই বিশ টা টাকাই আছে। আচ্ছা বিশ টাকার তেতুল খেয়ে কি আমার মন ভরবে? না ভরলে মোবাইল বিক্রি করে দরকার হয় তেতুল খাবো। তবুও আজকে তেতুলের চৌদ্দ গুষ্টি খেয়ে শেষ করব!