আমি তখন সবেমাত্র অনার্স ভর্তি হয়েছি। ফার্স্ট ইয়ার। হাতখরচ চালানোর জন্য টিউশনি শুরু করলাম। ক্লাস টেনের একটা মেয়েকে ইংরেজি পড়াতাম। বড়লোকের মেয়ে। ওর বাবার দশটা মত ট্রাক আছে। বাজারে রড সিমেন্টের দুইটা দোকান। টাইলসের দোকান একটা। মেয়ে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আমি শুরুতে ভাবতাম একটা মেয়ে কেন? দশ টাকার চিপসের মধ্যের স্ক্রাচ কার্ডেও লেখা থাকে, আবার চেষ্টা করুন। আর এই দম্পতি এক বাচ্চা নিয়েই সন্তষ্ট? আরেকবার চেষ্টা করে দেখলো না? এতো টাকাপয়সা খাবে কে। আঙ্কেলের বিশাল ধৈর্য আছে মাশাল্লাহ। আন্টিকে দেখলে আমারই মাথা ঠিক থাকে না। সেইরকম সুন্দরী। আমি এই মহিলার বর হলে আমার ছেলেমেয়েরা বাসার ছাদেই দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলতে পারতো। বাইরে থেকে কোনো ফ্রেন্ড ডেকে আনার দরকার পড়তো না।
যাই হোক, আমাদের আজকের কাহিনী ঐ মহিলাকে নিয়ে না৷ উনার একমাত্র মেয়ে অর্থ্যাৎ আমার ছাত্রীকে নিয়ে৷ মেয়ের নাম অরনী। মায়ের থেকেও তিনগুন বেশি সুন্দরী। কতটা সুন্দরী উদাহরণ দেই৷ টিউশন মাস্টাররা লুচ্চা হলে নাকি ছাত্রীর বুকের দিকে তাকায়। কিন্তু আমি যথেষ্ট লুচ্চা হয়েও কখনো অরনীর বুকের দিকে তাকাইনি। ওর চেহারা এতো সুন্দর যে মুখের দিক থেকে চোখই সরাতে পারিনা। অন্যদিকে তাকাবো কিভাবে৷ টিউশন শুরু করার পর থেকে জাস্ট ওকে দেখার জন্যই একটা দিন অফ দেইনি। একঘন্টা পড়ানোর কথা থাকলেও দেড় ঘন্টা পড়াই। শুক্রবারে গিয়ে বলি, ‘আন্টি আজকে একটা পরীক্ষা নিব ওর। সারা সপ্তায় যা পড়াইছি তার ওপরে।’
আন্টি আঙ্কেলের কাছে আমি বিশাল প্রশংসা পাওয়া শুরু করলাম। এতো ভালো আর সিরিয়াস টিচার নাকি আজকাল পাওয়াই যায় না। উনার বোনের ছেলের টিউশন মাস্টার নাকি সপ্তায় দুইদিন আসে তো চারদিন আসে না। নানান বাহানা দেয়৷ আধাঘন্টা পড়ায়েই চলে যায়।
আমি আর বললাম না যে এর আগে ঠিকমতো না যাওয়ার জন্য আমার দুইটা টিউশনি চলে গেছে। দুইটাই ছেলে ছিলো। আর আপনার মেয়ে অরণী মানুষ না, চুম্বক। আমার চশমার ফ্রেমের লোহাকে আকর্ষণ করে সে।
তারপর ঠিক একমাস পর একটা ঘটনা ঘটলো। আমাকে মাস শেষে বেতনের যে খাম দেয়া হলো সেই খাম খুলে দেখি টাকার সাথে সাথে একটা চিরকুট৷ তাতে লেখা, ‘এই যে সোহাইল সাহেব, আই লাভ ইউ। ডু ইউ লাভ মি?’
আমার হার্টবিট মিস হলো। মাথা ঘুরতে লাগলো। তার থেকেও বেশি যেটা হলো সেটা কনফিউশান। আমাকে প্রপোজ কে করেছে? অরণী নাকি অরণীর মা?
কনফিউশনের কারণ খামটা আমার হাতে দিয়েছে স্বয়ং অরণীর বাবা। কিন্তু আমি যতদূর দেখেছি সেটা ভেতরের ঘরে গিয়ে এনে দিছে অরণীর মায়ের থেকে। তাহলে কি আন্টি? হতেও পারে। আঙ্কেল তো সারাদিনই ব্যবসা নিয়ে বিজি থাকে৷ অথচ আন্টির বয়স সর্বোচ্চ পঁয়ত্রিশ হবে। এই বয়সে কত শখ আল্লাদ থাকে মানুষের৷
কিন্তু আন্টিকে কিভাবে জিজ্ঞেস করি? একদিন সুযোগ আসলো। আন্টি নাস্তা দিতে এসে প্রতিদিনই বসেন দুই তিন মিনিট। এদিন আন্টি আসার পর অরণী ভেতরে গেলো পানি খেতে৷ আমার অভিজ্ঞতা বলে অরণীর পানি খেতে অন্তত সাত আট মিনিট লাগে৷ কারণ সে পানি খাওয়ার কথা বললেও যায় আসলে হিসু করতে।
এখন আন্টিকে সরাসরি তো বলতে পারি না৷ হিন্টস দিলাম৷ বললাম, ‘আন্টি আপনি খুব সুন্দর।’
আন্টি হেসে দিয়ে বললো, ‘তাই নাকি? তোমার আমাকে ভালো লাগে?’
আমিও হাসলাম, ‘আপনাকে কারো খারাপ লাগতে পারে? যেকোনো ছেলের জন্যই আপনি স্বপ্নের মত!’
– আহা, তোমার জন্যেও?
– আমিও তো ছেলেই।
– অথচ দেখ, তোমার আঙ্কেল ফিরেও দেখেনা আমার দিকে। সারাদিন কাজ নিয়ে বিজি।
– আমি আঙ্কেলের জায়গায় থাকলে কোথাও যাইতাম না। সারাদিন ঘরে থাকতাম আপনার কাছে।
আন্টি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ‘আসলে এই লাইফ আমারো আর ভাল্লাগছেনা৷ আর তাছাড়া?’
– তাছাড়া কি?
– তুমি ছেলে হিসাবে খারাপ না। আসলে কিভাবে যে বলি।
– বলেন আন্টি, কোনো সমস্যা নাই৷ অবশ্য আমি টের পেয়ে গেছি দেখেই।
– সত্যি টের পেয়েছ?
আরো কিছু বলতে যাব তার আগেই অরণী চলে আসলো। আন্টি কিছু না বলে লাজুক মুখে চলে গেলেন।
এর পরদিন থেকে আন্টি আমাকে একটু বেশিই যত্ন নেয়া শুরু করলেন। নাস্তায় দামী দামী খাবার আসতে লাগলো। আমি যখন প্রায় শিওর যে ঐ প্রপোজ আন্টিরই ছিলো তখনই একটা ঘটনা ঘটলো। অরণী অংক করতে করতে হুট করে বললো, ‘স্যার আমি কি দেখতে খারাপ?’
– না তো, তুমি অনেক সুন্দরী।
– তাহলে আপনার চোখে সমস্যা?
– তা হবে কেন? এসব কি বলতেছ?
– আপনি কিছুই বুঝেন না স্যার?
– কি বুঝবো?
– আপনি আসলেই গাধা।
– তোমার মাথা ঠিক আছে? যা বলার খুলে বলো।
– আমি কি বলব? আমার কিছুই বলার নাই। আর ভাগ্যই খারাপ।
– ভাগ্য খারাপ হবে কেন?
– আমার সব বান্ধবীরই বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর আমার নাই। এমনকি আমার যাকে ভালোলাগে সে কিছুই বুঝেনা। আস্ত একটা গাধা৷
আমি বুঝলাম অরণী কি বলতে চাচ্ছে। কিন্তু বুঝেও এমন ভান করলাম যে বুঝিনি৷ তাহলে কি ঐ চিরকুট অরণীর ছিলো? অরণী আমাকে ভালোবাসে? আমি আবারো কনফিউশানে পড়ে গেলাম।
কনফিশান দূর করার একটাই উপায়। পরের মাসের বেতনের খাম৷
খাম হাতে পেয়ে যেন তর সইছে না। দ্রুত ওদের বাসা থেকে বের হয়েই খুলে ফেললাম। হ্যা, চিরকুট আছে৷ সেখানে লেখা, ‘গত খামে দেয়া প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তবে আগামী শুক্রবার সকালে আমি বাসায় অপেক্ষা করবো। ঐদিন আমি ছাড়া কেউ থাকবে না বাড়িতে।’
ইয়েস, শুক্রবারেই বোঝা যাবে ওটা কে? অরণী নাকি অরণীর মা। আমি মুচকি হাসলাম। যেই হোক, আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নাই।
শুক্রবার সকাল সকাল রেডি হয়ে ভালো জামাকাপড় পরে চলে গেলাম অরণীদের বাসায়। কলিংবেল টিপতেই দরজা খুলে গেল। একটা হাত আমাকে টেনে ঘরে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলো।
আমার হার্ট এটাক হচ্ছিলো আরেকটু হলে। কোনোমতে বললাম, ‘আ আঙ্কেল, আপনি?’
– হ্যা আমিই। অরণী ওর আম্মুর সাথে খালার বাসায় গেছে। আজকেই সুযোগ।
– হোয়াট? কিসের সুযোগ?
– তোমাকে তো বলেছিই। আমার মেয়ে মানুষ ভালোলাগে না। বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছিলো। একটা বাচ্চাও হইছে। কিন্তু অরণীর আম্মুর প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নাই৷ তোমাকে ভালো লেগেছে। এজন্য আই লাভ ইউ বলে দিছি৷ ভাবিনাই তুমি রাজি হবা।
– ইয়ে মানে।
– লজ্জা পাওয়ার দরকার নাই৷ বেডরুমে আসো।
– এক মিনিট।
– আবার কি হলো? আঙ্কেলের কণ্ঠে অধৈর্য।
– বাইক লক করে আসতে ভুলে গেছি৷ এখনি আসতেছি।
সেদিন পালিয়ে আসার পর বহুবার অরণী কল দিয়ে যেতে বলেছে৷ কান্নাকাটিও করেছে। আন্টি মেসেজ দিছে, ‘তুমি শুধু একবার বাসায় আসো। শুধু একবার।’
কিন্তু আমি যাইনি। প্রেম ভালোবাসা একটা গেলে আরেকটা পাওয়া যাবে। কিন্তু ইজ্জত খুবই দামী জিনিস। একবার হারালে আর কোনোদিন পাওয়া যায় না।