আবির: ভাই, আম্মায় কইছে পরশু দিন নাকি আমার জন্মদিন।
আমি: বলো কি! এটা তো ভালো খবর। তো কি করবে তোমার জন্মদিনে?
আবির: কিছু না।
আমি: কেনো, সবাই তো জন্মদিনে অনেক আনন্দ করে, খাওয়া-দাওয়া করে। তুমি করবে না?
আবির: এর লাইগা তো অনেক টাকা দরকার। আমি এতো টাকা পামু কই? (মুখ কালো করে)
আমি: আচ্ছা, টাকা আমি দিবো। তুমি কি খাবে বলো?
আবির: আপনে কেনো টাকা দিবেন? আমার টাকা লাগবো না।
আমি: আমাকে ভাই ডেকেছো না? মনে করো যে তোমার ভাই টাকা দিবে। এখন বলো কি খাবে?
আবির: আমি কিন্তু আমার আম্মারে ছাড়া খামু না।
আমি: আচ্ছা, ঠিক আছে। বলো কি খাবে?
আবির: (কিছুটা ইতস্তত হয়ে) আমার বিরিয়ানি খাইতে ইচ্ছা করে। কিন্তু…
আমি: সমস্যা নাই, তোমাকে বিরিয়ানিই খাওয়াবো। আমি পরশু বিরিয়ানি নিয়ে আসবো।
(আবিরের মুখে কেমন যেনো আনন্দের ছাপ দেখতে পেলাম। নিজের কাছেও ভালো লাগছে।) বলছিলাম আবিরের কথা। সে বস্তিতে থাকে। ছোটবেলায় ওর বাবা মারা গেছে। মা ভিক্ষা করে কোনোমতে খাবার জোগাড় করে। কোনো কোনো বেলায় ওদের না খেয়ে থাকতে হয়। কিছুদিন আগেই আবিরের সাথে আমার পরিচয় হয়। ছেলেটাকে ভালোই লাগে। চেহারার মধ্য কেমন একটা মায়া আছে। ওর সাথে মাঝে মাঝে দেখা করে আড্ডা দিয়ে আসি।
আজকে আবিরের জন্মদিন। তাই কলেজ থেকে এসে তাড়াতাড়ি বাজারে চলে গেলাম। আমার কাছে কিছু টাকা জমানো ছিলো। তা দিয়ে আবিরের জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনলাম। হোটেলে গিয়ে ৩ প্যাকেট বিরিয়ানি কিনলাম। ১ প্যাকেট আবিরের জন্য, ১ প্যাকেট আবিরের মায়ের জন্য আর ১ প্যাকেট আমার জন্য।
ওদের সাথে খাবো বলে বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসি নি। সিএনজি তে বসে আবিরের কথা ভাবছিলাম। পাঞ্জাবী আর খাবার পেয়ে কতই না খুশি হবে সে। আজ আবিরের হাঁসি মাখা মুখ দেখতে পাবো। এটা ভেবে আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। সিএনজি থেকে নামার পর রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড় দেখতে পেলাম। একটু এগুনোর পর ভিড় থেকে কান্নার শব্দ শুনে অবাক হই। ভিড় ভেদ করে ভেতরে ঢোকার পর আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। আবির কে কোলে নিয়ে আবিরের মা কাঁদছে। আবির নাকি রাস্তায় দৌড়াতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে!
আবিরের মা: তুই আমারে ছাইড়া চইলা গেলি! এখন আমার কি হবে? আমি কারে নিয়া বাঁচমু! এই দুনিয়াতে আমার আপন বইলা কেউ রইলো না।(কাঁদছে আর বলছে)
আমার চোখের কোণে পানি জমছে। আমার দেহটা যেনো নিথর হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না।
চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে “আবির বিরিয়ানি খাবি না? আবির আজকে না তোর জন্মদিন? উঠ আবির উঠ।”