বিড়াল

বিড়াল

আরেকবার সাধিলেই খাবো। কিন্তু মা আর সাধিলেন না। আমাকে দরজার কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হলো।
মা’র একটা অভ্যাস হলো যখন বকা শুরু করে তখন বাড়ি শুদ্ধ সব লোককেই বকেন। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমি, ছোট ভাই সাথে বাদ পড়লেন না বাবাও।

মা’র উপর রাগ করে কেউ_ই আর খেতে আসলো না। মা অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে অভিমানের সুরে বললেন “খাওয়ার দরকার নাই কারো। পাতিলের রান্না পাতিলেই থাক”
না খেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লেন।
বিড়ালটাও মা’র সাথে সাথে ম্যাও ম্যাও করতে করতে চলে গেল দাদির রুমে।
সাধের বিরিয়ানির গন্ধটাই নাকে পৌছালো পেটে আর গেলো না কারো।
কিন্তু আমার তো খিদে পেটে ঘুম আসছে না। খেতেও যাওয়া যাবে না। ছোট ভাইয়ের রুমের লাইট এখনও জ্বলছে তারমানে ও এখনও ঘুমায় নি।

যাই হোক অনেক কষ্টে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে দাতে দাত লাগিয়ে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লাম কখন খেয়াল নেই।

হঠাৎ শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গলো। রান্নাঘরে বিড়াল ঢুকেছে মনে হয়।
বিড়ালটা দিনদিন খুব বেয়াদব হয়ে গেছে। ওর’ই বা কি দোষ ওরতো খিদে লাগছে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে লাইট অন করে দেখি কেউ নেই। মনে হয় পালিয়েছে আমি আসার শব্দ শুনে। রান্না ঘরের লাইট অফ করে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না। খিদেটা যেন আরও বেড়ে গেছে৷ খেয়াল করে দেখলাম বাড়ির সবাই ঘুম।
এই সুযোগে ফোনের ফ্লাশ অন করে আস্তে আস্তে রান্নাঘরে গেলাম।
কেউ টের পায়নি৷
যাক বাবা!

প্লেটে বিরিয়ানি নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ করে পানি খেতে ডায়নিং রুমে যাবো এমন সময় টের পেলাম বাবার কন্ঠ। আমি তাড়াতাড়ি করে মানসম্মান নিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। বাবা লাইট অন করে এদিক সেদিক তাকিয়ে লাইট টা অফ করে দিলেন। বুঝলাম বাবা শব্দ পেয়ে রান্না ঘরে এসেছেন। তারও হয়তো খিদের জন্য ঘুম হয়নি তাই এত সামান্য শব্দেও জেগে গেলেন।

কিন্তু পরক্ষণেই দেখলাম বাবাও ফোনের ফ্লাশ অন করে প্লেটে বিরিয়ানি ঢালছেন।
তারপর চুপচাপ খেয়ে চলছেন একনাগাড়ে। অর্ধেক শেষ করেছেন এমন সময় কারো আসার শব্দ শুনে বাবা প্লেট টা লুকিয়ে নিজেও লুকিয়ে পড়লেন সেল্ফের পেছনে।

এবার প্রবেশ করলো ছোট ভাই। সে একটা হাতে করে লাঠি নিয়ে এসেছে। বিড়াল তাড়ানোর জন্যই এসেছে৷ কিন্তু বিড়াল না পেয়ে এলো হাঁড়ি চেক করতে। বিরিয়ানির গন্ধে আর ফেরত গেলো না রুমে।

খাওয়া শুরু করতেই ম্যাও ম্যাও আওয়াজ করতে করতে চলে এলো বিড়ালটা। প্লেট টা ওভাবে রেখেই ও লুকিয়ে পড়লো সেল্ফের পাশে। চুরি করতে হলে বিড়াল, ইদুর সবকিছুকেই ভয় পেতে হয়। তা না হলে এরাই হয়ে দাড়ায় ধরা পড়ার বড় মাধ্যম।
আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম ও বাবাকে না দেখে ফেলে। কিন্তু ভাগ্য ভালো ও দেখে ফেলার আগেই বিড়ালটা ওর প্লেটের সব বিরিয়ানি খেয়ে পেট উঁচু করে লেজ চাটতে চাটতে চলে গেল। ও তখন বের হয়ে অন্য প্লেটে বিরিয়ানি নিয়ে খেয়ে রুমে চলে গেল সব জায়গারটা জায়গায় রেখে। শুধু বিরিয়ানির পাতিলের ঢাকনাটা দিয়ে ঢেকে যায় নি। এর কারন হলো পাতিলের বিরিয়ানির পরিমান কমে যাওয়ার দায়ভার যেন বিড়ালের উপর বার্তায়, ওর উপর না।

ভালোই বুদ্ধি আছে ভাইটির।
ও চলে যাওয়ার পর বাবা বের হলেন। তার প্লেটের বাকি অংশ সাবাড় করে গুছিয়ে রেখে চলে গেলেন। তারপর আমি বের হলাম। চুপচাপ ডাইনিং’এ গিয়ে পানি খেয়ে রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লাম।
যাক বাবা বাঁচা গেলো। কেউ দেখেনি। মানসম্মান যারটা তার কাছেই রইলো।
সকালে ঘুম ভাঙলো মা’র চেঁচামেচিতে। বিড়ালে পাতিলের সব বিরিয়ানি খেয়ে ফেলেছে। কেউ টের পায়নি।
মায়ের চেঁচামেচিতে বাবা সান্ত্বনা দিচ্ছেন এসে “আহা! কেমন করে হলো! কেউ টের পেলাম না। থাক তুমি মন খারাপ করো না। বিড়াল আজই তাড়াবো”
ভাই এসে বললো “বিড়াল তাড়াতে হবে না বাবা। ঠিকই আছে। কাল রাতে মা যা করলো বিরিয়ানি কেউ খেতে পারছে? বিড়ালে খাইছে বেশ করেছে”
আমি তাকিয়ে সবার কথা শুনছি। কি ভালো অভিনয় করতে পারে আমার বাবা আর ভাই!
আমাকে দেখে মা বলে উঠলেন “তুই কি করছিলি? বিড়াল ঢুকলো সব খেয়ে গেল কিচ্ছু টের পাস নি?”
-আসলে মা, কাল এত ঘুম পেয়েছে যে কিচ্ছু টের পাইনি।
কোনোভাবে পাশকাটিয়ে যেতেই দাদি এসে বললো কি গো কাল রাতে বিরিয়ানি কেমন খেলে তোমরা?

দাদির এমন কথায় সবাই হকচকিয়ে উঠে বললাম “বিরিয়ানি!”
দাদি মায়ের দিকে তাকাতেই মা বললো ” বিরিয়ানি কে খেয়েছে? আমি একবার উঠেছিলাম শব্দ শুনে এসে দেখি বিড়াল নেই পরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি”

আমিও তখন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম “আমিও বিড়ালের শব্দ শুনে জেগে গেছিলাম একবার কিন্তু বিড়াল না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি”

বাবা হাসতে হাসতে বললেন ” আসলে রাতে ঘুম ছিলো চোখে তাই ভুলে গিয়েছিলাম সকালে তেমাকে বলতে। বিড়ালের শব্দ আমিও একবার পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি কোনো বিড়াল নেই তারপর রুমে চলে গিয়েছিলাম”
এবার চোখ সবার ছোট ভাইয়ের দিকে। ও থতমত খেয়ে বললো “আসলে মা আমিও একবার এসেছিলাম বিড়াল খুঁজতে কিন্তু পাইনি। তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেছি”

দাদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন “হ্যাঁ তোমরা সবাই বিড়াল খুঁজতে এসে বিরিয়ানি খেয়ে চলে গেছ আর আমি বিরিয়ানি খেতে এসে এক একবার এক একটা মানুষরূপী বিড়াল দেখে চলে গেছি না খেয়ে”
বিড়ালটা তখম ম্যাও ম্যাও করতে করতে আমাদের মাঝে চলে এলো।
লজ্জায় কেউ কারো মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না আর।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত