শূন্যতা

শূন্যতা

আমি শপ থেকে যা যা কিনছি খেয়াল করলাম আমার পাশের ছেলে টা ঠিক তাই তাই কিনছে। প্রথম দুদিন তেমন একটা খেয়াল না করলেও এখন খুব ভালো ভাবে খেয়াল করছি।

আমার বাসায় বাজার করার মত তেমন কেউ নেই। ভাই গুলো ছোট, বাবা কাজের জন্য বাইরে থাকেন। তাই মুটামুটি পরিবারের বাজারটা আমাকে করতে হয়। মা মাঝে মাঝে করেন। ছোট ভাইকে কোনো কোনো দিন সাথে আনি।

আমি হলুদ, মরিচ, ডিম, তেল যা যা আমি যতটুকু নিলাম ঠিক ততটুকু ছেলেটা ও নিল আমার সামনে থেকে। আমি কিছু না বলে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা দিয়ে চলে এলাম। বাইরে বের হতে ই অন্যদিকে তাকিয়ে দেখি ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে কিরকম অদ্ভুত একটা হাসি দিল। সেই হাসিটার মানে বুঝতে পারলাম।

দু তিন দিন পর পর বাজার করি আমি। আর ঐ শপ থেকে ই করি। আজ ভাইকে নিয়ে এসেছি সাথে আমার কাজিন ( বোন) একটু বেশি বাজার করতে হবে। মামা বাড়ির মামা মামি রা আগামীকাল আসবে তাই। মুরগি, গরুর মাংস, আদা, পেয়াজ, কালিজিরা চাল, ৫ লিটার তেল সহ আরো বেশ বাজার করলাম। ঠিক তখনো ছেলে টা আমি যে পরিমান বাজার করেছি যতটুকু যা যা কিনেছি সেও কিনল।

আমার কাজিন টা আবার খুব চালাক। সে ঠিক বুঝতে পারল ছেলে টা আমাদের ফলো করে করে সব কিনছে।
— কি রে আপু, চিনিস নাকি উনাকে? তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি সব বাজার করছে।

আরে, সেরকম কিছু ই না। সত্যি ই তো আমি ছেলে টাকে চিনি ই না, এমন কি নাম পর্যন্ত জানি না। কিন্তু এরকম করার কারণ কি..? অন্যকোথায়ও বা কোনো রকম ডিস্টার্ব ও করে না। থাক, এসব চিন্তা না করে বিল পে করে আবার চলে আসলাম।

পরের দিন টা খুব হইচই করে কাটল। সবাই এসেছেন মামা মামি ভাই বোনেরা সব। বছরে একবার আসেন উনারা। দু দিন থেকে আবার চলে যাবে। হঠাৎ মামা তো পিচ্চি বোনটা বায়না ধরল আইসক্রিম খাবে। কিন্তু বাসায় তো আইসক্রিম নেই। তাই বিকেলে বের হলাম বোন কে নিয়ে।

দোকানে ঢুকতে ই ছেলে টা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসল। আর বলতে লাগল,
— আপনি গতদিন এত বাজার করেছেন কেন? আমার বাসায় এত গুলো খাবার কে খাবে এখন? নষ্ট হবে এখন অনেক কিছু।

আমি কি বলব বুঝতে পারছি। এক তো উনি না বলে আমার বাজার করা টা ফলো করেন, তার উপর আজ বলছেন উনার বাজার নাকি নষ্ট হবে আমার জন্য। কোন প্রশ্ন আগে করব বুঝতে পারছি না। তারপরও বললাম,

— আপনাকে তো আমি বলিনি আমি যা যা কিনছি আপনিও তা তা কিনুন। আর মেইন কথা আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন? বেশ কয়েকদিন ধরে আমি সব খেয়াল করেছি। আর এখন আমাকেই এসব বলে দোষারুপ করছেন? সাহস তো কম না..

— আসলে, আমি তো বাজার করিনা অভ্যাস নেই। তাই আপনাকে ফলো করি।
তখনি আমার পিচ্চি কাজিন টা বলে উঠল, হ্যা হ্যা আমরা জানি সব ছেলেরা মেয়েদের ফলো করে। আপু আমাকেও আমার ক্লাসের রাফি টা চকলেট এনে দেয়, দোকান থেকে এটা সেটা এনে দেয়। আমার সাথেও যায়। জানো, কি একটা চিঠিও জানি দিয়েছিল।

আমি ওর পাকা পাকা কথা শুনে কি বলব হাসব না কাঁদব নাকি ওকে বকা দিব তাও বুঝতে পারছি না তারপরও রাগি ভাব এনে ওকে একটু ধমক দিয়ে ছেলে টা কে বললাম,
— দেখুন এটা কোনো ভদ্রলোকের কাজ নয়। আর আপনাকে দেখতে বেশ ভদ্রলোক লাগছে। আগামী তে আর এসব করবেন আশা করি না হলে ভালো হবে না..!

আসলে দুঃখিত।, আমি আর আমার ছোট বোন এই শহরে একা থাকি। নতুন চাকরি জন্য এখানে আসা। আমার বাবা মা গত বছর রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন। বুঝেন তো মা বাবা ছাড়া পরিবার কেমন হয়। আর আমিও বাবা থাকা অবস্থায় বাজার করি নি। এই শহর টা তে আমি আমার বোন একা। ছোট্ট বোন ক্লাস সেভেন এ পড়ে ও তো বুঝে না কোথায় কতটুকু কি লাগে পারে না। সংসারের খরচ হিসাব বুঝে না আমিও অপরিপক্ব। তাই আপনাকে ফলো করা।

আমি এরপরে কি বকা উচিত তা ভাবতে পারছি না। আবার বলতে শুরু করল,

প্রথম প্রথম সব কিরকম উল্টা পাল্টা বাজার করতাম আন্দাজ পেতাম না যা দরকার তা নিতাম না অন্যকিছু নিয়ে যেতাম। এরপরে আপনাকে ফলো করে বাজার নিয়ে গেলাম। সেদিন বোন খুব খুশি হল সব ঠিক আছে বলে। এরপর থেকে আপনাকে ফলো করি প্রায়।

গতকাল আপনার মত বাজার নিয়ে মহা বিপদে পরেছি। এত কিছু খাবে কে? আর রাখব কোথায় ফ্রিজ তো নেই। সবে নতুন এসেছি সবকিছু মিলিয়ে ফ্রিজ কেনা হয়ে উঠেনি। ছোট বোন টা ওর পড়বে নাকি এসব সামলাবে।

জানেন তো, মা বাবা ছাড়া পৃথিবীটা অনাত হয়। আমার বোনটা আর আমিও সেই দলে। মাফ করবেন যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে।
কথা গুলো বলছিল আর টপটপ করে চোখের পানি পরছিল।

কোনোকিছু বলার আর ভাষা পেলাম না খোঁজে …
আর কি দেখা হবে..
সবার শূন্যতা থাকে তবে সবাই তা দেখায় না। এক এক জনের এক এক রকম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত