বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে চলেছে৷ এই অবস্থায় ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব৷ খুব করে ইচ্ছা করছে বৃষ্টিগুলো ছুঁয়ে দিতে, তবে আমি পারি না৷ এই বৃষ্টির সাথে আমার মনের পুরোনো শত্রুতা আছে৷ বৃষ্টিতে ভিজলে আমি কঠিন জ্বরে পড়ে যায়৷ আর এই জ্বরটাই বেশি কষ্টের৷ তখন আমার সময়টা খুব বিরক্ত লাগে৷ যেন সময়গুলো খুব ফ্যাকাশে লাগে৷ চারদিকে খুব মনমরা লাগে৷ যখন এই কথা গুলা ভাবতেছি তখন আমার পাশে ইরা এসে উপস্থিত৷ মেয়েটা কেমন যেন আমার সাথে মিলে যায়৷ তার সাথে অনেক গল্প করা যায়৷ আর ইরা আমার বোনের নাকি একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড৷ আর মেয়েটা খুব সুন্দর৷ আচ্চা শ্যাম বর্ণের মেয়ে গুলা এত মায়াবী কেন৷ তার চোখ দুটোতে অসম্ভব মায়া৷ আর সে খুব সুন্দর করেই কাজল দেয়৷
আমার পাশে এসেই ইরার বলল,
 -ছাতা আনেন নাই?
 -নাহ ভুলে গেছি৷ ছাতা নিয়ে বের হতে বেশ বিরক্ত লাগে আমার৷
 -এই কি বলেন? এইটা তোহ একদম বাজে কথা৷
 -আর এইটা বৃষ্টির সময়ও না৷ শরৎ এর বৃষ্টি গুলো হঠাৎ করেই হয়৷
 -আচ্চা চলেন আমার সাথে
 কথাটা শুনা মাত্রই খুব অবাক হয়ে গেলাম৷ আসলে মেয়েটাকে আমি বুঝে উঠতে পারি না৷ আর এই কথাটা কেন বলল সেইটাও বুঝতে পারছি না৷ আমি বললাম,
 -না না লাগবে না৷ বৃষ্টি হয়ত কমে যাবে কিছুক্ষণের মধ্য৷
 -আপনি কি জ্যোতিষী নাকি
 আর কিছু বললাম না৷ তার সাথে হাঁটতে লাগলাম৷ তার সাথে হাঁটার দারুন এক অনুভূতি৷ হয়ত মেয়েটার প্রেমে পড়ার ডাক পরছে৷ হাঁটতে হাঁটতে বললাম,
 -আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে
 -কিভাবে বলছেন?
 -এই এলোমেলো চুল গুলোতে ভাল মানিয়েছে
 -এই পাগলের মত লাগছে৷ তাড়াহুড়ো করে আছড়াতেই ভুলে গেছি৷
 -অহ আচ্চা৷ মাঝে মাঝে ভুল গুলো সুন্দর হয়ে ওঠে৷
 তারপর নিরব ভাবে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম বাসায়৷ তার বাসা আমার বাসার পরেই৷
যখম বাসায় আসলাম তখন সিনথিয়া(আমার একমাত্র বোন) বলল,
 -ভাইয়া তুই নাকি ইরার সাথে আজকে এক ছাতার নিচে এসেছি?
 -হুম কিন্তু তুই কি করে জানলি?
 -কেন জানব৷ জানিস আমি পুরো দুনিয়ার খবর রাখি৷
 -তাই নাকি৷ তুই কি গুগল?
 -নাহ আমার এক বন্ধবী বলল৷
 -তুর বান্ধবী গুলা দেখি খুব কথা লাগায়৷
 -তুই যে ইরার প্রেমে সাতার কাটতেছিস আমি বুঝি সব৷
 -তুমি বেশি কথা বলিও না
 এই বলে রুমে চলে আসলাম৷ জানি তার সাথে তর্ক করলে শেষ হবে না৷ শুধু বাড়তেই থাকবে৷
খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ যখন ঘুম ভাঙলো তখন চাদে গেলাম৷ তখন দেখলাম ইরা আর সিনথিয়া গল্প করছে৷ আমি যাওয়া মাত্র সিনথিয়া চা আনার নাম করে মুচকি হেসে চলে গেল৷ জানি বোনটা আমার সময় করে দিল৷ তখন ইরা বলল,
 -ঘুম ভাঙলো আপনার
 -আমি ঘুমাইলাম আপনি জানেন কি করে?
 -সিনথিয়া বলল তাই আরকি৷
 -আসেন গল্প করি
 -গল্প তোহ জানি না
 -আসলে গল্প জানতে হয়৷ কথা বলতে বলতে একটা গল্প এমন হয়ে যাবে
 -তাই খুব সুন্দর কথা জানেন দেখি
 -লজ্জা দিচ্ছেন?
 -না তোহ৷ আজকে আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে৷ অথচ কে বলবে কিছুক্ষণ আগে আকাশ অঝরে কান্না করেছিল৷
 -শরৎ এ এইরকম হয়৷ আকাশটা হঠাৎ কান্না করে৷ আবার হেসে ওঠে৷
 -হুম
 তখনই সিনথিয়া এসে উপস্থিত৷ তাই আমরা তিনজন আর কিছুক্ষণ গল্প করেই ইরা বাসায় চলে গেল৷
আজ কয়েকদিন থেকে মনটা খুব খারাপ৷ কারন একমাত্র বোনের বিয়ে ঠিক হল৷ আসলে বোনটা আমার অতিপ্রিয় মানুষের মধ্য অন্যতম৷ বোনটা আমার খুব কাছের বন্ধু, ঝগড়া করার সাথী৷ আর পৃথিবীর অর্ধেক৷ দিন এগুতে এগুতে বোনের বিয়ের দিন এগিয়ে আসল৷ তার বান্ধবী সব এসেছে৷ কিন্তু আমার মন খুঁজছে ইরাকে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে না৷ তখন সিনথিয়া এসে বলল,
 -এইভাবে কাকে খুঁজতেছি?
 -ইরাকে খুঁজতেছি
 -তাই বল৷ অই দেখ ইরা আসছে
 দেখে আমি পুরাই অবাক৷ নীল শাড়িতে একজন পরী হেসে খেলে বেড়াচ্ছে৷ ঠিক আমার মনের মত করে সেজে আসছে৷
 -এইভাবে কি দেখিস৷ নজর পড়বে তোহ
 -পড়বে না দেখিস
 আর মনে মনে ভাবতেছি৷ আজকে যে করেই হুক তাকে আমার মনে কথা গুলো বলে দিব৷ আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছে না৷ আর লেখাপড়াটাও শেষ হয়ে এলো৷
যখন মেহেদী অনুষ্ঠান শেষ হল৷ তখন সিনথিয়া এসে বলল,
 -তুই ইরাকে এত ভালবাসিস বলতেছিস না কেন?
 -বলব কোনো একদিন৷
 -এই একদিনটা কখন হবে৷ ওর বিয়ে হলে গেলে৷
 -কেন৷ আর তুই এইসব বলছিস কেন?
 -কেন তোমার ডায়রিতে এত সুন্দর সুন্দর লিখা লিখলে তার নামে তাই আরকি
 -আমার ডায়রি কেন পড়েছিস?
 -এমনে৷ বোনের নামে তোহ কিছু লিখিস নাই৷
 -তুই আর আমি হলাম এক জানিস৷ নিজেকে নিয়ে লিখব৷
 এই কথাটা বলতেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগল পাগলী বোনটা আর বলল,
 -ইরা চাদে আছে৷ তুর জন্য অপেক্ষা করছে
 -আমার জন্য৷ মানে তুই বলে দিয়েছিস
 -হুম৷ আর যতক্ষন তুই প্রপোজ করবি না৷ ও কিন্তু হ্যা বলবে না৷
 -আচ্চা প্রপোজ করে আসি কেমন?
 এই বলে চাদে চলে গেলাম৷
যখন চাদে আসলাম তখন দেখলাম ইরা একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আর তখন বললাম,
 -কেমন আছেন?
 (পিছনে ফিরে আবার নিশ্চুপ) তখন আমি আবারো বললাম,
 -কেমন আছেন?
 -ভাল (একটু অভিমানী কন্ঠে)
 -মন খারাপ কেন?
 -অনেকক্ষণ হল আসলাম৷ কিন্তু আপনি একটিবারের জন্য কথা বললেন নাহ৷
 -দুঃখিত৷ আসলে ব্যস্ত ছিলাম৷ একমাত্র বোন এর বিয়ে তাই৷ আর আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে৷
 -হুম৷ অনেক ছেলেই বলেছে
 -আপন কি ছেলেদের সামনে ঘুরছেন নাকি শুধু
 -না তোহ আপনার বন্ধুরা তোহ এইরকম বলছে
 -ওরা এইরকম৷ আচ্চা একটা কথা বলি শুনেন
 -কিহ বলবেন বলেন
 -আসলে জানেন আমি একটা মায়াবীর স্বপ্ন দেখি খুব৷ তাকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছা করে৷ তার কাজল কালো চোখের গভীর মায়ায় হারিয়ে অতল সমুদ্রে৷ তার সামনে আসলে তার চোখ দুটো আমাকে গোলক ধাঁধায় ফেলে দেয়৷ আমাকে গুলিয়ে দেয়৷ আমি যখন তার সামনে যায় তখন আমার সব কথা হারিয়ে যায়৷ তার চোখের মায়ায়৷ তাই তোহ আজ চোখ বন্ধ করে আকাশকে অনুভব করে বলে দিচ্ছি সেই মানবীকে৷ ভালবাসবেন একটু আমাকে৷
ইরা কিছু না বলে আমাকে জরিয়ে ধরল৷ হঠাৎ করেই সে কান্না শুরু করল৷ আমি বললাম,
 -কান্না করছ কেন?
 -জানি না৷ তবে আপনাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে খুব ভাল লাগতেছে
 -এখনো আপনি বলতেছেন কেন?
 -আচ্চা দুঃখিত৷
 -আচ্চা
 কোন এক জ্যোৎস্না রাতকে সাক্ষী হিসেবে আমাদের মিলন হল৷ চাদের পাশেই কাঠ গোলাপ৷ কাঠ গোলাপের গন্ধে চারদিকে বিভোর৷ কোন একদিন পূর্ণভাবে আমাদের মিলন ঘটবে এই আশার আলো দেখা দিচ্ছে৷
 
  
 Loading...
Loading...













