নিথর দেহ পড়ে আছে মেঝেতে।শরীরে কোথাও রক্তে ফোটা বা দাগ নেই। মেঝেতেও কোনো দাগ নেই। পুলিশ ভেবে পাচ্ছে না এটা খুন নাকি সাধারণ মৃত্যু।পুলিশ ঘোরে খোজা খুজি করে কিছুই পেলো না।বাড়ীর বাহিরে থাকা মানুষদের কাছ থেকে জানতে পারলো,যে মারা গেছে তার নাম তুষার।কিন্তু তিনি এখানে থাকেন না,তিনি ঢাকা উত্তরা থাকেন নিজের বাড়ীতে,এই বাড়ীতে মাঝে মাঝে আসেন।পুলিশ তুষারের বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে চলে গেলো সেখানে আর যাবার আগে তার লাশটাকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিলো!
পুলিশ তুষারের বাসায় পৌছালো।দরজায় এসে কলিংবেল চাপ দিতেই দরজা খুলে দিলো তানিয়া(তুষারের স্ত্রী)! পুলিশ জিজ্ঞাসা করলো “এটা কি মোহাম্মদ তুষার আব্দুল্লাহ তার বাসা”। তানিয়া উত্তর দিলো “হ্যা,এটা তারই বাসা” তানিয়া আবার জিজ্ঞাসা করলো “কিন্তু কেনো,আর আপনারা কারা”!পুলিশ জানালো তুষার মারা গেছে, কিন্তু কিভাবে মারা গেছে জানা যায় নি। তানিয়া এই কথা শুনেই নিজেকে সামলাতে পারলো না দরজায় ঢেলান দিয়ে কাদতে শুরু করলো, আর তুষারকে দেখতে চাইলো। পুলিশ তাকে শান্তনা দিয়ে বললো “তার লাশকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে”! তানিয়া বললো তাকে নিয়ে যেতে।
পুলিশ তাকে নিয়ে গেলো হাসপাতালে। গিয়ে তুষারের লাশটাকে দেখে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে গেলো।তানিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। তারপর পুলিশ চলে গেলো সেখান থেকে আর ডাক্তারকে বললো ” তার জ্ঞান ফিরলে পুলিশকে জানাতে”! থানায় তুষারের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পৌছালো।শরীরে এক প্রকার বিষ পাওয়া গেছে।কিন্তু মৃত্যুটা হয়েছে হার্টঅ্যাটাক করে।”এটা কি করে সম্ভব বিষ থেকে মৃত্যু না হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু” এগুলো ভাবতে লাগলো পুলিশের এস আই রিপন। তিনি আবার চলে গেলেন সেই তুষারের লাশ পাওয়ার জায়গায়। কিন্তু সেখানে খুজেও তেমন কিছু পেলো না!
ওদিকে তানিয়ারও জ্ঞান ফেরার কোনো নাম নেই।দুইদিন এভাবেই চলতে থাকলো। হঠাৎ তানিয়া স্বপ্নে দেখতে পেলো” তুষার তার হাত ধরে তাদের বাসার স্টোর রুমে নিয়ে গেলো, আর একটা বাক্স দেখালো” তারপরেই তানিয়ার জ্ঞান এলো আর তানিয়া চিৎকার করতে লাগলো। ডাক্তার এসে শান্ত করার জন্য ঘুমের ইনজেকশন লাগিয়ে দিয়ে গেলো আর ডাক্তার ফোন করে পুলিশকে তানিয়ার অবস্থা জানালো। এস আই রিপন তানিয়াকে দেখতে এলো। তানিয়াকে দেখে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইলো আর ডাক্তারও অনুমতি দিলো।
ততক্ষনে তানিয়া জেগে উঠেছে আর ওর বাড়ীর সকলকে ডাকা হয়ে গেছে।রিপন তানিয়াকে জিজ্ঞাসা করে কিছুই জানতে পারলো না তেমন। কয়েকদিন পর বাসায় চলে এলো তানিয়া। তানিয়া তেমন সুস্থ হয়নি,কিছুটা মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে আছে।হঠাৎ তানিয়ার মনে পড়লো সেই স্বপ্নের কথা।তানিয়া সেই জায়গায় গিয়ে একটি ডাইরি পেলো।তখন তা সরাসরি পুলিশের হাতে দিলো। পুলিশ সেখান থেকে একটা ব্যাংক এর নাম আর লকারের নাম্বার পেলো!
সেই নাম্বারের লকারের জন্য সেই নামের ব্যাংকে চলে গেলো।সেই লকার খুলে তারা তুষারের অফিসের দুর্নীতিকারিদের একটা লিস্ট আর প্রমাণ স্বরুপ কয়েকটি ছবি পেলো।আর পুলিশ সেই অনুযায়ী লিস্টের সকলকে ধরলো।আর জানতে পারলো তাদের প্লানেই তুষারকে মারা হয়েছে,প্রথমে তাকে বিষ খাবারের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয় আর তারপর তাকে একটি চিঠি দেওয়া হয় যেখানে তার স্ত্রী মারা গেছে জানানো হয়। সেখান থেকেই হার্টঅ্যাটাক হয় তার।আর সে মারা যায়।
তখন সেখান থেকে চিঠি আর খাবারের চিহ্ন গুলো সরিয়ে ফেলা হয় তানিয়া সব কিছু জেনে তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানায়! তানিয়া তুষারের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে বলতে লাগলো “সব সময় তুমি এতো ভালো ছিলে, কখনো এতটুকুও কষ্ট দাও নি কিন্তু আজ কষ্ট দিয়ে তুমি চলে গেলে”! তখনই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো!!!