বউয়ের মাইর

বউয়ের মাইর

ঠাস্ ঠাস্ করে রিমির কানের নিচে গুনে গুনে চারটে থাপ্পড় মারলাম। বাসর রাতেই বউকে মাইর শুরু, লোকে জানলে হয়তো আমার সাথে আর কেউ নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইবে না। এই ভেবে থাপ্পড় মেরে রিমিকে বললে লাগলাম, শুনো কেউ জেনো না জানতে পারে তোমায় আমি চারটে থাপ্পড় মেরেছি। রিমি আমার কথা শুনে চুপ করে তাকিয়ে আছে যেন চোরের উপর বাটপাড়ি আরাম্ভ করলাম। এমনিতে মেয়েদের উপর হাত তোলা নিষেধ তার পরেও আমি হাত তুললাম ভাবতেই মনে হচ্ছে পুলিশের কথা। ওই অন্ধকারময় ঘরের কথা আর তেল লাগানো বাংলা বাঁশের কথা। আগের বার যখন ইভাকে বিয়ে করে বাসর রাতেই মারতে শুরু করছিলাম ঠিক তখন ইভাও এভাবে চুপ করে ছিল। ভয় হচ্ছে খুব যদি ইভার মত প্রথম রাত ভেবে ক্ষমা করে দিয়ে পরদিন রিমিও চলে যায়,আর গিয়ে এক ফাইলে লম্বা কাগজে আমার লাল ঘরের টিকিটের ব্যবস্থা করে। হায়! সেই মুহুর্তের কথা এখনো মনে হলে খুব খুব কান্না পায় আমার,তাই মেয়েদের মত ইভার জন্য খুব কাঁদি।

যা হয় হোক ইভার চিন্তা করে লাভ নাই। রিমিকে বললাম ঘুমিয়ে পড়েন ম্যাডাম আমার খুব খুব ঘুম পাচ্ছে। দুই জনে দুই পাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিমি আমার পাশে নাই। ও মা! রিমি কোথায় গেলো। খুব চিন্তা শুরু হয়ে গেলো আমার,ভেবেই নিয়েছিলাম রিমি হয়তো এতোক্ষণে পুলিশের কাছে। পারাপারি করে বিছানা থেকে উঠে পুরো বাড়ি খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। আমার চিন্তা খুব জোড়ালো হয়ে গেলো। মাথায় কিছু কাজ করছে না,উপায় না পেয়ে নিজেকেই বলতে লাগলাম “বাবু তোর টিনের বাড়িতে তো ডিজিটাল লক দেয়া আছে রিমি কেমনে পালাবে”। দৌড়ে গেলাম দরজার কাছে, গিয়ে দেখলাম দরজার লক তখনও অবিকল আছে কেউ হাত দিয়েও ছুঁয়ে দেখেনি। তাহলে রিমি গেলো কোথায়? মনে প্রশ্ন এসে গেলো।

টিনের এই বাড়িতে রিমি তাহলে কোথায় গেলো? এখন তো আর পুলিশের টেনশন হচ্ছে না, এখন টেনশন হচ্ছে আমার মেয়েটাকে নিয়ে। কোনো বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি না তো! একদিনের বাসর রাতে রিমি আমায় কতটুকু চিনলো খোদায় ভালো জানে। আমার নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থা দেখে চোখ নাড়তে নাড়তে মা ঘরের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাস করলো,”কি হইছে বাবু,এতো ক্লান্তিকর লাগছে কেন তোমায়। ব্যাপার কী? রিমি পালিয়ে গেছে বুঝি”। মায়ের এমন কথা শুনে আমার কপালে হাত উঠে গেলো। ওখানেই বসে পড়লাম আর মাকে বলতে লাগলাম, রিমিকেই খুজঁতেছিলাম মা কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না তো। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো মা। কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো এইদিক একবারটি আয়,দেখবি আয়।

আমি মায়ের পিছন পিছন গেলাম,গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি আমার জন্য কফি বানাচ্ছেন। এইটা দেখে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রিমি কী তাহলে গতকাল রাতের সেই থাপ্পড়ের কথা ভুলে গেলো! নাকি অন্য কিছু? নানানরকম প্রশ্ন আসতে থাকলো মনে। যাই হোক প্রশ্ন দিয়ে আমি কি করবো, আমি তো আর পরীক্ষা দিচ্ছি না যে আমার প্রশ্ন লাগবে।

সোজা রুমের ভিতরে গিয়ে চুপ করে একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলাম,এর মাঝে রিমিও কফি নিয়ে হাজির। মনে মনে হাসতে থাকলাম আর বলতে লাগলাম যাক এইবার কাজ হইছে মোটামুটি। ইভার প্রেমিক থাকার পরেও আমার সাথে ওর মা বিয়ে দিয়েছিলো। তাই বাসর রাতেই ইভার মন বিয়ের পরও ওইদিকেই আছে কিনা পরীক্ষা করার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে মাইরটায় উত্তর মাধ্যম হিসেবে নির্বাচিত করছিলাম। যাক সেকথা, রিমি গরীব ঘরের মেয়ে হলেও যেন নম্র-ভদ্র একটা মেয়ে। গতকাল চারটে থাপ্পড় দেয়ার পরও যে রিমি সকাল সকাল আমার জন্য কফি বানাচ্ছে এটায় অনেক ব্যাপার।

কোথায় আছে না বাসর রাতে টি-টুয়েন্টি না খেলে টেস্ট খেলো তাইলে বউ বুঝবে তুমি কেমন মানুষ। তাই প্রত্যেকের উচিত বাসর রাতেই যেন বউকে মাইর দিয়েই খেলা শুরু করে। ইভাকে চেনার ক্ষমতা আমার ছিলো না,যদি এই আইডিয়াটা বন্ধু সাদিক না দিতো। সাদিককে একমিলিয়ন বার ধন্যবাদ যে আজ আমি ওর আইডি অনুসরণ করে রিয়েল একটা বউ খুঁজে পাইছি। রিমির হাত থেকে কফির কাপটা আমার হাতে নিয়ে মিষ্টিকন্ঠে গাইতে লাগলাম,”তুমি কী সেই আগের মত আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো,জানতে ইচ্ছে করে খুব জানতে ইচ্ছে করে”। গানটা না শুনে রিমি চোখ বড় বড় আমায় বলে উঠলো, “দরজা খোলার অপেক্ষায় আছি মাত্র। দরজা টা খুলে দেন সোজা পুলিশের কাছে চলে যাবো” এই না শুনে কিসের গান কিসের কফি, সব ফেলে পুলিশের ভয়ে এক্কেবারে খাটের নিচে চলে গেলাম।

রিমিও কম নয় খাটের নিচেই মাথা দিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলো আসুন বাহিরে আসুন আমি ইভা না আমি রিমি। আমি আমার স্বামীর সংসার ছেড়ে কোথাও যাবো না,গেলে আমারই অমঙ্গল। রিমির কথায় যেন আমার প্রাণ ফিরে আসলো। বউয়ের ভয়ে যে মানুষ খাটের নিচে লুকায় আজ তার হাড়ে হাড়ে প্রমাণ পেলাম। খাটের নিচেই কান ধরে নিজেকে বললাম আর যেন এইসব না করি,আজ থেকে বাবু অনেক ভাল ছেলে। বের হতে না হতেই রিমি আবার বলে উঠলো,”কফিটা কি খাবেন না ডাকবো?” আমি আবার পালাতেই রিমি আমার হাত ধরে বসিয়ে বললো এইবার মাকে ডাকছিলাম ভয়ের কিছু নেই। হা হা ভিতু কোথাকার। ঠিক তখন মনে মনে উচ্চারিত হচ্ছিলো অস্তাদের মাইর শেষ রাতে আর বউয়ের মাইর প্রথম সকালে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত