অভিবাদন

অভিবাদন

–সাদা শিফন শাড়ি আছে আপনার ?

ফুলহাতা শার্টের খুলে যাওয়া বোতামটা পকেটে ঢুকিয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বললো । তবে লোকটা প্রশ্ন করার পর কিঞ্চিৎ শঙ্কিত যে হয়নি সেটা তার চেহারায় প্রতিয়মান।লোকটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। তাই একবার তাকানোর পর চোখ তুলে আর তাকাই নি।কি জানি, কি মনে করে? তবে লোকটার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম ঠিকই।কিন্তু উত্তর দিলাম না। বাসের জন্য পুনরায় অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর লোকটা আবার বলে উঠলো,

–আপনার চোখের কাজলটা লেপ্টে আছে ।চোখের নিচটা হালকা মুছে নিন। জানেন, গাঢ় কাজলের সাথে সাদা শিফন শাড়ি খুব ভালো মানায়। চোখের নিচের কাজলটা মুছতে মুছতে বললাম,

–ধন্যবাদ। আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছিলো না।তাই ধন্যবাদ দিয়ে চুপ করে রইলাম।
–জানেন তো, লেপ্টে থাকা কাজলের সাথে চোখের গভীর ভালবাসা রয়েছে।তাই কাজল চোখকে দারুণভাবে স্পর্শ করে ।
–আপনার শার্টের বোতামটা ছিঁড়ে গেছে ?

জানা সত্বেও লোকটাকে প্রশ্নটা করলাম।যেনো বিব্রত হয়ে কথা বলে বন্ধ করে দেয়।কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে লোকটা বলে উঠলো,

–শুধু শার্ট নয় । আমার ডান পায়ের জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে।আসলে সারাদিনের ব্যস্ততার পর বাসায় গিয়ে নতুন করে পুরোনো কোনো কাজ করতে ভালো লাগেনা।
–মানে ?

–এই যে শার্টটার দিকেই তাকান ! বাম হাতার বোতামটা সপ্তাহখানেক আগে ছিঁড়ে গেছে আর ডান হাতার বোতামটা আজ ছিঁড়েছে ।বাম হাতার বোতামটাকে শার্টের পকেটে ঠিকই রেখেছিলাম এক সপ্তাহ আগে কিন্তু অলসতার কারণে আর লাগানো হয়নি।

–তা ডান হাতার বোতামটাও কি সপ্তাহখানেক এভাবেই পকেটে থাকবে ? মুখ ফসকে প্রশ্নটা বের হয়ে গেলো।প্রশ্নটা করে আমি নিজেই ভীষণ বিব্রত হচ্ছিলাম।
–সপ্তাহখানেকের একটু বেশি থাকলেই ভালো হয় , তাইনা ?
–কি জানি ? সেটা আপনার ব্যাপার ।
–আপনাকে নিজের সমস্যাটার কথা বললাম।একটু সাহায্য কি করা যায় না ?
–দুঃখিত, আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবো ?
–ভেবেই দেখুন।মেয়েদের মাথায় তো আবার অদ্ভুত সব বুদ্ধি এসে জমা হয়।অনুগ্রহ করে, আমার মত ব্যক্তিকে, আপনার বুদ্ধির ভান্ডার থেকে একটা বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করবেন ?

–আজব ! আমি কি আপনার শার্টের বোতাম সেলাই করে দিবো নাকি ?
–সেটা এখন না হলেও চলবে । এটলিস্ট, আপনার হিজাবের ডান পাশ থেকে ছোট্ট একটা আলপিন খুলে দিলেও পারেন।
–আলপিন খুলে দিবো মানে ?
–আরে আশেপাশে মুচির দোকান নেই।

থাকলে আপনাকে হিজাবের আলপিনটা দিতে বলতাম না। হিজাবের থেকে একটা আলপিন খুলে লোকটাকে দিয়ে দিলাম।তারপর আমি গাড়িতে উঠে চলে গেলাম।রাস্তাঘাট ে এমন অদ্ভুত মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা আসলেই বিব্রতকর ! বাড়িতে গিয়ে কাঁধের ব্যাগটা টেবিলে রাখতেই ছোট বোন দৌঁড়ে এসে বলল,

–বল তো আপুনি, আজ কে আসবে ? ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাবে গাঁথা আলপিন গুলো ধীরে ধীরে খুলছি আর বলছি,
–কে রে আসবে ?
–অদ্ভুত ধরনের একটা লোক ।
–অদ্ভুত ধরনের লোক মানে ?
–হ্যাঁ রে । শুনেছি লোকটার এত্ত বড় দুটো চোখ,কান,হাত আর একটা মাথা আছে ।
–ফাজিল, দুষ্টুমি রেখে বলতো, কে আসবে ?
–আরে আপুনি তোকে দেখতে আসবে । কথাটা বলেই শিখা চলে গেলো।শিখা হলো আমার ছোট বোনের নাম। আর আমার নাম রেখা।
–এই রেখা তৈরি হয়ে নে। ওরা চলে আসবে।

মা কথাটা বলে, তাড়াহুড়ো দেখিয়ে চলে গেলো।কিছুই ভালো লাগেনা। এই নিয়ে কতবার যে ছেলেপক্ষের সামনে গিয়েছি তা একমাত্র আল্লাহ্ জানে।বিরক্ত চলে এসেছে এসব ছেলেপক্ষ নামের আজব প্রাণীগুলোর উপর।
আজ আর সাজতে পারবো না।মাত্র ভার্সিটি থেকে এসেছি।বিরক্তি, ক্লান্তি সব একসাথে জমা হয়েছে।তাই গায়ের জামাটা পরেই ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ছেলেপক্ষের সামনে গিয়ে বসলাম।

–আসসালামু আলাইকুম। নিচের দিকে তাকিয়ে সালামটা দিলাম।
–ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

বসো মা । বসার অনুমতি পেয়ে আর দেরি না করেই বসে গেলাম।তবে যতক্ষণ বসেছিলাম মাথা নিচ থেকে উপরে উঠাতে বেশ সংকোচ হচ্ছিলো। তাই মাথা উপরে উঠায় নি।আর ছেলেকেও দেখার চেষ্টা করিনি। তারপর তারা কয়েকটা প্রশ্ন করেই তাদের ছেলেকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিলেন, আলাদা কথা বলার জন্য। সিঁড়িপথ পার করে ছাদে আসতেই পেছন থেকে একটা আওয়াজ আসলো,

–মানুষ এতোটা মায়াবী হয় কি করে ? আপনি জানেন ?
–আমি ঘুরে তাকাতেই প্রচন্ড অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাকে দেখতে আসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কারণ উনি হলেন সেই, যার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার বাস স্টেশনে দেখা হয়েছিলো।

–অবাক হলেন ? মৃদু হেসেই লোকটা বললো ।
–আপনি ? কিন্তু কি করে ?
–জ্বী আমি।গত কিছুদিন আগে আমার মা আপনার একটা ছবি আমাকে দিয়েছিলো দেখার জন্য।আর বলেছিলো বউ হিসেবে আমার পছন্দ হয় কিনা সেটা জানাতাম।
–তারপর ?
–তারপর প্ল্যান করে, মায়ের থেকে আপনার বাসার ঠিকানা নিয়ে, বাস স্টেশনে আসতেই আপনাকে দেখলাম।তবে আপনাকে দেখে আমি তখন যতটা না অবাক হয়েছি এখন তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছি।

–কেন ?
–কারণ আমি ভেবেছিলাম,আপনি হয়তো সাদা শিফন শাড়ি পরেই আমাদের সামনে আসবেন।কিন্তু আপনি এতটা সাদাসিধে ভাবে আসবেন আমি ভাবতেই পারিনি।অবশ্য আপনি হয়তো জানতেন না যে, আমরা আপনাকে দেখতে আসবো।কারণ, ঘন্টা দুয়েক আগে আমিও জানতাম না যে, বাড়ি থেকে মা,বাবা আপনাকে আজই দেখতে আসবে। সাথে আমাকে নিয়েই আসবেন।

— এখন তাহলে চলুন।নিচে গিয়ে বরং সবাইকে বলে দিন, মেয়ে আপনার পছন্দ হয় নি।
–এখন নিচে গিয়ে সবাইকে বলবো , বউ আমার ভীষণ লক্ষী।বিয়ের আগে বরের সেবা করেছে।বরের জুতা…
–থামেন । প্লিজ, নিচে গিয়ে আজকে বিকেলের কথাটা বলবেন না।তাহলে সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে।
–ঠিক আছে, বলবো না । কিন্তু সাদা শিফন শাড়ি…
–আছে । কিন্তু সেটা তো আর এখন পরার সুযোগ নেই। সেটা বরং বিয়ের পরেই একদিন পরবো ।
–তার সাথে চোখে গাঢ় কাজল, আর হাতে দু’মুঠো কাচের চুড়ি পরে নিয়েন।
–আর এলোচুলে বেলীফুলের মালাটা ?
–কইরে তোরা ? নিচে নেমে আয় । হঠাৎ মায়ের ডাক শুনে বললাম,
–মা ডাকছে।চলুন নিচে যাওয়া যাক।
–বেলীফুলের মালাটা জমা রইলো।

মিস রেখা, সেটা আমি নিজেই আপনাকে পরিয়ে দিবো। অবশেষে বিয়েটা ঠিক হয়েই গেলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত