সে দিন আমার ডায়াবেটিস হাসপাতালে যাওয়ার তারিখ ছিলো। তাই সকাল বেলা বাসা থেকে বেরিয়ে সি,এন,জি নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। বিশ, একুশ বছর যাবৎ হাসপাতালে আসা যাওয়া করি। ডাক্তার সাহেব আমাকে যে টেষ্ট গুলি করতে দিয়েছিলেন একটি ছাড়া সব গুলি করেছি। দুইঘন্টা পরে ঐ পরীক্ষাটা করাতে হবে তাই বসে পত্রিকা পড়ছিলাম।
একটি মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সে কয়েক বার আমাকে ডেকেছে। আমি শুনিনি সে দিকে খেয়াল করিনি। আমার পাশে বসা ভদ্রলোকের ডাকে ওনার দিকে ফিরে তাকালাম। উনি আমাকে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েটিকে দেখালেন। আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো আন্কেল আপনার নাম কি আফজাল সাহেব? আমি বল্লাম হ্যাঁ মা কি জন্যে? মেয়েটি বল্লাে আমার আম্মু আপনাকে ডাকছে।
একটু অবাক হয়েছিলাম চেনা নেই জানা নেই আমাকে ডাকবে কেনো? আমার নামটাই বা কি করে জানলেন?বুঝতে পারলাম আমি ওনাকে চিনতে না পারলেও উনি আমাকে নিশ্চয়ই চেনেন। আমি পত্রিকা আর হ্যান্ডবেগটি চেয়ারের উপর রেখে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। মেয়টি আমাকে এ গুলি নিয়েই আসতে বল্লো। আমি চলতি পথে তাদরকে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়নি। মনের ভেতরে শংকাটা রয়েই গেলো।
কাছে যাওয়ার পর মহিলা আমাকে চেয়ারটি দেখিয়ে বসতে বল্লেন। আমি ওনাকে সালাম জানিয়ে চেয়ারে বসলাম। এক সঙ্গেই দুই জনের সালাম বিনিময় হলো। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি তাকে চিনতে পেরেছি কি না? আমি সরাসরিই বলে দিলাম জি না আপনাকে চিনতে পারিনি। ওনি একটু মুচকি হেসে বল্লেন ভালো করে ভাবুন চিনতে পারবেন। একটু চিন্তা ভাবনার পর কন্ঠস্বরটা চেনাচেনা লাগছে। হ্যাঁ,এবার ঠিকই মনে পরলো স্কুল জীবনের সেই চন্চল মেধাবী ছাত্রিটির কথা। জিজ্ঞেস করলাম তুমি নিশ্চয়ই সেই মনোয়ারা আপা? সে বল্লো যাক দেরিতে হলেও চিনতে পেরেছো। ১৯৭৩ সালে মেট্রিক পরীক্ষার পর সেই যে স্কুল থেকে বেরিয়েছি তার পর আমাদের কখনো দেখা স্বাক্ষাৎ হয়নি। ৪৪/৪৫ বছর পর আজকে বারডেমে দেখা হলো। আমি বল্লাম তুমি একদম ঠিক বলেছো।
এর পর কোথায় থাকি কেমন আছি পরিবারের সবাই কেমন আছে? ছেলে মেয়রা কে কি করছে টুকি টাকি সব কিছুই আমাদের জানা হলো। জিজ্ঞেস করলাম কতো দিন যাবৎ তোমার ডায়াবেটিস? সে বল্লো,চার মাস হলো ডায়াবেটিস ধরা পরেছে। আজকে ডাক্তার সাহেবেকে দেখানোর ডেট। টেষ্ট গুলি করে ডাক্তার সাহেবের রুমে বইটা জমা দিয়েছি। তোমাকে দূর থেকে দেখেই চিনেছি তাই দেখা করতে এলাম। আমি বল্লাম বেশ ভালোই করেছো খুসি হলাম। তা ঔষধ পত্রের পাশাপাশি ইনসুলিন নাও? মনোয়ারা বেগম বল্লেন হ্যাঁ সকালে এবং রাত্রে নিচ্ছি। জিজ্ঞেস করলাম তোমার ডায়াবেটিস কতো? সে বল্লো ছিলোতো অনেক,এখন বর্তমানে ৭পয়েন্ট ৪ আছে। বল্লাম চিন্তা করোনা কন্ট্রোলেই আছে।
আমি ওর মেয়ে মুন্নিকে বল্লাম বুঝলে মা মনি স্কুলে আমরা একই ক্লাসে অনেকেই পড়েছি। এ মহুর্তে দুইজন মেধাবী বন্ধু আবু নাছের এবং মানছুরের কথা মনে পরে গেলো। ওরা দুই জন ছিলো যমজ ভাই,ওরাও আমাদের সঙ্গে পড়তাে। প্রাইমারী থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত তোমার আম্মুর সঙ্গে ছিলো ওদের কম্পিটিশন। ১,২,৩, রুল নাম্বার গুলি সব সময় তাদের দখলেই থাকতো। অন্য কেউ টেক্কা দিয়ে এই স্হান গুলি দখল করতে পারেনি। মুন্নি মুচকি হেসে বল্লো তাই বুঝি আন্কেল ? আমি বল্লাম হ্যাঁ তাই। ওর আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলোতোমার তা হলে সে কথাও মনে আছে? আমি বল্লাম হ্যাঁ মনে আছে সেটা কি ভুলে থাকা যায়? আমি তাদেরকে বারডেমের ক্যান্টিনে চা নাস্তা করার জন্য কয়েক বার বল্লাম। মনোয়ারা বল্লো টেষ্টের পর আমরা নাস্তা করেছি এখন আর দরকার নেই বসো গল্প করি। এমন সময় ডাক্তার দেখানোর জন্য ডাক পরলো।
আমার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে গেলো। ডায়াবেটিস রোগটি সারা বিশ্বেই ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পরেছে। এর অনিষ্ট থেকে ভালো থাকার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি সবারই মাঝে মধ্যে ইউরিন ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে দেখা দরকার। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অন্চল থেকে চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার লোক বারডেম হাসপাতালে আসছে। আর মাত্র দশ মিনিট বাকি আছে এগারোটা বাজতে, সবাই শংকা মুক্ত ও ভালো থাকুক এটাই কামনা করছি। আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা শেষে বাসায় চলে এলাম।