কুঞ্জলতার নীল শাড়ি

কুঞ্জলতার নীল শাড়ি

বিয়ের কিছুদিন পর কুঞ্জ হঠাৎ একদিন আকাশকে বলে,

_আমাকে একটা নীল শাড়ি কিনে দিবেন?
_কি হলো বলোতো কুঞ্জ?বিয়ের আগে তো তোমাকে কতবার বলেও তোমাকে নীল শাড়ি পরাতে পারিনি।লাল,সাদা,বেগুনি কত রঙের শাড়ি পরে আমার সাথে ঘুরেছ। কই নীল শাড়ি তো পরে আসোনি।আজ হঠাৎ নীল শাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলছো যে?

_আগে বলেন না দিবেন কিনা?
_কেনো দিবোনা?বিয়ের আগে বেকার প্রেমিকের পকেট শূন্য ছিলো বলে টঙ দোকানে চা আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খেয়েই দুইটা বছর কাটিয়ে দিলে।
_উফফ।আপনি চুপ করবেন?লাগবে না আমার শাড়ি।কত কথা শুরু করলেন এখন। আকাশ কুঞ্জর হাত ধরে পাশে বসালো।

_আচ্ছা বাবা কাল ই তোমার জন্য নীল শাড়ি নিয়ে আসবো।কিন্তু এখন বলো আগে কোনোদিন কেনো পরোনি?
_শাড়ি যে আমার ভীষণ প্রিয় আপনি তো জানেন সেটা।প্রায় সব রঙের শাড়িই আমার পরা হলো। কিন্তু নীল শাড়ি আমি তুলে রেখেছিলাম। খুব ইচ্ছে ছিলো নীল শাড়ি আমি বিয়ের পরেই পরবো। আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

_আচ্ছা এই ব্যাপার?আমাকে তো আগে কোনোদিন বলোনি।আমি আরো ভাবতাম তোমার বোধহয় নীল শাড়ি ভালো লাগেনা সেজন্য পরোনা।
_এখন তো শুনলেন। এবার কিনে দিবেন আমি পরবো।

এই বলে কুঞ্জ পাশের রুমে কি একটা কাজে চলে গেলো।আকাশ চুপ করে শুয়ে আছে আর ভাবছে একটা মেয়ের এ কেমন অদ্ভুত ইচ্ছে? যে মেয়েটার নীল শাড়ি এতো পছন্দ সে বিয়ের পর পরবে বলে এখনো নীল শাড়ি পরলো না।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মুচকি হাসলো। কুঞ্জ রুমে এসে দেখলো আকাশ খুব ভাবুক হয়ে শুয়ে আছে আর ওর মুখে মুচকি হাসি।

_এই যে কি নিয়ে ভাবছেন?আবার ঠোঁটের কোনায় চাপা হাসিও দেখা যায়। ব্যাপার কি বলুন আমাকে।
_কুঞ্জ এদিকে আসো।আমার বুকে একটু মাথা রাখো।
_টেবিলে খাবার রেখে আসছি।এখন আপনার ঢং বাদ দিয়ে খেতে আসেন তো।
_খাবো পরে।তুই এদিকে আয়।বুকে শুয়ে থাকতে বললাম না তোকে।বউ তুই আজকাল আমার কথা শুনিস না।
_একটু হলেই বলেন কথা শুনিনা।আচ্ছা শুনবো ই না।আসবোনা এখন।

এই বলে কুঞ্জ রুম থেকে চলে যেতেই আকাশ বিছানা বালিশ ছেড়ে এবার উঠে সামনে দাঁড়ালো। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

_ভালোবাসি বউ।

কুঞ্জ হাসতে হাসতে দুহাত দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলে পাগল একটা আমার।আমাকে নিয়েই কিছু একটা ভাবতে ছিলেন আমি জানি।

_হ্যাঁ তোকে নিয়েই ভাবছিলাম।নীল শাড়ি তুলে রেখেছিস। এতো প্রেম জমা করে কিভাবে রাখিস তুই?
_ইসস।আপনিই বা কম কিসে? বিয়ের পর প্রথম রাতে আমাকে পায়ে আলতা পরিয়ে দিলেন যে।কই আগে তো কোনোদিন আলতা দিতে বলেন নি।জানেন পায়ে যখন আলতা পরিয়ে দিয়েছিলেন আপনাকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রেমিক মনে হয়েছিলো।

_হইছে এবার চল খেয়ে আসি।

পরেরদিন আকাশ অফিস ছুটির দু ঘন্টা আগেই বের হয়ে কুঞ্জর জন্য নীল শাড়ি,কাচের চুড়ি,কাজল আর টিপ কিনে বাসায় ফিরলো।এদিকে কুঞ্জও সুতি কাপড়ের সাদা ব্লাউজের বোতাম লাগানোর কাজ শেষ করলো। ঘাম শুকানোর পর আকাশ গোসলে ঢুকলে কুঞ্জ শাড়িটা বের করে বাঙালি মেয়েদের মতো গুছালো ভাবে পরে ফেললো।কপালে মাঝারি সাইজের একটা টিপ দিলো।চোখে ভারী করে কাজল মাখলো।দুহাত ভরে চুড়ি পরলো।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে চুল গুলো খোঁপা করে ফেলতেই আকাশ ওয়াশরুম থেকে বের হলো। কুঞ্জলতার শরীর প্রথমবারের মতো নীল রঙে জড়ানো দেখে আকাশের চোখের পাতা নড়ে না। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে কুঞ্জ সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

_নীল রঙে কেমন লাগে আমাকে?

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আকাশ ওর অফিসের ব্যাগ থেকে কতগুলো বেলি ফুলের মালা বের করে নিয়ে কুঞ্জর খোঁপায় খুব সুন্দর করে জড়িয়ে দিলো।

_নখে নেইলপলিশ লাগাও নি?
–সময় পাইনি।আপনি তো গোসল থেকে বের হয়ে গেলেন।
_আচ্ছা এসো আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।বসো এখানে।

নখে নেইলপলিশ লাগানো শেষ হয়ে গেলে কুঞ্জর পায়ে আজকে আবার একবার আলতা মাখানোর ইচ্ছে হয় আকাশের।ড্রয়ারে রাখা আলতা বের করে যত্ন করে দু পা সাজিয়ে নিলো।

_আপনি কিন্তু এখনো বললেন না আমাকে কেমন লাগে নীল রঙে? উত্তরে আকাশ বললো,
_ কুঞ্জ আজ তোমাকে আবার নতুন করে পূজা করার ইচ্ছে হয় আমার।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত