অল ইন ওয়ান থ্রিপিস

অল ইন ওয়ান থ্রিপিস

” আমনে কি এইডা ২০০ টাহায় দেবেন? দিলে কইতে পারেন নাইলে আমরা সামনের দিকে আউজ্ঞা মু ” খালামনির এই ডায়লগে দোকানি আমার দিকে এমন এক লুক দিয়ে চাইল যেন আমরা রোহিঙ্গা কোন এক ফাঁক দিয়ে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে বের হয়ে ঢাকার নিউমার্কেটে শপিং করতে চলে আসছি। আমার একটা সমস্যা আছে প্রচুর লজ্জা বা জিদ হলে চোখ থেকে পানি চলে আসে। এখন ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি। খালামনিকে বললাম হইছে আপনার দামদর করা? খালা আমারে বলল ” এ বাবু, এ ব্যাডা কি দেবে না এই দরে? মুই কি বেশি কম বইল্লা ফালাইছি নাকি?” খালার কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না।

খালামনি থাকে বরিশাল সে যাকে বলে পিওর বরিশাইল্লা। বরিশালের লোকদের এমনিতেই সবাই বলে আমরা নাকি ঝগড়ায় এক্সপার্ট। আর আমার খালামনিকে কেউ যদি দেখে ঝগড়ার সাথে কমেডিয়ান ও খেতাব দিয়ে দেবে৷ উনাকে দেখলেই হাসি আসে। উনি স্বাভাবিক কথা বললেও আমরা হাসতে হাসতে কুটি কুটি হই৷ আর খালামনির কথাগুলো পিউর বরিশালের ল্যাঙ্গুয়েজ। সেটাও আরেক বিশাল ব্যাপার। সে যাই হোক খালামনি আসছে ঢাকায় আমাদের বাসায় দিন পনেরোর জন্য বেড়াইতে। জীবনের রস যা একটু ছিল সবটুকু নিংড়ে বের করার চেষ্টায় আছে খালামনি। আজকে বের হয়ে যাব ভার্সিটিতে তখনই দরজার পাশে খালামনির আগমন ” বাবু সোনা কোম্মে যাও? এত হবিরে হবিরে বাইরাইতেছ কিলিজ্ঞা?”।

খালামনি আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি ক্লাস আছে। চোখ কুঁচকে বলল সে ” আজকে না গেলে হয় না? আমি তোরে নিয়া একটু বাজারে যাইতে চাইছিলাম “। খালামনি তুমি বাজারে যাইবা কেন কিছু কিনবা? তারকারি বা অন্য কিছু। খালামনি হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে বলল ” ও মনু তুই কও কি, মুই কি ওই বাজারে যাইমু নি হি? যে বাজারে কাপড় বেচে ওই বাজারে যাইমু”। খালামনি ওইটা কে বাজার করা না শপিং করা বলে। আমি খুব বিজি আজকে পারব না এটুকু বলতেই খালামনির বিখ্যাত কান্না শুরু। ” মোর তো তোগো ধারে কোন দামই নাই। বুঝবি বুঝবি যহন মুই থাকমু না তখন বুঝবি ” এই বলেই সে চোখ মুছা শুরু করল। মেজাজের বারোটা বাজলেও মুখে হাসি এনে বললাম আমার খালামনিকে কোথাও যেতে দিলে তো। আচ্ছা আপনি রেডি হয়ে আসেন বের হবো। রেডি হয়ে যখন খালামনি আসল আমার তো মাথায় হাত পিংক কালারে থ্রিপিসের সাথে ব্লাক সানগ্লাস। হাতে মোটামোটা শো বালা। কানে ইয়ার রিং উনারে আমার খালা না উল্টো আমারেই উনার খালা বলে মনে হচ্ছে।

নিচে নামতেই রাসেলের সাথে দেখা। সে আসলে আমার ক্রাশ তাকে দেখলেই আমার কেন জানি না হার্টবিট বেড়ে যায়। অন্যদিকে সে আবার আমার ভাইয়ের ক্লোজ ফ্রেন্ড যারে বলা যায় বেষ্টু। আমাদের ফ্যামিলিতেও আসা যাওয়া আছে সেই সুবাদে খালামনিকেও ভাল চেনে। খালামনিকে সালাম দিতেই রাসেলকে খালা বলে উঠলো ” এ ব্যাডা একটা প্রশ্নের উওর দেতে পারবা? ” রাসেল মাথা নিচু করে বলল ” জি খালা মনি বলেন কি প্রশ্ন”। তোমার সমেস্যাডা কি সে কি মোরে কইতে পারো? আমাগো বাসার পিছকুলের রাস্তায় খাঁড়াই ওমন কইরা হাঁ কইরা কি দেখো তুমি ওইডা মোরে খুইল্লা কও এক্ষনি?

খালা মনির প্রশ্ন শুনে রাসেল তো পারে না এক দৌড়ে পগারপার হয়। আমতা আমতা করে বলল ” আমি একটু বিজি পরে কথা হবে” এই বলেই সে হাঁটার স্টাইলে দৌড়ে চলে গেল। ” বাবুরে এই পোলাডার সমেস্যা আছে কালকে তো তুই ঘুমাইছ এই পোলায় হরছে কি সেইটা কি তুই কইতে পারো?? রাত্র ১ পর্যন্ত তোর বারান্দার সামনের রাস্তায় খাঁড়াইয়া আছেলে। মুই কিন্তুক ব্যাপারডা বোঝতে পারছি” খালামনির কথায় আমার যানি কেমন দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগল। বুঝলাম আমার ক্রাশও আমারে পছন্দ করে। আপাতত এসব ভাললাগা সাইডে ঠেলে খালামনিকে তাড়া দিলাম দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে।

” শোনো মনু যেইহানে কোম দামের ভিত্রে চমেতকার কাপড় পাওন যাইবে মোরে ওই হানে লইয়া চলো” খালামনির এই ডায়লগ শুনে আমার প্রথমেই মনে পড়ল নিউমার্কেটের কথা। যেই ভাবা সেই কাজ রিক্সা নিয়ে সোজা নিউমার্কেট এলাকায়। দোকানে ঢুকেই খালার সেই বিখ্যাত দরদাম চালু। এখনও সেই অবস্থায় আছি। খালুর জন্য খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবি পছন্দ হল খালার। সবই ঠিক আছে সমস্যা হল দাম নিয়ে দোকানি চেয়েছিল আড়াই হাজার টাকা। দাম শুনে খালা আমার দিকে চোখ মটকে তাকিয়ে দোকানির সাথে কথা শুরু করল ” দেখেন দাদো ভাববেন না যে নয়া আইছি পাঞ্জাবি কেনতে। এখন বইল্লা ফালান দেখি কততে দেতে পারেন?” খালামনির প্রশ্নে দোকানি হচকচিয়ে বলল ” আচ্ছা আপা আপনি যেহেতু আগেও এসেছেন আপনি ২০০ টাকা কম দিয়েন “।

খালামনি তখনই বলে উঠলো ” ২০০ টাহাই মুই দিমু হইলে দেতে পারেন”। এই কথা শুনে আমার নিজেরই মাথায় চক্কর দিচ্ছিল দোকানির কথা না হয় নাই বা বললাম। সেই দোকানে থেকে বের হয়ে অন্য দোকানে ঢুকতে যাব তখনই খালামনির চোখ পড়ল ফুটপাতে দোকানের উপরে। তাকে বারবার মানা করা স্বত্তেও সে সেখান থেকে তারজন্য পিংক কালারের একটা থ্রিপিস কিনল। ” দেখছ বাবু ১২০০ টাহা চাইছেলে ৩০০ টাহা দিয়া লইয়া আইছি। জিতছি কেমনে দেখছ তুই?” খালামনি খুশিতে আত্মহারা। ” থ্রিপিস বেচুইন্না বেডায় কইছে অল ইন ওয়ান নাকি এই থ্রিপিসটা। মুই তো আর অপেক্ষা করতে পারতেয়াছি না। হবিরে হবিরে বানাইয়াই পরতে হইবে “।

খালামনি বাসায় এসেই আম্মুকে দিয়ে থ্রিপিসটা বানিয়ে ফেলল দুই দিনের মাথায়। পরের দিন খালু আসল তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে খুব সেজে গুজে খালুর সামনে নতুন থ্রিপিস পরে গেল। ” ও কি রেনু মানুষ তো মেকাপ করে চেহারার মইধ্যে তুমি দেখি হাতে আর পায়েও করছ ” খালুর এই কথায় চমকে আমি খালামনির দিকে তাকালাম। তাকিয়েই আমার চক্ষু চড়ক গাছ। কারণ খালা মনির থ্রিপিসের পিংক কালার সব তার মুখে হাতে পায়ে লেগে একাকার। তখনও খালামনি তার অল ইন ওয়ান থ্রিপিসের গান গাইতেছ। খালু আর আমি মুখে হাত দিয়ে খালি দেখতেছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত