ফেইক আইডি

ফেইক আইডি

আমার শ্বশুর যখন তার আইডিতে ঘটা করে একটা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়৷ আমি দেখে খুব অবাক হয়ে যাই। একি করেছে! আমার ফেইক আইডি দিয়ে তার ছেলেকে টুকটাক ম্যাসেজ করতাম। একটু পরীক্ষা করার জন্য লেগেই থাকতাম। একদিন ভুল করে আমার শ্বশুর মশাই এর আইডিতে রিকু চলে যায়। তার প্রোফাইলের ছবি তে একটা ইয়াং ছেলের ছবি। তার যে বুড়ো বয়সের ছবি ছিল তা আর প্রোফাইল ঘেটে পাওয়া যায় নি। আর সুন্দর করে বায়ো তে লিখা প্রেমিক পুরুষ! আর এতো সুন্দর সুন্দর রোমান্টিক স্ট্যাটাস দিবে যা বলার বাইরে। আমি যখন রিকু পাঠাই দেখি সাথে সাথেই তা এক্সেপ্ট করা হয়েছে!

আমি আবারও একটু হা করে তাকিয়ে রইলাম। পাশের রুমে উকি দিয়ে দেখলাম উনি কোথায় গেছেন। দেখলাম রুমে নেই। বারান্দায় বসে ইজি চেয়ারে দোল খাচ্ছেন। আরেকটু উঁকি দিয়ে দেখলাম, কার সাথে যেন চ্যাট ও করছেন। কিন্তু ইনি তো এতো কিছু বুঝেনই না। বেশ কিছুক্ষণ ফলো করার পর। আমি চলে এলাম রুমে। পাশের রুমে বসা আমার শাশুড়ী। উনিও বেশ চালাক মহিলা। কিন্তু একথা জানতে পারলে বাবাকে একদম ঘর ছাড়া করে বনবাসে পাঠাবে! বাবাকে কয়দিন ফলো করার ধান্দায় থাকি। একদিন খাবারের টেবিলে বসে খুব আরাম করে পায়েস খাচ্ছে। হঠাৎ করে সবার সামনে মুখ ফসলে বলে ফেলে,

-জানো আবিরের মা, আমার এক বান্ধুবি আছে৷ কি সুন্দর করে যে পায়েস রান্না করে।
-তোমার বান্ধুবি! এই বয়সে বান্ধুবি!
-না ইয়ে মানে। বন্ধুর বান্ধুবি আর কি। ভুলে বলে ফেলেছি।

তারপর দিন, আমার ফেইক আইডি দিয়ে আমার শ্বশুর কে নক দিলাম।

-হাই
-হ্যালো
-ভাইয়া কেমন আছেন! (ফেইক আইডি তে শ্বশুর ও মাঝে মাঝে ভাই হয়! যাক ব্যাপার নাহ)
-এই তো ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো সুইটি। (নাউজুবিল্লাহ। আমি নাকি সুইটি!)
-হ্যা ভালো আছি। ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর দেখতে।
-তাই! কিন্তু তুমি আমাকে ভাইয়া আর ডাকবে না। আমি কি ভাই হই বলো?
-আচ্ছা ঠিক আছে। আর ডাকবো না৷
-আচ্ছা কোথায় থাকো তুমি?
-এই তো আপনার বাসার আশেপাশে।
-চল একদিন দেখা করি।

এমন রিপ্লাই পেয়ে আমি প্রায় হতবাক হয়ে গেছি। তার এই মুখ ভর্তি দাড়ি। ভুড়িওয়ালা পেট নিয়ে সে কোনো মেয়ের সাথে দেখাও করতে চায়! কোনো রকম পাশ কাটিয়ে বিদায় নিয়েছি। বাবার আইডিতে যার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়া তারে রিকু পাঠাই। কিছুক্ষণ পর দেখি রিকু গ্রহণ করা হয়েছে। তারপর তাকে আমিও মেসেজ দেই।

-আপু, যার সাথে আপনার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়া। কতদিন হলো তাকে চিনেন?
-কেন! এই কথা বলছো কেন?
-আহা বলেন না।
-এইতো দু মাস হলো আর কি।
-কিন্তু আপু উনি তো আমার শ্বশুর হয়৷

তার বড় ছেলের বউ আমি। এই আইডির ছবি তো ফেইক। আমার কাছে রিয়েল ছবি আছে৷ তারপর সে অনেক গুলো মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। আর বলছে। ছবি দিতে। আমিও কম না, এক এক করে তার সব ছবি পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর, পাশের রুম থেকে আমার শাশুড়ী জোরেশোরে কাদছে। কাদতে কাদতে আমার কাছে এসে বলল, ও নীলু রে ও নীলু। তোর শ্বশুর তো আরেক টা বিয়ে করছে রে। আমি প্রায় হতবাক হয়ে গেছি। বললাম হয়েছে কি মা! কে বলেছে বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে?

-এই দেখ, আমার ফেইক আইডি তে কোন মেয়ে জানি বলল, সে নাকি তার শ্বশুর হয় রে নীলু৷ তার কোন বড় ছেলের বউ হয়। ( আমি কতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে হা করে রইলাম। মানে আমি যে মেয়েকে নক দিলাম তা আমার শাশুড়ীর ফেইক আইডি!) কিছু না বলে, বললাম, হ্যা মা করতে পারে। জানেন না। বাবা ইদানিং কার সাথে জানি কথা বলে আইডি তে।

-আরে আমার সাথেই তো বলতো রে। এখন তো সব ফাস হয়ে গেলো রে। সে তো নিজেই জানে না এই টা আমার ফেইক আইডি। তারে পরীক্ষা করার জন্যেই তো খুলছিলাম রে। এখন কি হবে আমার। আমি রুম থেকে বের হয়ে টানা পাঁচ মিনিট হেসে নিলাম। এখন বোঝ ঠেলা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত