মেঘের চোখে বৃষ্টি

মেঘের চোখে বৃষ্টি

‘ভাই কিছু পেন্সিল দেখান তো!’
‘স্যার এটা দেখাবো?’
‘হ্যাঁ দেখান।’
হাতে নিয়ে দেখলাম ভালো করে। এই পেন্সিলে হবে না। এই পেন্সিল তো বাসায় আছেই। আমার মেয়ে তো এমন পেন্সিলেই লেখে। দোকানদারকে বললাম, ‘ভাই, অনেক শক্ত কোনো পেন্সিল নাই। এটার চেয়ে অনেক শক্ত।’
‘স্যার কার জন্য পেন্সিল নিচ্ছেন?’
‘আমার ছেলের জন্য?’
‘বয়স কত আপনার ছেলের?’
‘জ্বি দুই বছর তিন মাসে পরলো মাত্র।’
‘এতো ছোট বাচ্চাকে কি পড়ালেখা শিখাবেন? এখনো তো পেন্সিল ধরার বয়সই হয়নি স্যার!’
আমি মাথাটা ডানে বামে করে; ফোনটা একবার পকেট থেকে বের করে আনলক করে আবার লক করে পকেটে রেখে দিলাম। ফোন কেন হাতে নিলাম এটাই বুঝতে পারলাম না। কি যে দেখলাম ফোনে তাও জানি না।
দোকানদারকে বললাম, ‘আসলে আমার বাচ্চার পড়ালেখার জন্য নিচ্ছি না।’
‘তাহলে কি জন্য নিবেন স্যার?’
‘মুখে নিয়ে কামড়ানোর জন্য।’
‘মানে বুঝলাম না স্যার।’

‘আমার মেয়ের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর এখন। ওর জন্য কিনা সব পেন্সিল আমার ছেলে মুখে নিয়ে চাবায়। ছেলের জন্য কোনো পেন্সিলই রাখা যায় না। লুকিয়ে আর কত রাখা যায়। এই নিয়ে দুই ভাইবোনের সারাদিন লাগে। ভাই ছোট তাই মারতেও পারে না। কিন্তু আমরা কেউ সামনে না থাকলে মাইর দিয়ে দেয়। ছেলের জন্যই…’
‘ছেলের দাঁত কি এতোই শক্ত হয়ে গেছে?’
‘ভাই কি বিয়ে করেছেন?’
‘না স্যার।’
‘তাহলে বুঝবেন না। আমার ছেলেটা হয়েছে ওর মায়ের কার্বনকপি। ওর মা বিয়ের পর থেকে আমার মাথা চাবিয়ে চাবিয়ে খেয়ে আর বাকি রাখেনি কিছু। মায়ের কাছ থেকে সেই দাঁত পেয়েছে আমার ছেলে। পেন্সিল তো কিছুই না। আমার প্যান্টের বেল্ট একটাও বাদ নাই যেখানে ছেলের কামড়ের দাগ নাই।’

‘ভালোই মুশকিল হলো দেখি।’
‘আপনি ভাই এমন পেন্সিল দেখান যেটা কামড়ালেও চাবাতে যেন না পারে। মেয়েকে পড়তেই দেয় না। গিয়েই পেন্সিল নিয়ে মুখে দেয়। অক্ষয় কোম্পানির কোনো পেন্সিল দেন।’
দোকানদার মুচকি হেসে বলল, ‘স্যার পেন্সিল না নিয়ে পেন্সিলের মতো একটা খেলনা নিয়ে যান। রাবারের তৈরি। যত কামড়াক কিছু হবে না।’

পেন্সিলের সাইজ থেকে একটু বড় সাইজের কালো হলুদ মিশ্রনের খেলনা বের করে দিলো। হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেখলাম অনেক নমনীয়। কিন্তু জিনিসটা বেশ টেকসই। খেলনার চারদিকে মিকি মাউস আর টম এন্ড জেরির কার্টুন আঁকা। দেখে যে কেউ ভাববে এটা পেন্সিল। এটাই কিনে নিয়ে গেলাম বাসায় যাওয়ার সময়।

মেয়েটা আইসক্রিম আর পেস্ট্রি নিয়ে যেতে বলেছে। ভাইবোন দুইজনের জন্যই নিয়ে নিলাম। সমান সমান একই জিনিস নেওয়া লাগে। নাহলেই বাসায় পলাশী যুদ্ধের ছোটখাটো মহরৎ হয়ে যায়। পেন্সিলের খেলনাটা একটাই নিয়েছি। না জানি কি হয়। রাস্তার পাশে ভ্যানে দেখলাম কাঠের পিঠচুলকানী বিক্রি করছে। বউয়ের জন্য নিয়ে নিলাম। ওর পাশে বসলেই দুইটা মিনিট শান্তি পাই না। বলে একটু পিঠ চুলকে দাও। গতকাল এটা নিয়েই এক ছটাক লেগেছে দুই জনের মধ্যে।
‘কোথা থেকে যে এই বদ অভ্যাস হলো তোমার। এতো পিঠ চুলকানো লাগে কেন তোমার?’
‘কথা কম কাজ বেশি। নিচে আরেকটু সাইডে। হ্যাঁ হ্যাঁ। আহ! এখানেই দিতে থাকো।’
‘আমার কথা কি তোমার কানে যায় না?’
‘কথা তো কানে যাচ্ছে। কিন্তু মগজে যাচ্ছে না। সব কথা মগজে নিতে নাই। আহ বললাম না একই জায়গায় দিতে। আবার ডানে গেলে কেন। আগের ওখানে দাও।’
‘আমি আমার লাইফে কোনো মহিলাকে দেখিনি এমন পিঠ চুলকানির বদ অভ্যাস আছে।’
‘তোমার আবার লাইফ! শোনো না। কাল কিন্তু আগে আগে অফিস থেকে ফিরবে?’
‘কেন?’
‘সেটা কাল আসো তো আগে তখন বলবো।’
‘তোমার কি আমার কোনো কথাকে কথা মনে হয় না?’
‘কোন কথাটা বলতো? তুমি কি এতক্ষণ কোনো কথা বলছিলে? কই শুনি নাই তো। আচ্ছা বলোতো কি কথা বলছিলে?
‘ইয়ার্কির একটা লিমিট থাকা দরকার। ধ্যাত যাও আর চুলকে দিবো না?’

‘ঠিক আছে দিও না। বাবাইকে তোমার নতুন মানিব্যাগটা খেলতে দিবো। ওর দাঁতের যা কারিশমা দেখাচ্ছেনা!’
‘তুমি আসলেই একটা অসভ্য মহিলা। খুবই বিরক্তিকর।’

বলে আবার বউয়ের পিঠ চুলকে দিচ্ছিলাম আর ও খিক খিক করে হাসছিলো। যেই হাসি শুনলে আমার মাড়ি কিরকির করে।
আজ বাসায় গেলে কি হবে কে জানে। আমাকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছিল। আমি ভুলে গেছি। যদিও আমি আজ অফিসে যাইনি। আসলে কি ভুলে গেছি। নাকি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি? কি জানি! ঠিকই সন্ধ্যা পার করে বাসায় ঢুকছি। কলিংবেল দিতেই ছেলের চিৎকার শুনছি- বা… বা… বাবাই।

ছেলে কি করে যেন কলিংবেল শুনলেই বুঝতে পারে কে কলিংবেল দিয়েছি। ওর মা দিলেও বুঝে। ওর মামারা এলেও বুঝে। এটা খুবই অদ্ভুত লাগে আমার। দরজা খুলে বউ হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। একটা খুবই খারাপ একটা সিগন্যাল। হাসির নিচে ঘষেটি বেগম ঘোল পাকাচ্ছে। বউয়ের এই রূপ আমার জানা আছে। তাড়াতাড়ি মেয়েকে ডেকে বললাম, ‘মামনী এই দেখো কি এনেছি তোমাদের জন্য।’ এই মুহূর্তে মেয়ে আমার জন্য সেরা ডিফেন্ডার।

ছেলেকে পেন্সিলের খেলনাটা দিলাম। বউ হাসি হাসি মুখে এখনো তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে দেখছে দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে। ড্রয়িংরুমের চারদিকে বইখাতা ছড়ানো ছিটানো। ছেলেটা এই কাণ্ড করে প্রতি সন্ধ্যায়। ওর বোনকে পড়তেই দেয় না। ছেলে পেন্সিলের খেলনা কিছুক্ষণ মুখে চাবিয়ে দেয়ালে ঘষে দেখলো দেয়ালে কোনো দাগ লাগে না। আমার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো খেলনাটা।

বউ বলল, ‘তোমার ছেলেকে কি তোমার মতো বেকুব মনে করো। ওর তোমার চেয়ে কয়েকশো গুণ সেয়ানা। আসছেন উনি রাবারের পেন্সিল দিয়ে ছেলের পেন্সিল কামড়ানো বন্ধ করতে। এখন যাও ফ্রেস হয়ে আসো। কথা আছে তোমার সাথে।’
‘শোনো আজ না অনেক কাজ ছিল অফিসে। একদম ভুলেই গেছিলাম তাড়াতাড়ি ফিরার…’

‘স্যার আপনি যদি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসেন। তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি কথাটা শেষ করতে পারবো। আপনি যদি ভেবে থাকেন ভুজুংভাজুং কথা দিয়ে আমাকে ভুলিয়ে দিবেন তা হবে না।’
‘আরে ধুর ভুজুংভাজুং কথা কে বলে। এই দেখো তোমার জন্য কি এনেছি।’
বলে পিঠচুলকানীটা বউয়ের হাতে দিলাম। বউ বলল, ‘ইম্পসিবল এইটা দিয়ে আমি কখনোই পিঠ চুলকাবো না। তোমার হাতই আমার জন্য যথেষ্ট।’ বলে সোফার উপরে ফেলে দিলো। ছেলে সাথে সাথে সেটা নিয়ে চাবানো শুরু করলো।
বউকে ডেকে বেডরুমে নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা তুমি কি শিওর এটা আমাদের ছেলে?’
‘মানে কি বলতে চাও?’
‘না মানে হাসপাতালে কোনো স’মিলের মালিকের ছেলের সাথে বদলাবদলি হয়ে যেতে পারে না? যেভাবে কাঠ পেলেই কামড়ায়।’
‘নিজের ছেলেকে নিয়ে বাজে কথা বলতে তোমার লজ্জা লাগে না?’
‘বাজে কথা কই। যেভাবে কাঠঠোকরার মতো সব কামড়ায়। আমাদের বংশে তো এমন কেউ ছিল না। তাইলে আসলো কোথা থেকে?’

বউ হাতের তর্জনী তুলে চোখ কটমট করে চলে গেলো। এই কাজটা সব সময় করি। বউ আমার উপরে ক্ষেপে গেলেই ছেলেকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলি। বউয়ের কাছে সারা দুনিয়া এক দিকে। আর ছেলে আরেকদিকে। কলিজার টুকরা যাকে বলে- ঠিক তাই। ছেলেকে নিয়ে কেউ কিছু বললে ওর মাথায় আগুন চেপে যায়। এই আগুন চাপানো গেলে আমার জন্যই ভালো। আস্তে আস্তে টপিক ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। এটা নিশ্চিত অন্তত। আমার সাথে যে বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে সেটা ওর মাথায় আপাতত নেই। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিলাম।

শাওয়ারের নিচে ভিজছি। আর এক রাশ বিষাদ আমাকে আঁকড়ে ধরছে। সারা শরীর বেয়ে কেমন একটা অস্থিরতা। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পারছি না। গলার কাছে দলা পাকিয়ে আছে কান্না। শাওয়ারের পানির মাঝেও চোখের নোনা অশ্রু যেন ঠিকই আলাদা করা যায়। যেমন করে আলাদা করা যায় হাজার সুখের ভিড়ে একটা আদুরে কষ্ট।

শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখি বউ জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাদের কোনো আওয়াজ না পেয়ে জিগ্যেস করলাম ওরা কোথায়। বউ বলল ওদের মামা এসে বাইরে ঘুরাতে নিয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির তিন বাড়ি পরেই বউয়ের ভাইয়ের বাসা।
বউ আস্তে আস্তে কাছে আসছে। জিগ্যেস করলো, ‘তোমার চোখ লাল কেন?’
‘আজ বেশি গোসল করছি তো এই জন্য মনে হয়।’

‘তোমার সাথে আমার নয় বছরের সংসার। তুমি আমাকে তোমাকে চিনাচ্ছো! বেশি গোসল করলে চোখ লাল হয়ে যায় এসব আমাকে শিখাবে না।’

বউকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। কাঁধে চুমু দিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেই। বউ আমার হাতের উপরে হাত রাখে। আমার বুকের ভিতরে আরো ঢুকে যায়। আমিও শক্ত করে আঁকড়ে ধরি আরো। কান্নাটা এবার বুক চিরে বের হয়ে এলো। বউকে বিছানায় বসিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আমার কাঁধে ওর মাথা।
‘ঠিক বিকাল পাঁচটায় তাই না?’
‘হু!’
‘তোমার মনে আছে। ঠিক তার আগের রাতে তুমি আমার পেটে চুমু দিয়ে বলেছিলে- মেয়ে আমার চেয়ে তোমার নেওটা হবে বেশি।’
‘আমি চুমু দিতেই তোমার পেটে লাথি দিলো। সারা শরীর তোমার শক্ত হয়ে গেলো ব্যথায়। কিন্তু তোমার মুখে সে কি এক মায়াবী আভা। কত স্নেহ ভালবাসা ছিল তোমার মুখে।’

‘তুমি আমার পেটে হাত বুলালে, চুমু দিলে আমার শান্তি লাগতো ভীষণ। আমি অনুভব করতাম। আমাদের মেয়েটা পেটে থেকেই তোমার হাতের স্নেহটুকু টের পাচ্ছে। ও খুব শান্তি পাচ্ছে। তাই আমিও শান্তি পাই।’

বউয়ের চোখের জল আমার হাতে এসে পরলো। এই জল আমি ওর চোখ থেকে মুছে দেই না। ওকে আমার দিকে ফিরিয়ে ঠোঁট দিয়ে শুষে নেই। আমার সহ্য হয় না বউয়ের কষ্ট। আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে আজকের এই দিনে বিকাল পাঁচটায় আমাদের প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয়। আমাদের কলিজার প্রথম ভাগ। আমাদের মেয়ে।

এই দিনটার কথা আমি ভুলে যেতে চাই। কিন্তু পারি না। আজ আমি অফিসেও যাইনি। মেয়ের কবরের কাছে বসেছিলাম। ওর মাকে আমি কখনো আমাদের মেয়ের কবর দেখাইনি। আমার ইচ্ছা করে না। ও অনেকবার বলেছে। আমি নিয়ে যাই নাই। যেই মেয়েটা আমাদের বুকে বুকে আদরে বড় হওয়ার কথা ছিল। সেই মেয়ের ছোট্ট এতটুকুন শরীরটা মাটির একটা ছোট্ট ঘরে ঘুমিয়ে আছে। এটা দেখে কোনো মা সহ্য করতে পারবে না।

‘আমার মেয়েটা ভালো আছে না শাকিল?’
‘হ্যাঁ অনেক ভালো আছে?’
‘ওকে দেখতে গিয়েছিলে আজ। আমাকে তো নিলে না কখনোই।’
‘নাহ সময় পাইনি। অফিসে অনেক কাজ ছিল। ভুলে গিয়েছিলাম আজকের তারিখটাও।’
‘আসো কোলে মাথা রাখো।’
আমি বউয়ের কোলে মাথা রেখে দুই হাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। বউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।
‘তোমাকে একটা কথা কখনো বলিনি। আজ বলি শুনবে?’
‘বলো?’
‘আমার তো শেষের দিকে অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেলো। হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। তুমি অফিসের পরে হাসপাতালেই পরে থাকতে।’
‘হু।’
‘নাওয়া খাওয়ার ঠিক নাই। সারাটাক্ষণ আমার পাশে বসে থাকতে। তুমি যখন থাকতে না তখন নার্স তোমার গল্প শোনাতো আমাকে।’
‘আমার কি গল্প?’
‘নার্স বলতো- আপা আপনার হাসবেন্ডকে কখনো কষ্ট দিয়েন না? আমি বললাম কেন। নার্স বলে এমন বউ পাগল হাসবেন্ড আমি দেখছি অনেক। কিন্তু বাচ্চা পাগল এমন বাবা কম দেখেছি। বাচ্চার জন্য। আর বাচ্চার মায়ের জন্য কি না করছে মানুষটা। আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন আপনার হাত ধরে ভাইয়া বসে থাকেন। আপনার কপালে চুমু দেন। গতকাল কেবিনে ঢুকে দেখি আপনার পেটে হাত বুলিয়ে বাচ্চাকে গল্প শোনাচ্ছে। আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে সরে গেলো। আপনার কেবিনে যেই যেই নার্সরা আসে আর ভাইয়াকে চিনে; সবাই ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে। মানুষটা আপনাকে কি প্রচণ্ড ভালবাসে সেটা যেকেউ একটু দেখলেই টের পাবে।’

বউকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। বউ আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি স্যরি শাকিল। তোমার মেয়েকে আমি এনে দিতে পারলাম না। আমার নিজেকে দোষী মনে হয়। আমি শুধু মেয়েটাকে গর্ভেই ধারণ করেছিলাম। কিন্তু তোমার মাঝে যে আকুলতা ব্যাকুলতা। আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম। সেটা একজন মায়ের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। আমি অনুভব করতে পারি সেটা। আর কেউ পারুক বা না বুঝুক। আমাদের মেয়েটা আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় যতো না কষ্ট আমি পেয়েছি। তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি তোমার মেয়েকে তোমার কোলে তুলে দিতে পারিনি বলে। আমি স্যরি শাকিল। আমি স্যরি।’

উঠে বসে বউকে জড়িয়ে ধরলাম, ‘কি বলছো তুমি এসব। এসব আর কখনোই বলবে না…’
কলিংবেল বাজতেই কথা থেমে গেলো আমার। আমি উঠে বাথরুমে হাত মুখ ধুতে যাচ্ছি। বউ আমাকে ডাক দিয়ে বলল, ‘নার্সের কথাটা কেন তোমাকে বললাম আজ জানো?’
‘কেন?’
‘সেই বাচ্চা পাগল বাবাটা কিনা আজ অফিসের কাজের চাপে তার মেয়ের কাছে যেতে ভুলে গেছে। এই কথা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো তুমি?’
বলেই বউ চলে গেলো দরজা খুলতে। এখান থেকে শুনতে পাচ্ছি ছেলেটা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে, ‘বা… বা… বাবাই।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত