বিয়ে ভাঙ্গা

বিয়ে ভাঙ্গা

___জান আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে!
___কি সর্বনাশ?
___আজ পাত্রী দেখতে যেতে হবে ৷ না গেলে আমার ভাত বন্ধ!
___ভাত খাওয়া তোমার এমনিতেই বন্ধ হবে ৷ কারণ আমাকেও পাত্রপক্ষ আজ দেখতে আসবে!
___কিহ?
___জ্বী, তুমি বলো এখন আমি কি করব?
___আমার বুদ্ধিমত চলবে, তাহলেই হবে!
___ঠিক আছে!

আমার গার্লফ্রেন্ড সাথীকে বুদ্ধি দিলাম, কেমনে পাত্রপক্ষকে বিদায় জানাতে হবে? এবং ওকে যাতে পাত্রপক্ষ পছন্দ না করেই চলে যায় ৷ এদিকে আমিও পাত্রীকে দেখতে যাব, দুঃচিন্তা যা ছিল সেটার তো সমাপ্তি ঘটলো! আর এই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য কষ্টও করতে হবেনা তেমন! আম্মা ও মামাকে সাথে নিয়ে চললাম পাত্রীকে দেখতে!

মেয়ে আমার সামনে এসে হাজির হলো! শাড়ি পড়া অবস্থায়? থ্রি-পিস পড়ে? না না সে টিশার্ট আর একটা প্লাজু পড়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে! পাত্রীর এমন বেসভূষা দেখে আম্মাজান চোখ দুটো মরা গরুর মত বানিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ এরপর আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলল? পাত্রী অবশ্যই সুন্দরী, অনেক বেশিই বলা যায় ৷ তাকে মুহূর্তের মধ্যে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কল্পনা করলাম ৷ গার্লফ্রেন্ডকে কখনো দেখা হয়নি এজন্য পাত্রীকে প্রেমিকা ভাবতে ভাললাগছে পাত্রী আমার চুলের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত সুর বানিয়ে ছন্দ আকারে বলল,

___নাম নিশ্চয় আপনার আবুল, তাইতো মাথায় একরাশ ভেড়ার চুল, আমার দৃষ্টি ঠিকই বলেছে করেনি কোনো ভুল, আপনাকে বিয়ে করলে আমার জীবনটা হবে বুটিফুল!”

এটা শুনে আম্মার চেহারা লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেল ৷ মামা তো কাচু্মাচু করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল ৷ হঠাৎ পাত্রী এক কাপ চা হাতে তুলে নিয়ে আমাকে দিতে যাবে তখনই নিজের মুখে নিয়ে কয়েক ঢোক গিলে ফের আমার হাতে দিয়ে বলল,

__চেক করলাম বুয়া চা ঠিক ভাবে বানিয়েছে কি না! সে মাঝেমধ্যে চায়ে বিট-লবন দিয়ে দেয় চিনির বদলে! আজকেরটা ঠিক আছে!

আমি চা খাব কি খাব না বুঝতে পারলাম না! পাত্রী আরেক কাপ চা হাতে তুলে নিয়ে চায়ের কাপ ভাল করে দেখল ৷ তারপর ওতে আঙ্গুল ঢুকি়য়ে মস্তবড় লম্বা একটা চুল বের করে আমাদের দিকে সেটা দেখালো, এরপর চায়ের কাপটা আমার আম্মার হাতে দিয়ে কিঞ্চিত উত্তেজিত গলায় বলল,

___দেখছেন বুয়ার কারবার? চা বানাতে সে চুল দিয়েছে ৷ ভাগ্যিস চায়ের কাপে নজর দিয়েছিলাম ৷ নইলে আপনাকে চুলসহ খেতে হতো! কি বিশ্রী ব্যাপারটাই না হতো! আপনি আমাকে একটা থ্যাংকস দিতে পারেন! আরেক কাপ চা মামার হাতে দিয়ে ফের ফেরত নিয়ে পাত্রী তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,

__না না, আপনাকে চা দেওয়া যাবেনা ৷ কালো কুচকুচে পাতিলের মত দেখতে লোকদের চা খেতে নেই, চা খেলে আরো কালো হয়ে যাবেন ৷ তাছাড়া আপনি যে মোটার মোটা, চা খেলে হার্টঅ্যাটাক করবেন ৷ আমার বাড়িতে চিৎফটাং করে মারা যান এটা আমি চাইনা! এটা বলেই পাত্রী ঢকঢক করে পুরো চা-টা খেয়ে নিলো ৷ খাওয়া শেষ করে মামার দিকে একটা চোখ টিপ মারলো ৷ আমি তো ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে গেলাম মেয়েটার সাহস দেখে ৷ আম্মা বিষয়টা বুঝতে পারেনি!
হঠাৎ আম্মা বলে উঠলো,

___মা, তোমার হাইট কত? পাত্রী লজ্জা ফেলে বলল,
___আমার উচ্চতা ৫ফিট ৫ ইঞ্চি ৷ ওজন ৫৬ ৷ বুকের সাইজ ৩৪ ৷ কোমড় ৩৫ ৷ হিপ ৩৫!

এটা শুনে আম্মা আঁচলে মুখ লুকালো ৷ আর আমি কাশতে লাগলাম, কাশতে কাশতে হেচকি উঠলো ৷ হেচকি ওঠা শেষ হলে ভেষম খেলাম ৷ পাত্রী হাতে পানি ধরিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,

___আবুল ভাই পানিটা খেয়ে নিন! আম্মা আঁচল থেকে মুখ সরিয়ে মিষ্টি হেসেই বলল,
___তোমার নামটা জানা হয়নি! পাত্রী বলল,
___মিন্নি!
___রান্না পারো?
___নাহ, তবে ডিম সিদ্ধ করতে পারি! আম্মা সব শুনে হাসিমুখে পাত্রীর মাকে বলল,

___বেয়াইনসাব, আপনাদের মেয়েকে ছেলের বউ করতে আমাদের আপত্তি নেই!

আশ্চর্য হলাম মিন্নির মায়ের আচরণে ৷ তিনি মেয়ের আচরণে কিছুই বললেন না ৷ শুধু নির্বাক দর্শক হয়ে দেখছিলেন ৷ এখন আম্মার কথা শুনে মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে রইলো! মিন্নির বাবা রুমে ছিলনা ৷ যখন শুনলো পাত্রীকে আমার আম্মা পছন্দ করছে তখন উনি ঘরে প্রবেশ করলেন ৷ এবং আমার দিকে একনজর তাকালেন ৷ তারপর আমাকে বললেন,

___তোমার পেশা কি বাবা?
___মুখ্যবই অফিসে পোস্টলোজি, চ্যাটিওলোজি বিভাগে কাজ করি! মিন্নির বাবা আমাকে আর কিছু বললেন না ৷ আম্নাকে বললেন,
___আপনার ছেলেকে আমাদের মেয়ের জামাই মানতে আপত্তি নেই! আমি চেতে উঠে ক্ষ্যাপা স্বরে বললাম,
___কিন্তু আমি বিয়ে করবনা ৷ কারণ, আমি একজনকে ভালবাসি ৷ তার পেটে আমার সন্তান ৷ তাকে বিয়ে না করলে সে মারা যাবে! মিন্নি তখন হিংস্র বাঘিনীর রুপ নিয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল,
___এই লুচ্চাকে বিয়ে করব আমি? ছিঃ ছিঃ!

রাগারাগি করে পাত্রীর বাসা থেকে চলে এলাম ৷ বাসায় গিয়ে মায়ের হাতের লাঠির পিটানি খেতে হলো! দুদিনের মধ্যে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কোনো যোগাযোগ হলোনা ৷ তিনদিন পর তাকে ফোন দিয়ে জানতে পারি যে তাকে যেই পাত্রপক্ষ তিনদিন আগে দেখতে আসছিল তারা তাকে পছন্দ করেনি ৷৷ আর নতুন পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করেছে ৷ তিনদিনের মধ্যে বিয়ে হবে, ঝাঁকজমক ভাবে অনুষ্ঠান না করেই ৷৷ সিদ্ধান্ত নিলাম পালাবো! পালালাম! আমার গার্লফ্রেন্ড সাথী নীল বোরখা পড়ে আসবে ৷ বোরখার দুই হাতের সাইটে ফুল আঁকা থাকবে ৷ সাথীর হাতে থাকবে দশটা গোলাপ ফুল ৷ চোখে চশমা থাকবে! আর আমি কালো পাঞ্জাবী পড়বো ৷ হাতে গাঁধা ফুল! পৌছলাম ঠিক সময়েই যেখানে দেখা করার কথা ৷ দেখা হলো দুজনের ৷ সাথীকে দেখে হিমালয় পর্বতের চূড়া থেকে ধপাস করে পড়লাম বাংলাদেশের স্টেডিয়াম মিরপুর শেরে বাংলাতে! মিন্নিই আমার গার্লফ্রেন্ড! ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল ৷৷মিন্নি আমাকে দেখে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন আমি এলিয়েন! আমার দিকে এগিয়ে এসে দাঁত কটমট করে বলল,

___আমার পেটে তোর বাচ্চা? আমি থতমত খেয়ে বললাম,

___আরে ওটা তো বিয়ে ভাঙ্গার জন্য বলছি ৷ আমি কি জানতাম তুমিই সেই? জানলে তো ঐদিনই বিয়ে করতাম!

সাথীর রাগ পানি হয়ে গেল ৷ এরপর দুজনে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করলাম! তিনদিন বাইরেই কাটালাম! আমার ছোট বোনটা আমার প্ল্যানে যুক্ত ছিল ৷ ও আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে চায়তো সবসময় ৷ সাথীর পিকচার পাঠালাম! বাবা,মা সাথীর পিকচার দেখে কষ্ট পেলেন! সাথীর নাম্বার দিয়ে ফোন করে আমাকে আম্মা বলল,

___বোকা ছেলে, মিন্নির সাথেই তো তোর বিয়ে হতে যাচ্ছিল ৷ তুই কেন বিয়ে ভেঙ্গে দিলি? আবার কেন তাকে নিয়ে পালিয়ে গেলি? আম্মাকে হাস্যজ্জ্বল মুখে নরম স্বরে বললাম,
___আম্মা, আমার শখ ছিল পালিয়ে বিয়ে করার ৷ তাই পালিয়ে বিয়ে করলাম! আম্মা বিদ্রুপের স্বরে জোর গলায় বলল,

___ভাল করছোস বাবা, খুব ভাল করছোস! তুই যেদিন পালিয়ে গেলি তারপর দিনই তোর বাবা তোর বোনের নামে সব সম্পত্তি দলিল করে দিয়েছে ৷ পালিয়েছিস ভাল কথা, সেটা চিঠিতে লিখে রেখে গেলি কেন? এবার বোঝ কেমন লাগে? ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি হারানোর শোকে আমি এখন বেহুশ! এত সম্পত্তি হারিয়েছি শুনে সাথীও বেহুশ!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত