ভাইয়া বলার অপরাধে এক মেয়েকে ঠাস করে চড় মারলাম। চড় খেয়ে মেয়েটি হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পরেও পরলোনা। পরে ল্যাং মেরে ফেলে দিলাম। সচরাচর মানুষ মাটিতে পরে গিয়ে ব্যাথা পেলো মাগো বলে চিৎকার দেয়। কিন্তু এই মেয়ে ‘কাউউউ’ বলে চিৎকার দিলো। মেয়েটি আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো, বলল
-ভাইয়া মারলেন কেন?
–আবার ভাইয়া কস?
-আরে আজব রেগে যাচ্ছেন কেন?
–আমি তোর কোন কালের ভাইয়া লাগি যে ভাই কস?
-মানে? তাই বলে ভাইয়া বলা যাবেনা?
–না বলা যাবেনা।
-হোয়াট রাবিশ?
এমনিতেই ভাইয়া বলছে মেজাজ খারাপ তার উপরে বলে রাবিশ। মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। মেয়েটির হাত ধরে সরাসরি ওদের বাসায় গেলাম। তারপর ‘মা বের হও’ চিৎকার শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির বাবা-মা বের হলেন। আমাকে তাদের মেয়ের হাত ধরা দেখে বললেন….
–এই ছেলে কে তুমি, আমার মেয়ের হাত ধরে আছো কেন?
-হাহা…চিৎকার করবেন না চৌধুরী সাহেব। আমি আজ থেকে এই মেয়ের ভাই। সেই হিসেবে বাসায় এসেছি। আমাকে আমার সম্পত্তি বুঝিয়ে দিন আমি চলে যাব।
–মানে?
-মানে হলো আপনার মেয়ে আমাকে পাবলিক প্লেসে ভাইয়া বলেছে সেই হিসেবে আমি তার ভাই। আর এই বিশাল স্বয়সম্পত্তিতে আপনার মেয়ের ভাগ আছে, সো আমি ভাই হিসেবে এই সম্পত্তির দাবিদার।
–এই ছেলে কি বলছো পাগলের মতন এসব?
-আমাকে পাগল বলবেন না আমার চৌধুরী। নায্য পাওনা আমায় ফেরত দিন আমি চলে যাব।
–কিসের পাওনা তোমার?
-এই বিশাল সম্পত্তির অর্ধেক আমার। নইলে আমি মামলা করব আপনার নামে।
–কি তুই আমাকে মামলার ভয় দেখাস? জানিস আমি কে?
-আপনি যেই হোননা কেন, আমি কাউকে ভয় পাইনা। আমি আমার অধিকার আদায় করেই ছাড়বো।
–দেখো পাগলামি করোনা, ভালোই ভালোই বলছি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও নইলে খারাপ হবে।
-কি করবেন আপনি হু? ক্ষমতার অপব্যবহার আপনি করতে পারবেন চৌধুরী সাহেব। কিন্তু ন্যায় কখনো আঁটকাতো পারবেন না।
–রাবিশ, ইডিয়ট একটা। দাঁড়া হারামজাদা আমি এখনি পুলিশে ফোন করছি।
-হাহা আমি পুলিশ ভয় পাইনা চৌধুরী।
এককথা দুইকথা চৌধূরী পুলিশে ফোন করলো। আমার চিৎকার চেঁচামিচি শুনে এলাকার লোক চৌধুরী বাড়ির সামনে ভীড় জমালো। সবাই ফিসফিস করছে চৌধুরীর আরেক ছেলে আছে? চৌধুরী এত খারাপ লোক? ছিঃ ছিঃ ইজ্জত থাকলোনা। সবার এমন কানাঘুষা শুনে চৌধুরী রীতিমত ঘামা শুরু করলো। আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকালো। আমি বললাম….
-আমাকে গরম দেখিয়ে লাভ নেই চৌধুরী। আমার পাওনা সম্পত্তি আমায় বুঝিয়ে দিন চলে যাব আমি।
চৌধুরী লোকজনের সামনে কিচ্ছু বলার সাহস পাচ্ছে না। উনি বুঝতে পেরেছে বেশি কথা বললে কানাঘুষা আরো বেশি হবে। চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন মেয়েটির চোখে অশ্রু জমা হয়েছে। আমি মনেমনে বললাম… ‘এবার ভাইয়া বলার মজা বোঝেক হারামজাদী।’ পুলিশ চলে এসেছে আমার হাতে হ্যানকাপ পরানো হয়েছে। আমাকে থানায় নেওয়া হবে। কিন্তু আমি উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করছি। আমার চেঁচামিচিতে এলাকার কিছু লোক সোচ্চার হলো।একজন বলা শুরু করলো….
–এই ছেলে কে আমরা জানতে চাই, তার আগে আমরা ওকে কোথাও যেতে দিবনা। সবাই কি বলেন?
-হ্যাঁ হ্যাঁ যেতে দেওয়া যাবেনা। আমরা জানতে চাই কে এই ছেলে। (সবাই মিলে)
শেষে জনগণের তীব্র আন্দোলনের কাছে হার মানলো পুলিশ। তারা সিদ্ধান্ত নিলো গ্রামে পঞ্চায়েত বসবে, শালিস করবে। পুরো এলাকা মাইকিং করা হলো। এক ঘণ্টার মধ্যে চৌধুরী বাসার সামনে শালিস বসানো হলো। আমাদের গ্রাম পাশের গ্রামেই, আমার নাম মাইকিং এ শুনে আমার বন্ধুরা সবাই চলে আসলো। আমার মা বাবাও আসলো আমাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে রইলো। আব্বা আম্মাকে বললাম শুধু দেখো কি হয়। আর বন্ধুদের ফোনে সব আগেই বলে দিছি। আমার বন্ধুরা মিছিল শুরু করলো….
–বিচার চাই বিচার চাই…ভাইয়া বলার বিচার চাই। জেলের তালা ভাংবো জনির সম্পত্তি আদায় করে নিব।
–এই তোমরা চুপ করো, আগে দেখি কাহিনী কি। (বিচারকরা)
সবাই চুপ হলো। আমাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো কাহিনী কি। আমি সবকিছু খুলে বললাম। সবশুনে বিচারকরা হা করে তাকিয়ে রইলো। বলল….
–এইডা কিছু হইলো?
-হাহা আপনারা কি বলছেন? আমাকে ভাইয়া বলেছে আমার কলিজায় লেগেছে কথাটা আমি এর বিচার চাই।
–বিচার চাই বিচার চাই…ভাইয়া বলার বিচার চাই। জেলের তালা ভাংবো জনির সম্পত্তি আদায় করে নিব। (বন্ধুরা) আমি আবারো বললাম….
-আমাকে ভাইয়া বললো কেন?
–আজব তাহলে কি বলবে?
-ভাইয়া বলা যাবেনা।
–আর তাছাড়া মুসলমান সবাই ভাই ভাই। এটাতো জানো?
-তাহলে মুসলমানেরর সম্পত্তিও সবার। দিবেন আমার নামে আপনাদের সম্পত্তি?
–এ কেমন যুক্তি?
-হ্যাঁ এটাই যুক্তি, আমি আমার সঠিক বিচার চাই।
আমার ঘাউড়ামি আর আমার বন্ধুদের তীব্র আন্দোলনে গ্রামে বিচারকারা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। চৌধুরীর মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি কাঁদো কাঁদো অবস্থা। ওরে আকাশে বাতাসে শান্তি। ইতিমধ্যে চৌধুরীর বাসায় শালিসেরর কথা শুনে সাংবাদিকরাও এসেছে। একটু দয়া জাগলো মনে। সবার উদ্দেশ্যে বললাম….
–আমি জানিনা চৌধুরী সাহেব কি করবেন। উনি যদি আমার পাওনা না দেয় আমি হাই কোর্টে মামলা করব। নতুন ধারার ভাইয়া বলার অপরাধ জারি করব।
-আচ্ছা বাবা তুমি কি চাও বলোতো? (বিচারকরা)
–আমি চাই আমার সম্পত্তি।
-বাবা একটু বোঝার চেষ্টা করো? এত মানুষজন, সাংবাদিকরা এসেছে। চৌধুরী সাহেবের ইজ্জত থাকবেনা।
–আমি অতকিছু বুঝিনা আমাকে ভাইয়া বলল কেন? আমি সম্পত্তি চাই, চাই।
-বিচার চাই বিচার চাই…ভাইয়া বলার বিচার চাই। জেলের তালা ভাংবো জনির সম্পত্তি আদায় করে নিব। (বন্ধুরা)
–তোমরা থামো সবাই। চৌধুরী সাহেব আপনিই বলুন কি করবেন?
-আপনারাই বলুন কি করার আছে আমার। আমি বুঝতে পারছিনা কি হবে।
চৌধুরীর কথাবার্তা শুনে একটু মায়া হলো। উনার মেয়ের দিকে তাকালাম আমার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম….
–যাইহোক আমি বেশি কিছু চাইনা। শুধু ১৫ শতাংশ জমি আমার নামে দিলেই হবে।
-কিইইই… (বিচারকরা)
–না দিলে আন্দোলন করব।
-বাবা এসব বাদ দেওয়া যায়না?
–না না না, বিচার চাই বিচার চাই…ভাইয়া বলার বিচার চাই। জেলের তালা ভাংবো জনির সম্পত্তি আদায় করে নিব। (বন্ধুরা)
অবস্থা ভয়াবহ দেখে চৌধুরী সাহেব রাজি হলেন। আমাদের গ্রামের পাশের উনার জমির পাচ শতাংশ আমার নামে লিখে দিলেন। জমি পেয়ে বন্ধুরা সহ মিছিল করে বাসায় গেলাম। দিনকাল ভালো যাচ্ছে। এখন কোন ছেলে মেয়েই ভাইয়া বলার সাহস পায়না। সবাই ‘ জনি বাবু ‘ বলে ডাকে। ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ পিছন থেকে এক মেয়ে বলল….
–ভাইয়া শুনুন?
দেখছেন কার্বার? তাও ভাইয়া বলে। মেজাজ তিনগুণ খারাপ হলো। পিছনে তাকালাম মেয়েটি আমাকে দেখেই জিহ্বায় কাঁমড় দিলো। বলল….
-সরি ভাইয়া আমার ভুল হয়েছে, আমি জানতাম না আপনি জনি বাবু।
–আবার ভাইয়া বললা?
-সরি সরি জনি বাবু। প্লিজ সরি…
–নো সরি আমি সম্পত্তি চাই।
-প্লিজ জনি বাবু বোঝার চেষ্টা করুন।
সুন্দরী মেয়ে এত রিকুয়েস্ট করছে। তাই মেয়েটিকে ক্ষমা করে দিলাম। তবে শর্ত একটাই আমাকে সহ আমার সব ফ্রেন্ডকে হোটেলে খাওয়াতে হবে। উপায়ন্তর না পেয়ে মেয়েটি রাজি হলো। তবে মুখটা মলিন, মনে মনে বললাম ভাইয়া বলার মজা বুঝো। যাতে নেক্সট আর না বলো। সবাই মিলে ইচ্ছেমত চিকেন বিরিয়ানি, পোলাও, কোরমা খেলাম। কেউ কেউ পার্সেল নিলো বাসায় গিয়ে খাওয়ার জন্য। সবার দেখাদেখি আমিও পার্সেল নিলাম। মুচকি হেসে হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসলাম। মেয়েটি মুখ কালো করে বসে আছে। মোটামুটি একটা ভাব আইছেনা? আমি কি খারাপ কিছু করেছি? কারো বিরুদ্ধে বলেছি? তবুও একদল লোক বলবে, জনি বালা না। আমিওতো বলি…’আমিতো ভালা না ভালা লইয়া থাইকো। সুযোগ বুঝে মাঝেমাঝে দুলাভাই ডাইকো।’