পরিচয়

পরিচয়

আমার যখন ১০ বছর তখন আম্মু আব্বুর ডিভোর্স হয়ে যায়।। ডিভোর্স এর কারণ ছিল- আম্মুর মতে “দাদুমনি অনেক অত্যাচার করে” অন্যদিকে দাদুমনির মতে “আম্মু ভাল মেয়ে না,,আম্মুর অনেক অহংকার,,বাপের টাকার গরম,,তাই আম্মু তাড়িয়ে ভাল বউমা আনবে ঘরে”।। আব্বু বরাবরের মতো এখনো চুপ,,বরাবরের মতো বললাম এই জন্যই বাসায় যখন দাদুমনি আর চাচ্চু মিলে আম্মু কে মারে তখন ও আব্বু চুপ থাকে,,,মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যায়।। সব কথা শুনে উকিল বলল- মেয়ে কার কাছে থাকবে?? দাদুমনি তখন গলার স্বর উচু করে বলল- আমার পুতের(ছেলের) এমন কালো অলক্ষী মেয়ে চাই না।।। আর কোনো কথা হয় নি,,সব হিসাবনিকাশ শেষ করে আলাদা হয়ে যায় আব্বু আম্মু।।

কোর্ট এর বাহিরে এসে আব্বু আমার হাতে ৫০০ টাকার ২ টা নোট দিয়ে বলল- আব্বুর প্রতি কোনো অভিমান রাখিস নারে মামনি,, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত,,তুইও তোর মারে ভাল রাখিস,,,আব্বুর পরিচয় ডা ভুইলা যাইস”।
তারপরে সেদিন বাড়ি না মানে নানুপাখির বাড়ি আসার সময় মামা আমাকে বলেছিল “তোর মা আমার কলিজার টুকরা আর তুই আমার কলিজা,,তোদের ভাল রাখার দায়িত্ব আমার”।।। বড় মামা কথা রেখেছে,,,বাড়ি এনে আম্মুকে তার শখের কাজ তাঁতশিল্প তে ব্যস্ত করে দেয় আর আমার পড়ালেখা শুরু করে দেই।।

তার পরে এক এক করে অনেক বছর চলে যায় কিন্তু আব্বু খোঁজখবর নেই নি।।। ক্লাস নাইন এ আমি কমার্স নিতে চাইলাম আম্মু বলল- তোর আব্বুর শখ ছিল তুই ডাক্তার হবি।। ব্যস হয়ে গেলো নিলাম সাইন্স,,মানুষ হয়েও গাধার মতো খেটেখুটে প্রায় ৫ বছর পরে মেডিকেলে চান্স পেলাম।।কিন্তু চান্স টা হলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজে।।।আম্মু বলে দিলো- যে শহরে আমার ভাল থাকা হয় নি সে শহরে তুই যাবি না।।।অবশেষে মামা রাজি করিয়ে ভর্তি করে দিছে।।।

এই শহরে এসে অনেক খুঁজেছি আব্বু কে,,না পরিচয় এর জন্য না,,,আমি মেডিকেল এ পড়তেছি,,ভবিষ্যৎ ডাক্তার হবো সেটা বলার জন্য,,,কিন্তু পাই নি আব্বুকে।। আব্বুর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে অতীত টা মনে পরে গেলো।।।হ্যাঁ যে আব্বু কে আমি অনেক খুঁজেছিলাম এখন তার লাশ আমার সামনে তবে এটা বেওয়ারিশ লাশ।।।সবাই অনেক সময় ধরে আবির স্যার এর জন্য দাঁড়িয়ে আছি স্যার আসলেই ল্যাব শুরু হবে।।। আবির স্যার এসেই বলল- আজকের এই ক্লাস টা তোমাদের আরো ৩ মাস পরে নেয়া উচিত ছিল তবে অনেক দিন পরে ভাল একটা বেওয়ারিশ লাশ পেয়েছি তাই আগে নেওয়া হচ্ছে,,,আজাদ স্যার ও চলে আসছে,,,ক্লাস শুরু করা যাক।।। আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম না স্যার এটা বেওয়ারিশ লাশ না এটা আমার আব্বু।। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।।।

মেডিকেলের ছাত্রী হয়েও অনেক কাঠখড় পুরাতে হলো লাশ টা পাবার জন্য।।। প্রথমে ভাবলাম আম্মু কে কল দিয়ে সবটা বলি পরে ভাবলাম না থাক অনেক কষ্টে ভাল থাকতে শিখছে,,,স্যার দের সাথে কথা বলে জানাজার ব্যবস্থা করলাম।।দাফন শেষ করে গোরস্থান থেকে বের হয়ে আজাদ স্যার আমার মাথায় হাত রেখে বলল- তোর মতো মেয়ে কে সম্মান জানায়,,বেওয়ারিশ হয়ে আসা লাশ টাও তোর জন্য বাবার সম্মানে কাফনের কাপড় পেলো।। সবাই চলে গেলো,,,আমি গোরস্থান এর বাহিরে দাঁড়িয়ে আব্বু কবর এর দিকে তাকিয়ে বললাম- আব্বু একদিন ৫০০ টাকার ২ টা নোট দিয়ে তুমি আমার জীবন থেকে তোমার পরিচয় মুছে দিছিলা,,,আজকে আমি ৫০০ টাকার ২ টা নোট দিয়ে তোমাকে আমার আব্বুর পরিচয় দিলাম(কাফনের কাপড়টা ১০০০ টাকা ছিল)।।
ভাল থেকো ওপারে।।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত